বৃহস্পতিবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পুলিশকে সগৌরবে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা হচ্ছে: আইজিপি

ছবি: আজকের পত্রিকা

পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম জানিয়েছেন-বাংলাদেশ পুলিশকে সগৌরবে ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করা হচ্ছে।

আজ বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) সকালে রংপুর বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মানবাধিকার ও পরিবেশের ওপর গুরুত্বসহ আইন প্রয়োগবিষয়ক কর্মশালায় এ কথা বলেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, ৫ আগস্টের আগে স্বৈরাচারী সরকার পুলিশকে ক্ষমতা প্রলম্বিত করার জন্য ব্যবহার করেছে। অনেক পুলিশ অতিউৎসাহী হয়ে মানুষকে অত্যাচার করেছে। অনেকেই চাপে পরে কাজ করেছে। যে যেভাবেই করুক না কেন, অবশ্যই অপরাধীদের বিচার হবে।

এ সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনির সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি বক্তব্য দেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন- অ্যাটর্নি জেনারেল মো আসাদুজ্জামান, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্পেশাল প্রসিকিউটরিয়াল অ্যাডভোকেট এহসানুল হক সমাজীসহ ৮ জেলার পুলিশ সুপার, জেলা প্রশাসক, জেলা ও দায়রা জজ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলনে।

আইজিপি বলেন, ‘আগস্টের পরে আমরা বৈষম্যহীন একটি বাংলাদেশ গড়ার কাজে লিপ্ত। ৫ আগস্টের আগে যে স্বৈরাচার সরকার মানুষের ওপর যে স্টিমরোলার চালিয়েছে তার স্মৃতি আমাদেরকে এখনো বহন করে নিতে হচ্ছে। প্রায় এক হাজার শহিদ এবং আন্দোলনে আহত কয়েক হাজার ছাত্রের স্মৃতি আমাদেরকে মনে করিয়ে দেয় বিগত সময়ে অসহনীয় পরিস্থিতিতে আমরা কালক্ষেপণ করেছি। ৫ আগস্টের আগে যেসব অন্যায় হয়েছে সেগুলোর সঠিক বিচার করতে না পারলে বা মানুষ যদি ন্যায়বিচার না পায় তাহলে জাতি আমাদেরকে ক্ষমা করবে না। এই প্রয়াসটা যেন সুসম্পন্ন হয়। সম্মানিত পুলিশ সুপার, ওসি, ইউএনও, এবং ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সম্মিলিত প্রয়াস দরকার আছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘অনেক মামলা হয়েছে। যেখানে ৫ আগস্টের পরে যথাযথভাবে মামলা হয়নি। একই ঘটনায় কয়েকটি মামলা হয়েছে এবং শহিদের অনেক ঘটনায় আমরা পোস্টমর্টেম করতে পারি নাই। অনেক মা গোপনে ঝোপঝারে তার সন্তানকে কবর দিয়েছেন, বলতেও পারেন নাই। বললে তো তোমার সন্তান কেন আন্দোলনে গিয়েছে এমন প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হতো। কাদার স্বাধীনতাও ছিল না। এই অবস্থায় পোস্টমর্টেম রিপোর্ট পাওয়াটা স্বপ্নের মতো ব্যাপার। যেখানে কবর দিতে পারছে না সেখানে হাসপাতালে নিয়ে পোস্টমর্টেম করানো অকল্পনীয় একটা জিনিস। এই পোস্টমর্টেম না করে বিচার করতে না পারলে আইনের প্রতি সুবিচার হয়ত করতে পারব না।’

এ সময় বিচারকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘যারা বিচারক, ঈশ্বরের পরে মানুষ তাদেরকে স্থান দেয়। তাদের বিবেকের ওপরেই নির্ভর করে একজন মানুষের শাস্তি মৃত্যু অথবা খালাস। এখানে অবশ্যই বিবেককে কাজে লাগাবেন। আইন অবশ্যই একটা গাইডলাইন হিসেবে কাজ করবে। শহিদদের যে আত্মত্যাগ, তাদের যে সম্মান, জাতি যেভাবে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ, যে নতুন দেশ আমরা গড়তে যাচ্ছি, আমার বিশ্বাস, বিবেকের সর্বোচ্চ প্রয়োগ করে সুবিচার দিবেন।’

নাগরিক সমাজের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘পুলিশকে আবার আপনারা কাছে টেনে নেন। তাদেরকে কাজ করতে সহায়তা করেন। বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় দেখা গেছে পুলিশ আইন প্রয়োগ করতে গিয়ে মানুষের আক্রমণের শিকার হচ্ছে। এটা আবেগের বিষয়। হয়তো তাদের অতীত স্মৃতি মনে পড়ে। হয়তো কাজ করতে গিয়ে মানুষের সঙ্গে অন্যায় আচরণ করেছে গণবিরোধী কাজ করেছে।’

পুলিশের মহাপরিচালক বলেন, ৫ আগস্টের পরে চেষ্টা করছি যারা অপরাধী, তাদেরকে সরিয়ে দিয়ে বা বিচারের আওতায় এনে পুলিশকে আবার তার সগৌরবে ফিরিয়ে আনতে, আবার কর্মক্ষমতা করে তুলতে, মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে।

জনপ্রিয়

বেগম জিয়ার সর্বশেষ অবস্থা জানাবেন ডা. জাহিদ 

পুলিশকে সগৌরবে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা হচ্ছে: আইজিপি

প্রকাশের সময় : ০৪:১১:০৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ মার্চ ২০২৫

পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম জানিয়েছেন-বাংলাদেশ পুলিশকে সগৌরবে ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করা হচ্ছে।

আজ বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) সকালে রংপুর বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মানবাধিকার ও পরিবেশের ওপর গুরুত্বসহ আইন প্রয়োগবিষয়ক কর্মশালায় এ কথা বলেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, ৫ আগস্টের আগে স্বৈরাচারী সরকার পুলিশকে ক্ষমতা প্রলম্বিত করার জন্য ব্যবহার করেছে। অনেক পুলিশ অতিউৎসাহী হয়ে মানুষকে অত্যাচার করেছে। অনেকেই চাপে পরে কাজ করেছে। যে যেভাবেই করুক না কেন, অবশ্যই অপরাধীদের বিচার হবে।

এ সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনির সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি বক্তব্য দেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন- অ্যাটর্নি জেনারেল মো আসাদুজ্জামান, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্পেশাল প্রসিকিউটরিয়াল অ্যাডভোকেট এহসানুল হক সমাজীসহ ৮ জেলার পুলিশ সুপার, জেলা প্রশাসক, জেলা ও দায়রা জজ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলনে।

আইজিপি বলেন, ‘আগস্টের পরে আমরা বৈষম্যহীন একটি বাংলাদেশ গড়ার কাজে লিপ্ত। ৫ আগস্টের আগে যে স্বৈরাচার সরকার মানুষের ওপর যে স্টিমরোলার চালিয়েছে তার স্মৃতি আমাদেরকে এখনো বহন করে নিতে হচ্ছে। প্রায় এক হাজার শহিদ এবং আন্দোলনে আহত কয়েক হাজার ছাত্রের স্মৃতি আমাদেরকে মনে করিয়ে দেয় বিগত সময়ে অসহনীয় পরিস্থিতিতে আমরা কালক্ষেপণ করেছি। ৫ আগস্টের আগে যেসব অন্যায় হয়েছে সেগুলোর সঠিক বিচার করতে না পারলে বা মানুষ যদি ন্যায়বিচার না পায় তাহলে জাতি আমাদেরকে ক্ষমা করবে না। এই প্রয়াসটা যেন সুসম্পন্ন হয়। সম্মানিত পুলিশ সুপার, ওসি, ইউএনও, এবং ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সম্মিলিত প্রয়াস দরকার আছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘অনেক মামলা হয়েছে। যেখানে ৫ আগস্টের পরে যথাযথভাবে মামলা হয়নি। একই ঘটনায় কয়েকটি মামলা হয়েছে এবং শহিদের অনেক ঘটনায় আমরা পোস্টমর্টেম করতে পারি নাই। অনেক মা গোপনে ঝোপঝারে তার সন্তানকে কবর দিয়েছেন, বলতেও পারেন নাই। বললে তো তোমার সন্তান কেন আন্দোলনে গিয়েছে এমন প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হতো। কাদার স্বাধীনতাও ছিল না। এই অবস্থায় পোস্টমর্টেম রিপোর্ট পাওয়াটা স্বপ্নের মতো ব্যাপার। যেখানে কবর দিতে পারছে না সেখানে হাসপাতালে নিয়ে পোস্টমর্টেম করানো অকল্পনীয় একটা জিনিস। এই পোস্টমর্টেম না করে বিচার করতে না পারলে আইনের প্রতি সুবিচার হয়ত করতে পারব না।’

এ সময় বিচারকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘যারা বিচারক, ঈশ্বরের পরে মানুষ তাদেরকে স্থান দেয়। তাদের বিবেকের ওপরেই নির্ভর করে একজন মানুষের শাস্তি মৃত্যু অথবা খালাস। এখানে অবশ্যই বিবেককে কাজে লাগাবেন। আইন অবশ্যই একটা গাইডলাইন হিসেবে কাজ করবে। শহিদদের যে আত্মত্যাগ, তাদের যে সম্মান, জাতি যেভাবে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ, যে নতুন দেশ আমরা গড়তে যাচ্ছি, আমার বিশ্বাস, বিবেকের সর্বোচ্চ প্রয়োগ করে সুবিচার দিবেন।’

নাগরিক সমাজের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘পুলিশকে আবার আপনারা কাছে টেনে নেন। তাদেরকে কাজ করতে সহায়তা করেন। বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় দেখা গেছে পুলিশ আইন প্রয়োগ করতে গিয়ে মানুষের আক্রমণের শিকার হচ্ছে। এটা আবেগের বিষয়। হয়তো তাদের অতীত স্মৃতি মনে পড়ে। হয়তো কাজ করতে গিয়ে মানুষের সঙ্গে অন্যায় আচরণ করেছে গণবিরোধী কাজ করেছে।’

পুলিশের মহাপরিচালক বলেন, ৫ আগস্টের পরে চেষ্টা করছি যারা অপরাধী, তাদেরকে সরিয়ে দিয়ে বা বিচারের আওতায় এনে পুলিশকে আবার তার সগৌরবে ফিরিয়ে আনতে, আবার কর্মক্ষমতা করে তুলতে, মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে।