
নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। সেই লক্ষ্যে সার্চ কমিটির প্রধান হচ্ছেন আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী। সদস্য হিসেবে থাকছেন আরও পাঁচজন। এ কমিটি নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের জন্য প্রতি পদের বিপরীতে দুজন করে ব্যক্তির নাম সুপারিশ করবে। এর মধ্য দিয়ে ‘নির্বাচনমুখী যাত্রা’ শুরু হয়ে গেছে বলে মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, অনুসন্ধান কমিটিতে সদস্য হিসেবে থাকছেন প্রধান বিচারপতি মনোনীত হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান এবং রাষ্ট্রপতি মনোনীত দুজন বিশিষ্ট নাগরিক। তারা হলেনÑ পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক জিন্নাতুননেসা তাহমিদা বেগম এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক অধ্যাপক সি আর আবরার। এ ছাড়া আইন অনুযায়ী পদাধিকারবলে সদস্য হিসেবে থাকবেন বাংলাদেশের মহা-হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক মো. নূরুল ইসলাম এবং বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান মোবাশ্বের মোনেম।
ইসি গঠন প্রক্রিয়া শুরু করা প্রসঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার ব্ষিয়ক কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, ‘সার্চ কমিটি গঠনের সম্পূর্ণ এখতিয়ার সরকারের।’ তবে এ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করার কথা বলেছেন কয়েকজন নেতা।
গতকাল সকালে সচিবালয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্কের সঙ্গে বৈঠকের পর আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে সার্চ কমিটির বিষয়ে কথা বলেন। তিনি জানান, নির্বাচন কমিশন গঠন-সংক্রান্ত সার্চ কমিটি গঠন হয়ে গেছে। প্রজ্ঞাপনে হয়তো প্রধান উপদেষ্টা স্বাক্ষরও করেছেন। আজ অথবা কালকের মধ্যেই প্রজ্ঞাপন জারি হবে। তিনি আরও বলেন, আপনাদের সঙ্গে একটা বিষয় শেয়ার করতে পারিÑ আমাদের সরকারের নির্বাচনমুখী প্রক্রিয়া গ্রহণ করার যে কাজ, তা শুরু হয়ে গেছে। নির্বাচনমুখী যাত্রা শুরু হয়ে গেছে বলতে পারেন।
উপদেষ্টা আরও জানান, সার্চ কমিটি হয়ে গেলে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে। এরপর ভোটার তালিকা হালনাগাদসহ অন্যান্য কাজ হবে।
ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে আসিফ নজরুল বলেন, ‘এবার আমরা ভুয়া নির্বাচন করব না। একটা অসাধারণ সুন্দর, অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন করব।’
প্রসঙ্গত, জাতীয় সংসদে পাস হওয়া প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ-সংক্রান্ত আইন অনুযায়ী সার্চ কমিটি গঠন করেন রাষ্ট্রপতি। আপিল বিভাগের একজন বিচারকের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের এই কমিটি গঠিত হয়। তারা আইনে বর্ণিত যোগ্যতা-অযোগ্যতা বিবেচনা করে ১০ জনের নাম প্রস্তাব করবেন। তাদের মধ্য থেকেই ৫ জনকে নিয়ে রাষ্ট্রপতি নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করেন।
তিন সদস্যের উপস্থিতিতে কমিটির সভার কোরাম হবে। এ কমিটির কাজে সাচিবিক সহায়তা দেবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। সার্চ কমিটি গঠনের ১৫ কার্যদিবসের মধ্য রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ পেশ করার কথা বলা হয়েছে।
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের এক মাসের মাথায় ৫ সেপ্টেম্বর বিদায় নেওয়া কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন সর্বশেষ নির্বাচন কমিশন এই আইনের অধীনে প্রথম নিয়োগ পেয়েছিল। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার এরই মধ্যে রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের কাজে হাত দিয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সংস্কারের মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফেরার মতো পরিস্থিতি হলেই নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হবে।
এখনই প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন না রাজনৈতিক নেতারা পুরোনো আইনেই নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য সার্চ কমিটি গঠন নিয়ে তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া দিতে চাননি দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলের নেতারা।
জানতে চাইলে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, আমি এখনই এ নিয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া দেব না।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী গতকাল সন্ধ্যায় বলেছেন, দলের মধ্যে আলোচনার পর আমরা এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাব।
অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় প্রচার সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ গতকাল সন্ধ্যায় বলেছেন, আমরা আগেই বলেছিলাম, নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য একটি দক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন প্রয়োজন। এর জন্য সার্চ কমিটি গঠন করতে হবে। আওয়ামী লীগ আমলে সার্চ কমিটি গঠনের যে আইন করা হয়েছে, তা ত্রুটিপূর্ণ। আইনটি ঠিক করার আগেই সার্চ কমিটি করা হলো। এখন আমরা দেখবÑ সার্চ কমিটি কীভাবে গঠন করা হলো। তারপরই আমরা প্রতিক্রিয়া দিতে পারব।
সম্পূর্ণ এখতিয়ার সরকারের : বদিউল আলম মজুমদার
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার ব্ষিয়ক কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনে সার্চ কমিটি গঠন করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। নির্বাচন কমিশন সংস্কারের লক্ষ্যে আমরা একটি সুপারিশ ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সরকারের কাছে উপস্থাপন করব। সার্চ কমিটি গঠনের সম্পূর্ণ এখতিয়ার সরকারের। সেই মোতাবেক সরকার তা করেছে। আমরা চাইব একটি প্রশ্নমুক্ত, স্বচ্ছ, দায়বদ্ধ নির্বাচন কমিশন হোক। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকেই দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। আমরা বিগত রাজনৈতিক সরকারের আমলে এ ব্যাপারে একটি সুপারিশপত্র উপস্থাপন করেছিলাম। কিন্তু তা উপেক্ষিত থেকে গেছে। নির্বাচন প্রক্রিয়া স্বচ্ছ করার জরুরি প্রয়োজনে দায়বদ্ধ নির্বাচন কমিশন গঠনের কোনো বিকল্প নেই। নির্বাচন ব্যবস্থাপনার প্রতি মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। সার্চ কমিটি সেই লক্ষ্যেই কাজ করবে। সবার সমন্বিত প্রচেষ্টায় কাঙ্ক্ষিত কমিশন গঠন করতে আমরা দায়বদ্ধ।
ঢাকা ব্যুরো।। 







































