
দেলোয়ার হোসেন, ঢাকা ব্যুরো
ভ্যাট অব্যাহতি ও পূর্বের ভ্যাট পুনঃ বহালের দাবিতে বাংলাদেশ পাদুকা প্রস্তুতকারক সমিতির উদ্যোগে আজ সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধন কর্মসূচীর আয়োজন করা হয় ।
প্লাস্টিক ও রাবারের তৈরি হাওয়াই চপ্পল এবং প্লাস্টিক পাদুকা (১৫০ টাকা মূল্য সীমা পর্যন্ত )
উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি ও পুনঃবহালের জন্য দাবি নিয়ে এই মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয় ।
ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধনে সমিতির নেতারা জানান, প্লাস্টিক পাদুকা পূর্বের অব্যাহতির সুবিধা বাতিল করে ১৫ পার্সেন্ট ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি পাদুকা শিল্প মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হবে ।
মানববন্ধনে সমিতির উপদেষ্টা সাখাওয়াত হোসেন বলেন, প্লাস্টিক ও রাবারের তৈরি হাওয়াই চপ্পল এবং পাদুকার উপরে ১৫ পার্সেন্ট ভ্যাট আরোপ করার প্রস্তাব অত্যন্ত অযৌক্তিক এবং দুঃখজনক । গরিব মানুষের পন্যের উপরে এই ধরনের ভ্যাট আরোপ করা মড়ার উপরে করার ঘা এর মত । এই ধরনের কার্যক্রম কার্যকর হলে এই সাশ্রয়ী পণ্য সাধারণ জনগণের ক্রয় ক্ষমতার বাহিরে চলে যাবে।
বিশেষ করে শ্রমজীবী দিনমজুর কৃষক রিক্সা ভ্যানচালক এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রায় এর বিরূপ প্রভাব পড়বে।
ভ্যাট অব্যাহতির ফলে সরাসরি পণ্যের উৎপাদন খরচ উল্লেখযোগ্য হারে কোনে গিয়েছিল । তারই ধারাবাহিকতায় নিম্ন আয়ের ক্রেতা সাধারণের ক্রয় ক্ষমতার বিবেচনায় এত উচ্চমূল্য স্থিতি ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির মধ্যে ১৫০ টাকা মূল্যের রাবার ও প্লাস্টিকের চপ্পল সরবরাহ অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশ পাদুকা প্রস্তুতকারক সমিতির সদস্যরা । এই কম উৎপাদন খরচের সুবিধা সরাসরি ভোক্তাদের কাছে পৌঁছিলে যার মাধ্যমে দেশে নিম্নের মানুষ সাশ্রয়ী দামে তাদের প্রয়োজনীয় হাওয়াই চপ্পল ও পাদুকা ক্রয় করতে পারবে । দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য এই পণ্যগুলো অত্যাবশ্যকীয়। কারণ এগুলো ছিল গরীবের সাশ্রয়ী পণ্য ।
তিনি আরো বলেন, পাদুকা শিল্পের এই কম মূল্যের পণ্যের কাঁচামাল হচ্ছে পরিত্যক্ত রাবার ও প্লাস্টিকের চপ্পল জাতীয় অপচনশীল দ্রব্যাদি, যা সংগ্রহ করা হয় দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে।
পরিবেশের ভারসাম্য তথা জমির উর্বরতা বৃদ্ধি জলাবদ্ধতা রোধ সহায় ভূমিকা পালন করে এই ধরনের পরিত্যক্ত অন্যগুলো থেকে।
ভ্যাট অব্যাহতির ফলে তারা রিসাইক্লিং কার্যক্রম আরো সম্প্রসারিত করতে পেরেছিল।
এতে একদিকে যেমন উৎপাদন খরচ কমেছে অন্যদিকে পরিবেশ দূষণ রাখ পেয়েছ।
উক্ত বিবেচনায় ভ্যাট আইনের শুরু হতেই আমাদের উৎপাদিত প্লাস্টিক ও রাবারের পাদুকা ভ্যাট অব্যাহতির সুযোগ দিয়ে আসা হয় । এই পাদুকা শিল্প দীর্ঘদিন ধরে ভ্যাট অব্যাহতির আওতায় রয়েছে যা পণ্য উৎপাদনের খরচ কমিয়ে গরিব জনগোষ্ঠীর জন্য সাশ্রয় দামে পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করেছে।
কিন্তু ভ্যাড আরোপ করা হলে অন্য উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে এবং বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে ।
তাই বাংলাদেশ পাদুকা প্রস্তুতকারক সমিতি মনে করছে, গত দুই বছরের বেশি সময় ধরে দেশে যেখানে উচ্চমূল্য স্থিতি বিরাজ করছে সেখানে ভোক্তার কাছ থেকে কোনভাবেই ১৫% ভ্যাট আদায় করা সম্ভব নয় । ইচ্ছা করেও গরিবের এই পণ্যের দাম বৃদ্ধি করা সম্ভব নয় । কারণ গরিব মানুষের পণ্যের দাম বাড়লে তারা এই পণ্যটি ক্রয় করতে হিমশিম খাবে । এবং পণ্যের উৎপাদন কমে যাবে। উৎপাদন কমে গেলে কারখানা মালিক ও শ্রমিক উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
উচ্চমূল্য স্থিতির কারণে এই পাদুকা ব্যবসা ৪০ থেকে ৫০% কমে গিয়েছে । এই অবস্থায় ভ্যাট বাড়লে পরিস্থিতি আরো অবনতি হবে।
তিনি আরো বলেন, যেদিন থেকে ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে সেদিন থেকেই এই পণ্যের ভ্যাট অব্যাহতি ছিল ।
এমনকি জিদ সাইকেলিং প্লাস্টিক হতে তৈরিকৃত দানার কোনো ভ্যাট নাই ।
কিন্তু এই হাওয়াই চপ্পল পণ্যের ওপর কেন বা কি কারণে ভ্যাট আরোপ হবে সেই ব্যাপারে সরকার পরিষ্কার করানো ধারণা দিতে পারেনি ব্যবসায়ীদের ।
রাবারের ও প্লাস্টিকের চপ্পল রিসাইক্লিং এর মাধ্যমে উৎপাদন হয়ে থাকে । যা পরিবেশ দূষণ রোধে সহায় ভূমিকা পালন করে থাকে। তাহলে এই পণ্যের ভ্যাট কেন সংযোজন করা হবে?
ব্যবসায়ীদের মতে নিম্ন আয়ের এই পণ্যের উপর ভ্যাট ও করের বোঝা চাপানো হলে দেশের শ্রমজীবী ও নির্ণয়ের বৃহৎ জনগোষ্ঠী যথা কৃষক শ্রমিক দিনমজুর রিক্সা ভ্যানওয়ালা ভিক্ষুক সহ প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হবে ।
আর ভোক্তারা ক্রয় ক্ষমতা আড়ালে এই পণ্যের অধিকাংশ কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে বাংলাদেশ পাদুকা প্রস্তুতকারক সমিতির পক্ষ থেকে ।
সমিতির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে,
উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি হলে এবং ১৫% ভ্যাট আরোপ করা হলে উৎপাদন খরচ ব্যাপকভাবে বেড়ে যাবে । যারা বিক্রির ক্ষেত্রে দাম বাড়ানোর কাজ সৃষ্টি করবে ।
ক্রেতার ক্ষতি হবে। নিম্নের মানুষেরা এই পণ্য কিনতে অপারগ হবে ।
শিল্প ধ্বংস হবে। অধিকাংশ ক্ষুদ্র ও মাঝারি কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
যা ব্যাপক বেকারত্ব সৃষ্টি করবে।
পরিবেশের প্রভাব পড়বে। প্লাস্টিক ও রাবার দিয়ে তৈরি হাওয়াই চপ্পল উপাধ্যক্ষ মূলত এটি সাইকেল পদ্ধতির মাধ্যমে উৎপাদিত পরিবেশবান্ধব পণ্য।
এই পণ্য উৎপাদনের প্রধান উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা হয় পরিত্যক্ত রাবার ও প্লাস্টিক জাতীয় অপচনশীল দ্রব্য, যা স্বাভাবিকভাবে পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকারক।
উক্ত মানববন্ধন কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন,
বাংলাদেশ পাদুকা প্রস্তুতকারক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কুদ্দুস রানা, সিনিয়র সহ-সভাপতি মোঃ রেজাউল করিম, সহ-সভাপতি আশরাফ উদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান রহমান সাজু, সহসাংগঠনিক সম্পাদক আতিকুর রহমান, উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ এবং বিভিন্ন পাদুকা প্রতিষ্ঠানের মালিক কর্মকর্তা কর্মচারী ও কারখানা শ্রমিকরা ।
সকাল থেকেই বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগত এই শ্রমিকরা তাদের হাওয়াই চপ্পলের উপরে ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবী জানিয়েছে সরকারের কাছে । অন্যথায় তারা বৃহত্তর কর্মসূচি দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে ।
দেলোয়ার হোসেন, ঢাকা ব্যুরো 






































