
জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে চলমান অর্থ সংকট মোকাবিলার অংশ হিসেবে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের সংখ্যা কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামী নয় মাসের মধ্যে বিভিন্ন মিশন থেকে সামরিক বাহিনীর মোট ১,৩১৩ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হবে, যারা সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী থেকে নিয়োজিত আছেন।
এর আগে শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের একমাত্র অবশিষ্ট পুলিশ কন্টিনজেন্টকে কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র থেকে প্রত্যাহার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। ১৮০ সদস্যের ওই কন্টিনজেন্টে ৭০ জন নারী পুলিশ কর্মকর্তা রয়েছেন। তারা আগামী নভেম্বরের মধ্যে দেশে ফিরবেন। মাত্র দুই মাস আগে এই কন্টিনজেন্টের অংশ হিসেবে জাতিসংঘের একমাত্র সর্ব-নারী পুলিশ ইউনিট মোতায়েন করা হয়েছিল।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে চলমান আর্থিক সংকটের কারণে ১৫ শতাংশ বাজেট হ্রাসের নির্দেশ দিয়েছেন। এ পরিকল্পনার আওতায় ইউনিফর্মধারী সদস্যদের জন্য বরাদ্দ অর্থ ১৫ শতাংশ কমানো হবে।
জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের মিলিটারি অ্যাফেয়ার্স কার্যালয় (ওএমএ) ভারপ্রাপ্ত সামরিক উপদেষ্টা শেরিল পিয়ার্স একটি চিঠিতে সামরিক সদস্য প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছেন। চিঠি ১৪ অক্টোবর পাঠানো হয় এবং এতে স্বাক্ষর করেন চিফ অব স্টাফ ক্যাপ্টেন লনি ফিল্ডস জুনিয়র। খসড়া প্রস্তুত করেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. তানবির আলম।
ওএমএ জানিয়েছে, এই সিদ্ধান্তের ফলে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা অংশ নেওয়া পাঁচটি মিশনে সদস্যসংখ্যা কমবে। সবচেয়ে বেশি হ্রাস হবে দক্ষিণ সুদানের ইউএনমিস মিশনে, যেখান থেকে ৬১৭ সদস্য প্রত্যাহার করা হবে। এছাড়া মিনুসকা (মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র) থেকে ৩৪১, ইউনিসফা (সুদানের আবেই অঞ্চল) থেকে ২৬৮, মনুসকো (কঙ্গো) থেকে ৭৯ এবং মিনুরসো (পশ্চিম সাহারা) থেকে ৮ বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী প্রত্যাহার করা হবে।
বিআইপিএসএসের জ্যেষ্ঠ ফেলো শাফকাত মুনীর বলেন, “জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণ কেবল বাংলাদেশ সেনা ও সশস্ত্র বাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করেনি, বরং এটি আন্তর্জাতিক সংযোগ ও কূটনৈতিক প্রভাব বৃদ্ধিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। বর্তমানে পরিস্থিতি গুরুত্বসহকারে পর্যালোচনা করা প্রয়োজন। নতুনভাবে ভ্যালু যোগ করার উপায় হতে পারে সিনিয়র পদে নিয়োগ বা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে অংশগ্রহণ, পাশাপাশি অন্যান্য মিশনে অংশগ্রহণের পরিকল্পনা করা।
বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা ১৯৮৮ সালে মাত্র ১৫ জন পর্যবেক্ষককে ইরাক-ইরান মিলিটারি অবজারভার গ্রুপ মিশনে পাঠানোর মাধ্যমে ‘নীল হেলমেট’ পরার যাত্রা শুরু করে। ১৯৮৯ সালে বাংলাদেশ পুলিশ, ১৯৯৩ সালে নৌ ও বিমানবাহিনী অংশগ্রহণ শুরু করে। এ পর্যন্ত বাংলাদেশ ৪৩টি দেশ বা অঞ্চলে ৬৩টি শান্তিরক্ষা মিশনে অংশ নিয়েছে, যেখানে এক লাখ ৭৮ হাজার ৭৪৩ জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী নিয়োজিত ছিলেন।
বর্তমানে পাঁচ হাজার ৬১৯ জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী বিশ্বের ১০টি দেশ বা অঞ্চলে দায়িত্ব পালন করছেন। এর মধ্যে রয়েছে পশ্চিম সাহারা, সুদানের আবেই অঞ্চল, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, কঙ্গো, লেবানন, দক্ষিণ সুদান, সাইপ্রাস, ইয়েমেন ও লিবিয়া। বাংলাদেশের সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর সদস্যরা এসব মিশনে পেশাদারিত্ব, সাহসিকতা এবং মানবিকতার মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন।
বাংলাদেশ পুলিশের প্রথম শান্তিরক্ষা মিশন ছিল নামিবিয়া। ২০২৫ সালের মে মাস পর্যন্ত পুলিশের ২১ হাজারেরও বেশি কর্মকর্তা বিশ্বজুড়ে ২৪টি দেশে ২৬টি মিশনে দায়িত্ব পালন করেছেন, যেখানে রয়েছে কঙ্গো, দক্ষিণ সুদান ও মধ্য আফ্রিকা। —ঢাকা প্রকাশ
নিজস্ব প্রতিবেদক 







































