
মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা ভুইয়া।।
দিওয়ানে ওয়াইসির কবিতাংশ-
মুশরেক্কে হুব্বে মুহাম্মদ মাতলায়ে দিওয়ান ই মা
মাতলায়ে খুরশিদে এশকেশ সিনে এ সুযানে মা।
দার তাহে হার লাফয পেনহান নালেয়ে দেল সুযে মা
ওয়া যে বুনে হার হারফ পায়দা অতাশে পেনহানে মা।
যার ত্যাগ, মহিমা ও অবদানের বদৌলতে বিশ্বের অগণিত মানুষ পেয়েছে সত্যের দিশা- সিরাতুল মুস্তাকিম। অসংখ্য খোদাপ্রেমী ও নবীপ্রেমীরা তাযকিয়াতুন নফস তথা- আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে আল্লাহ ও তাঁর প্রিয় রাসূল হজরত মুহাম্মদ (দ.)’র রেজামন্দি হাসিল করতে সক্ষম হয়েছেন। এ মহান খ্যাতিমান সুফির নাম ইাতহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। এ মহান অলিকুল শিরোমণির নাম- হজরতুল্লামা শাহ্সুফি সৈয়দ ফতেহ আলী ওয়াইসী বর্ধমানী (রহ.)।
তিনি বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। এ মহান সাহিত্যরত্নের শব্দগত দক্ষতা, ভাষাগত দক্ষতা, ব্যাকরণগত দক্ষতা, ভাষার মাধুর্যতা, ও ছন্দময় শব্দচয়নের যোগ্যতা ছিলো অনন্য উচ্চ মাত্রার। প্রতিটি শব্দচয়ন, শব্দশৈলী, শব্দগঠন, শব্দ বিন্যাস ছিলো খুবই নান্দনিক। এশিয়া মহাদেশের ফারসি কবিদের মাঝে তিনি ছিলেন এক অতুলনীয় মহাকবি। জননন্দিত এ মহাকবি- তাসাউফ পন্থীদের কাছে পরম শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব। আত্মশুদ্ধিমূলক জ্ঞান প্রচার-প্রসারের দিক দিয়ে তিনি ছিলেন ভারতবর্ষের পীর-আউলিয়াদের মাঝে এক অনন্য অনুরকরণীয় ও অনুস্মরণীয় ব্যক্তিত্ব।
হযরত শাহ সূফী সৈয়দ ফতেহ আলী ওয়াইসী (রহ.) এর পূর্ব পুরুষগণের আদি নিবাস ছিল আরব দেশের পবিত্র মক্কা নগরীতে। তিনি সাইয়্যেদানা হযরত আলী (রা.) ও গাউসুল আজম হযরত বড়পীর মহিউদ্দীন আবদুল কাদির জিলানী (রহ.) এর বংশধর। তাঁহার প্রথম পুরুষ ছিলেন কুরাইশ সম্প্রদায়ের হাসেমী গোত্র ভুক্ত। কালের প্রবাহে তাঁহার পূর্ব পুরুষের প্রধান শাখা আরব হইতে ইরাকে এবং সেখান হইতে ইরানে হিজরত করেন। সেখানে কয়েক পুরুষ বসবাস করিবার পর মুখ্য একটি শাখা প্রথমে গজনী, অতঃপর দিল্লীতে বসতি স্থাপন করেন। প্র-পিতামহের ইহধাম হইতে বিদায় গ্রহণের পর হযরত ওয়াইসী পীর কেবলা (রহ.) এর পিতামহ দিল্লী পরিত্যাগ করে বাংলাদেশের বন্দর নগরী চট্টগ্রাম জেলার অন্তর্গত লোহাগড়া থানার আমিরাবাদ ইউনিয়নের মল্লিক সোবহান-হাজি পাড়া নামক গ্রামে বসতি স্থাপন করেন। এই গ্রামেই তাঁহার পিতা কেবলা জন্ম গ্রহণ করেন। এখানেই এ ক্ষণাজন্মা মহাপুরুষ ১৮২৫ খ্রিষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মাওলানা শহীদ সৈয়দ ওয়ারেস আলী (রহ.) একাধারে ছিলেন- ধর্মশিক্ষক, ধর্মপ্রচারক, ধর্মযোদ্ধা। ১৮৩১ সালে বালাকোট যুদ্ধের প্রাথমিক পর্যায়ের পান্জতারের যুদ্ধে সৈয়দ ওয়ারেস আলী (রহ.) শাহাদাত বরণ করেন। ৬/৭ বছরের মাথায় পিতা-মাতা দু’জনে জান্নাতবাসী হন। ভারতের কয়েকটি শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে পড়াশুনে করে সর্বশেষ ‘কলকাতা আলীয়া মাদ্রাসা’ থেকে উচ্চতর কুরান-হাদিস এবং আকয়েদ-ফিকাহের জ্ঞানার্জন শেষ করে শিক্ষাজীবন ইতি টানেন। খন্ডকালীন শিক্ষকতা করেন- (১) চট্টগ্রাম সাতকানিয়া মাদ্রাসা, (২) কলকাতা আলীয়া মাদ্রাসায়। চাকুরী করেন- (১) কলকাতার দমদমের গোরা বাজার একটি গবেষণা কেন্দ্রে, (২) পলিটিক্যাল পেনশান অফিসের সুপারিনটেনডেন্ট, (৩) কলিকাতা নগর দেওয়ানী আদালত রেজিস্ট্রেশন বিভাগের প্রধান রেজিস্ট্রার, (৪) মেটিয়াবুরুজের নবাব ওয়াজেদ আলী শাহ’র একান্ত সচিব।
দয়াল নবী রাসুল (সা.) এর প্রেমের জ্বলন্ত নিদর্শন পীরে কামেল রাসূলনোমা আল্লামা হযরত শাহ সূফী সৈয়্যেদ ফতেহ আলী ওয়াইসী (রহ.)। নবী করীম (সা.) এর প্রতি অগাধ প্রেম ও ভালবাসার কারণেই তিনি সম্পূর্ণ বিরল রাসূলনোমা’উপাধি লাভ করিয়াছেন। আর দিওয়ানে ওয়াইসী’ নামক অনন্য অসাধারণ ফারসী ভাষায় মহাকাব্য (কিতাব) রচনা করিয়া জগতের বুকে অমর হইয়া আছেন বিশ্ব বরেণ্য সুবিখ্যাত বাঙ্গালী ফার্সী মহাকবি হিসাবে।
তিনি ভারতে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার পুনাশিতে বসত বাড়ী নির্মাণ করিয়া স্ব-পরিবারে বসবাস করিতেন এবং কলিকাতা হইতে মাঝে মধ্যে সেখানে যাইয়া থাকিতেন। তিনি কলিকাতা শিয়ালদহের নিকটবর্ত্তী মির্জাপুর পার্কের উত্তর দিকে মির্জাপুর ষ্ট্রীট ও আমহার্স্ট ষ্ট্রীটের সংযোগ স্থলের উপর একটি মঠ কোঠাতে বসবাস করিতেন। সে সময়ে হযরত খাজা খিজির (আ.), খাতুনে জান্নাত হযরত মা ফাতেমা (রা.), শেরে খোদা হযরত আলী (রা.), হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.), হযরত ওমর ফারুক (রা.), হযরত ওসমান গানি (রা.) আগমন পূর্বক তাঁহাকে আপন আপন অমূল্য নিসবত ব্যক্তিগত ভাবে দান করিয়া যান। ইহার পর নূরনবী হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (সা.) তাঁহার নিকট তশরীফ আনেন এবং তাঁহাকে অসীম স্নেহে নিজ পুত্র সম্ভাষণে আপন পূতবক্ষে জড়াইয়া ব্যক্তিগত ভাবে আপন পবিত্র ও মহার্ঘ্য নিসবত দান করিয়া উভয় জগতে মহাভাগ্যবান করেন। পরবর্ত্তী সময়ে নবীজী (সা.) পুনঃ আবির্ভূত হইয়া এরশাদ করেন যে, যখনই তিনি ইচ্ছা করিবেন তখনই নিদ্রা ও জাগরণে নবী পাক (সা.) এর জেয়ারত লাভ করিবেন। সে অবধি তিনি রাসূলনোমা’উপাধিতে প্রসিদ্ধি লাভ করিয়াছেন। সব সময় তিনি রাসূলপাক (সা.) এর দর্শন লাভ করিতেন। তিনি তাঁহার বহু মুরিদকে রাসূল পাক (সা.) এর দর্শন লাভ করাইয়া দিয়াছেন। হযরত রাসূলে করীম (সা.) এর দর্শন লাভের মানসে তাঁহার নিকট আরজ পেশ করিলে তিনি দয়াপরবশ হইয়া তাহাদের মনোবাসনা পূর্ণ করিতেন।
আধ্যাত্মিক বা রূহানী জগতে ওয়াইসিয়া নামে অতিশয় মর্যাদা পূর্ণ ও প্রবলতম আধ্যাত্মিক রূহানী শক্তি সম্পন্ন খোদা প্রাপ্তির একটি অতি উত্তম তরীকা রহিয়াছে। অতি অল্প সংখ্যক আউলিয়া ইহা লাভ করিয়াছেন। কেহ স্বেচ্ছায়, আকাক্সক্ষা বা প্রার্থনা করিয়া ইহা লাভ করিতে পারে না। ইহা শুধুমাত্র আল্লাহ তায়ালার এনায়েত, ফজল ও রহমতের দ্বারা লাভ করা যায়। সম্পূর্ণ রূপেই তাহা আজলী ও তকদীরী রূহানী সম্পর্ক। রাসূলনোমা হযরত ফতেহ আলী ওয়াইসী (রহ.) হযরত ওয়ায়েস করণী (রা.) হইতে রূহানী দীক্ষা ও শক্তি লাভ করিয়া ওয়াইসিয়া তরীকার ফয়েজ, নেজবত ও খেলাফত লাভ করিয়াছিলেন। ইহা ব্যতীত তিনি মাসুমিয়া ও সোহরাওয়ার্দীয়া তরীকার ফয়েজ-নেসবত, ও খেলাফত লাভ করিয়াছেন। তিনি সর্ব্বমোট ৭টি তরীকা যথা- কাদেরিয়া, চিশতিয়া, মোজাদ্দেদিয়া, নকশবন্দীয়া, ওয়াইসিয়া, মাসুমিয়া ও সোহরাওয়ার্দিয়া তরীকার খেলাফত লাভ করিয়া পীর-মোর্শেদের মর্যাদা লাভ করিয়াছেন এবং এই সাতটি তরীকাতেই তিনি মুরিদ করিতেন। রাসূলনোমা আল্লামা হযরত শাহ সূফী সৈয়দ ফতেহ আলী ওয়াইসী (রহ.) মারেফাতের উচ্চ শিখরে উন্নীত হইয়া খোদাতায়ালার অসীম রহমতে প্রথমত কুতুবুল এরশাদ নামক উচ্চ পদটি লাভ করিয়াছিলেন। অতঃপর ক্রমশঃ আধ্যাত্মিকতার আরও উচ্চ শিখরে আরোহণ করিয়া ফরদিয়াতের মোকামে উন্নীত হইয়া ফরদ হইয়াছিলেন। পরে তিনি সমধিক উন্নত হইয়া কুতুবুল ওয়াহদত নামক অতি সুউচ্চ পদ প্রাপ্ত হইয়াছিলেন। একদা রমজান মাসে হযরত রাসূলুল্লাহ সাঃ কর্ত্তৃক তিনি বঙ্গ, আসাম ও বিহারের প্রধান কুতুবুল আলম পদ প্রাপ্ত হইয়াছিলেন। ইহার পর তিনি গাউসে জামান পদ প্রাপ্ত হন। তিনি মুহূর্ত্তের মধ্যে আপন অস্তিত্ব ভুলিয়া হযরত রাসূলে পাক (সা.)এর মধ্যে একাকার হইয়া যাইতেন বলিয়া তাঁহাকে ফানা ফির-রাসূল’উপাধিতে অলংকৃত করা হয়।
শনিবার ১৯ শে অগ্রহায়ণ ১২৯৩ বঙ্গাব্দে মধ্যরাত্রে তাহাজ্জুদ নামাজ শেষে অসুস্থতা অনুভব করেন। তিনি উপস্থিত সকল ভক্তবৃন্দদের ডাকলেন এবং বললেন তাঁহার জীবনের শেষ সময় ঘনিয়ে এসেছে তাড়াতাড়ি বাড়ী নিয়ে যেতে নির্দেশ দিলেন। উপদেশ দিলেন তাঁহার জীবনাবসানের পর তাঁহার কন্যা সৈয়দা জোহরার খাতুন (রহ.) এর নিকট হতে নেসবতে জামেয়ার ফায়েজ যেন তাঁরা গ্রহণ করেন। আমি আমার সর্বস্ব তাঁকে দান করেছি। তারপর তিনি হযরত শাহ্ সূফী আহম্মদ আলী সুরেশ্বরীকে জিজ্ঞাসা করলেন, হযরত মাওলানা গোলাম সালমানি কোথায়, কারণ তার সঙ্গে তাঁহার কিছু আলোচনা আছে। তিনি তখন সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। তিনি ভক্তদের তৎক্ষণাৎ কলকাতায় তাঁহাকে পৌঁছে দেবার কথা বললেন, কারণ পৃথিবীতে তাঁহার থাকার আর সময় নেই। বাংলা ১২৯৩ সালে ২০ অগ্রহায়ণ, ৮ই রবিউল আওয়াল ১৩০৪ হিজরী রবিবার ইংরাজী ৬ই ডিসেম্বর ১৮৮৬ খ্রীষ্টাব্দে তিনি পরলোক গমন করেন। তাহার জানাজার নামাজ পড়িয়েছেন একথা কেউ উল্লেখ করেননি। তবে কি আল্লাহ্র রাসূলের মত কেউ জানাজার নামাজে ইমামতি করতে সাহস করেন নাই। যে যার মত দল বেঁধে নিজ নিজ জানাজার নামাজ পড়ে চলে গেছেন। একজন ফকির এই জানাজায় উপস্থিত ছিলেন। এ ফকির কে ছিলেন ? হযরত ওয়সী করণী (রা.)? একথা শাহ্ খলিলুর রহমান নন্দনপুরী উল্লেখ করেছেন। ২০ শে অগ্রহায়ণ ১৪-১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠিত এই মৃত্যুবার্ষিকী (উরস উৎসব) হযরত শাহ্ জ্বালালী পীর ক্বেবলা কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত । পরবর্তীতে ১৯৮০ সাল থেকে ওয়াইসী সে মোরিয়াল অ্যাসোসিয়েশন’ তাঁহার প্রয়াণ বার্ষিক তাঁরই মাজার শরীফ উদ্যাপন করেন। তাহার ভক্তগন শান্তি কামনায় সমবেত হন। হযরত ফতেহ্ আলী ওয়াইসী ক্বিবলা কা’বার তিরোধানে আকাশের সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণ হলে যেমন ধরনী অন্ধকার হয়ে যায়। তেমনি যারা বাংলা, আসাম, ভারত, আরব, সারা আজম অন্ধকার হয়ে গেল, পৃথিবীর ভক্তগণ মনে করল তারা যেন এতিম হয়ে গেল, আকাশে বাতাসে কারবালার মাতম শুরু হয়ে গেল সে এক করুন শোকাবহ দৃশ্য, বাংলার ঘরের মদিনার জ্যোতি আর ইহজগতে নেই। বাংলার গৌরব, চট্টগ্রামের কৃতি সন্তান, আওলাদে রাসূল, হযরত সাইয়েদ শাহ্ ইমাম আল মাদানী (রহ.) এর বংশের সুযোগ্য সন্তান হযরত শাহ্ সূফী সাইয়েদ ফতেহ আলী ওয়াইসী (রহ.) হেদায়েতের মশাল হাতে নিয়ে দন্ডীয়মান হতে আর দেখা যাবে না সকলেই শোকে বিহবল মূল্যমান।
ক্রমান্বয়ে তিন দিন ব্যাপী তিনবার হযরত ওয়াইসী (রহ.) জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। যাঁহারা জানাজার নামাজে অংশ নিয়েছিলেন তাহারা সকলেই তাঁহার পবিত্র দেহে আকাশ থেকে এক জ্যেতির্ময় আলোকপাত হতে দেখেন এবং তাঁহার দেহ থেকেও একটা আলোর জ্যোতি বিচ্ছুরিত হয়ে আকাশের সঙ্গে সংযোগ সৃষ্টি করছিল। সকলেই এই ঐশ্বরিক ঘটনায় হতবাক হয়ে যান। যতক্ষণ হযরত ফতেহ্ আলী ওয়াইসী ক্বিবলা কা’বার দেহ মুক্ত আকাশের নিচে শায়িত ছিল ততক্ষণ আকাশ থেকে অপ্রত্যাশিত আলোক ক্রমাগত আসছিল তাঁহার দেহের মধ্যে। মনে হচ্ছিল আকাশ ও পৃথিবীর মধ্যে এক অচ্ছেদ্য বন্ধু হতে চলেছে। এমন কি তাঁহার পবিত্র দেহ সমাধিতে কবরে শায়িত করবার সময়েও একই ভাবে একটা জ্যোতি বিচ্ছুরিত হতে থাকে। দেহ সমাধিস্থ হওয়ার পরও মাটির অভ্যন্তর থেকে সেই জ্যোর্তিময় আলোর ঝলকানি দেখা যেতে থাকে। জানাজার নামাজে উপস্থিত সমস্ত মানুষ বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যায়! হায়! হায়! এই পবিত্র মানুষ যে মৃত্যুর পরও এই ভাবেই তাঁহার অলৌকিক শক্তির এ ঘটনা ঘটে যখন তিনি জীবিত ছিলেন সে সময় তিনি কি শক্তির অধিকারী ছিলেন। এরূপ ভাবতে বিস্ময় লাগে। জীবিতকালে আমরা তাঁকে চিনতে পারি নি। সকলে হায় হায় করে কেঁদে মাতম সৃষ্টি করেছিল হায় যে মানুষ মৃত্যু পরে এমন অলৌকিক শক্তির ঘটনা দেখাতে পারে তাহলে তিনি জীবিত অবস্থায় কি ছিলেন। আমরা চিনতে পারিনি। কলকাতা মানিকতলা মুনশী পাড়া কবরস্থানে তাঁকে শায়িত করা হয় মানিকতলা, লালবাগানে। মুনশীপাড়া লেনে তাঁহার মাজার শরীফ আজও বিদ্যামান।
হযরত মাওলানা শাহ্ সূফী সাইয়েদ ফতেহ্ আলী ওয়াইসী (রহ.) ক্বেবলা কা’বা অতীব স্বাস্থ্য সুন্দর, উজ্জ্বল শ্যামবর্ণের ও নাতিদীর্ঘ ছিলেন। মধ্যস্থলে ঈষৎ ব্যবধান রাখিয়া ভ্রু-যুগল জোড়া ছিল তাঁহার। বক্ষ ও উভয় স্কন্ধ প্রশস্ত ছিল। চক্ষু ছিল আয়াত এবং নাসিকা মানানসই উন্নত ছিল। চিবুক ছিল ঘন চাপ শশ্রু আচ্ছাদিত। দন্তগুলি ছিল মুক্তা-পাঁতিসম সুশৃঙ্খল, দৃঢ়, সুন্দর ও ঝকঝকে। মস্তক দেহের সঙ্গে বড়ই মানানসই ছিল। সারা মস্তক ছিল চুলে আবৃত। তাঁহার সমগ্র জীবনকালে কোন প্রকার পীড়া বিন্দুমাত্র তাঁহাকে আক্রমণ করেনি। পৌষ মাঘের প্রচন্ড শীতের রাত্রেও মাত্র পাতলা কুর্তা পরিধান করিয়া, কখনও বা কেবলমাত্র একখানা পাতলা চাদরে গাত্র আবৃত করিয়া উন্মুক্ত ছাদে দীর্ঘ সময় প্রভু বন্দনায় নিমগ্ন রহিতেন।
প্রয়োজন বোধে তিনি মুচকিয়া হাসিতেন, কখনও অট্টহাস্য করেন নাই। প্রয়োজনের অতিরিক্ত বাক্যলাপ হইতে সতত বিরত রহিতেন। ধীরে ও স্পষ্টভাবে কথা কহিতেন। তিনি সর্বদা সাধারণ পোষাক-পরিচ্ছদ ব্যবহার করিতেন। কদাপি আড়ম্বরপূর্ণ বস্ত্রাদি পরিধান করিতেন না। কেবলমাত্র দুই ঈদ-মোবারকে শিরওয়ানী ও চোগা পরিধান করিতেন। পায়ে পরিতেন নাগরা জুতা। মাথায় ব্যবহার করিতেন কাদেরী টুপি। আতর ও ফুল তাঁহার বিশেষ আদরনীয় ছিল। একশত মোটা দানার তসবিহ (জপমালা) ব্যবহার করিতেন। নিজ হস্তের নকল করা কোরআন শরীফ পাঠ করিতেন। তিনি ছিলেন পবিত্র কোরআন হাফেজ ও ক্কারী। কোরআন শরীফ দ্রুত, শুদ্ধ, স্পষ্ট ও সুমিষ্ট স্বরে পাঠ করিতে পারিতেন। সমগ্র হাদিস শরীফ তাঁহার কন্ঠস্থ ছিল। কোন হাদিস শরীফটি সহি, কোনটি সঠিক নহে এ বিষয়ে তাঁহার ছিল প্রগাঢ় জ্ঞান ও অন্তর-দৃষ্টি।
৮ রবিউল আওয়াল রাসুল নোমা পীর হযরত মাওলানা শাহসূফী সৈয়দ ফতেহ আলী ওয়াইসী বর্ধমানী (রহ.) ফাতেহা শরীফ উপলক্ষে তাহার অন্যতম খলিফা হযরত শাহ্ সূফী সৈয়দ ওয়াজেদ আলী মেহেদীবাগী আল ওয়াইসী (রহ:)-এর দরবারে কলকাতা মেহেদীবাগ দরবার শরীফ (বিশ্ব অলির গাজী নগর) তালোড়া, বগুরায় দুরুদ, সালাম ও দোয়া অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। বিশেষ মোনাজাত পরিচালনা করবেন আওলাদে সৈয়দ ওয়াজেদ আলী (রহ.) হযরত মাওলানা শাহসূফী সৈয়দ গাজনাফুর রহমান ইউসুফ জামিল গরিবুল্লাহ মেহেদীবাদী আল ক্বাদরী-চিশতী, আল নক্সবন্দী-মোজাদ্দেদী, আল-ওয়াইসী (মা. জি.আ.)।
মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা ভুইয়া।। 




























