
মতলব (চাঁদপুর) প্রতিনিধিঃ
মুসলিম উম্মার সবথেকে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান পবিত্র ঈদুল আযহা। পবিত্র ঈদুল আযহার বাকি আর মাত্র ৩ দিন। মধ্যপ্রাচ্যের চাঁদ দেখা অনুযায়ী এবং দেশের চাঁদ দেখা অনুযায়ী আগামী ৭ই জুন হতে পারে পবিত্র ঈদুল আযহা। কোরবানীর ঈদকে সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার উপজেলার কামার শিল্পের কারিগররা। কোরবানির পশু জবাই করা ও মাংস কাটার জন্য চাপাতি ছুরি, বটির কদর বেড়েছে।
আর তাই এখন শেষ মুহুর্তে উপজেলার কামার পল্লীতে কর্মব্যস্ততা বেড়েছে। কোরবানির পশু জবাই ও মাংস প্রস্তÍুুতের জন্য এখন চলছে চাপাতি, দা, বটি, ছুরিসহ নানা হাতিয়ার তৈরির কাজ। তাই এসব সরঞ্জাম তৈরি, মেরামত ও বিক্রিতে সরগরম কামারপাড়া। ক্ষুদ্র লৌহজাত শিল্পের উপর নির্ভরশীল পেশাদার কামাররা। ভাঁতির মাধ্যমে কয়লার আগুনে বাতাস দিয়ে লোহার খন্ডকে দগদগে লাল করছেন। সেই আগুনে লাল হওয়া লোহার খন্ডকে শরীরের সবটুকু শক্তি একত্র করে হাতুড়ি দিয়ে একের পর এক আঘাত করছেন কামারেরা। সবারই হাত, পা, মুখ কালিতে ভরা। অসহনীয় উত্তাপে তাদের শরীরে দরদর করে বইছে ঘাম। তীব্র ব্যস্ততার চাপে ক্লন্তও কারো কাছে ঠাঁই পাচ্ছিল না।
কাক ডাকা ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত হাতুড়ির টুং টাং শব্দে সরগরম করে তুলেছেন বিভিন্ন জায়গায় কামাররা। কয়লার দগদগে আগুনে লোহাকে পুড়িয়ে পিটিয়ে তৈরি করছেন দা, ছুরি, কুড়াল, বটি, চাপাতিসহ বিভিন্ন ধারালো অস্ত্রপাতি। কেউ এসেছেন পুরাতন দা, ছুরি, বটি, মেরামত করতে, কেউবা ধার দিতে আবার কেউ কিনছেন নতুন এসব সরঞ্জাম। কামাররা বলছেন, সারা বছর তাদের তেমন আয় রোজগার থাকেনা। কোরবানির ঈদের আগে তাদের আয় বাড়ে। উপজেলার ছেংগারচর বাজারসহ বিভিন্ন হাট বাজারে কামারদের দম ফেলার সময় নেই। পশু জবাই করার সরঞ্জাম বানাতে দিন-রাত চলছে কাজ। ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী বাড়তি কাজের জন্য রেখেছেন অতিরিক্ত লোক। সারা বছর অলস সময় পার করলেও কোরবানি উপলক্ষে ব্যস্ত সময় পার করছেন কামার শিল্পের কারিগররা। সকাল থেকে মধ্যরাত পযন্ত চলছে তাদের কর্মযজ্ঞ। ঈদের আগের রাত পর্যন্ত চলবে কামারদের এই ব্যস্ততা। উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে দেখা গেছে, বিভিন্ন বয়সী কামাররা লোহা থেকে তৈরি করছেন বিভিন্ন ধরনের ধারালো অস্ত্র। কেউ কেউ ছুরি, চাপাতি, দা ও বটিতে শান দিতে ব্যস্ত। আবার কেউ কেউ লোহার টুকরো গরম করে হাতুড়ি পিটিয়ে তৈরি করছেন ছুরি, চাপাতি, দা-বটি। কামারদের ঘামে ভেজা শরীরে যেন ক্লান্তি নেই।
কথা হয় ছেংগারচর বাজারের বিপ্লব কর্মকারের সঙ্গে। তিনি জানান, কামার শিল্পের অতি প্রয়োজনীয় জিনিস কয়লা, লোহা এবং ফাইলের দাম প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। অথচ তাদের উৎপাদিত পণ্যের দাম আগের মতোই রয়েছে। কুরবানির ঈদের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের অর্ডারের পর এখন ডেলিভারি শুরু হয়েছে। এ কারণে তাদের ব্যস্ততাও আগের চেয়ে বেড়ে গেছে।
তিনি আরও জানান, কাজের চাপ বেশি থাকলেও মাঝে মাঝে বিদ্যুতের সমস্যার কারণে ঠিক সময়ে কাজ করা যাচ্ছে না। এ ছাড়া যন্ত্র তৈরির জ্বালানি কয়লার দামও বাড়তি। বর্তমানে ১ মণ কয়লার মূল্য ১ হাজার’ টাকার বেশী। যন্ত্রপাতি তৈরির কাঁচামাল কিনতে হয় প্রতি কেজি ৭০০ টাকা। ১ কেজি লোহার তৈরি একটি দা বিক্রি হয় ৮০০ থেকে ১০০০টাকায়। পৌর এলাকার কৃষি ব্যাংক রোডের দিনেশ কর্মকার জানান, ঈদকে ঘিরে শুরু হয়েছে ছুরি, চাপাতি, দা, বটি ও চাকু তৈরির কাজ। গত বছরের তুলনায় এ বছর কয়েকগুণ বেশি বেচাকেনার সম্ভাবনা দেখছেন কামার কারিগরি। তিনি আরও জানান জানান প্রায় দুই যুগ ধরে বাপ-দাদাদের পেশায় কাজ করছেন। ঈদ এলেই কর্মব্যস্ত বেড়ে যায়। আমরাও ঈদের অপেক্ষায় থাকি। ঈদের আয়-রোজগারের টাকায় আমাদের সংসার চলে সারাবছর।
পৌর এলাকার ঠাকুরচর গ্রামের বিষু কর্মকার কর্মকার জানান, এ পেশায় পরিশ্রমের চেয়ে মুনাফা অনেক কম। দিনরাত সারাক্ষণ আগুনের পাশে বসে কাজ করতে হয়। তারপরেও গ্রাহকদের চাহিদা পূরণে দিনরাত একাকার করে কাজ করে চলছি। এতে তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তারা আর্থিকভাবে ক্ষতির শিকার হলেও তাদের পৈত্রিক পেশাকে এখনো বুকে আঁকড়ে ধরে আছেন। তবে ভবিষ্যতে সন্তানদের এ পেশায় জড়াতে চাচ্ছেন না। তাই অনেকেই বাধ্য হয়ে তাদের সন্তানদের লেখাপড়া শেখাচ্ছেন। তবে সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এ শিল্পকে টেকসই করে গড়ে তোলা সম্ভব বলে তারা মনে করেন।
সুমন কর্মকার জানান, ঈদকে ঘিরে ব্যস্ত সময় পার করছে কারিগররা। তিনি জানান বড় মাপের একটি চাপাতি ১০০০,১২০০ টাকা এবং ছোট মাপের একটি কাটারি ৬০০–৭০০ টাকায় বিক্রি হয়। এছাড়া বড় মাপের একটি বটি ৫০০–৭০০ টাকা এবং ছোট মাপের একটি বটি ৩৫০–৪০০টাকায় বিক্রি হয়ে থাকে। ছুরি বড়ো ছোট বুঝে বিভিন্ন দামে বিক্রি করা হয়।
এক মাসের কাজের উপর তাদের পরিবারের ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া জামা-কাপড় সহ বছরের খোরাকি নির্ভর করে। যদিও কামার শিল্পের আনুষঙ্গিক কয়লা ও লোহার দাম লাগামহীন ভাবে উঠানামা করতে থাকে। তাই কামাররা বাপ-দাদার এ পেশাকে ধরে রাখতে কয়লা ও লোহার দাম নিয়ন্ত্রণ ও সহজ শর্তে ঋণের দাবি জানিয়েছেন সরকারের কাছে। ছৈয়ালকান্দি গ্রামের ক্রেতা সোহেল রানা বলেন, কোরবানির গরুর মাংস কাটার জন্য নতুন চাপাতি কিনতে এসেছি। তৈরি করা তেমন ভালো চাপাতি পাচ্ছি না। তাই দুই কেজি ইস্পাত কিনে নতুন চাপাতি বানাতে দিলাম। আগের চেয়ে দাম দ্বিগুণ। পৌরসভার গৈপুর গ্রামের স্বপন দর্জি বলেন, এবছর চাপাতি,ছুরি সহ বিভিন্ন সরঞ্জামাদি দাম অনেক বেশি সাধারণত মানুষের নাগালের বাইরে। তাই পুরাতন তা ধার কাটিয়ে নিলাম।
মতলব (চাঁদপুর) প্রতিনিধিঃ 







































