বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কেরানীগঞ্জে আলোচিত ট্রিপল মার্ডার, মামলার প্রধান আসামি গ্রেপ্তার  

দেলোয়ার হোসেন, ঢাকা ব্যুরো 
সম্প্রতি কেরানীগঞ্জে আলোচিত ট্রিপল মার্ডারের ঘটনায় মূল আসামীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ । বেরিয়ে এসেছে হত্যাকাণ্ডের মূল রহস্য । মৃত দেহগুলোকে টুকরো টুকরো করে বিভিন্ন এলাকায় ফেলে দিয়েছিল হত্যাকারী । তারপরও বাঁচতে পারে নি সে। অবশেষে পুলিশের হাতে ধরা পড়তে হয়েছে তাকে। জিজ্ঞাসাবাদে এই হত্যাকারী জানিয়েছে সে তার কথিত স্ত্রী তার সন্তান সহ অন্য এক নারীকে প্রথমে গলা টিপে এবং পরে লাস গোপন করার জন্য টুকরো টুকরো করে বস্তায় ভরে বিভিন্ন এলাকায় ফেলে দেয় । এই ঘটনায় এলাকায় আলোচনার সৃষ্টি হয় । গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির নাম মোঃ মহিউদ্দিন আলাদার ওরফে শিমুল । তার বয়স আনুমানিক ৩১ বছর,। বাড়ি বাগেরহাট জেলার মোড়লগঞ্জ থানার গোয়ালবাড়ি গ্রামে । হত্যাকারী মহিউদ্দিন ওরফের শিমুল দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের মীরেরবাগ আসাদুল্লাহ এর বাড়িতে ভাড়া থাকতো। এছাড়া সে ঢাকার কদমতলী থানার জুরাইন এলাকায় দ্বিতীয় বিয়ে করে বসবাস করত বলে জানা গেছে ।
এই হত্যাকাণ্ডের উদঘাটন নিয়ে আজ বিকেলে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জানা যায়, গত ২৫ এ্রপ্রিল রাতে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের কালীগঞ্জ এলাকায় মাকসুদা টাওয়ার ও টোকিও মার্কেটের সামনে থেকে বস্তাবন্ধি অবস্থায় এক নারীর মাথাবিহীন খন্ডিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে পুলিশ এঘটনায় তদন্ত শুরু করলে বিগত ২৭ এপ্রিল বিকেলে বুড়িগঙ্গা নদী থেকে লাশের হাত ও পায়ের কিছু অংশ উদ্ধার হয়। পরে ধারনা করা হয় এই অংশগুলোও পূর্বের উদ্ধারকৃত লাশের অংশই হবে। সে অনুযায়ী তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ মোঃ মহিউদ্দিন হাওলাদার ওরফে শিমুল (৩১) কে গ্রেপ্তার করে। পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, খন্ডিত লাশের টুকরোগুলো একটি লাশের নয়, সেখানে দুজন নারীর লাশ রয়েছে। এছাড়া সে আরো একটি শিশু ছেলেকে হত্যা করেছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (কেরানীগঞ্জ সার্কেল) মোঃ জাহাঙ্গীর আলম দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানাধীন আগানগর এলাকার মাকসুদা গার্ডেন নামে একটি মার্কেটের সামনে বস্তাবন্ধি অবস্থায় এক নারীর মাথাবাহীন খন্ডিত লাশ উদ্ধার করি। পরে আমাদের একটি চৌকস টিম ঐ এলাকার বিভিন্ন সিসিটিভি ফুটেজ পর‌্যালোচনা করে রহস্য উৎঘাটনের কাজ শুরু করে। পরে বুড়িগ্ঙ্গা নদী থেকে লাশের আরো কিছু অংশ উদ্ধার হলে আমরা সেগুলো ডিএনএ টেস্টের জন্য ল্যাবে পাঠাই। এরই মধ্যে আমাদের চৌকস টিম রাজধানীর জুরাইন এলাকা থেকে আসামী মোঃ মহিউদ্দিন হাওলাদার ওরফে শিমুলকে আটক করে। পরে শিমুল জিজ্ঞাসাবাদে স্বিকার করে সে বিথী আক্তার নামে তার সাবেক স্ত্রীকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। সেটি দেখে ফেলায় বিথীর পরের ঘরের ছেলে রাফসান(৪)কেও শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। এসময় পাশের ঘর থেকে বিথীর সাবলেট ভাড়াটিয় নুপুর (২৫) নামে এক মেয়ে ছূটে এলে তাকেও সে হত্যা করে বলে স্বিকার করে।
জিজ্ঞাসাবাদে শিমুল জানায়, বিথী তার আগের স্ত্রী। তার সাথে ডিভোর্স হয়ে গেলে তার অন্যত্র বিয়ে হয়। সখানে তার রাফসান নামে একটি ছেলে সন্তান হিয়। সম্প্রতি বিথীর সাথে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আবার সম্পর্ক হলে বিথী তার বর্তমান স্বামীর কাছে কাপড়ের কারখানা ভাড়া নেওয়ার কথা বলে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানাধীন মীরেরবাগ এলাকায় বাসা ভাড়া নেয়। সেখানে বিথীর সাথে আসামী শিমুলের নিয়মিত দেখা সাক্ষাৎ হতো। এদিকে শিমুল আবার তার আরেক স্ত্রীকে নিয়ে রাজধানীর জুরাইনে ভাড়া থাকে। শিমুল বিথীর সাথে না থাকা এবং বিথী শিমুলকে আবারো বিয়ের জন্য চাপ দেয়ায় তাদের মধ্যে নিয়মিত ঝগড়া হতো। সেদিনও তাদের মধ্যে ঝগড়া হলে শিমুল বিথীর গলায় গমাছা পেচিয়ে হত্যা করে। পরে তার ছেলে ও সাবলেটে থাকা অন্য নারীকে হত্যা করে। পরে শিমুল ছুড়ি ও প্লাস্টিকের বস্তা এনে লাশগুলো বাথরুমে নিয়ে প্রথমে শিশুটির লাশ ৬ টুকরা করে। পরে অন্যান্য লাশ গুলোও টুকরো টুকরো করে। পরে শিশুটির লাশ দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানাধীন বেয়ারা এলাকায় একটি ঝোপের মধ্যে ফেলে দেয়। বিথীর লাশের কিছু অংশ দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানাধীন আগানগর এলাকার মাকসুদা গার্ডেন মার্কেটের সামনে ফেলে দেয়। আর লাশের হাত পাগুলো একটি বস্তায় পোস্তগোলা সেতু থেকে বুড়িগঙ্গায় ফেলে দেয়। সবশেষে একটি বস্তায় দুই নারী মাথা ও নুপুরের শরীর একটি বস্থায় ভড়ে বুড়িগঙ্গায় ফেলে দেয়। এসময় লাশ টুকরো করার ছুড়িও সে বুড়িগঙ্গায় ফেলে দেয়।
এবষিয় জানতে চাইলে বিথীর বর্তমান স্বামী মোঃ রুবেল বলেন, আমাদের বাড়ী শুভাঢ্যা উত্তর পাড়া এলাকায়। মাসখানেক আগে আমার স্ত্রী বললো সে কাপড়ের করাখানা চালু করবে তাই মিরেরবাগ এলাকয় বাসা ভাড়া নিবে। তাই আমি তাকে না করিনি। সেখানে সে একটি সাবলেট বাসা ভাড়া নিয়ে আমার ছেলেকে নিয়ে থাকতো। কিন্ত সেখানে যে তার আগের স্বামীর যাতায়াত ছিলো আমি জানতাম না। আমি এ হত্যাকান্ডের বিচার চাই।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (কেরানীগঞ্জ সার্কেল) মোঃ জাহাঙ্গীর আলম আরো বলেন, লাশ উদ্ধারের ঘটনায় এর আগেও মামলা হয়েছে। যেহেতু আসামীর দেখানো স্থান থেকে আজকে শিশুটির লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। সেহেতু আজকে আরো একটি হত্যা মামলা রজু হচ্ছে। আশা করি আগামীকাল আসামী আদালতেও স্বিকারোক্তি দেবে।
জনপ্রিয়

দেশের উদ্দেশ্যে বাসভবন ছাড়লেন তারেক রহমান

কেরানীগঞ্জে আলোচিত ট্রিপল মার্ডার, মামলার প্রধান আসামি গ্রেপ্তার  

প্রকাশের সময় : ০৯:৫১:৪৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫
দেলোয়ার হোসেন, ঢাকা ব্যুরো 
সম্প্রতি কেরানীগঞ্জে আলোচিত ট্রিপল মার্ডারের ঘটনায় মূল আসামীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ । বেরিয়ে এসেছে হত্যাকাণ্ডের মূল রহস্য । মৃত দেহগুলোকে টুকরো টুকরো করে বিভিন্ন এলাকায় ফেলে দিয়েছিল হত্যাকারী । তারপরও বাঁচতে পারে নি সে। অবশেষে পুলিশের হাতে ধরা পড়তে হয়েছে তাকে। জিজ্ঞাসাবাদে এই হত্যাকারী জানিয়েছে সে তার কথিত স্ত্রী তার সন্তান সহ অন্য এক নারীকে প্রথমে গলা টিপে এবং পরে লাস গোপন করার জন্য টুকরো টুকরো করে বস্তায় ভরে বিভিন্ন এলাকায় ফেলে দেয় । এই ঘটনায় এলাকায় আলোচনার সৃষ্টি হয় । গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির নাম মোঃ মহিউদ্দিন আলাদার ওরফে শিমুল । তার বয়স আনুমানিক ৩১ বছর,। বাড়ি বাগেরহাট জেলার মোড়লগঞ্জ থানার গোয়ালবাড়ি গ্রামে । হত্যাকারী মহিউদ্দিন ওরফের শিমুল দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের মীরেরবাগ আসাদুল্লাহ এর বাড়িতে ভাড়া থাকতো। এছাড়া সে ঢাকার কদমতলী থানার জুরাইন এলাকায় দ্বিতীয় বিয়ে করে বসবাস করত বলে জানা গেছে ।
এই হত্যাকাণ্ডের উদঘাটন নিয়ে আজ বিকেলে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জানা যায়, গত ২৫ এ্রপ্রিল রাতে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের কালীগঞ্জ এলাকায় মাকসুদা টাওয়ার ও টোকিও মার্কেটের সামনে থেকে বস্তাবন্ধি অবস্থায় এক নারীর মাথাবিহীন খন্ডিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে পুলিশ এঘটনায় তদন্ত শুরু করলে বিগত ২৭ এপ্রিল বিকেলে বুড়িগঙ্গা নদী থেকে লাশের হাত ও পায়ের কিছু অংশ উদ্ধার হয়। পরে ধারনা করা হয় এই অংশগুলোও পূর্বের উদ্ধারকৃত লাশের অংশই হবে। সে অনুযায়ী তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ মোঃ মহিউদ্দিন হাওলাদার ওরফে শিমুল (৩১) কে গ্রেপ্তার করে। পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, খন্ডিত লাশের টুকরোগুলো একটি লাশের নয়, সেখানে দুজন নারীর লাশ রয়েছে। এছাড়া সে আরো একটি শিশু ছেলেকে হত্যা করেছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (কেরানীগঞ্জ সার্কেল) মোঃ জাহাঙ্গীর আলম দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানাধীন আগানগর এলাকার মাকসুদা গার্ডেন নামে একটি মার্কেটের সামনে বস্তাবন্ধি অবস্থায় এক নারীর মাথাবাহীন খন্ডিত লাশ উদ্ধার করি। পরে আমাদের একটি চৌকস টিম ঐ এলাকার বিভিন্ন সিসিটিভি ফুটেজ পর‌্যালোচনা করে রহস্য উৎঘাটনের কাজ শুরু করে। পরে বুড়িগ্ঙ্গা নদী থেকে লাশের আরো কিছু অংশ উদ্ধার হলে আমরা সেগুলো ডিএনএ টেস্টের জন্য ল্যাবে পাঠাই। এরই মধ্যে আমাদের চৌকস টিম রাজধানীর জুরাইন এলাকা থেকে আসামী মোঃ মহিউদ্দিন হাওলাদার ওরফে শিমুলকে আটক করে। পরে শিমুল জিজ্ঞাসাবাদে স্বিকার করে সে বিথী আক্তার নামে তার সাবেক স্ত্রীকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। সেটি দেখে ফেলায় বিথীর পরের ঘরের ছেলে রাফসান(৪)কেও শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। এসময় পাশের ঘর থেকে বিথীর সাবলেট ভাড়াটিয় নুপুর (২৫) নামে এক মেয়ে ছূটে এলে তাকেও সে হত্যা করে বলে স্বিকার করে।
জিজ্ঞাসাবাদে শিমুল জানায়, বিথী তার আগের স্ত্রী। তার সাথে ডিভোর্স হয়ে গেলে তার অন্যত্র বিয়ে হয়। সখানে তার রাফসান নামে একটি ছেলে সন্তান হিয়। সম্প্রতি বিথীর সাথে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আবার সম্পর্ক হলে বিথী তার বর্তমান স্বামীর কাছে কাপড়ের কারখানা ভাড়া নেওয়ার কথা বলে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানাধীন মীরেরবাগ এলাকায় বাসা ভাড়া নেয়। সেখানে বিথীর সাথে আসামী শিমুলের নিয়মিত দেখা সাক্ষাৎ হতো। এদিকে শিমুল আবার তার আরেক স্ত্রীকে নিয়ে রাজধানীর জুরাইনে ভাড়া থাকে। শিমুল বিথীর সাথে না থাকা এবং বিথী শিমুলকে আবারো বিয়ের জন্য চাপ দেয়ায় তাদের মধ্যে নিয়মিত ঝগড়া হতো। সেদিনও তাদের মধ্যে ঝগড়া হলে শিমুল বিথীর গলায় গমাছা পেচিয়ে হত্যা করে। পরে তার ছেলে ও সাবলেটে থাকা অন্য নারীকে হত্যা করে। পরে শিমুল ছুড়ি ও প্লাস্টিকের বস্তা এনে লাশগুলো বাথরুমে নিয়ে প্রথমে শিশুটির লাশ ৬ টুকরা করে। পরে অন্যান্য লাশ গুলোও টুকরো টুকরো করে। পরে শিশুটির লাশ দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানাধীন বেয়ারা এলাকায় একটি ঝোপের মধ্যে ফেলে দেয়। বিথীর লাশের কিছু অংশ দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানাধীন আগানগর এলাকার মাকসুদা গার্ডেন মার্কেটের সামনে ফেলে দেয়। আর লাশের হাত পাগুলো একটি বস্তায় পোস্তগোলা সেতু থেকে বুড়িগঙ্গায় ফেলে দেয়। সবশেষে একটি বস্তায় দুই নারী মাথা ও নুপুরের শরীর একটি বস্থায় ভড়ে বুড়িগঙ্গায় ফেলে দেয়। এসময় লাশ টুকরো করার ছুড়িও সে বুড়িগঙ্গায় ফেলে দেয়।
এবষিয় জানতে চাইলে বিথীর বর্তমান স্বামী মোঃ রুবেল বলেন, আমাদের বাড়ী শুভাঢ্যা উত্তর পাড়া এলাকায়। মাসখানেক আগে আমার স্ত্রী বললো সে কাপড়ের করাখানা চালু করবে তাই মিরেরবাগ এলাকয় বাসা ভাড়া নিবে। তাই আমি তাকে না করিনি। সেখানে সে একটি সাবলেট বাসা ভাড়া নিয়ে আমার ছেলেকে নিয়ে থাকতো। কিন্ত সেখানে যে তার আগের স্বামীর যাতায়াত ছিলো আমি জানতাম না। আমি এ হত্যাকান্ডের বিচার চাই।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (কেরানীগঞ্জ সার্কেল) মোঃ জাহাঙ্গীর আলম আরো বলেন, লাশ উদ্ধারের ঘটনায় এর আগেও মামলা হয়েছে। যেহেতু আসামীর দেখানো স্থান থেকে আজকে শিশুটির লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। সেহেতু আজকে আরো একটি হত্যা মামলা রজু হচ্ছে। আশা করি আগামীকাল আসামী আদালতেও স্বিকারোক্তি দেবে।