
দেলোয়ার হোসেন, ঢাকা ব্যুরো
হঠাৎ করেই দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের গুদারা ঘাটে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ তৈরি পোশাকের মার্কেট এলাকায় সম্প্রতি তিনটি মার্কেট এর দখল ও সাইনবোর্ড টাঙ্গানো কে কেন্দ্র করে এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা এই ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িত হওয়ার পরও ভুক্তভোগীরা সংবাদ কর্মীদের সামনে নাম বলতে ভয় পান। এলাকার সাধারণ মানুষ রাজনৈতিক নেতাকর্মীদেরকে প্রকাশ্যে এ ধরনের কর্মকাণ্ড করতে দেখলেও যাদের ক্ষতি হচ্ছে তারা তাদের নাম নিয়ে কথা বলতে সাহস পাচ্ছেন না সম্পত্তি বেহাত বা ক্ষতি হওয়ার ভয়ে।
ভুক্তভোগী রফিক বলছেন যে, জলে বাস করে কুমিরের সাথে চলতে পারবেন না। তাই কুমিরদের সাথে মিলেমিশে চলতে চান তিনি। এই ধরনের কথা শুনে হতবাক হয়েছে সাধারণ মানুষ । আক্ষেপ থেকে দুঃখ থেকে এবং পরিবারের পক্ষ থেকে তাকে নীরব থাকার জন্য বলার কারণেই আজ তিনি এই ধরনের কথা উত্থাপন করলেন । অঢেল সম্পত্তি থাকার পরও তিনি বুদ্ধি আর অহংকারের কারণে তারপর ভাই আব্দুল আজিজের অহংকারের কারণে হেরে গেছেন এই যাত্রায় । তিনি তার ভয়ের কথা অকপটে স্বীকার করেছেন গণমাধ্যম কর্মীদের সামনে । আব্দুল আজিজ ও একসময় এই এলাকায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের খোলস বদল করে সাধারণ ব্যবসায়ীদের উপরে খবরদারি করেছেন। আজিজ এক সময় জাতীয় পার্টি করেছেন, আওয়ামী লীগের সময় বিপুয়ার শাহিনের সাথে চলেছেন দীর্ঘ ১৬ টি বছর । ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট সরকারের বিদ্যার পর আবার নিজের খোলস পাল্টে বিএনপি নেতাদের সাথে ভেড়ার চেষ্টা করছেন। বয়সে প্রবীণ হওয়ার কারণে অনেকে তাকে দূর থেকে ঘৃণা করে । আজিজের দ্বিচারিতার কারণে এলাকায় তার বিরুদ্ধে রয়েছে অনেক অভিযোগ ।
এলাকার সাধারণ ব্যবসায়ীরা বলেছেন ধরাকে সরা জ্ঞান করা অহংকারী রফিক দীর্ঘদিন ধরে টাকা এবং ক্ষমতার দাপট দেখিয়েছেন । এবার বুঝতে পারলেন সম্পত্তির চেয়ে জীবনের দাম বেশি। সম্পত্তির জন্য মরতে চান না। তিনি অতীতে আওয়ামী লীগের ঢাকা জেলার কোষাধক্ষ্য মজিবুর রহমানের ছায়াতে ব্যবসা করেছেন । মার্কেট গড়ে তুলেছেন । প্রভাব বিস্তার করেছেন। এখন আবার সবকিছুই ভুলে গেছেন তিনি। তিনি বলছেন আমি কখনো রাজনীতি করি নাই। কিন্তু তিনি এলাকার জিনের বাদশা খ্যাত মজিবরের প্রধান শীর্ষ হিসেবে এলাকার ব্যবসায়ীদের কাছে পরিচিত । গত ১২ তারিখের ঘটনায় রফিকের চারজন লোক আহত হয়ে হাসপাতালে যাওয়ার পরও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সাথে আঁতাত করে চলতে হচ্ছে তাদের। তিনি কোন জিডি করলেন না মামলা করলেন না কেন? ম্যানেজ করে যদি জীবনে চলতে হয় , তাহলে সামনের দিনে কি অবস্থা বিরাজ করবে এলাকায় তা এখনই অনুমান করা যাচ্ছে । এলাকাবাসী বলছেন, মূলত এই এলাকায় কিছু লোক বিভিন্ন মার্কেটের জমি সংক্রান্ত বিরোধকে পুঁজি করে প্রকাশ্যেই মার্কেটে সাইনবোর্ড ঝুলানো সহ বিভিন্ন ভাবে আইন-শৃঙ্খলা অবনতি মূলক কর্মকান্ড করছে । রাজনৈতিক নেতাদের চাপে বা হুমকিতে প্রশাসনও নিরব ভূমিকা পালন করছে। ভুক্তভোগীরা প্রশাসনের কাছে গেলে তারা উল্টো ভুক্তভোগীকে নেতাদের নিয়ে সমঝোতা করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। প্রশাসনিক নীরবতা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দ্বিমুখী আচরণের কারণে এলাকায় দিন দিন আইন বহির্ভূত কর্মকাণ্ড ডালপালা বিস্তার করছে। শুধু তাই নয় বৃহত্তর রাজনৈতিক সংগঠন এর নেতাদের নাম ভাঙ্গিয়ে এই ধরনের কর্মকাণ্ড হওয়ার পরও সাধারণ মানুষ নাজেহাল হচ্ছে। ব্যবসায়ীকে মারধর করেছে। বিদেশি সিনেমার মতো অবস্থা হয়েছে এই এলাকায় ।
মার খাবে কিন্তু মানুষের সামনে মুচকি হেসে বলবে, আমাকে কেউ মারেনি, তারা আমার ভাই। ভয়ংকর এই অবস্থা চলতে থাকলে এলাকায় সামনের দিনে কি অবস্থা হবে সেটা কেউ অনুমান করতে পারছেন না। ফ্যাসিস্ট সরকার বিদায় নিয়েছে । সাধারণ মানুষ যারা রাজনীতি করেন না তারা ভেবেছিলেন শান্তিতে স্বস্তিতে ও নিরাপদে ব্যবসা-বাণিজ্য করে ভালো থাকবেন । কিন্তু সেই আশা করাটা এখন বোকামি অবস্থা হয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সেম রাখি না কুল রাখি এই ধরনের আচরণের কারণে এবং বৃহত্তরও একটি রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদেরকে তাদের স্বার্থ হাসিল আদায়ের জন্য সহযোগী হয়ে কাজ করার কারণেই আজ এ ধরনের অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। ঢাকা জেলা পুলিশের নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেক কর্মকর্তা ,সাধারণ পুলিশ সদস্যরা এই প্রতিনিধিকে জানিয়েছেন যে, প্রতিদিনই থানায় বিএনপি’র নেতাকর্মীরা বিভিন্ন ধরনের অন্যায় আবদার নিয়ে এবং প্রশাসনকে ব্যবহার করে জমি সংক্রান্ত বিরোধের ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা করে। এই ধরনের কর্মকান্ডে জড়িত হতে না চাইলে উল্টো তাদেরকে বদলি করে দেওয়ার হুমকি দেয় এই এলাকার স্থানীয় নেতা ও পাতি নেতারা । পুলিশ বলছে তারা উভয়ের সংকটে পড়েছেন। একেতো পুলিশের ইমেজ রক্ষায় মানুষের জান মালের রক্ষায় তারা মানসিকভাবে প্রাণ উজাড় করে কাজ করতে পারছেন না। কারণ ৫ই আগস্ট এর পর থেকে মানুষ পুলিশ সদস্যকে ভালোভাবে গ্রহণ করতে না পারার কারণেই তারা নিজেরাই মানসিকভাবেও স্বস্তিতে নেই । তার উপরে ক্ষমতায় না আসার আগেই বৃহত্তর রাজনৈতিক দল বিএনপির নেতাকর্মীরা সন্ধ্যা হলেই থানা গুলোতে বসায় মামলার কর্মকাণ্ড পরিচালনার বাজার হিসেবে । অনেকে তদবির নিয়ে ব্যস্ত থাকেন থানাগুলোতে । এই কর্মকান্ড শুধু দক্ষিণ কেরানীগঞ্জেই নয়, কেরানীগঞ্জ মডেল থানাতেও একই অবস্থা । অধিকাংশ বিবাদ এবং বিচার জমি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে । থানা পুলিশ বলছেন তারা জমি সংক্রান্ত বিরোধ মিটানোর জন্য আদালতে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
এলাকার ভুক্তভোগী , আজিজ, রফিক, হাবিবুর রহমান, দুলাল মিয়া, আব্দুর রহমান, আব্দুল করিম, রহিম, সজীব, ওয়াজেদ, করিম, হাতেম , বিল্লাল , বাদল , জব্বার , সারোয়ার, সাইফুল, কাকন, মোস্তাক, মোস্তাফিজুর রহমান, নাইমুল ইসলাম, তোতলা মামুন সহ এলাকার সাধারণ মানুষ এ ধরনের কর্মকাণ্ডের তীব্র প্রতিবাদ করলেও তারা কেউ থানায় গিয়ে অভিযোগ করেন না। কারণ হিসেবে তারা এই প্রতিনিধিকে জানিয়েছেন, থানায় গিয়ে কি হবে? রাজনৈতিক নেতাদের কাছে যেতে বলে প্রশাসন । আবার জিডি করলে সেই জিডির অভিযুক্ত ব্যক্তি উল্টো প্রাণনাশের হুমকি দেয় । এক শ্রেণীর সুবিধাভোগী, লোভী, লুটেরা তারা নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য বিচারের নামে প্রহসন করছেন এলাকায় । আইনের শাসনের দুর্বলতার ফাঁকফোকর দিয়ে চলছে এই ধরনের ছলচাতুরি বিচার নামে প্রহসন । সাধারণ মানুষ মনে করছেন, এতে করে বৃহত্তর রাজনৈতিক দল বিএনপি’র সুনাম ও নেতাদের সুনাম কমছে । ভিন্নমতের মানুষের স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তির জায়গা জমির নিয়ে বিরোধ থাকলে সেটি আদালতে নিষ্পত্তির জন্য প্রয়োজন রয়েছে । নাগরিকের যতটুকু আইনের অধিকার রয়েছে সেটুকু প্রতিটি নাগরিকই পাওয়ার বৈধতা রয়েছে। রাজনৈতিক বিচারের নামে বা নেতার বাড়িতে বিচারের নামে যে ধরনের অপকর্ম সমাজে চাউর হয়েছে সেগুলো কখনোই নেতৃত্বের সু বাতাস বয়ে আনতে পারে না । কর্মীদের সংযত এবং ধৈর্যের সাথে এগিয়ে না নিতে পারলে সে নেতৃত্ব নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে কেরানীগঞ্জে।
গত তিন দিন আগে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের তেলঘাটা এলাকায় আসমা মেনশন সহ দুইটি মার্কেট এর জমি দাবি করে দীর্ঘ ১৮ বছর পর একটি সাধারণ ডায়েরি করে একটি সুবিধাভোগী ভূমিদস্য সিন্ডিকেট । রাজনৈতিক নেতাদের নিয়ে এবং তাদের ব্যবহার করে প্রকাশ্যেই মার্কেটে ব্যবসা-বাণিজ্য চলমান অবস্থায় এ ধরনের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে।
মার্কেটের মালিক বা দোকানদাররা প্রকাশ্যে এই ধরনের কর্মকাণ্ড চললেও তারা বা দোকান মালিকরা প্রাণভয়ে অথবা নিজেদের ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষতির আশঙ্কায় প্রতিবাদ করতে সাহস পাচ্ছে না। সাধারণ মানুষ রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের প্রকাশ্যে এই ধরনের দখল বা জমি করার বিষয় নিয়ে মিশ্র এবং তীব্র প্রতিবাদ প্রকাশ করেছেন এই প্রতিনিধির কাছে।
সাধারণ নিরীহ এলাকাবাসী ও ব্যবসায়ীরা নির্বিঘ্নে, শান্তিপূর্ণভাবে ব্যবসা পরিচালনা করার জন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
দেলোয়ার হোসেন, ঢাকা ব্যুরো 




































