মঙ্গলবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মতলবে অকেজো দুই শতাধিক সোলার লাইট, জনদুর্ভোগ চরমে

মতলব (চাঁদপুর) প্রতিনিধিঃ

চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলায় সরকারি অর্থায়নে স্থাপিত সোলার প্যানেলের মাধ্যমে  আলো দেওয়ার জন্য বসানো সড়কবাতি (স্ট্রিট লাইটগুলোর) অধিকাংশই বর্তমানে অকেজো হয়ে পড়ে আছে। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন, হাট-বাজার ও গুরুত্বপূর্ণ সড়কসংলগ্ন এলাকায় স্থাপিত এসব সোলার লাইটের প্রায় ২০০টিরও বেশি এখন আর আলো দেয় না। কয়েক বছর না যেতেই এসবের অবস্থা এখন নিবুনিবুা। দিনের পর দিন পড়ে থাকা এই অব্যবস্থাপনায় ক্ষুদ্ধ স্থানীয় বাসিন্দারা। বেশির ভাগ বাতি এরই মধ্যে নষ্ট হয়ে গেলেও সারানোর উদ্যোগ নিচ্ছে না কেউই। ফলে রাতের অন্ধকারে চলাচল করতে সমস্যা হচ্ছে স্থানীয় লোকজনের।

সরেজমিনে উপজেলার ছেংগারচর বাজার, হানিরপাড়, ইসলামাবাদ, আবুরকান্দি, বাবুবাজার, কলাকান্দা, টরকী, লক্ষীপুর, দুর্গাপুর, কালির বাজার, সাদুল্যাপুর, ফরাজীকান্দি গ্রাম সহ ১৪ ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার কয়েকটি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, অধিকাংশ সোলার প্যানেলে ধুলো জমে আছে, অনেক জায়গায় ব্যাটারি চুরি হয়েছে বা খোলার ঢাকনাগুলো ভাঙা, লাইটের পোস্ট হেলে পড়েছে এবং খুঁটিসহ ভেঙে পড়ে আছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ত্রাণ, পুনর্বাসন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের টিআর/কাবিটা ও বিশেষ বরাদ্দ এবং স্থানীয় সরকার বিভাগের উপজেলা পরিচালন ও উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে ২০১৫-১৬ হতে ২০১৯-২০ অর্থবছরে এসব সোলার প্যানেলযুক্ত সড়কবাতি স্থাপন করা হয়। কিন্তু স্থাপন করার কয়েক মাস থেকেই কাজে আসছে না বাতিগুলো।

ফলে অন্ধকার সড়কে বাতি থাকলেও অন্ধকারেই থেকে গেছে। স্থানীয়দের দাবি, উপজেলায় সড়ক ও সড়কের আশপাশের বিভিন্ন স্থাপনা, শিক্ষা ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানে দেওয়া সোলার প্যানেলের সড়কবাতি বেশিরভাগই নষ্ট হয়ে পড়েছে। সরকারি অর্থে স্থাপন করা এসব সোলার বাতির ৩ বছরের ওয়ারেন্টি থাকলেও কয়েক মাস পর হতেই অকেজো। এতে কাজে আসছে না সরকারি বরাদ্দে একেকটি ৩০ হাজার থেকে ৫২ হাজার টাকা মূল্যের এসব সোলার প্যানেলের সড়কবাতি।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিন দেখা যায়, সন্ধ্যা সাতটার পর বেশির ভাগ সড়কবাতি জ্বলছে না। কিছু সড়কবাতি মিটিমিটি আলো দিয়ে ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টার মধ্যেই নিভে যাচ্ছে। এতে করে চুরি, ছিনতাই বেড়েই চলছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, নি¤œমানের সরঞ্জাম হওয়ায় টেকেনি বেশিদিন। এমনকি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের অভিযোগ দিয়েও মেলেনি সুরাহা। অন্ধকার সড়কে আলো ফেরাতে সড়ক বাতিগুলো মেরামতের দাবি এলাকাবাসীর।

কলাকান্দা ইউনিয়নের বাসিন্দা সফিকুল ইসলাম বলেন, প্রথমে সরকার ভালো উদ্যোগ নিয়েছে ভেবে খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু কয়েক মাস যেতে না যেতেই লাইটগুলো কাজ করা বন্ধ করে দেয়। এখন রাস্তাগুলো আবার অন্ধকার, চুরি-ছিনতাইয়ের ভয় বাড়ছে।”
একই অভিযোগ করেন নতুন বাজারের ব্যবসায়ী রনি সিকদার, “লাইট বসানোর পর কেউ আর খবর নেয় না। অনেক প্যানেল এখনো সূর্যের দিকে ঘোরানোই না। এটা টাকা নষ্ট ছাড়া কিছু না।”

ছেংগারচর বাজারের ব্যবসায়ী নাজিমুদ্দিন বলেন, মতলব উত্তর থানা ভবনের সামনের রাস্তার খালে একটি সোলার লাইট ভেঙ্গে পড়ে আছে দীর্ঘদিন যাবত। দেখার কেউই নাই।
মতলব উত্তর উপজেলার ছেংগারচর পৌর কৃষকদলের সভাপতি মোঃ জাকির দর্জি বলেন, “ফ্যাসিস্ট সরকার উন্নয়নের নামে লোক দেখানো প্রকল্প চালিয়েছিল। এসব সোলার লাইট প্রকল্পের পেছনে কোটি কোটি টাকা খরচ করে জনগণের টাকায় লুটপাট করে নিয়ে গেছে। নিন্মমানের মালামাল দিয়ে কাজ করার কারনে লাইটগুলোর এ অবস্থা। এর পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হওয়া দরকার।”

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মোঃ সেলিম খান এ প্রসঙ্গে বলেন, “২০২০-২১ অর্থবছর থেকে প্রকল্পটি বন্ধ রয়েছে। আর যেসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে লাইটগুলো স্থাপন করা হয়েছিল, তাদের চুক্তির মেয়াদ তিন বছর শেষ হয়ে গেছে।  কাবিটা, টিআর কর্মসূচির আওয়তায় স্থাপিত সোলার সিস্টেমের মেরামতের কোনো বরাদ্দ না থাকায় অকেজো বাতিগুলো মেরামত করা যাচ্ছে না। তবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবগত করব। তবে সড়কবাতিগুলোর সার্ভিসিংয়ের আওতায় আনলে এগুলো আবার সচল হয়ে যাবে। বরাদ্দ না থাকায় মেরামত কার্যক্রম থমকে আছে বলে জানান তিনি। বরাদ্দ পাওয়াসাপেক্ষে পরবর্তী সময়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদা কুলসুম মনি বলেন, “আমি নতুন দায়িত্বে এসেছি, এবং বিষয়টি সম্পর্কে ইতোমধ্যে অবগত হয়েছি। আমাদের মাঠপর্যায়ের টিম সোলার লাইটগুলোর অবস্থা পর্যালোচনা করছে। বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। বিভিন্ন সড়কে সোলার প্যানেলযুক্ত বাতিগুলো নষ্ট হওয়ায় জনদুর্ভোগ হচ্ছে।  দ্রুত সংস্কার বা প্রতিস্থাপনের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। আমরা চাই জনগণ প্রকৃত উপকার পাবে, সেজন্য স্বচ্ছতা ও কার্যকারিতা দুটোই নিশ্চিত করা হবে।”

স্থানীয়দের দাবি, দ্রুত এসব লাইট সংস্কার না করলে রাতে চলাচলে ঝুঁকি বাড়বে। পাশাপাশি তারা চান, ভবিষ্যতে প্রকল্প গ্রহণের সময় মান নিয়ন্ত্রণ এবং দীর্ঘমেয়াদি রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নেওয়া হোক।

জনপ্রিয়

রণবীরের ‘ধুরন্ধর’ লুক: দীপিকা যা বললেন

মতলবে অকেজো দুই শতাধিক সোলার লাইট, জনদুর্ভোগ চরমে

প্রকাশের সময় : ১২:৩০:৩৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৯ মে ২০২৫

মতলব (চাঁদপুর) প্রতিনিধিঃ

চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলায় সরকারি অর্থায়নে স্থাপিত সোলার প্যানেলের মাধ্যমে  আলো দেওয়ার জন্য বসানো সড়কবাতি (স্ট্রিট লাইটগুলোর) অধিকাংশই বর্তমানে অকেজো হয়ে পড়ে আছে। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন, হাট-বাজার ও গুরুত্বপূর্ণ সড়কসংলগ্ন এলাকায় স্থাপিত এসব সোলার লাইটের প্রায় ২০০টিরও বেশি এখন আর আলো দেয় না। কয়েক বছর না যেতেই এসবের অবস্থা এখন নিবুনিবুা। দিনের পর দিন পড়ে থাকা এই অব্যবস্থাপনায় ক্ষুদ্ধ স্থানীয় বাসিন্দারা। বেশির ভাগ বাতি এরই মধ্যে নষ্ট হয়ে গেলেও সারানোর উদ্যোগ নিচ্ছে না কেউই। ফলে রাতের অন্ধকারে চলাচল করতে সমস্যা হচ্ছে স্থানীয় লোকজনের।

সরেজমিনে উপজেলার ছেংগারচর বাজার, হানিরপাড়, ইসলামাবাদ, আবুরকান্দি, বাবুবাজার, কলাকান্দা, টরকী, লক্ষীপুর, দুর্গাপুর, কালির বাজার, সাদুল্যাপুর, ফরাজীকান্দি গ্রাম সহ ১৪ ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার কয়েকটি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, অধিকাংশ সোলার প্যানেলে ধুলো জমে আছে, অনেক জায়গায় ব্যাটারি চুরি হয়েছে বা খোলার ঢাকনাগুলো ভাঙা, লাইটের পোস্ট হেলে পড়েছে এবং খুঁটিসহ ভেঙে পড়ে আছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ত্রাণ, পুনর্বাসন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের টিআর/কাবিটা ও বিশেষ বরাদ্দ এবং স্থানীয় সরকার বিভাগের উপজেলা পরিচালন ও উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে ২০১৫-১৬ হতে ২০১৯-২০ অর্থবছরে এসব সোলার প্যানেলযুক্ত সড়কবাতি স্থাপন করা হয়। কিন্তু স্থাপন করার কয়েক মাস থেকেই কাজে আসছে না বাতিগুলো।

ফলে অন্ধকার সড়কে বাতি থাকলেও অন্ধকারেই থেকে গেছে। স্থানীয়দের দাবি, উপজেলায় সড়ক ও সড়কের আশপাশের বিভিন্ন স্থাপনা, শিক্ষা ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানে দেওয়া সোলার প্যানেলের সড়কবাতি বেশিরভাগই নষ্ট হয়ে পড়েছে। সরকারি অর্থে স্থাপন করা এসব সোলার বাতির ৩ বছরের ওয়ারেন্টি থাকলেও কয়েক মাস পর হতেই অকেজো। এতে কাজে আসছে না সরকারি বরাদ্দে একেকটি ৩০ হাজার থেকে ৫২ হাজার টাকা মূল্যের এসব সোলার প্যানেলের সড়কবাতি।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিন দেখা যায়, সন্ধ্যা সাতটার পর বেশির ভাগ সড়কবাতি জ্বলছে না। কিছু সড়কবাতি মিটিমিটি আলো দিয়ে ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টার মধ্যেই নিভে যাচ্ছে। এতে করে চুরি, ছিনতাই বেড়েই চলছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, নি¤œমানের সরঞ্জাম হওয়ায় টেকেনি বেশিদিন। এমনকি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের অভিযোগ দিয়েও মেলেনি সুরাহা। অন্ধকার সড়কে আলো ফেরাতে সড়ক বাতিগুলো মেরামতের দাবি এলাকাবাসীর।

কলাকান্দা ইউনিয়নের বাসিন্দা সফিকুল ইসলাম বলেন, প্রথমে সরকার ভালো উদ্যোগ নিয়েছে ভেবে খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু কয়েক মাস যেতে না যেতেই লাইটগুলো কাজ করা বন্ধ করে দেয়। এখন রাস্তাগুলো আবার অন্ধকার, চুরি-ছিনতাইয়ের ভয় বাড়ছে।”
একই অভিযোগ করেন নতুন বাজারের ব্যবসায়ী রনি সিকদার, “লাইট বসানোর পর কেউ আর খবর নেয় না। অনেক প্যানেল এখনো সূর্যের দিকে ঘোরানোই না। এটা টাকা নষ্ট ছাড়া কিছু না।”

ছেংগারচর বাজারের ব্যবসায়ী নাজিমুদ্দিন বলেন, মতলব উত্তর থানা ভবনের সামনের রাস্তার খালে একটি সোলার লাইট ভেঙ্গে পড়ে আছে দীর্ঘদিন যাবত। দেখার কেউই নাই।
মতলব উত্তর উপজেলার ছেংগারচর পৌর কৃষকদলের সভাপতি মোঃ জাকির দর্জি বলেন, “ফ্যাসিস্ট সরকার উন্নয়নের নামে লোক দেখানো প্রকল্প চালিয়েছিল। এসব সোলার লাইট প্রকল্পের পেছনে কোটি কোটি টাকা খরচ করে জনগণের টাকায় লুটপাট করে নিয়ে গেছে। নিন্মমানের মালামাল দিয়ে কাজ করার কারনে লাইটগুলোর এ অবস্থা। এর পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হওয়া দরকার।”

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মোঃ সেলিম খান এ প্রসঙ্গে বলেন, “২০২০-২১ অর্থবছর থেকে প্রকল্পটি বন্ধ রয়েছে। আর যেসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে লাইটগুলো স্থাপন করা হয়েছিল, তাদের চুক্তির মেয়াদ তিন বছর শেষ হয়ে গেছে।  কাবিটা, টিআর কর্মসূচির আওয়তায় স্থাপিত সোলার সিস্টেমের মেরামতের কোনো বরাদ্দ না থাকায় অকেজো বাতিগুলো মেরামত করা যাচ্ছে না। তবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবগত করব। তবে সড়কবাতিগুলোর সার্ভিসিংয়ের আওতায় আনলে এগুলো আবার সচল হয়ে যাবে। বরাদ্দ না থাকায় মেরামত কার্যক্রম থমকে আছে বলে জানান তিনি। বরাদ্দ পাওয়াসাপেক্ষে পরবর্তী সময়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদা কুলসুম মনি বলেন, “আমি নতুন দায়িত্বে এসেছি, এবং বিষয়টি সম্পর্কে ইতোমধ্যে অবগত হয়েছি। আমাদের মাঠপর্যায়ের টিম সোলার লাইটগুলোর অবস্থা পর্যালোচনা করছে। বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। বিভিন্ন সড়কে সোলার প্যানেলযুক্ত বাতিগুলো নষ্ট হওয়ায় জনদুর্ভোগ হচ্ছে।  দ্রুত সংস্কার বা প্রতিস্থাপনের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। আমরা চাই জনগণ প্রকৃত উপকার পাবে, সেজন্য স্বচ্ছতা ও কার্যকারিতা দুটোই নিশ্চিত করা হবে।”

স্থানীয়দের দাবি, দ্রুত এসব লাইট সংস্কার না করলে রাতে চলাচলে ঝুঁকি বাড়বে। পাশাপাশি তারা চান, ভবিষ্যতে প্রকল্প গ্রহণের সময় মান নিয়ন্ত্রণ এবং দীর্ঘমেয়াদি রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নেওয়া হোক।