
মেহেদী হাসান, রাজবাড়ী প্রতিনিধি
রাজবাড়ী ওজোপাডিকোর মিটার রিডারম্যান মোক্তার বিশ্বাস (৪০) এর বিরুদ্ধে প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাৎ এর অভিযোগ উঠেছে। প্রায় অর্ধশতাধিক গ্রাহকের বিদ্যুৎ বিলের প্রায় ১৬ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করে উধাও হয়ে গেছেন বলে জানান গ্রাহকেরা।
এ ঘটনায় বুধবার(২ জুলাই) দুপুরে ভুক্তভোগী গ্রাহকরা (৪৭ জন) জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিকার চেয়ে আবেদন করেছেন।
জানা গেছে, রাজবাড়ী সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড চরনারায়নপুর গ্রামের সেলিম রেজা ওরফে সেলিম মাস্টারের ছেলে মোঃ মোক্তার বিশ্বাস সদর উপজেলার আলীপুর ও শহীদওহাবপুর ইউনিয়নে দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে ওজোপাডিকোর বিদুৎ এর মিটার রিডারম্যান হিসেবে হিসেবে কাজ করে আসছে। অভিযুক্ত মুক্তার বিশ্বাস রাজবাড়ী জেলার ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ওজোপাডিকো) এর নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মচারী মিটার রিডারম্যান হিসেবে পরিচয় দিয়ে আলীপুর ও শহীদওহাবপুর ইউনিয়নে বিদ্যুৎ বিল তৈরি, গ্রাহকদের কাছ থেকে বিল সংগ্রহ, বিকাশের মাধ্যমে বিল আদায় এবং নতুন সংযোগের নামে অর্থ গ্রহণ করে থাকতো।
২০২৩ সাল থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত প্রায় দুই বছরে ২টি ইউনিয়নের প্রায় শতাধিক গ্রাহকের কাছ থেকে মোবাইল ব্যাংকিং ‘বিকাশ’ এর মাধ্যমে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের নামে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়ে সে এখন গা ঢাকা দিয়েছে। এখন বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে ওই সব গ্রাহকদের বকেয়া বিল পরিশোধ করার জন্য নোটিশ প্রদান করা হয়েছে।
ভুক্তোভোগী গ্রাহকরা জানান, ১৫ বছর ধরে মুক্তার আমাদের এলাকাতে বিদ্যুৎ বিলের কপি দিয়ে আসছে। সে আমাদের বলে আমার কাছে যদি আপনারা বিদ্যুৎ বিলের টাকা দেন আমি জমা দিয়ে দিতে পারি। আমরা তাকে বিশ্বাস করে প্রতি মাসে টাকা দেয়। মোক্তার বিভিন্ন ব্যাংকের সিল মেরে,সই করে ও সরকারি স্ট্যাম্প মেরে আমাদের বিল পরিশোধের কপি দিতো। সেই ২০২৩ সাল থেকে আমরা তার কাছে এভাবে বিল দিয়ে আসছি। আমরা জানি যে পরপর দুই মাসের বিল পরিশোধ না করলে নোটিশ দেওয়া হয় এবং বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করা হয়। কিন্তু আমাদের কিছুই করা হয় নি এতদিন। হঠাৎ ২০২৫ সালে এসে দেখা যাই কারো ২০২৩-২০২৪ সালের বিলের বকেয়ার নোটিশ দিয়েছে।
গোয়ালন্দ মোড়ের বাসিন্দা ভুক্তভোগী কোরবান গাজী বলেন, মোক্তার আমাদের এলাকার মিটার রিডার ম্যান। তাকে আমি বিশ্বাস করে ২০২৩ সালের অক্টোবর মাস থেকে ২০২৫ এর জুন পর্যন্ত আমি প্রত্যেক মাসের বিদ্যুৎ বিলের টাকা পরিশোধ করার জন্য দিয়েছি। সে বিলের কাগজের ওপর ব্যাংকের সিল মেরে,স্ট্যাম্প মেরে আমার কাছে নিয়ে এসে বলতো বিল দিয়ে এসেছি। আমরা ব্যাংকের সিল ও স্ট্যাম্প দেখে বুঝতাম বিল পরিশোধ হয়ে গেছে।কিন্তু হঠাৎ বিদ্যুৎ অফিস আমার ২০২৩ ও ২০২৪ সালের ১৫ মাসের ১লক্ষ ৩৩ হাজার টাকা বিল বকেয়া দেখিয়েছে। আমাকে এখন এই টাকা তারা পরিশোধ করতে বলছে। কিন্তু আমি কোন মাসের বিল বকেয়া রাখিনি, সব মাসের টাকা রিডার ম্যান মোক্তারের কাছে দিয়েছি।এই ১৫ মাস বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে আমার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেনাই।আমি এখন এতো টাকা কিভাবে পরিশোধ করবো।আমরা মোক্তারের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হোক এবং আমাদের বিলের টাকা মওকুফ করা হোক।
ভ্যানচালক মোঃ বাবুল শেখ বলেন, একমাস আগে আমার বিদ্যুৎ বিলে ৭৫ হাজার ৫৬৩ টাকা বকেয়া বিল করা হয়েছে।পরে আমি বিলের কাগজ নিয়ে বিদ্যুৎ অফিসে আসলে নির্বাহী প্রকৌশলী জানান আমি বিল পরিশোধ করিনি।আমি ভ্যান চালিয়ে প্রত্যেক মাসের বিল প্রতি মাসেই মোক্তারকে পরিশোধ করার জন্য দিয়েছি।কিন্তু আমার বিলে ৭৫ হাজার টাকা বকেয়া দেখিয়েছে।২০২৩ সালের বকেয়া বিল ২০২৫ সালে দিয়েছে। আমি ভ্যান চালিয়ে এখন এই টাকা কিভাবে পরিশোধ করবো।
জহিরুল ইসলাম নামের আরেক ভুক্তভোগী বলেন, ২০২৩ সাল থেকে আমার জানা মতে আমার কোন বকেয়া বিল নেই। আমি যে বিল দিয়েছি সব বিলের কপি আছে। আমিও রিডারম্যান মুক্তারের কাছে দিয়েছি। সে যে বিল প্রেমেন্ট করে দিত সেটাতে ব্যাংকের সিল, স্বাক্ষর,বিকাশে দিলে সেটা ডকুমেন্টস, স্ট্যাম্প বসানো থাকতো। আমার নামে তিনটি মিটার আছে। ২০২৩ ও ২০২৪ সালের ৩টি মিটারে ৯ মাসের বিল বকেয়া আসছে অর্থাৎ ২৭ মাসের, এটি ২০২৫ সালের মে মাসে যুক্ত করা হয়েছে। আর এই ২৭ মাসের বিল দিয়ে দিয়েছিলাম মুক্তারের কাছে। আমার বকেয়া দেখাচ্ছে ২লক্ষ ১২ হাজার টাকা। কিন্তু আমার কথা হচ্ছে যদি বকেয়া থাকে ২০২৩ সালে তাহলে এখন কেনো সেই বিল আসবে। আমি অফিসে গেলে সেখান থেকে বলেছে সব পরিষদ করতে হবে।
এ বিষয়ে রাজবাড়ীর ওজোপাডিকো’র নির্বাহী প্রকোশলী মোঃ মামুন-অর-রশিদ বলেন, আমরা কয়েকজন গ্রাহকের অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করে কিছুটা সত্যতা পেয়েছি। মিটার রিডারম্যান মুক্তার হোসেন এর সাথে জড়িত বলে মনে করছি এবং তাকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে। তার নামে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে এমন কাজ সে কিভাবে করেছে আমার জানা নেই।
বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে থানায় লিখিত অভিযোগের কপি চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান এবং থানা থেকে অভিযোগের কপিটি সংগ্রহ করে নিতে বলেন।
এ বিষয়ে সদর থানায় যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে তাদের অফিসিয়াল প্যাডে লেখা একটি অসম্পূর্ণ লিখিত অভিযোগ করেছেন ।বিদ্যুৎ বিভাগকে বিস্তারিত তথ্য দিয়ে অভিযোগটি এজাহার আকারে পূর্ণাঙ্গ করে লিখে থানায় জমা দিতে বলা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক সুলতানা আক্তার বলেন, এই বিষয়ে আমার কাছে অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। আমি তাদের সমস্ত কথা শুনেছি। বিদ্যুৎ এর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হচ্ছে ওজোপাডিকোর এক্সিয়েন। আমি তার সাথে যোগাযোগ করবো এবং তাদের যে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা তার সাথেও যোগাযোগ করবো। আশা করি সকলের সহযোগিতায় তাদের যে সমস্যা সেটি সমাধান করতে পারবো।
মেহেদী হাসান, রাজবাড়ী প্রতিনিধি 





























