বুধবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বকশীগঞ্জে দশানী নদীতে বাঁধ,  ডুবেছে হাজার বিঘা জমির কাঁচা-পাকা ধান

বকশীগঞ্জ (জামালপুর) প্রতিনিধি 
নদীর প্রবাহমান পানি বন্ধ ও প্রকৃতির ওপর আধিপত্যের বিস্তার খাটিয়ে জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার মেরুরচর ইউনিয়ন ও পার্শ্ববর্তী দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার বাহাদুরাবাদ ইউনিয়নের দশানী নদীতে পাল্টাপাল্টি কৃত্রিম বাঁধ নির্মাণ করেছে স্থানীয়রা। প্রবাহমান কোন জলাশয়ে কোনো ধরনের বাঁধ, স্থায়ী অবকাঠামো বা অন্য কোনোভাবে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যাবেনা যা ফৌজদারি অপরাধ। তবুও আইনকে অমান্য করে নদীর প্রবাহমান পানি বন্ধে দিচ্ছে বাঁধ। আর এই  বাঁধের কারনে পাহাড়ি ঢলের পানিতে উজানের এলাকায়  তলিয়ে গেছে  শতশত একর জমির কাচাপাকা ধান। অস্তিত্ব সংকটের মুখে পড়েছে দশানী নদী। আর নদীর বুকে বাঁধ নির্মাণকে কেন্দ্র করে দুই উপজেলার কয়েক গ্রামের মানুষ মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়েছে। দ্রুত বাঁধ অপসারণ করে ফসল রক্ষার দাবি কৃষকদের। আর স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলছেন প্রশাসনের পক্ষে তারা বাধ অপসারণে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের একটি শাখা দশানী নদী। দশানী নদী দেওয়ানগঞ্জ ও বকশীগঞ্জ উপজেলার মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। দশানীর একটি শাখা দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার বাহাদুরাবাদ ইউনিয়নের মাদারেরচর খাপড়াপাড়া গ্রামের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এতে মাদারেরচর খাপরাপাড়া, ঘুঘরাকান্দি, চর আইরমারী, মুন্দিপাড়া, মুন্সিপাড়া, কলকিহারা ও বাঘাডুবাসহ নদী ভাঙ্গনের কবলে পরে ১১টি গ্রামের মানুষ। গত এক সপ্তাহ আগে ওই শাখা নদীতে বাঁধ দেন স্থানীয় এলাকাবাসী।  গত কয়েক বছরে তাদের অনেক ঘরবাড়ি ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলীণ হয়েছে। প্রশাসনের ধারে ধারে ঘুরেও কোন সুফল পাননি তারা। তারা বলছেন ফসলিজমি ঘরবাড়ি, মসজিদ মাদ্রাসা রক্ষার জন্য বাধ হয়ে বাঁধ নির্মান করেছেন। তাদের এই বাঁধ নির্মানে ক্ষিপ্ত হয়ে দশানী নদীর মূল স্রোত ধারায় পাল্টা পাল্টি বাঁধ নির্মাণ করেছেন বকশীগঞ্জের মেরুরচর ও সাধুরপাড়া ইউনিয়নের চরাঞ্চলের মানুষরা।
অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণের কারনে কৃত্রিম বন্যার সৃষ্টি হয়ে উজানের গাজির পাড়া,চরগাজিরপাড়া, বাঙ্গালপাড়া, কুতুবেরচর, কলাকান্দা, দপরপাড়া, কলাকান্দাসহ আরো কয়েকটি গ্রামের শতশত একর ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। শত শত একর জমির ধান নষ্ট হচ্ছে কৃত্রিম বন্যার কারনে। দশানী নদীর দুই অংশে পাল্টাপাল্টি বাঁধ নির্মাণ করায় দশানী নদীর অস্তিত্ব বিলিনের পথে আর হুমকির মুখে পড়েছে নদী কেন্দ্রিক জীববৈচিত্র্য। নদীর বুকে পাল্টাপাল্টি নির্মিত বাঁধ স্থায়ী হলে দীর্ঘস্থায়ী ভোগান্তিতে পরবে দুই উপজেলার প্রায় পনেরটি গ্রামের বাসিন্দা।
এই সংকট দ্রুত সমাধান করতে না পারলে দশানী নদী পুরোপুরি জীববৈচিত্র্যহীন হয়ে পড়বে। নদীর ওপর নির্ভরশীল মানুষের জীবন জীবিকাও বিপর্যস্ত হবে আর বর্ষা মৌসুমে সাধুরপাড়া ইউনিয়নের কামালেরবাত্তী পর্যন্ত হাজার হাজার হেক্টর কৃষিজমি প্লাবিত হবে এবং শুকনো মৌসুমে পানির চরম সংকট দেখা দিবে। খরস্রোতা দশানী নদী এক সময় পুরোপুরি বিলীন হয়ে যাবে।
নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষরা বলছেন, নিজেদের রক্ষা করতেই তারা বাধ নির্মান করেছেন। জীবন থাকতে তারা বাধ অপসারণ করবেন না। বাঁধের কারনে সৃষ্ট কৃত্রিম বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা বলছেন, শতশত বিঘা জমির ধান নষ্ট হয়ে গেছে। এই পানি স্থায়ী ভাবে থাকলে এই অঞ্চলের কৃষকরা চরম বিপর্যয়ের মূখে পড়বে। তাই দ্রুত সময়ের মাঝে বাঁধ অপসারণের দাবি তাদের।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি জানালেন, বাঁধের কারনে সৃষ্ট বন্যায় হাজার হাজার বিঘা জমির ফসল নষ্ট হচ্ছে। প্রশাসনের পক্ষে তিনি বাঁধ অপসারণের জন্য কাজ করছেন। কিন্তু খেওয়ারচরে নদীর মূলস্রোতে বাঁধ নির্মানকারীদের সাথে কথা বলতে চাইলে তারা বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করেন।
বাঁধের কারনে সৃষ্ট বন্যা থেকে ফসল রক্ষা,  খরস্রোতা দশানী নদী রক্ষা এবং নদী কেন্দ্রিক জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সরকার দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করবে এমন প্রত্যাশী উপজেলাবাসীর।
বকশীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদ রানা নয়াদিগন্তকে জানিয়েছেন, “বিষয়টি যেহেতু দুই উপজেলার ঘটনা, তাই জেলা প্রশাসনকে অবগত করা হয়েছে। উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা পেলেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
জনপ্রিয়

পঞ্চগড়ে কৃষকের অধিকার ও অন্তর্ভুক্তিকরন এবং নারী ও শিশুর সহিংসতারোধে গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত

বকশীগঞ্জে দশানী নদীতে বাঁধ,  ডুবেছে হাজার বিঘা জমির কাঁচা-পাকা ধান

প্রকাশের সময় : ০৫:১৯:২৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫
বকশীগঞ্জ (জামালপুর) প্রতিনিধি 
নদীর প্রবাহমান পানি বন্ধ ও প্রকৃতির ওপর আধিপত্যের বিস্তার খাটিয়ে জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার মেরুরচর ইউনিয়ন ও পার্শ্ববর্তী দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার বাহাদুরাবাদ ইউনিয়নের দশানী নদীতে পাল্টাপাল্টি কৃত্রিম বাঁধ নির্মাণ করেছে স্থানীয়রা। প্রবাহমান কোন জলাশয়ে কোনো ধরনের বাঁধ, স্থায়ী অবকাঠামো বা অন্য কোনোভাবে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যাবেনা যা ফৌজদারি অপরাধ। তবুও আইনকে অমান্য করে নদীর প্রবাহমান পানি বন্ধে দিচ্ছে বাঁধ। আর এই  বাঁধের কারনে পাহাড়ি ঢলের পানিতে উজানের এলাকায়  তলিয়ে গেছে  শতশত একর জমির কাচাপাকা ধান। অস্তিত্ব সংকটের মুখে পড়েছে দশানী নদী। আর নদীর বুকে বাঁধ নির্মাণকে কেন্দ্র করে দুই উপজেলার কয়েক গ্রামের মানুষ মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়েছে। দ্রুত বাঁধ অপসারণ করে ফসল রক্ষার দাবি কৃষকদের। আর স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলছেন প্রশাসনের পক্ষে তারা বাধ অপসারণে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের একটি শাখা দশানী নদী। দশানী নদী দেওয়ানগঞ্জ ও বকশীগঞ্জ উপজেলার মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। দশানীর একটি শাখা দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার বাহাদুরাবাদ ইউনিয়নের মাদারেরচর খাপড়াপাড়া গ্রামের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এতে মাদারেরচর খাপরাপাড়া, ঘুঘরাকান্দি, চর আইরমারী, মুন্দিপাড়া, মুন্সিপাড়া, কলকিহারা ও বাঘাডুবাসহ নদী ভাঙ্গনের কবলে পরে ১১টি গ্রামের মানুষ। গত এক সপ্তাহ আগে ওই শাখা নদীতে বাঁধ দেন স্থানীয় এলাকাবাসী।  গত কয়েক বছরে তাদের অনেক ঘরবাড়ি ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলীণ হয়েছে। প্রশাসনের ধারে ধারে ঘুরেও কোন সুফল পাননি তারা। তারা বলছেন ফসলিজমি ঘরবাড়ি, মসজিদ মাদ্রাসা রক্ষার জন্য বাধ হয়ে বাঁধ নির্মান করেছেন। তাদের এই বাঁধ নির্মানে ক্ষিপ্ত হয়ে দশানী নদীর মূল স্রোত ধারায় পাল্টা পাল্টি বাঁধ নির্মাণ করেছেন বকশীগঞ্জের মেরুরচর ও সাধুরপাড়া ইউনিয়নের চরাঞ্চলের মানুষরা।
অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণের কারনে কৃত্রিম বন্যার সৃষ্টি হয়ে উজানের গাজির পাড়া,চরগাজিরপাড়া, বাঙ্গালপাড়া, কুতুবেরচর, কলাকান্দা, দপরপাড়া, কলাকান্দাসহ আরো কয়েকটি গ্রামের শতশত একর ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। শত শত একর জমির ধান নষ্ট হচ্ছে কৃত্রিম বন্যার কারনে। দশানী নদীর দুই অংশে পাল্টাপাল্টি বাঁধ নির্মাণ করায় দশানী নদীর অস্তিত্ব বিলিনের পথে আর হুমকির মুখে পড়েছে নদী কেন্দ্রিক জীববৈচিত্র্য। নদীর বুকে পাল্টাপাল্টি নির্মিত বাঁধ স্থায়ী হলে দীর্ঘস্থায়ী ভোগান্তিতে পরবে দুই উপজেলার প্রায় পনেরটি গ্রামের বাসিন্দা।
এই সংকট দ্রুত সমাধান করতে না পারলে দশানী নদী পুরোপুরি জীববৈচিত্র্যহীন হয়ে পড়বে। নদীর ওপর নির্ভরশীল মানুষের জীবন জীবিকাও বিপর্যস্ত হবে আর বর্ষা মৌসুমে সাধুরপাড়া ইউনিয়নের কামালেরবাত্তী পর্যন্ত হাজার হাজার হেক্টর কৃষিজমি প্লাবিত হবে এবং শুকনো মৌসুমে পানির চরম সংকট দেখা দিবে। খরস্রোতা দশানী নদী এক সময় পুরোপুরি বিলীন হয়ে যাবে।
নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষরা বলছেন, নিজেদের রক্ষা করতেই তারা বাধ নির্মান করেছেন। জীবন থাকতে তারা বাধ অপসারণ করবেন না। বাঁধের কারনে সৃষ্ট কৃত্রিম বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা বলছেন, শতশত বিঘা জমির ধান নষ্ট হয়ে গেছে। এই পানি স্থায়ী ভাবে থাকলে এই অঞ্চলের কৃষকরা চরম বিপর্যয়ের মূখে পড়বে। তাই দ্রুত সময়ের মাঝে বাঁধ অপসারণের দাবি তাদের।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি জানালেন, বাঁধের কারনে সৃষ্ট বন্যায় হাজার হাজার বিঘা জমির ফসল নষ্ট হচ্ছে। প্রশাসনের পক্ষে তিনি বাঁধ অপসারণের জন্য কাজ করছেন। কিন্তু খেওয়ারচরে নদীর মূলস্রোতে বাঁধ নির্মানকারীদের সাথে কথা বলতে চাইলে তারা বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করেন।
বাঁধের কারনে সৃষ্ট বন্যা থেকে ফসল রক্ষা,  খরস্রোতা দশানী নদী রক্ষা এবং নদী কেন্দ্রিক জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সরকার দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করবে এমন প্রত্যাশী উপজেলাবাসীর।
বকশীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদ রানা নয়াদিগন্তকে জানিয়েছেন, “বিষয়টি যেহেতু দুই উপজেলার ঘটনা, তাই জেলা প্রশাসনকে অবগত করা হয়েছে। উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা পেলেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”