শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মতলবের আঞ্চলিক ভাষায় ৩০০ গান রচনা, ভাইরাল খায়রুল বাশার

মতলব (চাঁদপুর) প্রতিনিধিঃ

বাঁটালি দিয়ে কাঠের উপর নকশা করার ফাঁকে ফাঁকে কিংবা গ্রামের মেঠো পথ পেরিয়ে হাঁটতে হাঁটতে মুখে মুখে বাধেঁন চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার গজরা ইউনিয়নের রাজুরকান্দি গ্রামের খায়রুল বাশার।

পেশায় তিনি একজন কাঠমিস্ত্রি। কাজের পাশাপাশি তিনি গান লেখেন,কন্ঠ দেন। তার কন্ঠে নানান গান ইতিমধ্যেই বাংলাদেশের গন্ডি পেরিয়ে ভারতের শ্রোতাদের মধ্যেও আলোচিত হচ্ছে।
পেশাদার কোনো স্টুডিওতে নয়,অনেকটা ঘরোয়া আয়োজনে মতলবের আঞ্চলিক গান পরিবেশন করে রাতারাতি পরিচিতি পেয়েছেন ও জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন উপজেলার রাজুরকান্দি গ্রামের বাসিন্দা কাঠমিস্ত্রি খায়রুল বাশার।

মতলবের আঞ্চলিক ভাষায় তার ছড়িয়ে পড়া গানের বিভিন্ন ভিডিওতে দেখা গেছে হারমোনিয়ামে সুর তুলে তিনি গাইছেন ’’চাইয়া থাকস কেন,কি কবি ক’, ”দেইক্কা লাইছি কইয়া দিমু’,’ তোমার সিমটম আর রং তামাশা ভালো লাগেনা’’,’’বেশি ফাল পালাইছ না’’ ইত্যাদি এসব গানে পাশে একজন ঢুলি, গানের তালে তালে কয়েকজনকে নাচতেও দেখা যায়। গানের কথা আর সুরের প্রশংসা করেছেন অনেকে। মুহুর্তে সে ভাইরাল শিল্পি হয়ে উঠেন। এসব গানের ভিডিও ধারণ করে ইউউিব চ্যানেলে প্রকাশ করে তার ছেলে। আর এতে সে মুহুতেৃই ভাইরাল হয়ে উঠেন। অনেকের ফেইসবুক আইডিতে তার এই ’’চাইয়া থাকস কেন,কি কবি ক’, ”দেইক্কা লাইছি কইয়া দিমু’,’ তোমার সিমটম আর রং তামাশা ভালো লাগেনা’’,’’বেশি ফাল পালাইছ না’’ এসব গান শেয়ার করেছেন।

সর্বশেষ তার গাওয়া গান ’’ মনটা বান্দার রশি কোথায় পাওয়া যায়’’ ছাড়াও সম্প্রতি জনপ্রিয় কয়েকটি গানের মধ্যে ’’ হায় কেমন আছো, তুমি কি ভালো আছো’’ গানে ১৭ লাখ ও ”’চাইয়া থাকস ক্যান,কি কবি ক’’ এই গানটি ইউটিউবে ২৮ লাখ লোক দেখছে।

এক স্বাক্ষাতকারে খায়রুল বাশার বলেন,এক মেয়েকে ভালোবেসে ছিলাম,সে আমাকে ভালোবাসার আশা দিয়েছিলো। কিন্তু পরে জানলাম সে আমার সাথে ছলনা,সিমটম,অভিনয়,রংতামাশা করছে সেটা আমি বুঝে ফেলেছি। তখনই লিখলাম ’’তোমার সিমটম আর রংতামাশা ভালো লাগেনা,ব্যবহারে বুঝতে পরছি,তুই আমার হবিনা’’ গানটা আপনার জীবন থেকে নেওয়া নাহ,আমার জীবন থেকেও নেওয়া নাহ,আমাদের চারপাশে হামেশেই অহরহ এমন অসংখ্য ঘটনা দেখে। নিজের এবং চারপাশ থেকে পাওয়া এসব ঘটনা থেকেই এ গান লিখেছি।

তিনি জানান, গানের নেশায় দেড় দশক আগে ঢাকায় এসেছিলেন খায়রুল বাশার। স্বরলিপি স্টুডিওতে নিজের লেখা ’’ আখি তোমার দেওয়ানাসহ কয়েকটি গান রেকর্ড করেছিলেন। তবে তারা তা প্রকাশ করেননি।

খায়রুল বাশার জানান,তখন সবাই মেমোরি কার্ডে গান ভরে মোবাইলে চালায়,এত টাকা বিনিয়োগ করে ক্যাসেট বের করলে ব্যবসা করতে পারবো না। ফলে অ্যালবামটি আর বাজারে ছাড়েনি। খায়রুল অনেকটা হতাশা নিয়ে গ্রামে ফিরে আসেন। গ্রামে ফিরে এসে অনৈকটা নীরবে গানচর্চা করে গেছেন, থেমে যাননি।

তার প্রবল ইচ্ছা শক্তি আর সাহস এবং মনে জোর ছিলো যে তিনি একদিন না একদিন সফল হবেন।
খায়রুল বাশারের নামে গত বছর ইউটিউব চ্যানেলটি খোলেছেন। তার ছেলের উৎসাহেই গান নিয়ে প্রথমবার ক্যামেরার সামনে আসেন। কন্ঠে তুললেন নিজের লেখা গান ’’বেশি ফাল পারিস না,পালাইবার জায়গা পাবিনা’’ মুঠোফোনে ধারণকৃত ভিডিওটি ইউটিউবে প্রকাশের পর নেট দুনিয়ায় আলোচনা শুরু হয়। ব্যাপক সারা পড়ে যায়। শ্রোতাদের ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পেয়ে তিনি জোর ও শক্তি এবং সাহস পান খায়রুল।

এরমধ্যে ’’আমি একটা প্রেম করছিলাম স্কুল জীবনে,যখন ক্লাশ নাইনে পড়ি, তখন একটা প্রেম করিসহ বেশ কয়েকটি গান প্রশংসিত হয়েছে।

ঢাকা থেকে গ্রামে ফেরার প্রায় দেড় দশক পর ইউটিউবের কল্যানে চাঁদপুরের এই নির্ভূত গ্রাম থেকেই নিজের প্রতিভার জানান দিয়েছেন খায়রুল বাশার। তিনি এখন মতলবে একজন বয়াতি জনপ্রিয় শিল্পি হিসেবে চারদিকে খ্যাতি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন। তার কয়েকটি গান ভাইরাল হওয়ার পর অডিও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ঈগল মিউজিক খায়রুল বাশারের পাঁচটি গান রেকর্ডিয়ের প্রস্তাব দেয় তারা। ঢাকা থেকে মতলবের রাজুরকান্দি গিয়ে খায়রুলের কাছ থেকে তার লেখা ও সুরারোপ করা ’’আমি একটা প্রেম করিসহ পাঁচটি গান নিয়ে আসে ঈগল মিউজিক।

খায়রুলের কথা ও সুরে ঈগল মিউজিকের ব্যানারে ” যখন ক্লাশ নাইনে পড়ি,তখণ একটা প্রেম করি” এই গানটিতে কন্ঠ দেন তরুণ গায়ক সৌরভ ইসলাম। ঈগল মিউজিকের ইউটিউব চ্যনেলে প্রকাশের পর গানের ভিডিওতি ব্যাপক সারা ফেলে। বছর খানেক ধরে ইউউিবে নিজের গান প্রকাশ করেন খায়রুল বাশার। রেকর্ডিংয়ের জন্য পেশাদার কোনো স্টুডিও না পেলেও থেমে যাননি তিনি। নিজের কোনো বাদ্যযন্ত্রও ছিল না। শুরুতে পাশের গ্রামের লবাইরকান্দি গ্রামের ঢুলি হুমায়ন মোল্লার বাড়িতে গিয়ে গান পরিবেশ করেন তিনি। হুমায়ন মোল্লার বাড়িই ছিলো তার কাছে স্টুডিও’র মতো। একসঙ্গে ৮- ১০টির মতো গান নিয়ে সেখানে যেতেন খায়রুল। সবকটির ভিডিও ধারণ করে ফেরেন বাড়ি। আগে মুঠোফোনে গানের ভিডিও ধারণ করা হতো। এখন একটি ক্যামেরা কিনেছেন ভিডিও ধারনের জন্য। ভিডিও ধারণের পাশাপাশি সম্পাদনা  ও ইউটিউব চ্যানেলের দেখভাল করেন তার ছেলে মোঃ শাওন। এ পর্যন্ত ৩শ’’র অধিক গান রচনা করেছেন খায়রুল।

গানে আসা নিয়ে ভাইরাল বয়াতি খায়রুল বাশার জানান, কৈশোবে টিভি দেখার সময় ভাবতাম.ভেতরে মানুষ কিভাবে এতো সুন্দর করে গান গায়। তখন থেকেই শিল্পি হওয়ার স্বপ্ন বা ইচ্ছা ছিলো আমার। কৈশোরে আশপাশের দশ গ্রামে নানা আসরে গান শুনতে যেতেন খায়রুল। এক আসরে পালা (বাউল) শিল্পি সুজন সরকারের সঙ্গে পরিচয়। সঙ্গিত জীবনে তাকেই গানের গুরু মানেন খায়রুল। নিজে পালা (বাউল) শিল্পি হতে চেয়েও পারেননি খায়রুল। তবে সুজন সরকারই তার গানের দুনিয়ার কপাট খুলে দিয়েছেলেন। গুরুর উৎসাহ, অনুপ্রেরণায় গান লেখায় মনোযোগ দেন। তার আগে হাইস্কল জীবনে টুকটাক কবিতা লেখা,আবৃত্তি অভ্যাস ছিলো তার। স্কুলেল সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় আবৃত্তিও করেছেন।

খায়রুল বাশার জানান,একসময় তাদের পরিবার বেশ স্বচ্ছল ছিলো। প্রাথমিকের গন্ডি পেরিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন তার গ্রামের পাশবর্তি ঝিনাইয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে। স্বপ্ন ছিলো শিক্ষিত হয়ে নাম করবেন। কিন্তÍু সেই স্বপ্ন অন্কুরেই ঝড়ে যায়। ১৯৯৮ সালের এসএসসি পরীক্ষায় ফেল করেন খায়রুল বাশার। এরমধ্যে তাদের সংসারের আর্থিক অবস্থাও টালমাটাল হয়ে পড়ে। বাধ্য হয়েই পড়াশুনার পাট চুকিয়ে জীবিকার সন্ধানে নেমে পরেন দূর গ্রামে। শুরু করেন কাঠমিস্ত্রির পেশায়। কাঠ মেস্ত্রিও কাজ করে বাড়িতে অর্ত পাঠাতেন সংসার চালানোর জন্য। কিশোর খায়রুলের এই সংগ্রামের পেছনে মধ্যবিত্ত মানসিকতাও ভুমিকা রেখেছিলো। তিনি বলেন,আমার বাবা জমিদার স্টাইলে চলতেন,আমাদেরখাওয়া দাওয়া-পরায় কোনো কমতি করেননি। কিন্তু একসময় ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন বাবা। আশপাশের লোকজনকে আমরা বুঝতে দেইনি, যে আমাদের আর্থিক অবস্থাকতটা খারাপ। সেই থেকেই কাঠমিস্তিন কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন খায়রুল। দুই ছেলে আর স্ত্রীকে নিয়ে সংসার তার। দুই ছেলে পড়াশুনা করে ক্লাশ সেভেনে। সংগ্রামমূখর জীবনে নানান ঘাত-প্রতিঘাতেরর মধ্যেও গানকে আঁকড়ে ধরে আছেন। কয়েকটি গান অন্য শিল্পিরাও গেয়েছেন। গানের কথা ও সুরের মাঝেও শ্রোতাদের হ্নদয়ে বেঁচে থাকতে চান তিনি। আমি বেঁচে থাকার পিয়াসে গানগুলো করতেছি। আমার গান অনেকে গাইতেছে। আমার স্বপ্ন একটাই গানগুলো মানুষের হ্নদয়ে যেন গেথে থাকে। আমার গানের মধ্যেই আমি বেঁচে থাকতে চাই।

রাজুরকান্দি গ্রামের মোঃ শাহ আলম লস্কর বলেন,আমাদের গ্রামের খায়রুল বাশার বর্তমানে একজন ভাইরাল শিল্পি। মতলবের আঞ্চলিক ভাষায় গানের দুনিয়া মাতান খায়রুল বাশার এ কারণে আমাদের গ্রামকেও করেছেন ব্যাপক পরিচিতি। সে খুবই ভদ্র সৎ মানুষ। তার পরিশ্রম আর সততাই আচকে তাকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। সে এখন ফেইসবুক দুনিয়ায় ভাইরাল শিল্পি। আমরা তাকে নিয়ে গর্ব করি। আমি তার গানগুলো শুনে মজা পাই। সে যেমন আরো ভালো মানের শিল্পি হয়ে জাতয়ি পর্যায়ে পৌছতে পারে সেজন্য সরকারী সহযোগিতা প্রয়োজন।

জনপ্রিয়

জামায়াত দেশে শান্তি চায়নি কখনো: মোমিন মেহেদী

মতলবের আঞ্চলিক ভাষায় ৩০০ গান রচনা, ভাইরাল খায়রুল বাশার

প্রকাশের সময় : ০৮:৪৯:৪৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫

মতলব (চাঁদপুর) প্রতিনিধিঃ

বাঁটালি দিয়ে কাঠের উপর নকশা করার ফাঁকে ফাঁকে কিংবা গ্রামের মেঠো পথ পেরিয়ে হাঁটতে হাঁটতে মুখে মুখে বাধেঁন চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার গজরা ইউনিয়নের রাজুরকান্দি গ্রামের খায়রুল বাশার।

পেশায় তিনি একজন কাঠমিস্ত্রি। কাজের পাশাপাশি তিনি গান লেখেন,কন্ঠ দেন। তার কন্ঠে নানান গান ইতিমধ্যেই বাংলাদেশের গন্ডি পেরিয়ে ভারতের শ্রোতাদের মধ্যেও আলোচিত হচ্ছে।
পেশাদার কোনো স্টুডিওতে নয়,অনেকটা ঘরোয়া আয়োজনে মতলবের আঞ্চলিক গান পরিবেশন করে রাতারাতি পরিচিতি পেয়েছেন ও জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন উপজেলার রাজুরকান্দি গ্রামের বাসিন্দা কাঠমিস্ত্রি খায়রুল বাশার।

মতলবের আঞ্চলিক ভাষায় তার ছড়িয়ে পড়া গানের বিভিন্ন ভিডিওতে দেখা গেছে হারমোনিয়ামে সুর তুলে তিনি গাইছেন ’’চাইয়া থাকস কেন,কি কবি ক’, ”দেইক্কা লাইছি কইয়া দিমু’,’ তোমার সিমটম আর রং তামাশা ভালো লাগেনা’’,’’বেশি ফাল পালাইছ না’’ ইত্যাদি এসব গানে পাশে একজন ঢুলি, গানের তালে তালে কয়েকজনকে নাচতেও দেখা যায়। গানের কথা আর সুরের প্রশংসা করেছেন অনেকে। মুহুর্তে সে ভাইরাল শিল্পি হয়ে উঠেন। এসব গানের ভিডিও ধারণ করে ইউউিব চ্যানেলে প্রকাশ করে তার ছেলে। আর এতে সে মুহুতেৃই ভাইরাল হয়ে উঠেন। অনেকের ফেইসবুক আইডিতে তার এই ’’চাইয়া থাকস কেন,কি কবি ক’, ”দেইক্কা লাইছি কইয়া দিমু’,’ তোমার সিমটম আর রং তামাশা ভালো লাগেনা’’,’’বেশি ফাল পালাইছ না’’ এসব গান শেয়ার করেছেন।

সর্বশেষ তার গাওয়া গান ’’ মনটা বান্দার রশি কোথায় পাওয়া যায়’’ ছাড়াও সম্প্রতি জনপ্রিয় কয়েকটি গানের মধ্যে ’’ হায় কেমন আছো, তুমি কি ভালো আছো’’ গানে ১৭ লাখ ও ”’চাইয়া থাকস ক্যান,কি কবি ক’’ এই গানটি ইউটিউবে ২৮ লাখ লোক দেখছে।

এক স্বাক্ষাতকারে খায়রুল বাশার বলেন,এক মেয়েকে ভালোবেসে ছিলাম,সে আমাকে ভালোবাসার আশা দিয়েছিলো। কিন্তু পরে জানলাম সে আমার সাথে ছলনা,সিমটম,অভিনয়,রংতামাশা করছে সেটা আমি বুঝে ফেলেছি। তখনই লিখলাম ’’তোমার সিমটম আর রংতামাশা ভালো লাগেনা,ব্যবহারে বুঝতে পরছি,তুই আমার হবিনা’’ গানটা আপনার জীবন থেকে নেওয়া নাহ,আমার জীবন থেকেও নেওয়া নাহ,আমাদের চারপাশে হামেশেই অহরহ এমন অসংখ্য ঘটনা দেখে। নিজের এবং চারপাশ থেকে পাওয়া এসব ঘটনা থেকেই এ গান লিখেছি।

তিনি জানান, গানের নেশায় দেড় দশক আগে ঢাকায় এসেছিলেন খায়রুল বাশার। স্বরলিপি স্টুডিওতে নিজের লেখা ’’ আখি তোমার দেওয়ানাসহ কয়েকটি গান রেকর্ড করেছিলেন। তবে তারা তা প্রকাশ করেননি।

খায়রুল বাশার জানান,তখন সবাই মেমোরি কার্ডে গান ভরে মোবাইলে চালায়,এত টাকা বিনিয়োগ করে ক্যাসেট বের করলে ব্যবসা করতে পারবো না। ফলে অ্যালবামটি আর বাজারে ছাড়েনি। খায়রুল অনেকটা হতাশা নিয়ে গ্রামে ফিরে আসেন। গ্রামে ফিরে এসে অনৈকটা নীরবে গানচর্চা করে গেছেন, থেমে যাননি।

তার প্রবল ইচ্ছা শক্তি আর সাহস এবং মনে জোর ছিলো যে তিনি একদিন না একদিন সফল হবেন।
খায়রুল বাশারের নামে গত বছর ইউটিউব চ্যানেলটি খোলেছেন। তার ছেলের উৎসাহেই গান নিয়ে প্রথমবার ক্যামেরার সামনে আসেন। কন্ঠে তুললেন নিজের লেখা গান ’’বেশি ফাল পারিস না,পালাইবার জায়গা পাবিনা’’ মুঠোফোনে ধারণকৃত ভিডিওটি ইউটিউবে প্রকাশের পর নেট দুনিয়ায় আলোচনা শুরু হয়। ব্যাপক সারা পড়ে যায়। শ্রোতাদের ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পেয়ে তিনি জোর ও শক্তি এবং সাহস পান খায়রুল।

এরমধ্যে ’’আমি একটা প্রেম করছিলাম স্কুল জীবনে,যখন ক্লাশ নাইনে পড়ি, তখন একটা প্রেম করিসহ বেশ কয়েকটি গান প্রশংসিত হয়েছে।

ঢাকা থেকে গ্রামে ফেরার প্রায় দেড় দশক পর ইউটিউবের কল্যানে চাঁদপুরের এই নির্ভূত গ্রাম থেকেই নিজের প্রতিভার জানান দিয়েছেন খায়রুল বাশার। তিনি এখন মতলবে একজন বয়াতি জনপ্রিয় শিল্পি হিসেবে চারদিকে খ্যাতি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন। তার কয়েকটি গান ভাইরাল হওয়ার পর অডিও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ঈগল মিউজিক খায়রুল বাশারের পাঁচটি গান রেকর্ডিয়ের প্রস্তাব দেয় তারা। ঢাকা থেকে মতলবের রাজুরকান্দি গিয়ে খায়রুলের কাছ থেকে তার লেখা ও সুরারোপ করা ’’আমি একটা প্রেম করিসহ পাঁচটি গান নিয়ে আসে ঈগল মিউজিক।

খায়রুলের কথা ও সুরে ঈগল মিউজিকের ব্যানারে ” যখন ক্লাশ নাইনে পড়ি,তখণ একটা প্রেম করি” এই গানটিতে কন্ঠ দেন তরুণ গায়ক সৌরভ ইসলাম। ঈগল মিউজিকের ইউটিউব চ্যনেলে প্রকাশের পর গানের ভিডিওতি ব্যাপক সারা ফেলে। বছর খানেক ধরে ইউউিবে নিজের গান প্রকাশ করেন খায়রুল বাশার। রেকর্ডিংয়ের জন্য পেশাদার কোনো স্টুডিও না পেলেও থেমে যাননি তিনি। নিজের কোনো বাদ্যযন্ত্রও ছিল না। শুরুতে পাশের গ্রামের লবাইরকান্দি গ্রামের ঢুলি হুমায়ন মোল্লার বাড়িতে গিয়ে গান পরিবেশ করেন তিনি। হুমায়ন মোল্লার বাড়িই ছিলো তার কাছে স্টুডিও’র মতো। একসঙ্গে ৮- ১০টির মতো গান নিয়ে সেখানে যেতেন খায়রুল। সবকটির ভিডিও ধারণ করে ফেরেন বাড়ি। আগে মুঠোফোনে গানের ভিডিও ধারণ করা হতো। এখন একটি ক্যামেরা কিনেছেন ভিডিও ধারনের জন্য। ভিডিও ধারণের পাশাপাশি সম্পাদনা  ও ইউটিউব চ্যানেলের দেখভাল করেন তার ছেলে মোঃ শাওন। এ পর্যন্ত ৩শ’’র অধিক গান রচনা করেছেন খায়রুল।

গানে আসা নিয়ে ভাইরাল বয়াতি খায়রুল বাশার জানান, কৈশোবে টিভি দেখার সময় ভাবতাম.ভেতরে মানুষ কিভাবে এতো সুন্দর করে গান গায়। তখন থেকেই শিল্পি হওয়ার স্বপ্ন বা ইচ্ছা ছিলো আমার। কৈশোরে আশপাশের দশ গ্রামে নানা আসরে গান শুনতে যেতেন খায়রুল। এক আসরে পালা (বাউল) শিল্পি সুজন সরকারের সঙ্গে পরিচয়। সঙ্গিত জীবনে তাকেই গানের গুরু মানেন খায়রুল। নিজে পালা (বাউল) শিল্পি হতে চেয়েও পারেননি খায়রুল। তবে সুজন সরকারই তার গানের দুনিয়ার কপাট খুলে দিয়েছেলেন। গুরুর উৎসাহ, অনুপ্রেরণায় গান লেখায় মনোযোগ দেন। তার আগে হাইস্কল জীবনে টুকটাক কবিতা লেখা,আবৃত্তি অভ্যাস ছিলো তার। স্কুলেল সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় আবৃত্তিও করেছেন।

খায়রুল বাশার জানান,একসময় তাদের পরিবার বেশ স্বচ্ছল ছিলো। প্রাথমিকের গন্ডি পেরিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন তার গ্রামের পাশবর্তি ঝিনাইয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে। স্বপ্ন ছিলো শিক্ষিত হয়ে নাম করবেন। কিন্তÍু সেই স্বপ্ন অন্কুরেই ঝড়ে যায়। ১৯৯৮ সালের এসএসসি পরীক্ষায় ফেল করেন খায়রুল বাশার। এরমধ্যে তাদের সংসারের আর্থিক অবস্থাও টালমাটাল হয়ে পড়ে। বাধ্য হয়েই পড়াশুনার পাট চুকিয়ে জীবিকার সন্ধানে নেমে পরেন দূর গ্রামে। শুরু করেন কাঠমিস্ত্রির পেশায়। কাঠ মেস্ত্রিও কাজ করে বাড়িতে অর্ত পাঠাতেন সংসার চালানোর জন্য। কিশোর খায়রুলের এই সংগ্রামের পেছনে মধ্যবিত্ত মানসিকতাও ভুমিকা রেখেছিলো। তিনি বলেন,আমার বাবা জমিদার স্টাইলে চলতেন,আমাদেরখাওয়া দাওয়া-পরায় কোনো কমতি করেননি। কিন্তু একসময় ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন বাবা। আশপাশের লোকজনকে আমরা বুঝতে দেইনি, যে আমাদের আর্থিক অবস্থাকতটা খারাপ। সেই থেকেই কাঠমিস্তিন কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন খায়রুল। দুই ছেলে আর স্ত্রীকে নিয়ে সংসার তার। দুই ছেলে পড়াশুনা করে ক্লাশ সেভেনে। সংগ্রামমূখর জীবনে নানান ঘাত-প্রতিঘাতেরর মধ্যেও গানকে আঁকড়ে ধরে আছেন। কয়েকটি গান অন্য শিল্পিরাও গেয়েছেন। গানের কথা ও সুরের মাঝেও শ্রোতাদের হ্নদয়ে বেঁচে থাকতে চান তিনি। আমি বেঁচে থাকার পিয়াসে গানগুলো করতেছি। আমার গান অনেকে গাইতেছে। আমার স্বপ্ন একটাই গানগুলো মানুষের হ্নদয়ে যেন গেথে থাকে। আমার গানের মধ্যেই আমি বেঁচে থাকতে চাই।

রাজুরকান্দি গ্রামের মোঃ শাহ আলম লস্কর বলেন,আমাদের গ্রামের খায়রুল বাশার বর্তমানে একজন ভাইরাল শিল্পি। মতলবের আঞ্চলিক ভাষায় গানের দুনিয়া মাতান খায়রুল বাশার এ কারণে আমাদের গ্রামকেও করেছেন ব্যাপক পরিচিতি। সে খুবই ভদ্র সৎ মানুষ। তার পরিশ্রম আর সততাই আচকে তাকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। সে এখন ফেইসবুক দুনিয়ায় ভাইরাল শিল্পি। আমরা তাকে নিয়ে গর্ব করি। আমি তার গানগুলো শুনে মজা পাই। সে যেমন আরো ভালো মানের শিল্পি হয়ে জাতয়ি পর্যায়ে পৌছতে পারে সেজন্য সরকারী সহযোগিতা প্রয়োজন।