সোমবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

চট্টগ্রাম বন্দরে নতুন শুল্ক পদ্ধতি, ট্যারিফ ২৫-৫০ শতাংশ বাড়ল

ছবি-সংগৃহীত

চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ ভেড়ানো থেকে শুরু করে কনটেইনার ওঠা-নামাসহ যাবতীয় সেবার বিপরীতে ২৫ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ট্যারিফ বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। দীর্ঘ ৩৯ বছর পর এই ট্যারিফ বাড়ানো হলেও ভোক্তা পর্যায়ে পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা ব্যবসায়ীদের। বিশেষ করে জাহাজের অবস্থানকালীন সময়ের ক্ষেত্রে ১২ ঘণ্টার জন্য বাড়ছে ১০০ শতাংশ। আর ৩৬ ঘণ্টার জন্য বেড়েছে ৯০০ শতাংশ পর্যন্ত।

অবশেষে মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) ভোর থেকে কার্যকর হলো চট্টগ্রাম বন্দরের বহুল আলোচিত নতুন ট্যারিফ সিস্টেম। নৌ পরিবহন এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের চূড়ান্ত অনুমোদনের পর আইন মন্ত্রণালয় ঘুরে রোববার রাতেই জারি করা হয় প্রজ্ঞাপন। নতুন এই ট্যারিফ অনুযায়ী পাইলটিং চার্জ ৮০০ মার্কিন ডলার এবং প্রতিবার জাহাজ টেনে আনার টাগ চার্জ ৬১৫ থেকে শুরু করে ৬ হাজার ৮৩০ ডলার পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে। কনটেইনার উঠানামা থেকে শুরু করে অন্যান্য সেবার ট্যারিফ বেড়েছে ২৫ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সচিব ওমর ফারুক বলেন, বন্দর ব্যবহারকারীদের সেবা দিতে এবং বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে কাজ চলছে।
 
চট্টগ্রাম বন্দরের বার্থে জাহাজের অবস্থানকালীন সময়ের ট্যারিফ লাগামহীনভাবে বাড়ানো হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন শিপিং ব্যবসায়ীরা। এখন থেকে ১২ ঘণ্টা অতিরিক্ত অবস্থানের জন্য ১০০ শতাংশ, ২৪ ঘণ্টার জন্য ৩০০ শতাংশ, ৩৬ ঘণ্টার জন্য ৪০০ শতাংশ এবং ৩৬ ঘণ্টার বেশি হলে অতিরিক্ত চার্জ ৯০০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।
 
আর এতে আমদানি খরচ বেড়ে যাওয়ায় ভোক্তা পর্যায়ে পণ্যের দাম বাড়ারও শঙ্কা তাদের। বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ বলেন, ট্যারিফ বাড়লে আমদানি খরচ বাড়বে, যার প্রভাব পড়বে দেশের মানুষের ওপর।
 
তবে বন্দরের দাবি, প্রতি কেজিতে আগে ৩২ পয়সা হলেও এখন তা বাড়িয়ে ৪৪ পয়সা র্নিধারণ করা হয়েছে। অর্থাৎ প্রতি কেজিতে বেড়েছে মাত্র ১২ পয়সা।
 
চট্টগ্রাম বন্দর বছরে প্রায় ৩৩ লাখ কনটেইনার, ১৩ কোটি মেট্রিক টন কার্গো পণ্য হ্যান্ডলিং করছে। সেইসঙ্গে বছরে পণ্যবাহী জাহাজ আসছে ৪ হাজারের বেশি। আর ট্যারিফ বাড়ানোর ক্ষেত্রে বন্দরের কনসালটেন্ট হিসেবে কাজ করেছে স্পেনের প্রতিষ্ঠান আইডম। এশিয়ার ১০টিসহ ১৭টি আন্তর্জাতিক বন্দরের কার্যক্রম এবং ট্যারিফ পর্যালোচনা করেই চট্টগ্রাম বন্দরের ট্যারিফ নির্ধারণ করা হয়েছে।
 
১৯৮৬ সালে সবশেষ ট্যারিফ বাড়িয়েছিল চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। আর নতুন করে ট্যারিফ সংযোজনের জন্য গত ৫ বছরের বেশি সময় ধরে বিদেশি প্রতিষ্ঠান দিয়ে যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। অবশেষে ৩০-৪১ শতাংশ পর্যন্ত ট্যারিফ বাড়ানো হয়েছে।  তবে বন্দর ব্যবহারকারীরা বলছেন, ট্যারিফ বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বন্দরের আধুনিকায়ন ও যন্ত্রপাতি বৃদ্ধি করতে হবে।
 
চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানি করা পণ্য বোঝাই কনটেইনার ফেলে রাখার প্রবণতা রোধ করতে নতুন ট্যারিফে চার্জ বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। আমদানি করা এফসিএল কনটেইনারের ক্ষেত্রে প্রথম ৪দিন, রফতানিযোগ্য এফসিএল এবং এলসিএল কনটেইনারে ৬ দিন ফ্রি টাইম রাখা হয়েছে। কিন্তু সপ্তম দিন থেকে ৬ দশমিক নয় শূন্য ডলার দিয়ে শুরু হবে ট্যারিফ আদায়। যার ২১ দিন পাড় হলেই যুক্ত হবে ৬২ মার্কিন ডলার করে।
 
চট্টগ্রাম কাস্টম এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এস এম সাইফুল আলম বলেন, ট্যারিফ বিষয়ে আরও বিবেচনার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হবে।
 
প্রতিবেশী দেশগুলোর পাশাপাশি উন্নত দেশগুলোর প্রতিটি বন্দরে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার হলেও চট্টগ্রাম বন্দরে তার ঘাটতি রয়েছে বলে অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এই বন্দরে গ্যান্টিক্রেন রয়েছে মাত্র ১৮টি। তাও আবার এনসিটিতে ১৪ এবং সিসিটিতে ৪টি। এর বাইরে জিসিবির ১২টি বার্থে পণ্য উঠানামা হয় জাহাজের ক্রেন দিয়েই। এ অবস্থায় সংকট এড়াতে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ ট্যারিফ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছিল বন্দর ব্যবহারকারীরা। কিন্তু বেড়েছে প্রস্তাবের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি।
 
বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস চেয়ারম্যান শফিকুল আলম জুয়েল বলেন, সেবা নিশ্চিত করতে হবে, যন্ত্রপাতির সুবিধা বাড়াতে হবে। তখনই ট্যারিফ যৌক্তিক হবে।
 
বিশ্বের একশ ব্যস্ততম বন্দরের তালিকায় ৬৮তম স্থানে রয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর। আর দেশের ৯৩ শতাংশ আমদানি-রফতানি বাণিজ্য সম্পন্ন হয় এই বন্দর দিয়েই। সূত্র- সময় সংবাদ
জনপ্রিয়

চৌগাছার ইজিবাইক–প্রাইভেটকার মুখোমুখি সংঘর্ষ, শিক্ষার্থীসহ আহত ৭

চট্টগ্রাম বন্দরে নতুন শুল্ক পদ্ধতি, ট্যারিফ ২৫-৫০ শতাংশ বাড়ল

প্রকাশের সময় : ১০:১৩:১৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ ভেড়ানো থেকে শুরু করে কনটেইনার ওঠা-নামাসহ যাবতীয় সেবার বিপরীতে ২৫ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ট্যারিফ বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। দীর্ঘ ৩৯ বছর পর এই ট্যারিফ বাড়ানো হলেও ভোক্তা পর্যায়ে পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা ব্যবসায়ীদের। বিশেষ করে জাহাজের অবস্থানকালীন সময়ের ক্ষেত্রে ১২ ঘণ্টার জন্য বাড়ছে ১০০ শতাংশ। আর ৩৬ ঘণ্টার জন্য বেড়েছে ৯০০ শতাংশ পর্যন্ত।

অবশেষে মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) ভোর থেকে কার্যকর হলো চট্টগ্রাম বন্দরের বহুল আলোচিত নতুন ট্যারিফ সিস্টেম। নৌ পরিবহন এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের চূড়ান্ত অনুমোদনের পর আইন মন্ত্রণালয় ঘুরে রোববার রাতেই জারি করা হয় প্রজ্ঞাপন। নতুন এই ট্যারিফ অনুযায়ী পাইলটিং চার্জ ৮০০ মার্কিন ডলার এবং প্রতিবার জাহাজ টেনে আনার টাগ চার্জ ৬১৫ থেকে শুরু করে ৬ হাজার ৮৩০ ডলার পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে। কনটেইনার উঠানামা থেকে শুরু করে অন্যান্য সেবার ট্যারিফ বেড়েছে ২৫ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সচিব ওমর ফারুক বলেন, বন্দর ব্যবহারকারীদের সেবা দিতে এবং বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে কাজ চলছে।
 
চট্টগ্রাম বন্দরের বার্থে জাহাজের অবস্থানকালীন সময়ের ট্যারিফ লাগামহীনভাবে বাড়ানো হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন শিপিং ব্যবসায়ীরা। এখন থেকে ১২ ঘণ্টা অতিরিক্ত অবস্থানের জন্য ১০০ শতাংশ, ২৪ ঘণ্টার জন্য ৩০০ শতাংশ, ৩৬ ঘণ্টার জন্য ৪০০ শতাংশ এবং ৩৬ ঘণ্টার বেশি হলে অতিরিক্ত চার্জ ৯০০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।
 
আর এতে আমদানি খরচ বেড়ে যাওয়ায় ভোক্তা পর্যায়ে পণ্যের দাম বাড়ারও শঙ্কা তাদের। বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ বলেন, ট্যারিফ বাড়লে আমদানি খরচ বাড়বে, যার প্রভাব পড়বে দেশের মানুষের ওপর।
 
তবে বন্দরের দাবি, প্রতি কেজিতে আগে ৩২ পয়সা হলেও এখন তা বাড়িয়ে ৪৪ পয়সা র্নিধারণ করা হয়েছে। অর্থাৎ প্রতি কেজিতে বেড়েছে মাত্র ১২ পয়সা।
 
চট্টগ্রাম বন্দর বছরে প্রায় ৩৩ লাখ কনটেইনার, ১৩ কোটি মেট্রিক টন কার্গো পণ্য হ্যান্ডলিং করছে। সেইসঙ্গে বছরে পণ্যবাহী জাহাজ আসছে ৪ হাজারের বেশি। আর ট্যারিফ বাড়ানোর ক্ষেত্রে বন্দরের কনসালটেন্ট হিসেবে কাজ করেছে স্পেনের প্রতিষ্ঠান আইডম। এশিয়ার ১০টিসহ ১৭টি আন্তর্জাতিক বন্দরের কার্যক্রম এবং ট্যারিফ পর্যালোচনা করেই চট্টগ্রাম বন্দরের ট্যারিফ নির্ধারণ করা হয়েছে।
 
১৯৮৬ সালে সবশেষ ট্যারিফ বাড়িয়েছিল চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। আর নতুন করে ট্যারিফ সংযোজনের জন্য গত ৫ বছরের বেশি সময় ধরে বিদেশি প্রতিষ্ঠান দিয়ে যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। অবশেষে ৩০-৪১ শতাংশ পর্যন্ত ট্যারিফ বাড়ানো হয়েছে।  তবে বন্দর ব্যবহারকারীরা বলছেন, ট্যারিফ বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বন্দরের আধুনিকায়ন ও যন্ত্রপাতি বৃদ্ধি করতে হবে।
 
চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানি করা পণ্য বোঝাই কনটেইনার ফেলে রাখার প্রবণতা রোধ করতে নতুন ট্যারিফে চার্জ বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। আমদানি করা এফসিএল কনটেইনারের ক্ষেত্রে প্রথম ৪দিন, রফতানিযোগ্য এফসিএল এবং এলসিএল কনটেইনারে ৬ দিন ফ্রি টাইম রাখা হয়েছে। কিন্তু সপ্তম দিন থেকে ৬ দশমিক নয় শূন্য ডলার দিয়ে শুরু হবে ট্যারিফ আদায়। যার ২১ দিন পাড় হলেই যুক্ত হবে ৬২ মার্কিন ডলার করে।
 
চট্টগ্রাম কাস্টম এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এস এম সাইফুল আলম বলেন, ট্যারিফ বিষয়ে আরও বিবেচনার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হবে।
 
প্রতিবেশী দেশগুলোর পাশাপাশি উন্নত দেশগুলোর প্রতিটি বন্দরে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার হলেও চট্টগ্রাম বন্দরে তার ঘাটতি রয়েছে বলে অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এই বন্দরে গ্যান্টিক্রেন রয়েছে মাত্র ১৮টি। তাও আবার এনসিটিতে ১৪ এবং সিসিটিতে ৪টি। এর বাইরে জিসিবির ১২টি বার্থে পণ্য উঠানামা হয় জাহাজের ক্রেন দিয়েই। এ অবস্থায় সংকট এড়াতে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ ট্যারিফ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছিল বন্দর ব্যবহারকারীরা। কিন্তু বেড়েছে প্রস্তাবের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি।
 
বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস চেয়ারম্যান শফিকুল আলম জুয়েল বলেন, সেবা নিশ্চিত করতে হবে, যন্ত্রপাতির সুবিধা বাড়াতে হবে। তখনই ট্যারিফ যৌক্তিক হবে।
 
বিশ্বের একশ ব্যস্ততম বন্দরের তালিকায় ৬৮তম স্থানে রয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর। আর দেশের ৯৩ শতাংশ আমদানি-রফতানি বাণিজ্য সম্পন্ন হয় এই বন্দর দিয়েই। সূত্র- সময় সংবাদ