
উলিপুর (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধিঃ
কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার একটি প্রত্যন্ত গ্রাম, জনতারহাট মুন্সিপাড়া। একসময় যে গ্রামটি ছিল শুধুই অভাব আর বেকারত্বের এক ছবি, এখন তা বদলে গেছে একটি স্বপ্নময় উদ্যোগে। সোলাইমান হোসেন ও রেগুনা বেগম রিনা নামে এক দম্পতির হাত ধরে এই গ্রামে গড়ে উঠেছে একটি জুতা ও চামড়ার পণ্যের কারখানা, যার নাম ‘বেস্ট সুজ অ্যান্ড হ্যান্ডিক্রাফটস’।
স্বপ্ন থেকে বাস্তব
সোলাইমান ও রিনা দুজনেই ঢাকার একটি লেদার ফ্যাক্টরিতে কাজ করতেন। সেখানেই তাদের মনে নিজ গ্রামে একটি কারখানা স্থাপনের স্বপ্ন জাগে। সেই স্বপ্নকে বাস্তব রূপ দিতে তারা নিজেদের জমানো সব টাকা এবং জমি বিক্রি করে প্রায় ৭৫ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেন। আধুনিক মেশিন কিনে তারা এই দুঃসাহসিক কাজটি শুরু করেন। ২০২৩ সালে মাত্র ১০ জন শ্রমিক নিয়ে শুরু হলেও বর্তমানে কারখানায় কাজ করছেন শতাধিক শ্রমিক, যাদের অধিকাংশই নারী।
বদলে যাচ্ছে স্থানীয়দের জীবন
এই কারখানার কারণে গ্রামের মানুষের জীবনে এসেছে এক নতুন গতি। আগে যেখানে শ্রমিকরা দৈনিক মাত্র ১৫০-২০০ টাকা মজুরিতে ক্ষেত-খামারে কাজ করতেন, এখন তারা এই কারখানায় কাজ করে ৫০০-৬০০ টাকা পর্যন্ত আয় করছেন। এর ফলে এলাকার দরিদ্রতা কমছে এবং মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত হচ্ছে। রিনা বেগম, সাবিনা ইয়াসমিনসহ আরও অনেক নারী শ্রমিক জানালেন, তাদের আর কাজের জন্য শহরমুখী হতে হয় না; বাড়িতে থেকেই তারা এখন স্বাবলম্বী।
সফলতার গল্প
‘বেস্ট সুজ অ্যান্ড হ্যান্ডিক্রাফটস’ কারখানায় তৈরি হচ্ছে বাহারি ডিজাইনের জুতা, স্যান্ডেল, লোফার এবং উন্নতমানের চামড়ার ব্যাগ, মানিব্যাগসহ বিভিন্ন পণ্য। এসব পণ্য দেশের বড় বড় শোরুমে জায়গা করে নিয়েছে। অনলাইনেও এর চাহিদা প্রচুর।
কারখানার মালিক সোলাইমান হোসেন জানান, বাজারে তাদের পণ্যের চাহিদা ভালো থাকায় উৎপাদন ধীরে ধীরে বাড়ানো হচ্ছে।
যদিও বিদ্যুৎ সরবরাহ অনিয়মিত হওয়ায় উৎপাদন মাঝে মাঝে ব্যাহত হয়, তবুও এই দম্পতির দৃঢ় মনোবল গ্রামের শত শত মানুষকে একটি নতুন পথের দিশা দেখাচ্ছে।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আশাদুজ্জামান খন্দকার এই উদ্যোগকে অত্যন্ত সাহসী বলে প্রশংসা করেছেন এবং আশা প্রকাশ করেছেন যে এই কারখানাটি এলাকার উন্নয়নে আরও বড় ভূমিকা রাখবে। কুড়িগ্রাম বিসিক কর্তৃপক্ষও এই দম্পতিকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে।
উলিপুর (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধিঃ 







































