বুধবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

অতিরিক্ত ফোন ব্যবহার: নীরবে যেভাবে নষ্ট হচ্ছে আপনার মানসিক স্বাস্থ্য

ছবি: সংগৃহীত

অতিরিক্ত ফোন ব্যবহার এখন আমাদের জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। এটি আমাদের যোগাযোগকে সহজ করেছে ঠিকই, কিন্তু এর ক্ষতিকর দিকগুলো প্রায়ই আমরা উপেক্ষা করি। অতিরিক্ত ফোন ব্যবহার শুধু আমাদের দৃষ্টিশক্তির ওপরই প্রভাব ফেলে না, বরং এটি নীরবে আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যকেও মারাত্মকভাবে নষ্ট করছে।

আসুন জেনে নিই, কীভাবে অতিরিক্ত ফোন ব্যবহার আপনার মানসিক স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করছে:

১. উদ্বেগ ও মানসিক চাপ বৃদ্ধি
ফোনের স্ক্রিনে ক্রমাগত বিভিন্ন নোটিফিকেশন আসা, সোশ্যাল মিডিয়ার ফিড দেখা এবং অন্যের জীবনযাত্রার সঙ্গে নিজেকে তুলনা করার প্রবণতা আমাদের মধ্যে উদ্বেগ ও মানসিক চাপ বাড়িয়ে তোলে। ফোমো (FOMO – Fear of Missing Out) বা কিছু হারিয়ে ফেলার ভয় থেকে আমরা বারবার ফোন চেক করি, যা আমাদের মস্তিষ্কে এক ধরনের চাপের অনুভূতি তৈরি করে। এর ফলে মানসিক অস্থিরতা বেড়ে যায় এবং আমরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত বোধ করি।

২. বিষণ্ণতা
সোশ্যাল মিডিয়ায় অন্যের ‘নিখুঁত’ জীবন দেখে নিজের জীবনের সঙ্গে তুলনা করার ফলে হতাশা ও বিষণ্ণতা বাড়তে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা অতিরিক্ত সময় সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যয় করেন, তাদের মধ্যে বিষণ্ণতার লক্ষণ বেশি দেখা যায়। বিশেষ করে যখন আপনি নিজের কোনো অর্জন বা খুশি অন্যদের সঙ্গে তুলনা করে নিজেকে ব্যর্থ মনে করেন, তখন এই অনুভূতি আরও তীব্র হয়।

৩. ঘুমের ব্যাঘাত
ফোনের স্ক্রিন থেকে নিঃসৃত নীল আলো (blue light) আমাদের মস্তিষ্কের মেলাটোনিন (melatonin) নামক হরমোন উৎপাদন ব্যাহত করে, যা আমাদের ঘুম নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। রাতে ঘুমানোর আগে ফোন ব্যবহার করলে ঘুম আসতে দেরি হয়, ঘুমের গুণগত মান কমে যায় এবং সকালে ক্লান্তি অনুভব হয়। দীর্ঘস্থায়ী ঘুমের অভাব মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

৪. মনোযোগের অভাব
ফোনের ক্রমাগত নোটিফিকেশন এবং বিভিন্ন অ্যাপের ঘন ঘন ব্যবহার আমাদের মনোযোগের ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। আমরা একটি নির্দিষ্ট কাজে বেশিক্ষণ মনোযোগ ধরে রাখতে পারি না। এর ফলে পড়াশোনা বা কাজের ক্ষেত্রে আমাদের উৎপাদনশীলতা কমে যায়।

৫. সামাজিক বিচ্ছিন্নতা
যদিও ফোন আমাদের অনলাইনে অন্যদের সঙ্গে যুক্ত রাখে, কিন্তু অতিরিক্ত ব্যবহার আমাদের বাস্তব জীবনের সম্পর্কগুলোকে দুর্বল করে দেয়। পরিবারের সদস্য বা বন্ধুদের সঙ্গে সামনাসামনি কথা বলার চেয়ে ফোনে ব্যস্ত থাকলে প্রকৃত সামাজিক বন্ধন নষ্ট হয় এবং আমরা একাকীত্ব অনুভব করি।

৬. আত্মবিশ্বাসের অভাব
সোশ্যাল মিডিয়ায় অন্যের সফলতা, সৌন্দর্য এবং অর্জন দেখে নিজের সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হতে পারে। এর ফলে নিজের আত্মবিশ্বাস কমে যায় এবং আমরা নিজেদেরকে অপ্রতুল মনে করতে শুরু করি।

সমাধান কী?
এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে আপনার ফোন ব্যবহারের অভ্যাস নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেওয়া, নোটিফিকেশন বন্ধ রাখা এবং ঘুমানোর আগে ফোন ব্যবহার থেকে বিরত থাকার মতো ছোট ছোট পরিবর্তন আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

জনপ্রিয়

পঞ্চগড়ে কৃষকের অধিকার ও অন্তর্ভুক্তিকরন এবং নারী ও শিশুর সহিংসতারোধে গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত

অতিরিক্ত ফোন ব্যবহার: নীরবে যেভাবে নষ্ট হচ্ছে আপনার মানসিক স্বাস্থ্য

প্রকাশের সময় : ১১:৪৩:৩১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৬ অগাস্ট ২০২৫

অতিরিক্ত ফোন ব্যবহার এখন আমাদের জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। এটি আমাদের যোগাযোগকে সহজ করেছে ঠিকই, কিন্তু এর ক্ষতিকর দিকগুলো প্রায়ই আমরা উপেক্ষা করি। অতিরিক্ত ফোন ব্যবহার শুধু আমাদের দৃষ্টিশক্তির ওপরই প্রভাব ফেলে না, বরং এটি নীরবে আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যকেও মারাত্মকভাবে নষ্ট করছে।

আসুন জেনে নিই, কীভাবে অতিরিক্ত ফোন ব্যবহার আপনার মানসিক স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করছে:

১. উদ্বেগ ও মানসিক চাপ বৃদ্ধি
ফোনের স্ক্রিনে ক্রমাগত বিভিন্ন নোটিফিকেশন আসা, সোশ্যাল মিডিয়ার ফিড দেখা এবং অন্যের জীবনযাত্রার সঙ্গে নিজেকে তুলনা করার প্রবণতা আমাদের মধ্যে উদ্বেগ ও মানসিক চাপ বাড়িয়ে তোলে। ফোমো (FOMO – Fear of Missing Out) বা কিছু হারিয়ে ফেলার ভয় থেকে আমরা বারবার ফোন চেক করি, যা আমাদের মস্তিষ্কে এক ধরনের চাপের অনুভূতি তৈরি করে। এর ফলে মানসিক অস্থিরতা বেড়ে যায় এবং আমরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত বোধ করি।

২. বিষণ্ণতা
সোশ্যাল মিডিয়ায় অন্যের ‘নিখুঁত’ জীবন দেখে নিজের জীবনের সঙ্গে তুলনা করার ফলে হতাশা ও বিষণ্ণতা বাড়তে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা অতিরিক্ত সময় সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যয় করেন, তাদের মধ্যে বিষণ্ণতার লক্ষণ বেশি দেখা যায়। বিশেষ করে যখন আপনি নিজের কোনো অর্জন বা খুশি অন্যদের সঙ্গে তুলনা করে নিজেকে ব্যর্থ মনে করেন, তখন এই অনুভূতি আরও তীব্র হয়।

৩. ঘুমের ব্যাঘাত
ফোনের স্ক্রিন থেকে নিঃসৃত নীল আলো (blue light) আমাদের মস্তিষ্কের মেলাটোনিন (melatonin) নামক হরমোন উৎপাদন ব্যাহত করে, যা আমাদের ঘুম নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। রাতে ঘুমানোর আগে ফোন ব্যবহার করলে ঘুম আসতে দেরি হয়, ঘুমের গুণগত মান কমে যায় এবং সকালে ক্লান্তি অনুভব হয়। দীর্ঘস্থায়ী ঘুমের অভাব মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

৪. মনোযোগের অভাব
ফোনের ক্রমাগত নোটিফিকেশন এবং বিভিন্ন অ্যাপের ঘন ঘন ব্যবহার আমাদের মনোযোগের ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। আমরা একটি নির্দিষ্ট কাজে বেশিক্ষণ মনোযোগ ধরে রাখতে পারি না। এর ফলে পড়াশোনা বা কাজের ক্ষেত্রে আমাদের উৎপাদনশীলতা কমে যায়।

৫. সামাজিক বিচ্ছিন্নতা
যদিও ফোন আমাদের অনলাইনে অন্যদের সঙ্গে যুক্ত রাখে, কিন্তু অতিরিক্ত ব্যবহার আমাদের বাস্তব জীবনের সম্পর্কগুলোকে দুর্বল করে দেয়। পরিবারের সদস্য বা বন্ধুদের সঙ্গে সামনাসামনি কথা বলার চেয়ে ফোনে ব্যস্ত থাকলে প্রকৃত সামাজিক বন্ধন নষ্ট হয় এবং আমরা একাকীত্ব অনুভব করি।

৬. আত্মবিশ্বাসের অভাব
সোশ্যাল মিডিয়ায় অন্যের সফলতা, সৌন্দর্য এবং অর্জন দেখে নিজের সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হতে পারে। এর ফলে নিজের আত্মবিশ্বাস কমে যায় এবং আমরা নিজেদেরকে অপ্রতুল মনে করতে শুরু করি।

সমাধান কী?
এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে আপনার ফোন ব্যবহারের অভ্যাস নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেওয়া, নোটিফিকেশন বন্ধ রাখা এবং ঘুমানোর আগে ফোন ব্যবহার থেকে বিরত থাকার মতো ছোট ছোট পরিবর্তন আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।