সোমবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া

ছাত্রীকে যৌন নিপীড়ন, শিক্ষককে বাঁচাতে মরিয়া প্রভাবশালী মহল

ছবি-সংগৃহীত

এম. মতিন, চট্টগ্রাম ব্যুরো 
চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় এক শিশু শিক্ষার্থীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ উঠেছে বদিউল আলম নামে এক শিক্ষককের বিরুদ্ধে। ওই শিক্ষককে স্কুলের পাঠদান থেকে সাময়িক বিরত রাখা হয়েছে। ঘটনার পর থেকে গা ঢাকা দিয়েছেন অভিযুক্ত ওই শিক্ষক।
রাঙ্গুনিয়া উপজেলার কোদালা ইউনিয়নের সন্দ্বীপপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।
১ জুলাই ঘটনাটি ঘটলেও রবিবার (১৪ জুলাই) বিষয়টি জানাজানি হয়।
এর আগে (২ জুলাই) রবিবার সকালে এ ঘটনার বিচার চেয়ে স্কুলের প্রদান শিক্ষককের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন ওই ছাত্রীর অভিভাবক।
এদিকে রবিবার ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর থেকে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও এলাকাবাসীর মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। অভিযুক্ত শিক্ষককে পাঠদান থেকে সাময়িকভাবে বিরত রাখা হলেও এখনো তার বিরুদ্ধে চূড়ান্ত কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। এতে করে এলাকায় ক্ষোভ ও উত্তেজনা আরো বেড়েছে।
তবে অভিযুক্ত শিক্ষক বদিউল আলম মাস্টারকে বাঁচাতে স্থানীয় একটি মহল বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টায় ছাত্রীর পরিবারকে চাপ সৃষ্টি করছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এর আগেও ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠেছে।
ভুক্তভোগী ছাত্রীর পরিবার ও বিদ্যালয় সূত্র জানায়, সন্দীপপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক বদিউল আলম বিভিন্ন সময় স্কুলের ছাত্রীদের যৌন নিপীড়ন করে আসছিল। লোকলজ্জায় বিষয়টি গোপন থেকে যায়। চলতি মাসের ১ জুলাই ক্লাস চলাকালীন সময়ে অভিযুক্ত শিক্ষক ওই ছাত্রীকে স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেয়। ভিকটিম ভয়ে তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি প্রকাশ না করলেও বাড়ীতে এসে বিষয়টি তাঁর মাকে জানান। পরদিন (২ জুলাই) রবিবার সকালে এ ঘটনার বিচার চেয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বেলাল উদ্দিনের কাছে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন ওই শিক্ষার্থীর মা।
ভুক্তভোগী ছাত্রীর মা বলেন, ‘আমার মেয়ের সাথে ক্লাস চলাকালীন যৌন নিপীড়ন করেছে শিক্ষক বদিউল আলম। এর আগেও সে একাধিকবার এমনটাই করেছে।
প্রথমে ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার জন্য একটি মহল আমার ওপর চাপ সৃষ্টি করেন, হয় যাতে বিষয়টি জানাজানি না হয়। মূলত বারবার এসব ঘটনা ধামাচাপা পড়ে যাওয়ায় সে সাহস পেয়েছে। আমরা চাই, তাকে চাকরিচ্যুত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হোক।’
অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বেলাল উদ্দিন।
তিনি জানান, অভিযোগ পাওয়ার পর অভিযুক্ত শিক্ষক বদিউল আলমকে স্কুলের পাঠদান থেকে সাময়িকভাবে বিরত রাখা হয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি, স্থানীয় অভিভাবক ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তে অভিযুক্ত শিক্ষক বদিউল আলম নিজের দোষ স্বীকার করেন। পরে ওই
শিক্ষকের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার। জন্য উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বেলাল উদ্দিন বলেন,‘ অভিযুক্ত শিক্ষক বদিউল আলমের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়ার সাথে সাথে আমরা বিদ্যালয়ের অভিভাবকদের নিয়ে বৈঠক করি। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাকে পাঠদান থেকে বিরত রাখা হয়েছে। এখন তিনি স্কুলে আসছেন না। বিষয়টি লিখিতভাবে উপজেলা শিক্ষা অফিসে জানানো হয়েছে।’
এদিকে ঘটনার লিখিত অভিযোগ দেয়ার পরও রাঙ্গুনিয়া উপজেলা শিক্ষা কার্যালয় থেকে এখনো পর্যন্ত কোনো কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়ায় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী।
বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের দাবি, অভিযুক্ত শিক্ষকের দ্রুত অপসারণ ও শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। তারা বলেন, ‘ স্কুলে আমাদের সন্তানদের নিরাপত্তা চাই। যারা শিশুদের সাথে এমন জঘন্য অপরাধ করে, তাদের কোনো ছাড় দেয়া যাবে না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যদি নিরাপত্তা না থাকে, তাহলে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কোথায় যাবে ?’
এ বিষয়ে সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুল মোহাইমেন বলেন,‘ঘটনাটি আমরা মৌখিকভাবে শুনেছি। তবে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ওপর এসব ঘটনা কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়। অভিযুক্ত শিক্ষক বদিউল আলম ছুটির আবেদন করেছেন। উপজেলা শিক্ষা অফিসার বর্তমানে ঢাকায় আছেন। তিনি ফিরলে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
এই বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক বদিউল আলমের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ ব্যাপারে কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হয়নি।
জনপ্রিয়

শার্শার বাগআঁচড়ায় খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি ও সুস্থতা কামনায় দোয়া-মাহফিল 

চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া

ছাত্রীকে যৌন নিপীড়ন, শিক্ষককে বাঁচাতে মরিয়া প্রভাবশালী মহল

প্রকাশের সময় : ০৫:১৬:৩০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫
এম. মতিন, চট্টগ্রাম ব্যুরো 
চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় এক শিশু শিক্ষার্থীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ উঠেছে বদিউল আলম নামে এক শিক্ষককের বিরুদ্ধে। ওই শিক্ষককে স্কুলের পাঠদান থেকে সাময়িক বিরত রাখা হয়েছে। ঘটনার পর থেকে গা ঢাকা দিয়েছেন অভিযুক্ত ওই শিক্ষক।
রাঙ্গুনিয়া উপজেলার কোদালা ইউনিয়নের সন্দ্বীপপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।
১ জুলাই ঘটনাটি ঘটলেও রবিবার (১৪ জুলাই) বিষয়টি জানাজানি হয়।
এর আগে (২ জুলাই) রবিবার সকালে এ ঘটনার বিচার চেয়ে স্কুলের প্রদান শিক্ষককের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন ওই ছাত্রীর অভিভাবক।
এদিকে রবিবার ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর থেকে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও এলাকাবাসীর মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। অভিযুক্ত শিক্ষককে পাঠদান থেকে সাময়িকভাবে বিরত রাখা হলেও এখনো তার বিরুদ্ধে চূড়ান্ত কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। এতে করে এলাকায় ক্ষোভ ও উত্তেজনা আরো বেড়েছে।
তবে অভিযুক্ত শিক্ষক বদিউল আলম মাস্টারকে বাঁচাতে স্থানীয় একটি মহল বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টায় ছাত্রীর পরিবারকে চাপ সৃষ্টি করছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এর আগেও ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠেছে।
ভুক্তভোগী ছাত্রীর পরিবার ও বিদ্যালয় সূত্র জানায়, সন্দীপপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক বদিউল আলম বিভিন্ন সময় স্কুলের ছাত্রীদের যৌন নিপীড়ন করে আসছিল। লোকলজ্জায় বিষয়টি গোপন থেকে যায়। চলতি মাসের ১ জুলাই ক্লাস চলাকালীন সময়ে অভিযুক্ত শিক্ষক ওই ছাত্রীকে স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেয়। ভিকটিম ভয়ে তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি প্রকাশ না করলেও বাড়ীতে এসে বিষয়টি তাঁর মাকে জানান। পরদিন (২ জুলাই) রবিবার সকালে এ ঘটনার বিচার চেয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বেলাল উদ্দিনের কাছে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন ওই শিক্ষার্থীর মা।
ভুক্তভোগী ছাত্রীর মা বলেন, ‘আমার মেয়ের সাথে ক্লাস চলাকালীন যৌন নিপীড়ন করেছে শিক্ষক বদিউল আলম। এর আগেও সে একাধিকবার এমনটাই করেছে।
প্রথমে ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার জন্য একটি মহল আমার ওপর চাপ সৃষ্টি করেন, হয় যাতে বিষয়টি জানাজানি না হয়। মূলত বারবার এসব ঘটনা ধামাচাপা পড়ে যাওয়ায় সে সাহস পেয়েছে। আমরা চাই, তাকে চাকরিচ্যুত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হোক।’
অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বেলাল উদ্দিন।
তিনি জানান, অভিযোগ পাওয়ার পর অভিযুক্ত শিক্ষক বদিউল আলমকে স্কুলের পাঠদান থেকে সাময়িকভাবে বিরত রাখা হয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি, স্থানীয় অভিভাবক ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তে অভিযুক্ত শিক্ষক বদিউল আলম নিজের দোষ স্বীকার করেন। পরে ওই
শিক্ষকের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার। জন্য উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বেলাল উদ্দিন বলেন,‘ অভিযুক্ত শিক্ষক বদিউল আলমের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়ার সাথে সাথে আমরা বিদ্যালয়ের অভিভাবকদের নিয়ে বৈঠক করি। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাকে পাঠদান থেকে বিরত রাখা হয়েছে। এখন তিনি স্কুলে আসছেন না। বিষয়টি লিখিতভাবে উপজেলা শিক্ষা অফিসে জানানো হয়েছে।’
এদিকে ঘটনার লিখিত অভিযোগ দেয়ার পরও রাঙ্গুনিয়া উপজেলা শিক্ষা কার্যালয় থেকে এখনো পর্যন্ত কোনো কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়ায় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী।
বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের দাবি, অভিযুক্ত শিক্ষকের দ্রুত অপসারণ ও শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। তারা বলেন, ‘ স্কুলে আমাদের সন্তানদের নিরাপত্তা চাই। যারা শিশুদের সাথে এমন জঘন্য অপরাধ করে, তাদের কোনো ছাড় দেয়া যাবে না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যদি নিরাপত্তা না থাকে, তাহলে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কোথায় যাবে ?’
এ বিষয়ে সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুল মোহাইমেন বলেন,‘ঘটনাটি আমরা মৌখিকভাবে শুনেছি। তবে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ওপর এসব ঘটনা কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়। অভিযুক্ত শিক্ষক বদিউল আলম ছুটির আবেদন করেছেন। উপজেলা শিক্ষা অফিসার বর্তমানে ঢাকায় আছেন। তিনি ফিরলে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
এই বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক বদিউল আলমের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ ব্যাপারে কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হয়নি।