
মাহামুদুল ইসলাম জয়, পঞ্চগড়
পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে কলেজ ছাত্রী রত্নার চাঞ্চল্যকর হত্যাকান্ডের ২৪ ঘন্টার মধ্যে রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) সন্ধ্যায় পঞ্চগড় জেলা পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান মুন্সী স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
পুলিশ জানায়, ৩০ জুলাই বুধবার সকালে দেবীগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়নের মাঝাপাড়া এলাকার একটি ধানক্ষেতে তরুণীর মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা পুলিশে খবর দেয়। দেবীগঞ্জ থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে এবং পরে সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট এসে আলামত সংগ্রহ করে।
নিহত তরুণীর গলায় দাগ ও হাতে মোবাইল ফোনের কাভার, একটি ব্যাগ পাওয়া যায়। ঘটনার পর পরই পুলিশ তৎপরতা শুরু করে। নিহত রত্নার ঘরে তল্লাশির সময় উদ্ধার করা হয় একটি চিরকুট। সেখানে প্রেমিক মহাদেবের সঙ্গে সম্পর্ক ও পালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছের কথা উল্লেখ ছিল।
এ ছাড়া পুলিশ নিহত রত্নার ব্যবহৃত দুটি মোবাইল ফোন নম্বরের কললিস্ট (সিডিআর) বিশ্লেষণ করে সন্দেহভাজনদের শনাক্ত করে। কললিস্ট ও অবস্থান বিশ্লেষণে দেখা যায়, ঘটনার সময় রত্না ও মহাদেব একাধিকবার ফোনে যোগাযোগ করেছে।
এরপর পুলিশ একই ইউনিয়নের পুণ্ডিপাড়া এলাকার খোকা বর্মণের ছেলে মহাদেব রায়কে বুধবার দুপুর আড়াইটায় হেফাজতে নেয়। ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে সে হত্যাকাণ্ডে নিজের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে।
৩১ জুলাই বৃহস্পতিবার সকালে মহাদেবকে আদালতে সোপর্দ করা হলে সে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।
মহাদেব রায় বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ওই তরুণীর সঙ্গে একাধিকবার শারীরিক সম্পর্ক করে।তাদের প্রেমের সম্পর্ক ছিল, বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল মহাদেব রায় ও পরে প্রতারণা, এসবের একপর্যায়ে রত্নাকে হত্যা করে। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে বিষয়টি স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে সে।
বুধবার দিনগত রাতে নিহত রত্নার বাবা রবিউল ইসলাম দেবীগঞ্জ থানায় মহাদেব রায়সহ অজ্ঞাত আরও কয়েকজনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও দেবীগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) প্রবীর কুমার সরকার বলেন, ‘রত্না ও মহাদেবের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল বহুদিনের। রত্না বিয়ের দাবি করলে মহাদেব বিষয়টি এড়িয়ে যায়। পরে পারিবারিকভাবে মহাদেবের বিয়ে ঠিক হয়ে যায় এবং আশীর্বাদ সম্পন্ন হয়। তখন থেকে তাদের মধ্যে সম্পর্কের টানাপড়েন শুরু হয়। ২৯ জুলাই মঙ্গলবার দিনগত রাতে রত্নাকে বাইরে ডেকে নিয়ে যায় মহাদেব। কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে তার গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে। এরপর তার মোবাইল ফোনটি নিয়ে ভেঙে ফেলে দেয়।
দেবীগঞ্জ সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার সামুয়েল সাংমা বলেন, এটি অত্যন্ত জটিল ও স্পর্শকাতর বিষয়। কিন্তু দেবীগঞ্জ থানা পুলিশের দক্ষতা ও দ্রুত পদক্ষেপে হত্যার রহস্য ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই উদঘাটন সম্ভব হয়েছে।
মাহামুদুল ইসলাম জয়, পঞ্চগড় 



































