
সকালে ঘুম ভেঙেই হার্ট অ্যাটাক? বিশেষজ্ঞ বলছেন, এই সময়টাই সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। জানুন কারণ ও প্রতিরোধের উপায়।
হার্ট অ্যাটাক যা মেডিকেল ভাষায় ‘মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন’ নামে পরিচিত যেকোনো সময়ই হতে পারে। তবে গবেষণা বলছে, সকালেই এর আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে বিশ্বের ৩২ শতাংশ মৃত্যু হৃদরোগজনিত, যার ৮৫ শতাংশ হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের কারণে।
সকালে হার্ট অ্যাটাক বেশি হওয়ার কারণ কী?
স্ট্রেস হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়: সকালে ঘুম থেকে উঠলে শরীরে কর্টিসল, অ্যাড্রেনালিন ও নোরঅ্যাড্রেনালিনের মতো হরমোন নিঃসরণ বাড়ে। বিশেষ করে ঘুমের “রেম ঘুম” ধাপে এই হরমোনগুলো রক্তনালিকে সংকুচিত করে ও হৃদস্পন্দন বাড়িয়ে দেয়। এতে হৃদযন্ত্রে অক্সিজেন সরবরাহ কমে যায় এবং চাপ বাড়ে।
রক্ত ঘন ও ‘স্টিকি’ হয়ে যায় : সকালে “প্লাজমিনোজেন অ্যাক্টিভেটর ইনহিবিটর-১” নামক এক ধরনের প্রোটিনের মাত্রা বাড়ে, যা রক্তের জমাট ভাঙতে বাধা দেয়। ফলে রক্ত বেশি জমাট বাঁধার প্রবণতা তৈরি করে এটি হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ায়।
হঠাৎ করে অ্যালার্মে জেগে ওঠা: হঠাৎ অ্যালার্মে ঘুম ভাঙলে রক্তচাপ ও হার্টবিট দ্রুত বেড়ে যায়। যাদের আগে থেকেই উচ্চ রক্তচাপ বা হৃদরোগের ঝুঁকি রয়েছে, তাদের জন্য এটি অত্যন্ত বিপজ্জনক। এক গবেষণায় দেখা গেছে, স্বাভাবিকভাবে ওঠা ব্যক্তিদের তুলনায় অ্যালার্মে উঠা ব্যক্তিদের সকালের রক্তচাপ ৭৪ শতাংশ বেশি হয়।
খালি পেটে হঠাৎ ব্যায়াম: খালি পেটে উঠে সঙ্গে সঙ্গে হাঁটা বা ব্যায়াম শুরু করলে হৃদযন্ত্রের উপর বাড়তি চাপ পড়ে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, এ সময় শরীরকে কিছুটা সময় দিতে হয় জেগে ওঠার প্রক্রিয়ায়।
সকালের হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ
* বুকের মাঝখানে ব্যথা বা চাপ
* ব্যথা ছড়িয়ে পড়তে পারে বাম হাত, চোয়াল, ঘাড় বা পিঠে
* শ্বাসকষ্ট, বমি ভাব, মাথা ঘোরা বা অতিরিক্ত ঘাম
* মহিলাদের ক্ষেত্রে ক্লান্তি, হালকা ব্যথা বা অস্বস্তিই প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে
কীভাবে সকালের হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধ করবেন?
১. নিয়মিত ঘুম দিন
প্রতিদিন অন্তত ৭–৮ ঘণ্টা ঘুমানো হার্টকে সুস্থ রাখে। ঘুম কম হলে শরীরে স্ট্রেস হরমোন বেড়ে যায়।
২. ঘুম থেকে উঠে পানি পান করুন
রাতভর ডিহাইড্রেশনের কারণে রক্ত ঘন হয়। সকালে ঘুম থেকে উঠে ১ গ্লাস পানি পান করলে রক্তচলাচল মসৃণ হয়।
৩. ধীরে ধীরে দিন শুরু করুন
হঠাৎ উঠে দৌড়ানো বা কঠোর ব্যায়াম নয় প্রথমে ৩০–৬০ মিনিট হালকা স্ট্রেচিং, ধীরে হাঁটা বা হালকা নাস্তা দিয়ে দিন শুরু করুন।
৪. স্ট্রেস কমান ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুন
সকালের ধ্যান, গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস বা কিছুক্ষণ নীরব হাঁটা স্ট্রেস কমায়। উচ্চ রক্তচাপ থাকলে ওষুধ ও ডায়েট মেনে চলুন।
৫. স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ করুন
ফল, সবজি, গোটা শস্য ও কম চর্বিযুক্ত প্রোটিন খান। রাতের খাবার হালকা রাখুন।
আরও পড়ুন: লিভার ক্যানসারের ৮ প্রাথমিক লক্ষণ, যা আমরা এড়িয়ে যাই
৬. ধূমপান ও মদ্যপান বাদ দিন
ধূমপান ও অতিরিক্ত অ্যালকোহল হার্টের রক্তনালিতে ক্ষতি করে এবং রক্ত জমাট বাঁধার আশঙ্কা বাড়ায়।
৭. নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করুন
ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ বা কোলেস্টেরল থাকলে নিয়মিত পরীক্ষা করুন এবং ওষুধ সময়মতো নিন।
তথ্যসূত্র: হেলথ শটস
লাইফস্টাইল ডেস্ক 




































