সোমবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
নতুন বাজেট বাস্তবায়ন শুরু

কঠিন পথ পাড়ি দিতে হবে: অর্থ উপদেষ্টা

ছবি: সংগৃহীত

মন্দা অর্থনীতি, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, জ্বালানির সংকট, বিনিয়োগে স্থবিরতাসহ নানামুখী সংকটের মধ্য দিয়ে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে আজ থেকে।

অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, অর্থনীতির দুরবস্থা কাটাতে নানামুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদকে। প্রধানত তিনটি বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে তাকে। প্রথমত, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনা। দ্বিতীয়ত, বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো এবং তৃতীয়ত, রাজস্ব আহরণ বাড়ানো। তাদের মতে, কাজটি সহজ নয়। এ জন্য কঠিন পথ পাড়ি দিতে হবে অর্থ উপদেষ্টাকে। কারণ চ্যালেঞ্জগুলো অর্থনীতির মৌলিক সমস্যা এবং আগে থেকেই চলে আসছে। হুট করে সমাধান সম্ভব নয়।

আড়াই বছর ধরে দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। এর প্রভাবে জিনিসপত্রের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। ফলে তাদের জীবনযাপন কঠিন হয়ে পড়েছে। মূল্যস্ফীতি অবশ্য ধীরে ধীরে কমে আসতে শুরু করেছে। 

বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে অর্থ উপদেষ্টা বলেছেন, আগামী মাসের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশের নিচে নেমে আসবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরও একই আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

অর্থনীতিবিদরা বলেন, অর্থ উপদেষ্টার জন্য কঠিন কাজটি হবে বিনিয়োগ বাড়ানো। কয়েক বছর ধরে বেসরকারি বিনিয়োগ মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির ২৩ শতাংশের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। বিনিয়োগ বাড়াতে বিগত অর্থবছরের বাজেটগুলোতে প্রণোদনাসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সুফল মেলেনি। এবারের বাজেটেও প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এখনো কেটে না যাওয়ায় সুফল আসার সম্ভাবনা খুব বেশি নেই।

ব্যবসায়ীরা বলেছেন, জাতীয় নির্বাচন হবে কি না, তা নিয়ে এখনো শঙ্কা ও সংশয় রয়েছে। নির্বাচিত সরকার না এলে নতুন বিনিয়োগ হবে না। তা ছাড়া অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গেছে, নির্বাচনের বছর দেশে কোনো বিনিয়োগ হয় না। বিদেশি বিনিয়োগ বা এফডিআইয়ের অবস্থাও ভালো নয়। এ মুহূর্তে গ্যাসের তীব্র সংকট চলছে। ফলে শিল্প-কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। উদ্বিগ্ন মালিকরা গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে সরকারকে জোরালো চাপ দিলেও পরিস্থিতির খুব একটা উন্নতি হয়নি। যদিও সরকার চেষ্টা করছে রেশনিং করে সরবরাহ বাড়ানোর। কিন্তু উদ্যোক্তরা বলেছেন, চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস মিলছে না।

গত ২ জুন ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের পরিকল্পনা নিয়ে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি ব্যতিক্রমী বাজেট। কারণ এই বাজেট আগের বছরের বাজেট অপেক্ষা তুলনামূলক ছোট এবং ঘাটতি এখন পর্যন্ত সর্বকালের সর্বনিম্ন, জিডিপির মাত্র ৩ দশমিক ৬ শতাংশ।

বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি ঘাটতি ধরে বাজেট করা হয় করোনা মহামারির সময় ২০২০-২১ অর্থবছরে। ওই অর্থবছরে ঘাটতি ছিল জিডিপির ৬ শতাংশের বেশি। তখন সরকারের যুক্তি ছিল- বেশি ব্যয় করে ঝিমিয়ে থাকা অর্থনীতিকে চাঙা করা। যদিও লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি বিগত সরকার।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসে। অনেকেই বলেছেন, বিগত সরকারের রেখে যাওয়া একটি ভঙ্গুর অর্থনীতি বর্তমান সরকার পেয়েছে।

অর্থ উপদেষ্টার সামনে আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে অভ্যন্তরীণ সম্পদ তথা রাজস্ব আয় বাড়ানো। রাজস্ব আহরণ দুর্বল অর্থনীতির পুরোনো রোগ। অর্থনীতির দুরবস্থার কারণে বর্তমানে এই সংকট আরও গভীর হয়েছে। আইএমএফের চলমান ঋণ কর্মসূচির আওতায় যেসব শর্ত রয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে রাজস্ব আদায় আরও বাড়াতে হবে। এই শর্ত একবারও পূরণ করতে পারেনি বাংলাদেশ। অবশ্য সরকারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আইএমএফ এখানে বিশেষ সুবিধা দেওয়ায় নিয়মতি ঋণের কিস্তি পেতে সমস্যা হয়নি এখনো। বৈদেশিক মুদ্রা বাজারভিত্তিক করতে সম্মত হওয়ায় অনেক দর-কষাকষির পর সম্প্রতি চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির টাকা একসঙ্গে ছাড় করেছে আইএমএফ।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র বলেছে, ঋণের পরবর্তী কিস্তির টাকা পেতে বেশ কিছু নতুন শর্ত দিয়েছে সংস্থাটি। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে এ বছর বাড়তি ৩০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করতে হবে এনবিআরকে। সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের চূড়ান্ত হিসাব পাওয়া যায়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে, চূড়ান্ত হিসাবে ঘাটতি ৭০ থেকে ৮০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে।

গতকাল এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান তার দপ্তরে কয়েকজন সাংবাদিকের সঙ্গে আলাপচারিতায় বলেছেন, ২৮ দিনে প্রায় ৩ লাখ ৬১ হাজার কোটি টাকা আদায় হয়েছে। শেষ দুই দিনে আরও কিছু যোগ হলে আদায় আরও বাড়ার কথা। সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৪ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা। ফলে রাজস্ব আদায়ে যে বিশাল ঘাটতি হবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। অর্থাৎ বড় ঘাটতি মাথায় নিয়ে নতুন অর্থবছরে যাত্রা করতে হলো এনবিআরকে। এই চাপ সামাল দেওয়া অনেক কষ্টকর হবে।

সামগ্রিকভাবে জানতে চাইলে সরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএসের সাবেক মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. মোস্তফা কে মুজেরি বলেন, অর্থনীতিতে কিছু সমস্যা চলমান। যেমন- উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বিনিয়োগে খরা ও জিডিপির প্রবৃদ্ধির শ্লথগতি। সামনের দিনগুলোতে এগুলো দূরীভূত হওয়ার লক্ষণ নেই। উপরন্তু বহির্বিশ্বের অভিঘাত মোকাবিলা করতে হবে। কেননা মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধ শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়, তা নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারবে না। তিনি আরও বলেন, দেশের অভ্যন্তরে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা রয়েছে। এটি থাকলে দেশি-বিদেশি কোনো বিনিয়োগই হবে না। বিনিয়োগের খরা না কাটলে প্রবৃদ্ধি বাড়বে না, কর্মসংস্থানও হবে না। কাজেই সবকিছু মিলিয়ে অনিশ্চিত একটা আর্থসামাজিক পরিস্থিতিতে নতুন বাজেট বাস্তবায়ন করা কঠিন হবে। —খবরের কাগজ 

জনপ্রিয়

শার্শার বাগআঁচড়ায় খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি ও সুস্থতা কামনায় দোয়া-মাহফিল 

নতুন বাজেট বাস্তবায়ন শুরু

কঠিন পথ পাড়ি দিতে হবে: অর্থ উপদেষ্টা

প্রকাশের সময় : ১০:৩৯:২৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ জুলাই ২০২৫

মন্দা অর্থনীতি, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, জ্বালানির সংকট, বিনিয়োগে স্থবিরতাসহ নানামুখী সংকটের মধ্য দিয়ে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে আজ থেকে।

অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, অর্থনীতির দুরবস্থা কাটাতে নানামুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদকে। প্রধানত তিনটি বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে তাকে। প্রথমত, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনা। দ্বিতীয়ত, বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো এবং তৃতীয়ত, রাজস্ব আহরণ বাড়ানো। তাদের মতে, কাজটি সহজ নয়। এ জন্য কঠিন পথ পাড়ি দিতে হবে অর্থ উপদেষ্টাকে। কারণ চ্যালেঞ্জগুলো অর্থনীতির মৌলিক সমস্যা এবং আগে থেকেই চলে আসছে। হুট করে সমাধান সম্ভব নয়।

আড়াই বছর ধরে দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। এর প্রভাবে জিনিসপত্রের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। ফলে তাদের জীবনযাপন কঠিন হয়ে পড়েছে। মূল্যস্ফীতি অবশ্য ধীরে ধীরে কমে আসতে শুরু করেছে। 

বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে অর্থ উপদেষ্টা বলেছেন, আগামী মাসের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশের নিচে নেমে আসবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরও একই আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

অর্থনীতিবিদরা বলেন, অর্থ উপদেষ্টার জন্য কঠিন কাজটি হবে বিনিয়োগ বাড়ানো। কয়েক বছর ধরে বেসরকারি বিনিয়োগ মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির ২৩ শতাংশের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। বিনিয়োগ বাড়াতে বিগত অর্থবছরের বাজেটগুলোতে প্রণোদনাসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সুফল মেলেনি। এবারের বাজেটেও প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এখনো কেটে না যাওয়ায় সুফল আসার সম্ভাবনা খুব বেশি নেই।

ব্যবসায়ীরা বলেছেন, জাতীয় নির্বাচন হবে কি না, তা নিয়ে এখনো শঙ্কা ও সংশয় রয়েছে। নির্বাচিত সরকার না এলে নতুন বিনিয়োগ হবে না। তা ছাড়া অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গেছে, নির্বাচনের বছর দেশে কোনো বিনিয়োগ হয় না। বিদেশি বিনিয়োগ বা এফডিআইয়ের অবস্থাও ভালো নয়। এ মুহূর্তে গ্যাসের তীব্র সংকট চলছে। ফলে শিল্প-কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। উদ্বিগ্ন মালিকরা গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে সরকারকে জোরালো চাপ দিলেও পরিস্থিতির খুব একটা উন্নতি হয়নি। যদিও সরকার চেষ্টা করছে রেশনিং করে সরবরাহ বাড়ানোর। কিন্তু উদ্যোক্তরা বলেছেন, চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস মিলছে না।

গত ২ জুন ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের পরিকল্পনা নিয়ে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি ব্যতিক্রমী বাজেট। কারণ এই বাজেট আগের বছরের বাজেট অপেক্ষা তুলনামূলক ছোট এবং ঘাটতি এখন পর্যন্ত সর্বকালের সর্বনিম্ন, জিডিপির মাত্র ৩ দশমিক ৬ শতাংশ।

বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি ঘাটতি ধরে বাজেট করা হয় করোনা মহামারির সময় ২০২০-২১ অর্থবছরে। ওই অর্থবছরে ঘাটতি ছিল জিডিপির ৬ শতাংশের বেশি। তখন সরকারের যুক্তি ছিল- বেশি ব্যয় করে ঝিমিয়ে থাকা অর্থনীতিকে চাঙা করা। যদিও লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি বিগত সরকার।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসে। অনেকেই বলেছেন, বিগত সরকারের রেখে যাওয়া একটি ভঙ্গুর অর্থনীতি বর্তমান সরকার পেয়েছে।

অর্থ উপদেষ্টার সামনে আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে অভ্যন্তরীণ সম্পদ তথা রাজস্ব আয় বাড়ানো। রাজস্ব আহরণ দুর্বল অর্থনীতির পুরোনো রোগ। অর্থনীতির দুরবস্থার কারণে বর্তমানে এই সংকট আরও গভীর হয়েছে। আইএমএফের চলমান ঋণ কর্মসূচির আওতায় যেসব শর্ত রয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে রাজস্ব আদায় আরও বাড়াতে হবে। এই শর্ত একবারও পূরণ করতে পারেনি বাংলাদেশ। অবশ্য সরকারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আইএমএফ এখানে বিশেষ সুবিধা দেওয়ায় নিয়মতি ঋণের কিস্তি পেতে সমস্যা হয়নি এখনো। বৈদেশিক মুদ্রা বাজারভিত্তিক করতে সম্মত হওয়ায় অনেক দর-কষাকষির পর সম্প্রতি চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির টাকা একসঙ্গে ছাড় করেছে আইএমএফ।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র বলেছে, ঋণের পরবর্তী কিস্তির টাকা পেতে বেশ কিছু নতুন শর্ত দিয়েছে সংস্থাটি। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে এ বছর বাড়তি ৩০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করতে হবে এনবিআরকে। সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের চূড়ান্ত হিসাব পাওয়া যায়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে, চূড়ান্ত হিসাবে ঘাটতি ৭০ থেকে ৮০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে।

গতকাল এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান তার দপ্তরে কয়েকজন সাংবাদিকের সঙ্গে আলাপচারিতায় বলেছেন, ২৮ দিনে প্রায় ৩ লাখ ৬১ হাজার কোটি টাকা আদায় হয়েছে। শেষ দুই দিনে আরও কিছু যোগ হলে আদায় আরও বাড়ার কথা। সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৪ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা। ফলে রাজস্ব আদায়ে যে বিশাল ঘাটতি হবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। অর্থাৎ বড় ঘাটতি মাথায় নিয়ে নতুন অর্থবছরে যাত্রা করতে হলো এনবিআরকে। এই চাপ সামাল দেওয়া অনেক কষ্টকর হবে।

সামগ্রিকভাবে জানতে চাইলে সরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএসের সাবেক মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. মোস্তফা কে মুজেরি বলেন, অর্থনীতিতে কিছু সমস্যা চলমান। যেমন- উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বিনিয়োগে খরা ও জিডিপির প্রবৃদ্ধির শ্লথগতি। সামনের দিনগুলোতে এগুলো দূরীভূত হওয়ার লক্ষণ নেই। উপরন্তু বহির্বিশ্বের অভিঘাত মোকাবিলা করতে হবে। কেননা মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধ শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়, তা নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারবে না। তিনি আরও বলেন, দেশের অভ্যন্তরে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা রয়েছে। এটি থাকলে দেশি-বিদেশি কোনো বিনিয়োগই হবে না। বিনিয়োগের খরা না কাটলে প্রবৃদ্ধি বাড়বে না, কর্মসংস্থানও হবে না। কাজেই সবকিছু মিলিয়ে অনিশ্চিত একটা আর্থসামাজিক পরিস্থিতিতে নতুন বাজেট বাস্তবায়ন করা কঠিন হবে। —খবরের কাগজ