শনিবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গাজা পুনর্গঠনে ৭০ বিলিয়ন ডলার দিতে ইচ্ছুক বিভিন্ন দেশ

ছবি: এএফপি

দীর্ঘ দুই বছর ধরে যুদ্ধের নামে ফিলিস্তিনি জনগোষ্ঠীকে নিধনের উদ্দেশ্যে গাজায় যে গণহত্যা ইসরায়েলি বাহিনী চালিয়ে আসছিল তা নজিরবিহীন আন্তর্জাতিক চাপ এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবনায় সমাপ্তির দিকে এগিয়েছে। গত সোমবার ইসরায়েলের পার্লামেন্ট নেসেটে এবং এর কয়েক ঘণ্টা পর মিসরে ট্রাম্প মুসলিম ও ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে গাজা ভূখণ্ডের ভবিষ্যৎ ও বৃহত্তর আঞ্চলিক শান্তির সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেন।

ট্রাম্পের গাজা শান্তি পরিকল্পনার প্রথম পর্ব নিয়ে সমঝোতার পর হামাস ও ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি-বন্দি বিনিময় চুক্তি করে। গত শুক্রবার থেকে যুদ্ধবিরতি শুরুর মধ্য দিয়ে গাজায় যুদ্ধ থামে। চুক্তি অনুযায়ী এর তিন দিন পর সোমবার হামাস তাদের হাতে বন্দি ২০ জীবিত জিম্মির সবাইকে মুক্তি দেয় এবং ইসরায়েলও তাদের কারাগারে বন্দি ২৫০ জন দণ্ডপ্রাপ্ত ফিলিস্তিনি এবং গাজা যুদ্ধ চলাকালে আটক ১৭০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেয়।

পরিকল্পনা অনুযায়ী এখন গাজা পরিচালনা ও পুনর্গঠনে করণীয় নিয়ে কাজ চলছে।

গাজা পুনর্গঠনে দেশগুলো ৭০ বিলিয়ন ডলার দিতে ইচ্ছুক 

জাতিসংঘ জানিয়েছে, গাজার পুনর্গঠনে ৭০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (প্রায় ৮ লাখ কোটি টাকা) ব্যয়ের যে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, তাতে অর্থসহায়তার আগ্রহ দেখাচ্ছে বিভিন্ন দেশ। জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) এক কর্মকর্তার ভাষায়, যুক্তরাষ্ট্রসহ আরব ও ইউরোপের কয়েকটি দেশ ইতোমধ্যেই সহায়তার বিষয়ে ইতিবাচক ইঙ্গিত দিয়েছে বলে গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও আরব দেশগুলো- বিশেষ করে মিসর, কাতার, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও জর্ডান বিভিন্ন পরিকল্পনায় সক্রিয় ভূমিকা নিচ্ছে এবং অর্থসহায়তা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ইউরোপীয় দেশ ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি ও যুক্তরাজ্যসহ অনেক দেশ গাজার পুনর্গঠন পরিকল্পনাকে সমর্থন জানিয়েছে। ইরাক আরব লিগের এক সম্মেলনে ২০ মিলিয়ন ডলার দান করার ঘোষণা দিয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কোন দেশ কত পরিমাণ দেবে বা চূড়ান্ত চুক্তিতে কারা কারা অর্থ প্রদান করবে, তা স্পষ্টভাবে ঘোষণা হয়নি।

জেনেভায় এক সংবাদ সম্মেলনে ইউএনডিপির কর্মকর্তা ইয়াকো সিলিয়ার্স বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে বেশ ভালো ইঙ্গিত পেয়েছি।’ তবে তিনি বিস্তারিত কিছু জানাননি।

সিলিয়ার্সের হিসাবে, ইসরায়েলের হামলা গাজায় অন্তত ৫ কোটি ৫০ লাখ টন ধ্বংসাবশেষ সৃষ্টি করেছে।

গাজা পরিচালনায় ১৫ ফিলিস্তিনি টেকনোক্র্যাটকে বাছাই

মিসরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বদর আবদেলআত্তি সোমবারের শীর্ষ বৈঠকের আগে অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে জানান, যুদ্ধপরবর্তী গাজা পরিচালনার জন্য ১৫ জন ফিলিস্তিনি টেকনোক্র্যাটকে বাছাই করা হয়েছে। তিনি বলেন, এই ব্যক্তিদের নাম ইতোমধ্যেই ইসরায়েলের মাধ্যমে যাচাই করা হয়েছে, যদিও তাদের পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি।

আবদেলআত্তি বলেন, ‘গাজার মানুষের দৈনন্দিন জীবন পরিচালনার দায়িত্ব নিতে আমাদের এই কমিটিকে দ্রুত পাঠাতে হবে। আর ‘বোর্ড অব পিস’ নামে যে কাঠামো গঠিত হবে, সেটি পুনর্গঠনের অর্থ ও সহায়তার প্রবাহ তত্ত্বাবধান করবে।’ এই বোর্ডের নেতৃত্বে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প থাকবেন বলে জানান তিনি।

মিসরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও জানান, ১৫ সদস্যের এই প্রশাসনিক কমিটি ইতোমধ্যেই সব ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীর, এমনকি হামাসেরও অনুমোদন পেয়েছে। তার ভাষায়, হামাস ট্রাম্পের পরিকল্পনাকে স্বাগত জানিয়েছে। তারা ‘অন্তর্বর্তী সময়ে কোনো ভূমিকা রাখবে না, তারা এতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তাই গাজার মানুষের দৈনন্দিন জীবনের দায়িত্ব নিতে এই প্রশাসনিক ফিলিস্তিনি কমিটি গঠনের কাজ তারা এগিয়ে নিচ্ছে’Ñ বলেন আবদেলআত্তি।

তিনি আরও বলেন, ইসরায়েলকেও তার অংশের দায়িত্ব নিতে হবে; গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহার, মানবিক সহায়তার প্রবাহ নিশ্চিত করা এবং প্রশাসনিক কমিটিকে মাঠপর্যায়ে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে, যাতে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা বজায় থাকে। একইভাবে, হামাসকেও তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানির সহযোগিতায় মিসর গাজার পুনর্গঠন ও পুনরুদ্ধার বিষয়ক একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করবে বলে ঘোষণা দেন আবদেলআত্তি।

ট্রাম্পের ওপর হামাস কেন এতটা আস্থা রাখছে

একসময় ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ‘বর্ণবাদী’ ও ‘অরাজকতার কারিগর’ বলে আখ্যা দেওয়া হামাস এখন তার ওপরই সবচেয়ে বেশি আস্থা রাখছে। এই পরিবর্তনের সূত্রপাত হয় গত মাসে এক নজিরবিহীন ফোনালাপে, যেখানে ট্রাম্প ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে কাতারের প্রধানমন্ত্রীর কাছে ক্ষমা চাইতে বলেনÑ দোহায় ইসরায়েলি বিমান হামলার পর। ওই ঘটনায় ট্রাম্পের দৃঢ় অবস্থান হামাসের মধ্যে বিশ্বাস জাগায় যে, তিনি ইসরায়েলকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন।

হামাস নেতাদের মতে, ট্রাম্প কাতার ও ইরান-ইসরায়েল সংঘাত দুটিতেই মধ্যস্থতা করে দেখিয়েছেন যে তিনি যুদ্ধবিরতির ব্যাপারে আন্তরিক। ট্রাম্প প্রকাশ্যে ঘোষণা দেনÑ ইসরায়েল আর কাতারে হামলা চালাবে না। এতে হামাসের কাছে তার বিশ্বাসযোগ্যতা আরও বেড়ে যায়।

যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে এখনও কোন কোন বিষয় সমাধান করা বাকি 

এখন পর্যন্ত ইসরায়েল গাজার প্রধান শহরগুলো থেকে ‘হলুদ রেখা’য় সরে এসেছে, যার অর্থ তারা প্রায় ৫৩ শতাংশ ভূখণ্ড দখল করে আছে। প্রত্যাহার আরও দুটি পর্যায়ে অনুসরণ করা হবে। প্রথমত, যখন একটি আন্তর্জাতিক শান্তিবাহিনীকে একত্রিত করা হবে; এবং দ্বিতীয়ত, একটি স্থায়ী ‘নিরাপত্তা বাফার জোনে’।

কিন্তু সাম্প্রতিক দিনগুলোতে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ভাষা ভিন্ন ছিল। গত সপ্তাহে এক বিবৃতিতে তিনি বলেছিলেন, ‘আইডিএফ (ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনী) গাজা ভূখণ্ডের গভীরে অবস্থান করছে এবং এর সব প্রভাবশালী স্থান নিয়ন্ত্রণ করছে। আমরা সব দিক থেকে হামাসকে ঘিরে ফেলছি।’ ফলে বক্তব্য সত্য হলে প্রত্যাহার আশাব্যঞ্জক নয়।

ট্রাম্পের পরিকল্পনার মূলনীতি হলো নিরস্ত্রীকরণ; কিন্তু শনিবার হামাসের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এএফপিকে বলেন, নিরস্ত্রীকরণ ‘প্রশ্নের বাইরে’। তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের অস্ত্র হস্তান্তরের দাবি নিয়ে আলোচনার অবকাশ নেই।’ সোমবার জিম্মিদের মুক্তি দেওয়ার সময়ও গাজার কিছু অংশে সশস্ত্র যোদ্ধাদের ছবি ছিল, যা হামাসের কর্তৃত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠার একটি স্পষ্ট প্রচেষ্টা।

চুক্তি যেন ইসরায়েলের গণহত্যার ‘দায়মুক্তি’ না হয় : স্পেনের প্রধানমন্ত্রী

স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ বলেছেন, ইসরায়েল-হামাসের যুদ্ধবিরতি চুক্তি যেন গাজায় সংঘটিত ‘গণহত্যার’ দায়মুক্তির কারণ না হয়। রেডিও কাদেনা সেরে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘শান্তি মানে ভুলে যাওয়া নয়, শান্তি মানে দোষীদের দায়মুক্তি নয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘গাজায় যে গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে, তাতে যারা মূল ভূমিকা রেখেছে, তাদের ন্যায়ের মুখোমুখি হতে হবে; দায়মুক্তি কোনোভাবেই চলবে না।’

গাজায় ফিলিস্তিনি জনগোষ্ঠীকে ধ্বংস করাই ছিল উদ্দেশ্য : জাতিসংঘের তদন্ত

জাতিসংঘের তদন্তকারীরা গত মাসে জানিয়েছেন, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েল যে সামরিক অভিযান চালিয়েছে, তা ‘গণহত্যা’ হিসেবে চিহ্নিত করার মতো পর্যায়ে পৌঁছেছে; এবং এর উদ্দেশ্য ছিল ‘ফিলিস্তিনি জনগোষ্ঠীকে ধ্বংস করা’।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলের নির্বিচার হত্যাযজ্ঞ, মানবিক সহায়তা অবরোধ, জোরপূর্বক স্থানচ্যুতি এবং এমনকি একটি প্রজননসেবা ক্লিনিক ধ্বংসের মতো ঘটনা এই গণহত্যার অভিযোগের পক্ষে স্পষ্ট প্রমাণ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।

ইসরায়েলি জিম্মিদের মরদেহ হস্তান্তরে সময় লাগতে পারে 

গাজা থেকে নিহত ইসরায়েলি জিম্মিদের মরদেহ হস্তান্তরে সময় লাগতে পারে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটি (আইসিআরসি)। সংস্থাটি বলেছে, ধ্বংসস্তূপে মরদেহ শনাক্ত ও উদ্ধার করা একটি ‘বিরাট চ্যালেঞ্জ’।

রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আইসিআরসির মুখপাত্র ক্রিশ্চিয়ান কার্ডন বলেন, এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে কয়েক দিন থেকে কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লাগতে পারে, এবং এমনও হতে পারে যে কিছু মরদেহ কখনও খুঁজে পাওয়া যাবে না।

রাফা সীমান্ত ক্রসিং আজ বুধবার পর্যন্ত বন্ধ 

গাজা ও মিসরের মধ্যবর্তী রাফা সীমান্ত ক্রসিং আজ বুধবার পর্যন্ত বন্ধ থাকবে এবং গাজা ভূখণ্ডে সাহায্যের প্রবাহ হ্রাস পাবে।

ইসরায়েলি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মার্কিন মধ্যস্থতায় নতুন যুদ্ধবিরতি চুক্তির অংশ হিসেবে হামাস তাদের আটকে থাকা জিম্মিদের মৃতদেহ হস্তান্তর না করার পর এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে এই পদক্ষেপ কতদিন স্থায়ী হবে সে সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু বলেননি তারা।

জনপ্রিয়

যশোরে ধর্মীয় সংখ্যালঘু নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে মানববন্ধন

গাজা পুনর্গঠনে ৭০ বিলিয়ন ডলার দিতে ইচ্ছুক বিভিন্ন দেশ

প্রকাশের সময় : ০৩:৫২:৫৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫

দীর্ঘ দুই বছর ধরে যুদ্ধের নামে ফিলিস্তিনি জনগোষ্ঠীকে নিধনের উদ্দেশ্যে গাজায় যে গণহত্যা ইসরায়েলি বাহিনী চালিয়ে আসছিল তা নজিরবিহীন আন্তর্জাতিক চাপ এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবনায় সমাপ্তির দিকে এগিয়েছে। গত সোমবার ইসরায়েলের পার্লামেন্ট নেসেটে এবং এর কয়েক ঘণ্টা পর মিসরে ট্রাম্প মুসলিম ও ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে গাজা ভূখণ্ডের ভবিষ্যৎ ও বৃহত্তর আঞ্চলিক শান্তির সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেন।

ট্রাম্পের গাজা শান্তি পরিকল্পনার প্রথম পর্ব নিয়ে সমঝোতার পর হামাস ও ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি-বন্দি বিনিময় চুক্তি করে। গত শুক্রবার থেকে যুদ্ধবিরতি শুরুর মধ্য দিয়ে গাজায় যুদ্ধ থামে। চুক্তি অনুযায়ী এর তিন দিন পর সোমবার হামাস তাদের হাতে বন্দি ২০ জীবিত জিম্মির সবাইকে মুক্তি দেয় এবং ইসরায়েলও তাদের কারাগারে বন্দি ২৫০ জন দণ্ডপ্রাপ্ত ফিলিস্তিনি এবং গাজা যুদ্ধ চলাকালে আটক ১৭০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেয়।

পরিকল্পনা অনুযায়ী এখন গাজা পরিচালনা ও পুনর্গঠনে করণীয় নিয়ে কাজ চলছে।

গাজা পুনর্গঠনে দেশগুলো ৭০ বিলিয়ন ডলার দিতে ইচ্ছুক 

জাতিসংঘ জানিয়েছে, গাজার পুনর্গঠনে ৭০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (প্রায় ৮ লাখ কোটি টাকা) ব্যয়ের যে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, তাতে অর্থসহায়তার আগ্রহ দেখাচ্ছে বিভিন্ন দেশ। জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) এক কর্মকর্তার ভাষায়, যুক্তরাষ্ট্রসহ আরব ও ইউরোপের কয়েকটি দেশ ইতোমধ্যেই সহায়তার বিষয়ে ইতিবাচক ইঙ্গিত দিয়েছে বলে গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও আরব দেশগুলো- বিশেষ করে মিসর, কাতার, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও জর্ডান বিভিন্ন পরিকল্পনায় সক্রিয় ভূমিকা নিচ্ছে এবং অর্থসহায়তা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ইউরোপীয় দেশ ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি ও যুক্তরাজ্যসহ অনেক দেশ গাজার পুনর্গঠন পরিকল্পনাকে সমর্থন জানিয়েছে। ইরাক আরব লিগের এক সম্মেলনে ২০ মিলিয়ন ডলার দান করার ঘোষণা দিয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কোন দেশ কত পরিমাণ দেবে বা চূড়ান্ত চুক্তিতে কারা কারা অর্থ প্রদান করবে, তা স্পষ্টভাবে ঘোষণা হয়নি।

জেনেভায় এক সংবাদ সম্মেলনে ইউএনডিপির কর্মকর্তা ইয়াকো সিলিয়ার্স বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে বেশ ভালো ইঙ্গিত পেয়েছি।’ তবে তিনি বিস্তারিত কিছু জানাননি।

সিলিয়ার্সের হিসাবে, ইসরায়েলের হামলা গাজায় অন্তত ৫ কোটি ৫০ লাখ টন ধ্বংসাবশেষ সৃষ্টি করেছে।

গাজা পরিচালনায় ১৫ ফিলিস্তিনি টেকনোক্র্যাটকে বাছাই

মিসরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বদর আবদেলআত্তি সোমবারের শীর্ষ বৈঠকের আগে অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে জানান, যুদ্ধপরবর্তী গাজা পরিচালনার জন্য ১৫ জন ফিলিস্তিনি টেকনোক্র্যাটকে বাছাই করা হয়েছে। তিনি বলেন, এই ব্যক্তিদের নাম ইতোমধ্যেই ইসরায়েলের মাধ্যমে যাচাই করা হয়েছে, যদিও তাদের পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি।

আবদেলআত্তি বলেন, ‘গাজার মানুষের দৈনন্দিন জীবন পরিচালনার দায়িত্ব নিতে আমাদের এই কমিটিকে দ্রুত পাঠাতে হবে। আর ‘বোর্ড অব পিস’ নামে যে কাঠামো গঠিত হবে, সেটি পুনর্গঠনের অর্থ ও সহায়তার প্রবাহ তত্ত্বাবধান করবে।’ এই বোর্ডের নেতৃত্বে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প থাকবেন বলে জানান তিনি।

মিসরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও জানান, ১৫ সদস্যের এই প্রশাসনিক কমিটি ইতোমধ্যেই সব ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীর, এমনকি হামাসেরও অনুমোদন পেয়েছে। তার ভাষায়, হামাস ট্রাম্পের পরিকল্পনাকে স্বাগত জানিয়েছে। তারা ‘অন্তর্বর্তী সময়ে কোনো ভূমিকা রাখবে না, তারা এতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তাই গাজার মানুষের দৈনন্দিন জীবনের দায়িত্ব নিতে এই প্রশাসনিক ফিলিস্তিনি কমিটি গঠনের কাজ তারা এগিয়ে নিচ্ছে’Ñ বলেন আবদেলআত্তি।

তিনি আরও বলেন, ইসরায়েলকেও তার অংশের দায়িত্ব নিতে হবে; গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহার, মানবিক সহায়তার প্রবাহ নিশ্চিত করা এবং প্রশাসনিক কমিটিকে মাঠপর্যায়ে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে, যাতে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা বজায় থাকে। একইভাবে, হামাসকেও তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানির সহযোগিতায় মিসর গাজার পুনর্গঠন ও পুনরুদ্ধার বিষয়ক একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করবে বলে ঘোষণা দেন আবদেলআত্তি।

ট্রাম্পের ওপর হামাস কেন এতটা আস্থা রাখছে

একসময় ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ‘বর্ণবাদী’ ও ‘অরাজকতার কারিগর’ বলে আখ্যা দেওয়া হামাস এখন তার ওপরই সবচেয়ে বেশি আস্থা রাখছে। এই পরিবর্তনের সূত্রপাত হয় গত মাসে এক নজিরবিহীন ফোনালাপে, যেখানে ট্রাম্প ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে কাতারের প্রধানমন্ত্রীর কাছে ক্ষমা চাইতে বলেনÑ দোহায় ইসরায়েলি বিমান হামলার পর। ওই ঘটনায় ট্রাম্পের দৃঢ় অবস্থান হামাসের মধ্যে বিশ্বাস জাগায় যে, তিনি ইসরায়েলকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন।

হামাস নেতাদের মতে, ট্রাম্প কাতার ও ইরান-ইসরায়েল সংঘাত দুটিতেই মধ্যস্থতা করে দেখিয়েছেন যে তিনি যুদ্ধবিরতির ব্যাপারে আন্তরিক। ট্রাম্প প্রকাশ্যে ঘোষণা দেনÑ ইসরায়েল আর কাতারে হামলা চালাবে না। এতে হামাসের কাছে তার বিশ্বাসযোগ্যতা আরও বেড়ে যায়।

যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে এখনও কোন কোন বিষয় সমাধান করা বাকি 

এখন পর্যন্ত ইসরায়েল গাজার প্রধান শহরগুলো থেকে ‘হলুদ রেখা’য় সরে এসেছে, যার অর্থ তারা প্রায় ৫৩ শতাংশ ভূখণ্ড দখল করে আছে। প্রত্যাহার আরও দুটি পর্যায়ে অনুসরণ করা হবে। প্রথমত, যখন একটি আন্তর্জাতিক শান্তিবাহিনীকে একত্রিত করা হবে; এবং দ্বিতীয়ত, একটি স্থায়ী ‘নিরাপত্তা বাফার জোনে’।

কিন্তু সাম্প্রতিক দিনগুলোতে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ভাষা ভিন্ন ছিল। গত সপ্তাহে এক বিবৃতিতে তিনি বলেছিলেন, ‘আইডিএফ (ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনী) গাজা ভূখণ্ডের গভীরে অবস্থান করছে এবং এর সব প্রভাবশালী স্থান নিয়ন্ত্রণ করছে। আমরা সব দিক থেকে হামাসকে ঘিরে ফেলছি।’ ফলে বক্তব্য সত্য হলে প্রত্যাহার আশাব্যঞ্জক নয়।

ট্রাম্পের পরিকল্পনার মূলনীতি হলো নিরস্ত্রীকরণ; কিন্তু শনিবার হামাসের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এএফপিকে বলেন, নিরস্ত্রীকরণ ‘প্রশ্নের বাইরে’। তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের অস্ত্র হস্তান্তরের দাবি নিয়ে আলোচনার অবকাশ নেই।’ সোমবার জিম্মিদের মুক্তি দেওয়ার সময়ও গাজার কিছু অংশে সশস্ত্র যোদ্ধাদের ছবি ছিল, যা হামাসের কর্তৃত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠার একটি স্পষ্ট প্রচেষ্টা।

চুক্তি যেন ইসরায়েলের গণহত্যার ‘দায়মুক্তি’ না হয় : স্পেনের প্রধানমন্ত্রী

স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ বলেছেন, ইসরায়েল-হামাসের যুদ্ধবিরতি চুক্তি যেন গাজায় সংঘটিত ‘গণহত্যার’ দায়মুক্তির কারণ না হয়। রেডিও কাদেনা সেরে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘শান্তি মানে ভুলে যাওয়া নয়, শান্তি মানে দোষীদের দায়মুক্তি নয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘গাজায় যে গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে, তাতে যারা মূল ভূমিকা রেখেছে, তাদের ন্যায়ের মুখোমুখি হতে হবে; দায়মুক্তি কোনোভাবেই চলবে না।’

গাজায় ফিলিস্তিনি জনগোষ্ঠীকে ধ্বংস করাই ছিল উদ্দেশ্য : জাতিসংঘের তদন্ত

জাতিসংঘের তদন্তকারীরা গত মাসে জানিয়েছেন, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েল যে সামরিক অভিযান চালিয়েছে, তা ‘গণহত্যা’ হিসেবে চিহ্নিত করার মতো পর্যায়ে পৌঁছেছে; এবং এর উদ্দেশ্য ছিল ‘ফিলিস্তিনি জনগোষ্ঠীকে ধ্বংস করা’।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলের নির্বিচার হত্যাযজ্ঞ, মানবিক সহায়তা অবরোধ, জোরপূর্বক স্থানচ্যুতি এবং এমনকি একটি প্রজননসেবা ক্লিনিক ধ্বংসের মতো ঘটনা এই গণহত্যার অভিযোগের পক্ষে স্পষ্ট প্রমাণ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।

ইসরায়েলি জিম্মিদের মরদেহ হস্তান্তরে সময় লাগতে পারে 

গাজা থেকে নিহত ইসরায়েলি জিম্মিদের মরদেহ হস্তান্তরে সময় লাগতে পারে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটি (আইসিআরসি)। সংস্থাটি বলেছে, ধ্বংসস্তূপে মরদেহ শনাক্ত ও উদ্ধার করা একটি ‘বিরাট চ্যালেঞ্জ’।

রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আইসিআরসির মুখপাত্র ক্রিশ্চিয়ান কার্ডন বলেন, এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে কয়েক দিন থেকে কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লাগতে পারে, এবং এমনও হতে পারে যে কিছু মরদেহ কখনও খুঁজে পাওয়া যাবে না।

রাফা সীমান্ত ক্রসিং আজ বুধবার পর্যন্ত বন্ধ 

গাজা ও মিসরের মধ্যবর্তী রাফা সীমান্ত ক্রসিং আজ বুধবার পর্যন্ত বন্ধ থাকবে এবং গাজা ভূখণ্ডে সাহায্যের প্রবাহ হ্রাস পাবে।

ইসরায়েলি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মার্কিন মধ্যস্থতায় নতুন যুদ্ধবিরতি চুক্তির অংশ হিসেবে হামাস তাদের আটকে থাকা জিম্মিদের মৃতদেহ হস্তান্তর না করার পর এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে এই পদক্ষেপ কতদিন স্থায়ী হবে সে সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু বলেননি তারা।