সোমবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ক্ষেতলালে তীব্র গরমে তালের রস খাওয়ার ধুম

ক্ষেতলাল (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি:

জয়পুরহাটের ক্ষেতলালে তীব্র গরমে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য তালের রস খাওয়ার ধুম পড়েছে।  উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে মোড়ে মোড়ে বিক্রি করছেন গাছিরা। গরমে একটু ক্লান্তি দুর করতে এই টাটকা রস পান করছেন পথচারীসহ সাধারণ মানুষ। পাশাপাশি এই তালের রস দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে সুস্বাদু গুড়। তবে স্বাস্থ্য বিভাগ সরাসরি রস না খেয়ে ফুটিয়ে খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন।

সরেজমিনে জানা গেছে, উপজেলার মামুদপুর ইউনিয়নের  আছরাঙা দিঘী, মিনিগাড়ি, রসুলপুর, মাহমুদপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় রয়েছে কয়েক হাজার তালগাছ। যেসব গাছে তাল ধরে না, সে গাছগুলোতে হয় লম্বা লম্বা জট। চৈত্র মাসের শুরুতে সেই গাছে জট কেটে হাড়ি বসানো হয়। ওঠা-নামার জন্য দেওয়া হয় লম্বা বাঁশ। এর কয়েকদিন পর শুরু হয় রস সংগ্রহ। চলে জ্যৈষ্ঠ মাস পর্যন্ত। বর্তমান গ্রীষ্মের তীব্র গরমে চাহিদা বেড়েছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য তালের রসের। শরীরের একটু ক্লান্তি দুর করতে কেউবা একটু প্রশান্তি খুজে পেতে পান করছেন এই টাটকা রস। গাছিরা প্রতিদিন গাছ থেকে হাড়িতে রস সংগ্রহ করেন। এরপর মোড়ে মোড়ে বসে তালের রস বিক্রি করেন। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতেই বেড়ে যায় ক্রেতাদের আনাগোনা। কেউ রস খেয়ে তৃপ্তি মেটাচ্ছেন, আবার কেউ কেউ বাড়ির জন্য কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। এই সময় গাছিরা তালগাছকে কেন্দ্র করে জীবিকা নির্বাহ করেন। শুধু ক্ষেতলাল উপজেলায় রয়েছেন শতাধিক গাছি। প্রতিদিন একটি তালগাছ থেকে ৫ কেজি থেকে সর্বোচ্চ ১৫ কেজি পর্যন্ত রস পাওয়া যায়। বর্তমান প্রতিকেজি রস বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকা গ্লাস আর ৫০ টাকা কেজিতে। এছাড়া গুড় বিক্রি হয় প্রকারভেদে দেড়শো থেকে দুইশো টাকা কেজি দরে।

জয়পুরহাট শহরের শান্তিনগর এলাকার বাসিন্দা মেহেদী হাসান বলেন, ‘আছরাঙা দিঘীর দিকে ঘুরতে এসেছিলাম। এসে দেখি রাস্তার পাশে হাড়ি নিয়ে বসে আছে। পরে শুনলাম গাছ থেকে নামিয়ে টাটকা তালের রস বিক্রি হচ্ছে। এক গ্লাস খেলাম। অনেক ঠান্ডা ও ভাল লাগলো।

একই এলাকার শান্ত নামে একজন বলেন, তালের রস এখন সব জায়গায় পাওয়া যায়না। এজন্য এখানে টাটকা তালের রস খেতে এসেছিলাম। খেয়ে অনেক ভাল লাগলো। ১০ টাকা গ্লাস নিয়েছে। খেতে অনেকটা খেঁজুরের রসের মতো মিষ্টি।

ক্ষেতলালের দাসরা গ্রামের শামীম হোসেন বলেন, আগে কখনো তালের রস খাইনি। আজকেই প্রথম খেলাম। খুব স্বাদ, পেট ঠান্ডা হয়ে গেছে।

মাহমুদপুর গ্রামের আজিজার রহমান বলেন, আমাদের এলাকায় আগে আরও বেশি তালের গাছ ছিল। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় তা কমে গেছে। এখনও যেসব গাছ আছে, তাতে মানুষ রস লাগাচ্ছে। এটা একটা পুরনো ঐতিহ্য। বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষজন টাটকা রস খেতে আসেন। রস খেলে পেট ঠান্ডা ও পরিস্কার থাকে।

ক্ষেতলালের রসুলপুর গ্রামের গাছি মোজাম হোসেন বলেন, এই এলাকাতে অনেক তালগাছ রয়েছে। চৈত্র মাসের শুরুতে গাছে হাড়ি লাগাই। অনেক মানুষ এসে আমাদের টাটকা রস খায়। তিনমাসে প্রচুর পরিমাণ রস পাওয়া যায়। রস বিক্রি ছাড়াও গুড় তৈরী করি। রস ১০ টাকা গ্লাস আর গুড় ২০০ টাকা কেজি বিক্রি হয়।

মামুদপুুর পাঁচপীর গ্রামের গাছি হাসান আলী বলেন, সর্বপ্রথম তালের গাছে জট দেখি যে ফুল এসেছে কিনা। এরপর জট কেটে হাড়ি বসাতে হয়। এর কয়েকদিন পর রস নামানো হয়। প্রতিদিন আমার ৩টি গাছ থেকে ১৫ কেজি করে রস পাই আবারও কখনও বেশি হয়।

একই গ্রামের শিবলু বলেন, আমার গাছ লাগানো আছে ২০টি। গাছ থেকে রস সংগ্রহ করতে ১ সপ্তাহের মতো পরিশ্রম করতে হয়। রাতে আড়াই মণ করে রস পাই। সেটা দিয়ে গুড় করি। আর দিনে প্রায় একটি পরিমাণ রস সাধারণ মানুষের কাছে বিক্রি করি। রস বিক্রি করে প্রতিদিন এক হাজার টাকার মতো আয় হয়।

জয়পুরহাট সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার ডাঃ জুবাইর মোঃ আল-ফয়সাল বলেন, তালের রস খেলে স্বাস্থ্যের জন্য তেমন উপকার নেই। কিন্তু ক্ষতির সম্ভাবনায় বেশি। বাদুর তালের রস খেয়ে থাকে। এজন্য বাদুরের লালার মাধ্যমে নিপা ভাইরাসের মতো মারাত্মক ভাইরাস ছড়ায়। মানুষ এই রস পান করলে মৃত্যুঝুঁকি রয়েছে। তাই আমরা এই রস খাওয়া থেকে মানুষকে নিরুৎসাহিত করি। তবে রস সরাসরি না খেয়ে ফুটিয়ে খাওয়া যাবে।

প্লট দুর্নীতি: শেখ হাসিনার ৫, রেহানার ৭ ও টিউলিপের ২ বছরের কারাদণ্ড

ক্ষেতলালে তীব্র গরমে তালের রস খাওয়ার ধুম

প্রকাশের সময় : ০৪:৪০:৫২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৪ মে ২০২৫

ক্ষেতলাল (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি:

জয়পুরহাটের ক্ষেতলালে তীব্র গরমে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য তালের রস খাওয়ার ধুম পড়েছে।  উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে মোড়ে মোড়ে বিক্রি করছেন গাছিরা। গরমে একটু ক্লান্তি দুর করতে এই টাটকা রস পান করছেন পথচারীসহ সাধারণ মানুষ। পাশাপাশি এই তালের রস দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে সুস্বাদু গুড়। তবে স্বাস্থ্য বিভাগ সরাসরি রস না খেয়ে ফুটিয়ে খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন।

সরেজমিনে জানা গেছে, উপজেলার মামুদপুর ইউনিয়নের  আছরাঙা দিঘী, মিনিগাড়ি, রসুলপুর, মাহমুদপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় রয়েছে কয়েক হাজার তালগাছ। যেসব গাছে তাল ধরে না, সে গাছগুলোতে হয় লম্বা লম্বা জট। চৈত্র মাসের শুরুতে সেই গাছে জট কেটে হাড়ি বসানো হয়। ওঠা-নামার জন্য দেওয়া হয় লম্বা বাঁশ। এর কয়েকদিন পর শুরু হয় রস সংগ্রহ। চলে জ্যৈষ্ঠ মাস পর্যন্ত। বর্তমান গ্রীষ্মের তীব্র গরমে চাহিদা বেড়েছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য তালের রসের। শরীরের একটু ক্লান্তি দুর করতে কেউবা একটু প্রশান্তি খুজে পেতে পান করছেন এই টাটকা রস। গাছিরা প্রতিদিন গাছ থেকে হাড়িতে রস সংগ্রহ করেন। এরপর মোড়ে মোড়ে বসে তালের রস বিক্রি করেন। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতেই বেড়ে যায় ক্রেতাদের আনাগোনা। কেউ রস খেয়ে তৃপ্তি মেটাচ্ছেন, আবার কেউ কেউ বাড়ির জন্য কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। এই সময় গাছিরা তালগাছকে কেন্দ্র করে জীবিকা নির্বাহ করেন। শুধু ক্ষেতলাল উপজেলায় রয়েছেন শতাধিক গাছি। প্রতিদিন একটি তালগাছ থেকে ৫ কেজি থেকে সর্বোচ্চ ১৫ কেজি পর্যন্ত রস পাওয়া যায়। বর্তমান প্রতিকেজি রস বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকা গ্লাস আর ৫০ টাকা কেজিতে। এছাড়া গুড় বিক্রি হয় প্রকারভেদে দেড়শো থেকে দুইশো টাকা কেজি দরে।

জয়পুরহাট শহরের শান্তিনগর এলাকার বাসিন্দা মেহেদী হাসান বলেন, ‘আছরাঙা দিঘীর দিকে ঘুরতে এসেছিলাম। এসে দেখি রাস্তার পাশে হাড়ি নিয়ে বসে আছে। পরে শুনলাম গাছ থেকে নামিয়ে টাটকা তালের রস বিক্রি হচ্ছে। এক গ্লাস খেলাম। অনেক ঠান্ডা ও ভাল লাগলো।

একই এলাকার শান্ত নামে একজন বলেন, তালের রস এখন সব জায়গায় পাওয়া যায়না। এজন্য এখানে টাটকা তালের রস খেতে এসেছিলাম। খেয়ে অনেক ভাল লাগলো। ১০ টাকা গ্লাস নিয়েছে। খেতে অনেকটা খেঁজুরের রসের মতো মিষ্টি।

ক্ষেতলালের দাসরা গ্রামের শামীম হোসেন বলেন, আগে কখনো তালের রস খাইনি। আজকেই প্রথম খেলাম। খুব স্বাদ, পেট ঠান্ডা হয়ে গেছে।

মাহমুদপুর গ্রামের আজিজার রহমান বলেন, আমাদের এলাকায় আগে আরও বেশি তালের গাছ ছিল। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় তা কমে গেছে। এখনও যেসব গাছ আছে, তাতে মানুষ রস লাগাচ্ছে। এটা একটা পুরনো ঐতিহ্য। বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষজন টাটকা রস খেতে আসেন। রস খেলে পেট ঠান্ডা ও পরিস্কার থাকে।

ক্ষেতলালের রসুলপুর গ্রামের গাছি মোজাম হোসেন বলেন, এই এলাকাতে অনেক তালগাছ রয়েছে। চৈত্র মাসের শুরুতে গাছে হাড়ি লাগাই। অনেক মানুষ এসে আমাদের টাটকা রস খায়। তিনমাসে প্রচুর পরিমাণ রস পাওয়া যায়। রস বিক্রি ছাড়াও গুড় তৈরী করি। রস ১০ টাকা গ্লাস আর গুড় ২০০ টাকা কেজি বিক্রি হয়।

মামুদপুুর পাঁচপীর গ্রামের গাছি হাসান আলী বলেন, সর্বপ্রথম তালের গাছে জট দেখি যে ফুল এসেছে কিনা। এরপর জট কেটে হাড়ি বসাতে হয়। এর কয়েকদিন পর রস নামানো হয়। প্রতিদিন আমার ৩টি গাছ থেকে ১৫ কেজি করে রস পাই আবারও কখনও বেশি হয়।

একই গ্রামের শিবলু বলেন, আমার গাছ লাগানো আছে ২০টি। গাছ থেকে রস সংগ্রহ করতে ১ সপ্তাহের মতো পরিশ্রম করতে হয়। রাতে আড়াই মণ করে রস পাই। সেটা দিয়ে গুড় করি। আর দিনে প্রায় একটি পরিমাণ রস সাধারণ মানুষের কাছে বিক্রি করি। রস বিক্রি করে প্রতিদিন এক হাজার টাকার মতো আয় হয়।

জয়পুরহাট সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার ডাঃ জুবাইর মোঃ আল-ফয়সাল বলেন, তালের রস খেলে স্বাস্থ্যের জন্য তেমন উপকার নেই। কিন্তু ক্ষতির সম্ভাবনায় বেশি। বাদুর তালের রস খেয়ে থাকে। এজন্য বাদুরের লালার মাধ্যমে নিপা ভাইরাসের মতো মারাত্মক ভাইরাস ছড়ায়। মানুষ এই রস পান করলে মৃত্যুঝুঁকি রয়েছে। তাই আমরা এই রস খাওয়া থেকে মানুষকে নিরুৎসাহিত করি। তবে রস সরাসরি না খেয়ে ফুটিয়ে খাওয়া যাবে।