
রাজবাড়ী প্রতিনিধি
রাজবাড়ী এখন মাদক ও সহিংসতার নগ্ন থাবায় বিধ্বস্ত। পদ্মা-পাড়ের জেলাটিতে দিনদিন বেড়েই চলছে মাদকের তৎপরতা। শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষও এই ভয়াল নেশায় জড়িয়ে পড়ছে। এর ফলে চুরি, ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধ বাড়ছে আশঙ্কাজনক হারে। এসব অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে কিশোর ও তরুণরাও, যা পুরো জেলাবাসীর জন্য উদ্বেগজনক।
বিশেষ করে গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া যৌনপল্লি মাদকের অন্যতম উৎস হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে। এখান থেকে মাদক ছড়িয়ে পড়ছে দুর্গম চরাঞ্চল থেকে শুরু করে জেলার প্রত্যন্ত এলাকাগুলোতে। পোড়াভিটা, লোকোসেড, পাচুরিয়া ও বাগমারাসহ বিভিন্ন জায়গায় মাদকের ভয়াবহতা দিনে দিনে প্রকট হয়ে উঠছে।
রাজবাড়ীর পরিস্থিতি শুধু মাদকেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে ভয়াবহ সন্ত্রাসী কর্মকান্ডও। বিগত ৫ বছরে জেলাটিতে একশ’রও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন নানা বিরোধ ও আধিপত্য বিস্তারের ঘটনায়। চলতি বছরের এখন পর্যন্ত অন্তত ২০টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে জুন মাসেই খুন হয়েছে অন্তত ৫ জন।
গেল ১১ জুন কালুখালীতে দুর্বৃত্তের হাতে খুন হন অটোরিকশাচালক আসলাম। ২০ জুন বালিয়াকান্দিতে স্বামীর হাতে খান হন গৃহবধূ মনিরা। ২২ জুন দৌলতদিয়ায় মাদক নিয়ে বিরোধে খুন হন নজরুল। ২৪ জুন দৌলতদিয়ায় যৌনকর্মী তানিয়াকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। ২৫ জুন দাদশীতে নিখোঁজের দুইদিন পর যুবক আদরের লাশ উদ্ধার করা হয়।
এছাড়াও একের পর এক ঘটে চলেছে মাদক-সম্পর্কিত গ্রেপ্তার! পত্রিকার পাতা খুললেই মেলে মাদকের সংবাদ: পাংশায় দুই সহোদর ইয়াবাসহ গ্রেফতার। গোয়ালন্দে বিপুল পরিমাণ ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী আটক। খানখানাপুরে হাজার পিস ইয়াবাসহ আটক! হেরোইনসহ গ্রেফতার হলো আরও দুই মাদক কারবারি ইত্যাদি।
এদিকে, এই অব্যাহত মাদক বিস্তার ও সহিংসতার জন্য অনেকেই প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তাকেও দায়ী করছেন। তাদের দাবি, মাঝে মধ্যে লোক দেখানো অভিযানের মাধ্যমে ছোটখাটো অপরাধী ধরা হলেও মূল গডফাদাররা থেকে যাচ্ছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।
এমন ভয়াবহ পরিস্থিতির প্রতিবাদ জানাতে বুধবার (৩ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে একক অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন, সরদার রাজিব নামে এক যুবক। তিনি পেশায় গণমাধ্যমকর্মী। চাকরি করেন, ঢাকার একটি বেসরকারী স্যাটেলাইট টেলিভিশনে।
কর্মসূচি থেকে রাজিব বলেন, ‘দিনদিন আমার প্রিয় মাতৃভূমি রাজবাড়ী জেলা ভয়াবহ মাদকের আক্রমণে ধ্বংসের দিকে যাচ্ছে। মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। তরুণ প্রজন্ম ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। অথচ প্রশাসনের দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেই। শুধু নামমাত্র অভিযান চলছে। কিন্তু বড় অপরাধীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে। আমি এই অবস্থার প্রতিবাদ জানাতে এবং রাষ্ট্রের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্যই এখানে দাঁড়িয়েছি।’
চলতি বছরের কয়েকটি চাঞ্চল্যকর খুনের ঘটনা তুলে ধরে তিনি বলেন, সম্প্রতি গোয়ালন্দে কথিত চরমপন্থীদের হাতে খুন হন সুশিল নামে এক ব্যক্তি! কালুখালীতে প্রতিহিংসার জেরে চাচার হাতে খুন হন ভাতিজা নিরব। বালিয়াকান্দিতে ইজারা নিয়ে বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষের হামলায় নিহত হন মিলন। সদর উপজেলার হাউলী জয়পুরে সালমা নামে এক নারীকে হত্যা করা হয়। কিন্তু এই সকল খুনের নেপথ্যের প্রকৃত কারণ জনগণের অজানা!
এ সময় এই তরুণ সাংবাদিক বলেন, ‘রাজবাড়ীর মানুষ আজ অসহায়। মাদক আর খুন যেন এখানকার নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সময় থাকতে ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতে এই পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে।’
রাজবাড়ী প্রতিনিধি 






































