
ইসলামি শরিয়তে সামাজিক শৃঙ্খলা ও নৈতিকতার গুরুত্ব অনেক বেশি। ব্যক্তির মান-মর্যাদা ও সুনাম রক্ষা করায় বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এজন্য মিথ্যা অপবাদ দেয়ার বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি এবং সতর্কতার নির্দেশনা রয়েছে। বিশেষত, কোনো নারীর প্রতি ব্যভিচারের মিথ্যা অপবাদ আরোপের বিষয়ে কোরআন ও হাদিসে পরিষ্কার এবং কঠোর বিধান রয়েছে।
আল্লাহ তাআলা অন্যান্য বিষয় সরাসরি হারাম করেছেন কিন্তু জিনা এমন এক বিষয় যার সংশ্লিষ্ট কাজ থেকেও বেঁচে থাকতে বলেছেন। মহান আল্লাহ বলেন, আর জিনা-ব্যভিচারের কাছেও যেও না, তা হচ্ছে অশ্লীল কাজ আর অতি জঘন্য পথ। (সুরা বনি ইসরাইল ৩২)
মহান আল্লাহ শুধু যৌনকর্মকেই হারাম করেননি, বরং তিনি এরই পাশাপাশি সব ধরনের অশ্লীলতাকেও হারাম করেছেন। তিনি বলেন, হে নবী আপনি বলে দিন, নিশ্চয় আমার প্রভু হারাম করে দিয়েছেন প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সকল ধরনের অশ্লীলতা, পাপকর্ম, অন্যায় বিদ্রোহ, আল্লাহ তা‘আলার সাথে কাউকে শরিক করা। (সুরা আরাফ ৩৩)
মহান আল্লাহ যখন ব্যভিচারকে নিষেধ করে দিয়েছেন তখন তিনি সে সকল পথকেও নীতিগতভাবে রোধ করে দিয়েছেন যেগুলোর মাধ্যমে স্বভাবত ব্যভিচার সংঘটিত হয়ে থাকে। এ জন্যই আল্লাহ পুরুষ ও নারী উভয় জাতিকে লজ্জাস্থান হেফাজতের পূর্বে সর্বপ্রথম নিজ দৃষ্টিকে সংযত করতে আদেশ করেন।
মহান আল্লাহ মুমিন নারী-পুরুষকে উদ্দেশ্য করে বলেন, যেন তারা নিজ দৃষ্টিকে সংযত করে এবং নিজ লজ্জাস্থানকে হিফাযত করে। এটাই তাদের জন্য পবিত্র থাকার সর্বোত্তম মাধ্যম। নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা তাদের আমল সম্পর্কে অধিক অবগত। (সুরা নুর ৩০-৩১)
আল্লাহ বান্দাদের সতর্ক করে বলেন, তিনি (আল্লাহ) চোখের অপব্যবহার এবং অন্তরের গোপন বস্তু সম্পর্কেও অবগত। (সুরা মুমিন ১৯)
মহান আল্লাহ কাউকে অন্য কারোর ঘরে বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করতে নিষেধ করেছেন। যাতে চোখের অপব্যবহার না হয় এবং তা সম্পূর্ণরূপে রক্ষা পায় (সুরা নুর ২৭-২৮)। একই জায়গা থেকে নবীজি চোখের অশ্লীল দৃষ্টিকে ব্যভিচার বা জিনা সাব্যস্ত করে তা থেকে বেঁচে থাকতে বলেছেন। তিনি বলেন,
غُضُّوْا أَبْصَارَكُمْ ، وَاحْفَظُوْا فُرُوْجَكُمْ অর্থাৎ তোমাদের চোখ নিম্নগামী করো এবং লজ্জাস্থান হেফাজত করো’। (আহমদ ৫/৩২৩)হঠাৎ কোনো হারাম বস্তুর উপর চোখ পড়ে গেলে তা তড়িঘড়ি ফিরিয়ে নিতে হবে। দ্বিতীয়বার কিংবা একদৃষ্টে ওদিকে তাকিয়ে থাকা যাবে না। নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজরত আলি (রা.)-কে উদ্দেশ্য করে বলেন,
يَا عَلِيُّ! لاَ تُتْبِعِ النَّظْرَةَ النَّظْرَةَ ، فَإِنَّ لَكَ الْأُوْلَى ، وَلَيْسَتْ لَكَ الْآخِرَةُ অর্থ হে আলি, বারবার দৃষ্টি ক্ষেপণ করো না। কারণ, হঠাৎ দৃষ্টিতে তোমার কোনো দোষ নেই। তবে ইচ্ছাকৃত দ্বিতীয় দৃষ্টি অবশ্যই দোষের’। (আবু দাউদ ২১৪৯, তিরমিজি ২৭৭৭)অশ্লীলভাবে তাকানোকে জিনা সাব্যস্ত করে নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক আদম সন্তানের জন্য জিনার কিছু অংশ বরাদ্দ করে রেখেছেন। যা সে অবশ্যই করবে। চোখের জিনা হচ্ছে অবৈধভাবে কারোর দিকে দৃষ্টি ক্ষেপণ, মুখের জিনা হচ্ছে অশ্লীল কথোপকথন, হাতও ব্যভিচার করে, তবে তার ব্যভিচার হচ্ছে অবৈধভাবে কাউকে হাত দিয়ে ধরা, পা-ও ব্যভিচার করে। তবে তার ব্যভিচার হচ্ছে কোনো ব্যভিচার সংঘটনের জন্য রওয়ানা করা, মুখও ব্যভিচার করে। তবে তার ব্যভিচার হচ্ছে অবৈধভাবে কাউকে চুমু দেয়া, কানের ব্যভিচার হচ্ছে অশ্লীল কথা শ্রবণ করা, মনও ব্যভিচারের কামনা-বাসনা করে। আর তখনই লজ্জাস্থান তা বাস্তবায়িত করে অথবা করে না। (আবু দাউদ ২১৫২)
নারী ও পুরুষের উচিত নয় মাহরাম ব্যক্তিদের ছাড়া অন্য কারও প্রতি তাকানো। এতে করে যেমন চোখের ব্যভিচার হয় তেমনই ইবাদত করার আগ্রহ ও স্বাদ নষ্ট হয়ে যায়। তবে যদি কখনো চোখের গুনাহ হয়ে থাকে তাহলে বেশি বেশি ইস্তেগফার করতে হবে। ভবিষ্যতে এমন আচরণ থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করতে হবে। তাহলে আল্লাহ তাআলা ক্ষমা করবেন ইনশাআল্লাহ। —সময় সংবাদ
ধর্ম ডেস্ক 



















