
বোরহান উদ্দিন, রাউজান (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি:
চট্টগ্রামের রাউজানে দিনের বেলায় জনসম্মুখে গুলি চালিয়ে মুহাম্মদ সেলিম (৪০) নামের এক যুবদল নেতাকে হত্যা করেছে বোরকা পরিহিত একদল অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী। মো. সেলিম কদলপুর ইউনিয়ন যুবদলের আহবায়ক কমিটির সদস্য সচিব।
রোববার (৬ জুলাই) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলার কদলপুর ইউনিয়নের ইশানভট্ট বাজারে এ নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটে। নিহত সেলিম কদলপুর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ শমসের পাড়া এলাকার প্রয়াত আমির হোসেনের ছেলে।
স্থানিয়রা জানান, সেলিম দুপুরে বাজারে একটি দোকানের সামনে বসেছিলেন। এ সময় সিএনজি চালিত অটোরিকশায় করে বোরকা পরা ৫-৬ জন দুর্বৃত্ত বাজারে প্রবেশ করে। কিছু বোঝার আগেই তারা সেলিমকে লক্ষ্য করে কাছ থেকে গুলি করে। গুলিটি তাঁর মুখে লাগে। গুলি ছোড়ার পর সন্ত্রাসীরা দ্রুত অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলে করে পালিয়ে যায়। বাজারজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে, দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়।
নিহতের স্ত্রী ফেরদৌস আকতার বলেন, ‘আমার চাচি শাশুড়ির জানাজায় গিয়ে সেখান থেকে আমি, আমার মেয়ে সাবরিনাসহ আমাদের খামার বাড়িতে যাওয়ার সময় ইশান ভট্টের হাট থেকে ঔষুধ কিনে মোটরসাইকেলে উঠতেই একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা থেকে বোরকা পড়া দুইজন অস্ত্রধারী বের হয়ে মুখে গুলি করলে আমার স্বামী মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এ সময় কেউ এগিয়ে আসেনি। অটোরিকশায় আরও কয়েকজন ছিলেন। বোরকা পড়লেও দুইজনই পুরুষ। একজন লম্বা চওড়া। পরে আমিসহ কয়েকজন মিলে একটি সিএনজি অটোরিকশা তুলে হাসপাতালে আনলে আমার স্বামীকে মৃত ঘোষণা করেন।
সূত্র জানায়, নিহত সেলিম কয়েক বছর ধরে মুরগির খামারসহ বিভিন্ন পশু লালন-পালন করার জন্য খামার বাড়ি গড়ে তোলেন কদলপুরে। পাশাপাশি বালুর ব্যবসাও করতো। তবে কী কারণে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা সংগঠিত হয়েছে তা কেউ নিশ্চিত করতে পারেনি।
রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, “প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, মুহাম্মদ রায়হান নামে এক চিহ্নিত সন্ত্রাসী এ হামলার নেতৃত্ব দিয়েছে। নিহতের মুখে গুলি লেগেছে। লাশ উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “ঘটনাস্থল থেকে গুলির খোসা উদ্ধার করা হয়েছে এবং এ বিষয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে।”
স্থানীয় সূত্র মতে, রাউজান এলাকায় গত কয়েক বছর ধরে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সহিংসতা বেড়েই চলেছে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর থেকে উপজেলায় মোট ১৩টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে অন্তত ১০টি ছিল রাজনৈতিক সহিংসতার ফল। বিএনপির দুটি প্রতিদ্বন্দ্বী গ্রুপের মধ্যে শতাধিকবার সংঘর্ষ হয়েছে এবং তিন শতাধিক মানুষ গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।
খোলা বাজারে এমন প্রকাশ্য হত্যাকাণ্ডে স্থানীয়দের মধ্যে চরম আতঙ্ক ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সাধারণ মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, দিনেদুপুরে এমন ঘটনা প্রমাণ করে রাউজানে সন্ত্রাসীরা এখন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। স্থানীয়রা দ্রুত দোষীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
বোরহান উদ্দিন, রাউজান (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি: 





































