শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

চোখের নিচে কালো দাগ, কীসের ইঙ্গিত?

ছবি : সংগৃহীত

চোখের নিচে কালো দাগ বা ডার্ক সার্কেল নিয়ে অনেকেই চিন্তায় থাকেন। ক্লান্তি বা ঘুমের ঘাটতির কারণে এমনটা হতে পারে, তবে একমাত্র এটিই নয়। আরও অনেক কারণ রয়েছে যা এই দাগ তৈরি করে। চোখের নিচে এই কালচে দাগ কীসের ইঙ্গিত, সমাধানের উপায় নিয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন চিকিৎসক। মেডিকেল নিউজ টুডের প্রতিবেদে উঠে এসেছে বিস্তারিত।

চোখের নিচে কালো দাগের কারণ:

চিকিৎসকরা জানান, বিভিন্ন কারণেই ডার্ক সার্কেল দেখা দিতে পারে। এর মধ্যে কিছু সাধারণ কারণ হলো:

  • ঘুমের ঘাটতি বা অনিয়মিত ঘুম
  • অ্যালার্জি
  • অতিরিক্ত মেলানিন উৎপাদন (হাইপারপিগমেন্টেশন)
  • চোখের আশেপাশে চর্বির পরিমাণ কমে যাওয়া
  • পাতলা ত্বক
  • আয়রনের ঘাটতির কারণে অ্যানিমিয়া
  • অতিরিক্ত রোদে থাকা
  • চোখ বারবার ঘষা
  • ধূমপান
  • থাইরয়েডের সমস্যা
  • পানিশূন্যতা
  • চর্মরোগ (ডার্মাটাইটিস)
  • গ্লকোমার জন্য ব্যবহৃত কিছু আইড্রপ যেমন বিম্যাটোপ্রোস্ট ও লাটানোপ্রোস্ট

চোখের নিচের কালো দাগ যখন ঝুঁকির কারণ: 

চিকিৎসকদের মতে, চোখের নিচে কালো দাগের পেছনে কিছু নির্দিষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ কারণ রয়েছে, যেগুলো আপনার জিনগত গঠন, বয়স বা বর্ণভেদে প্রভাব ফেলতে পারে। নিচে এসব ঝুঁকির বিষয়গুলো বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলো:

বর্ণগত প্রভাব:

গাঢ় ত্বকের অধিকারী ব্যক্তিদের মধ্যে চোখের নিচে কালো দাগ দেখা যাওয়ার প্রবণতা তুলনামূলকভাবে বেশি। এর প্রধান কারণ হলো পিগমেন্টেশন বা মেলানিনের পার্থক্য। গাঢ় ত্বকে মেলানিন নামক রঞ্জকের পরিমাণ বেশি থাকে, যা চোখের নিচে অতিরিক্ত পিগমেন্ট জমে কালচে দাগ সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়া চোখের নিচের ত্বকে সামান্য জ্বালা বা ঘর্ষণও এই পিগমেন্টেশন বাড়িয়ে দিতে পারে, ফলে দাগ আরও দৃশ্যমান হয়ে ওঠে। এ কারণে অনেকের চোখের নিচে কালো দাগ থাকলেও তারা শারীরিকভাবে সুস্থ থাকেন, এটি শুধুই তাদের ত্বকের গঠন ও রঙের বৈশিষ্ট্য।

বয়সজনিত পরিবর্তন:

 বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমাদের ত্বকে স্বাভাবিকভাবেই কিছু পরিবর্তন আসে। চোখের নিচের অংশে এসব পরিবর্তনের প্রভাব বেশি পড়ে, যেমন:

  • চর্বির স্তর কমে যাওয়া: বয়স বাড়লে চোখের নিচে থাকা প্রাকৃতিক চর্বির স্তর হ্রাস পায়, ফলে ওই জায়গাটি ফাঁপা ও কালচে দেখায়।
  • ত্বকের পাতলা হয়ে যাওয়া: বয়সের সঙ্গে ত্বক তার স্থিতিস্থাপকতা ও পুরুত্ব হারায়। পাতলা ত্বকের নিচের রক্তনালিগুলো সহজেই দৃশ্যমান হয়, যার ফলে চোখের নিচে গাঢ় ছায়া বা কালো দাগ দেখা দেয়।
  • টিয়ার ট্রাফ: চোখের নিচে একটি স্বাভাবিক গর্ত বা খাঁজ তৈরি হয়, যাকে টিয়ার ট্রাফ বলা হয়। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই খাঁজ আরও গভীর হয় এবং দাগের মতো দেখায়। এটি বয়সজনিত পরিবর্তনের একটি স্বাভাবিক লক্ষণ, তবে অনেক সময় এটি ক্লান্তি বা অসুস্থতার ইঙ্গিত হিসেবে ভুল ব্যাখ্যা করা হয়।

জিনগত কারণ: চোখের নিচে কালো দাগ অনেক ক্ষেত্রেই বংশগত। অর্থাৎ, যদি পরিবারের অন্য সদস্যদেরও একই ধরনের দাগ থাকে, তাহলে সেটা আপনার মধ্যেও প্রকাশ পেতে পারে। জিনগতভাবে যারা চোখের নিচে পাতলা ত্বক, অল্প বয়সে টিয়ার ট্রাফ বা অতিরিক্ত পিগমেন্টেশন বহন করেন, তাদের এই সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। জিনগত কালো দাগ সাধারণত দূর করা কঠিন, তবে চিকিৎসা বা প্রসাধনীর মাধ্যমে কিছুটা হালকা করা সম্ভব।

ব্যবহৃত কালো বা সবুজ চায়ের ব্যাগ ঠান্ডা করে চোখে রাখলে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে ও দাগ হালকা হয়। ছবি: সংগৃহীত

ঘরোয়া প্রতিকারের উপায়: 

চোখের নিচের দাগ কমাতে কিছু ঘরোয়া উপায় রয়েছে যেগুলো অনেক সময় কার্যকর হতে পারে:

  • পর্যাপ্ত ঘুম: প্রতিরাতে পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন। অতিরিক্ত একটি বালিশ ব্যবহার করে মাথা একটু উঁচু করে শুলে চোখ ফোলাভাব ও দাগ কমতে পারে।
  •  শসা: শসার টুকরো চোখে দিয়ে রাখলে ক্লান্ত চোখ আরাম পায় ও ফোলাভাব কমে।
  • টি ব্যাগ: ব্যবহৃত কালো বা সবুজ চায়ের ব্যাগ ঠান্ডা করে চোখে রাখলে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে ও দাগ হালকা হয়।
  •  ম্যাসাজ বা ফেসিয়াল: চোখের চারপাশে হালকা ম্যাসাজ করলে রক্ত চলাচল ভালো হয়।
  •  ঠান্ডা কমপ্রেস: ঠান্ডা পানি বা বরফপট্টি চোখে রাখলে ফোলাভাব ও দাগ কমে।
  • অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যুক্ত ক্রিম: ভিটামিন সি এবং ই সমৃদ্ধ ক্রিম ব্যবহার করা যেতে পারে।

চোখের নিচে কালো দাগ যেকোনো বয়সের বা বর্ণের মানুষেরই হতে পারে। কখনো তা শারীরিক অসুস্থতার ইঙ্গিত দেয়, আবার কখনো এটি নিছক জিনগত বা বয়সজনিত বিষয়। জীবনযাত্রায় সামান্য পরিবর্তন, ঘরোয়া যত্ন এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শে আপনি সহজেই এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।  চিকিৎসকরা বিভিন্ন পরীক্ষানিরীক্ষা করে চোখ কালো হওয়ার পেছনের কারণ জেনে সমাধানের উপায় জানাবেন।

জনপ্রিয়

টাঙ্গাইলের শাড়ি পরে বড়দিন উদযাপন করলেন ব্রিটিশ হাইকমিশনার

চোখের নিচে কালো দাগ, কীসের ইঙ্গিত?

প্রকাশের সময় : ০২:৩৭:১৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫

চোখের নিচে কালো দাগ বা ডার্ক সার্কেল নিয়ে অনেকেই চিন্তায় থাকেন। ক্লান্তি বা ঘুমের ঘাটতির কারণে এমনটা হতে পারে, তবে একমাত্র এটিই নয়। আরও অনেক কারণ রয়েছে যা এই দাগ তৈরি করে। চোখের নিচে এই কালচে দাগ কীসের ইঙ্গিত, সমাধানের উপায় নিয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন চিকিৎসক। মেডিকেল নিউজ টুডের প্রতিবেদে উঠে এসেছে বিস্তারিত।

চোখের নিচে কালো দাগের কারণ:

চিকিৎসকরা জানান, বিভিন্ন কারণেই ডার্ক সার্কেল দেখা দিতে পারে। এর মধ্যে কিছু সাধারণ কারণ হলো:

  • ঘুমের ঘাটতি বা অনিয়মিত ঘুম
  • অ্যালার্জি
  • অতিরিক্ত মেলানিন উৎপাদন (হাইপারপিগমেন্টেশন)
  • চোখের আশেপাশে চর্বির পরিমাণ কমে যাওয়া
  • পাতলা ত্বক
  • আয়রনের ঘাটতির কারণে অ্যানিমিয়া
  • অতিরিক্ত রোদে থাকা
  • চোখ বারবার ঘষা
  • ধূমপান
  • থাইরয়েডের সমস্যা
  • পানিশূন্যতা
  • চর্মরোগ (ডার্মাটাইটিস)
  • গ্লকোমার জন্য ব্যবহৃত কিছু আইড্রপ যেমন বিম্যাটোপ্রোস্ট ও লাটানোপ্রোস্ট

চোখের নিচের কালো দাগ যখন ঝুঁকির কারণ: 

চিকিৎসকদের মতে, চোখের নিচে কালো দাগের পেছনে কিছু নির্দিষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ কারণ রয়েছে, যেগুলো আপনার জিনগত গঠন, বয়স বা বর্ণভেদে প্রভাব ফেলতে পারে। নিচে এসব ঝুঁকির বিষয়গুলো বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলো:

বর্ণগত প্রভাব:

গাঢ় ত্বকের অধিকারী ব্যক্তিদের মধ্যে চোখের নিচে কালো দাগ দেখা যাওয়ার প্রবণতা তুলনামূলকভাবে বেশি। এর প্রধান কারণ হলো পিগমেন্টেশন বা মেলানিনের পার্থক্য। গাঢ় ত্বকে মেলানিন নামক রঞ্জকের পরিমাণ বেশি থাকে, যা চোখের নিচে অতিরিক্ত পিগমেন্ট জমে কালচে দাগ সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়া চোখের নিচের ত্বকে সামান্য জ্বালা বা ঘর্ষণও এই পিগমেন্টেশন বাড়িয়ে দিতে পারে, ফলে দাগ আরও দৃশ্যমান হয়ে ওঠে। এ কারণে অনেকের চোখের নিচে কালো দাগ থাকলেও তারা শারীরিকভাবে সুস্থ থাকেন, এটি শুধুই তাদের ত্বকের গঠন ও রঙের বৈশিষ্ট্য।

বয়সজনিত পরিবর্তন:

 বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমাদের ত্বকে স্বাভাবিকভাবেই কিছু পরিবর্তন আসে। চোখের নিচের অংশে এসব পরিবর্তনের প্রভাব বেশি পড়ে, যেমন:

  • চর্বির স্তর কমে যাওয়া: বয়স বাড়লে চোখের নিচে থাকা প্রাকৃতিক চর্বির স্তর হ্রাস পায়, ফলে ওই জায়গাটি ফাঁপা ও কালচে দেখায়।
  • ত্বকের পাতলা হয়ে যাওয়া: বয়সের সঙ্গে ত্বক তার স্থিতিস্থাপকতা ও পুরুত্ব হারায়। পাতলা ত্বকের নিচের রক্তনালিগুলো সহজেই দৃশ্যমান হয়, যার ফলে চোখের নিচে গাঢ় ছায়া বা কালো দাগ দেখা দেয়।
  • টিয়ার ট্রাফ: চোখের নিচে একটি স্বাভাবিক গর্ত বা খাঁজ তৈরি হয়, যাকে টিয়ার ট্রাফ বলা হয়। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই খাঁজ আরও গভীর হয় এবং দাগের মতো দেখায়। এটি বয়সজনিত পরিবর্তনের একটি স্বাভাবিক লক্ষণ, তবে অনেক সময় এটি ক্লান্তি বা অসুস্থতার ইঙ্গিত হিসেবে ভুল ব্যাখ্যা করা হয়।

জিনগত কারণ: চোখের নিচে কালো দাগ অনেক ক্ষেত্রেই বংশগত। অর্থাৎ, যদি পরিবারের অন্য সদস্যদেরও একই ধরনের দাগ থাকে, তাহলে সেটা আপনার মধ্যেও প্রকাশ পেতে পারে। জিনগতভাবে যারা চোখের নিচে পাতলা ত্বক, অল্প বয়সে টিয়ার ট্রাফ বা অতিরিক্ত পিগমেন্টেশন বহন করেন, তাদের এই সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। জিনগত কালো দাগ সাধারণত দূর করা কঠিন, তবে চিকিৎসা বা প্রসাধনীর মাধ্যমে কিছুটা হালকা করা সম্ভব।

ব্যবহৃত কালো বা সবুজ চায়ের ব্যাগ ঠান্ডা করে চোখে রাখলে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে ও দাগ হালকা হয়। ছবি: সংগৃহীত

ঘরোয়া প্রতিকারের উপায়: 

চোখের নিচের দাগ কমাতে কিছু ঘরোয়া উপায় রয়েছে যেগুলো অনেক সময় কার্যকর হতে পারে:

  • পর্যাপ্ত ঘুম: প্রতিরাতে পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন। অতিরিক্ত একটি বালিশ ব্যবহার করে মাথা একটু উঁচু করে শুলে চোখ ফোলাভাব ও দাগ কমতে পারে।
  •  শসা: শসার টুকরো চোখে দিয়ে রাখলে ক্লান্ত চোখ আরাম পায় ও ফোলাভাব কমে।
  • টি ব্যাগ: ব্যবহৃত কালো বা সবুজ চায়ের ব্যাগ ঠান্ডা করে চোখে রাখলে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে ও দাগ হালকা হয়।
  •  ম্যাসাজ বা ফেসিয়াল: চোখের চারপাশে হালকা ম্যাসাজ করলে রক্ত চলাচল ভালো হয়।
  •  ঠান্ডা কমপ্রেস: ঠান্ডা পানি বা বরফপট্টি চোখে রাখলে ফোলাভাব ও দাগ কমে।
  • অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যুক্ত ক্রিম: ভিটামিন সি এবং ই সমৃদ্ধ ক্রিম ব্যবহার করা যেতে পারে।

চোখের নিচে কালো দাগ যেকোনো বয়সের বা বর্ণের মানুষেরই হতে পারে। কখনো তা শারীরিক অসুস্থতার ইঙ্গিত দেয়, আবার কখনো এটি নিছক জিনগত বা বয়সজনিত বিষয়। জীবনযাত্রায় সামান্য পরিবর্তন, ঘরোয়া যত্ন এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শে আপনি সহজেই এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।  চিকিৎসকরা বিভিন্ন পরীক্ষানিরীক্ষা করে চোখ কালো হওয়ার পেছনের কারণ জেনে সমাধানের উপায় জানাবেন।