
মতলব (চাঁদপুর) প্রতিনিধিঃ
ষড়ঋতুর বাংলাদেশে বাঙালির প্রিয় ঋতু যেন বর্ষা। আর বর্ষার আগমন ঘটে যেন কদম ফুল ফোটার মধ্যে দিয়ে। তাই কদম ফুলকে বলা হয় বর্ষার দূত।
প্রকৃতিতে এখন চলছে বর্ষাকাল। আর বর্ষা নামলেই চাঁদপুরের মতলবের প্রকৃতিতে নতুন প্রাণ ফিরে আসে। সেই প্রাণের অন্যতম বাহক হলো কদম ফুল। আষাঢ়ের শুরুতেই বেশ আগেই চাঁদপুরের মতলবের প্রকৃতিতে ফুটতে শুরু করেছে কদম ফুল। এ যেন আবহমান বাংলার বর্ষা বরণের প্রাকৃতিক আয়োজন।
প্রাকৃতিকভাবে বাড়ির আনাচে-কানাচে কিংবা রাস্তার পাশে বড় হওয়া কদম গাছের হলুদ আর সাদার আভায় বের হওয়া কদম ফুল হচ্ছে বর্ষাকালের আরেক সৌন্দের্যের নাম। সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে ঝুলে থাকা এই কদম ফুলগুলো খুব সহজেই মনকাড়ে ফুলপ্রেমিদের। আবার কখনও কখনও গ্রামের ছোট ছেঠে ছেলে মেয়েদের খেলার প্রধান উপকরণ হিসেবে বর্ষাদূত এই কদম ফুলের জুড়ি নেই।
সারা বছর এর দেখা না মিললেও বর্ষায় যেন অনিবার্য এই কদম ফুল। বহু বিখ্যাত কবিতা ও গান রয়েছে বর্ষাকাল আর কদম ফুল নিয়ে। প্রিয় ঋতু বর্ষার আগমনে তাই কদম ফুল যেন অনিবার্য অনুষঙ্গ।
এই গাছের পাতা লম্বা, চকচকে উজ্জ্বল সবুজ। শীতকালে এই গাছের পাতা ঝরে গেলেও বসন্ত এলেই এই গাছে পাতা নতুন পাতা গজাতে শুরু করে। কদম ফুল গোলাকার। ফুলটিকে একটি ফুল মনে হলেও আসলে এটি অসংখ্য ফুলের একটি গুচ্ছ। এর ভেতরে মাংসল পুষ্পাধার রয়েছে, যাতে হলুদ রংয়ের ফানেলের মতো নরম সাদা পাপড়িগুলো আটকে থাকে। কদম গাছের ফল বাঁদুড় ও কাঠবিড়ালির প্রিয় খাদ্য। এরাই ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় এই গাছের বংশবিস্তারে সাহায্য করে থাকে।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সড়কের পাশে, মেঠোপথের ধারে, বসতবাড়ির আশেপাশে, পুকুর ও দীঘির পাড়ের কদম গাছ ছেয়ে আছে মিষ্টি গন্ধেভরা তুলতুলে কদম ফুলে। এসব ফুলের মন ভোলানো সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হচ্ছেন শিশুরাসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। শিশুরা এসব ফুল তাদের খেলার অনুষঙ্গ হিসেবেও ব্যবহার করছে। কিশোরীদের চুলের খোপা ও বেনিতেও শোভা পাচ্ছে বর্ষাদূত কদম ফুল। উঠতি বয়েসী কিশোর কিশোরীদের হাতেও শোভা পাচ্ছে এই ফুল। প্রতিটি সড়ক দিয়ে যেতে যেতে কদম ফুলের গন্ধ ও সৌন্দর্য উপভোগ করছেন সবাই। কদম ফুলের গন্ধে যেনো গ্রামবাংলার চিরচেনা গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। চকচকে উজ্জ্বল সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে ফোটে থাকা কদম ফুলের সৌন্দর্যে প্রকৃৃতিতে এক নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে।
ছেংগারচর সরকারি ডিগ্রি কলেজের অর্নার্ষ বর্ষের শিক্ষার্থী নুশরাত আক্তার বলেন, রূপ, রঙ ও গন্ধে দৃষ্টিনন্দন ফুল কদম। এই ফুল অন্যান্য ফুলের মতো নয়, এটি সম্পূর্ণ একটি ভিন্নধর্মী ফুল। এই ফুলের হলুদ ও সাদা পাপড়ি আর ভেতরের গোলাকার বলের মতো অংশটি নিয়েই ফুলটির সৌন্দর্য ফুটে উঠে। এ ফুলের সৌন্দর্য অন্য ফুলের তুলনায় সম্পূর্ণ আলাদা। প্রতি বছরই বর্ষা এলে কদম ফুলের প্রেমে পড়তে একরকম বাধ্যই হতে হয়।
উপজেলার ৯নং দক্ষিণ ব্যাসদী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মোসাম্মৎ জেসমিন আক্তার বলেন, মূলত বর্ষাকালে প্রকৃৃতিতে কদম ফুল ফোটে। কদম ফুটতে দেখলেই মনে প্রাণে বর্ষাকাল ভেসে ওঠে। ছোট বেলায় এই কদম ফুল নিয়ে অনেক খেলাধুলা করেছি। এই ফুলের সাথে গ্রামবাংলার এক নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এখন অসময়েও কদম ফুল ফুটতে দেখা যায়। এই উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় কদম ফুল ফুটেছে। এ ফুলের মধ্যে যেন বাঙালি বাঙালি আছে। সড়কে যাতায়াতের সময় হঠাৎ হঠাৎ এ ফুলের গন্ধ ভেসে আসে।
মতলভ উত্তর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক (এমওডিসি) ডা. মোঃ মোবারক হোসেন বলেন, কদম বাংলাদেশের জন্য একটি অতিপরিচিত গাছ। বর্ষা এলেই কদম ফুলের সৌন্দর্যে প্রকৃৃতি সেজে ওঠে। তবে প্রকৃৃতির এ নিয়মেরও পরিবর্তন ঘটেছে। এখন গ্রীষ্মকালেও কদম ফুল ফুটতে দেখা যায়।
তিনি আরও বলেন, কদম গাছের বিভিন্ন অংশ বহুকাল আগে থেকেই ভেষজ ওষুধ হিসেবে মানুষের নানা রোগে ব্যবহার হয়ে আসছে। এ গাছের পাতা বর্তমান সময়ের আলোচিত রোগ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে বেশ উপকারী। এ ছাড়া মানবদেহের নানা রোগ নিরাময়ে এ গাছের বিভিন্ন অংশ ব্যবহার করা হয়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ফয়সাল মোহাম্মদ আলী বলেন, কদম ফুল বাঙালি সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। প্রাচীনকাল থেকেই এ ফুলের প্রতি মানুষের একটা আবেগের জায়গা রয়েছে। কবিতা, গান, গল্প, উপন্যাসেও কদম এসেছে বিভিন্নভাবে।
তিনি আরও বলেন, কদম সাধারণত বর্ষা মৌসুমে ফোটে। তবে পরিবেশ দূষণের কারণে জলবায়ুর পরিবর্তনে কদম ফুলকে গ্রীষ্মেও ফুটতে দেখা যায়।
মতলব (চাঁদপুর) প্রতিনিধিঃ 







































