বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ৯ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রবেশ ফি ৩৪৫ টাকা

সুন্দরবনের আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজমে ভ্রমণপিপাসুর মত বিভক্ত

শেখ নাজমুল, শরণখোলা (বাগেরহাট):
নভেম্বরে সুন্দরবনে খুলছে নতুন দুয়ার—আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার। দর্শনার্থীদের জন্য এটি সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের নতুন পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে উন্মুক্ত করা হবে। বন বিভাগের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। তবে একই বনের বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রের প্রবেশ ফি পার্থক্যের কারণে পর্যটক ও ট্যুরিজম ব্যবসায়ীদের মধ্যে কিছুটা দ্বিধা ও হতাশা দেখা দিয়েছে।
পূর্ব সুন্দরবনের নিসর্গঘেরা অভয়ারণ্যে গড়ে ওঠা এই কেন্দ্রটি সবুজ ম্যানগ্রোভ বনের বুক চিরে, নদীর নোনাজলে ভেসে এবং প্রকৃতির নীরব সৌন্দর্যে ঘেরা। শরণখোলা রেঞ্জ অফিস থেকে ট্রলারযোগে মাত্র ৪০ মিনিটে পৌঁছানো যায়, যাত্রাপথে চোখে পড়ে সবুজ বন, ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে যাওয়া পাখি, কচুরিপানায় ঢাকা জলাশয় এবং সুন্দরী-গেওয়া গাছের সারি।
বন বিভাগ জানিয়েছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টারের অবকাঠামো নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এখানে তৈরি করা হয়েছে ছয়তলা সমতুল্য ওয়াচ টাওয়ার, যেখান থেকে সুন্দরবনের বিস্তৃত সবুজাভ দৃশ্য দেখা যায়। রয়েছে দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ ফুট ট্রেইল (ওয়াকওয়ে), মিষ্টি পানির পুকুর, হরিণ রাখার সেড, জেটি, বিশ্রামাগার এবং পর্যটকদের নিরাপত্তায় বনরক্ষী ও স্থানীয় গাইডের সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধান।
ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে আলীবান্দা বরিশাল বিভাগের সাত জেলার মানুষের জন্য সহজগম্য সুন্দরবন স্পট হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। কম সময় ও ঝুঁকিতে সুন্দরবনের সৌন্দর্য উপভোগ করা সম্ভব। ফলে স্থানীয় পর্যটকরা ইতিমধ্যেই আগ্রহ দেখাচ্ছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা শাহিন বলেন, “আলীবান্দা চালু হলে স্থানীয় অর্থনীতি ও কর্মসংস্থানে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এটি স্থানীয় গাইড, নৌযানচালক, হোটেল ব্যবসায়ী ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করবে। এছাড়া পরিবেশবান্ধব পর্যটনের মাধ্যমে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে।”
তবে প্রবেশ ফি নিয়ে অসন্তোষ আছে। আলীবান্দায় ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৪৫ টাকা, যেখানে করমজলসহ অন্যান্য সুন্দরবন পর্যটন পয়েন্টে ফি মাত্র ৪৬ টাকা। শরণখোলা ট্যুরিজম অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক রাসেল বয়াতী বলেন, “অনেকে আলীবান্দায় যেতে আগ্রহী, কিন্তু ফি বেশি হওয়ায় নিরুৎসাহিত হচ্ছেন।”
পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) রেজাউল করিম চৌধুরী জানান, “আলীবান্দা এখন প্রায় প্রস্তুত। নভেম্বরেই এখানে হরিণ আনা হবে এবং আনুষ্ঠানিকভাবে পর্যটকদের জন্য খোলা হবে। যেহেতু এটি ২০১৭ সালে ঘোষিত অভয়ারণ্য এলাকার অংশ, তাই সাধারণ বনাঞ্চলের তুলনায় কিছু বিধিনিষেধ ও প্রবেশ ফি বেশি রাখা হয়েছে। তবে পর্যটকদের দাবির বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।”
জনপ্রিয়

ঝিকরগাছায় অস্ত্র ও ডাকাতি মামলার আসামি গ্রেপ্তার

প্রবেশ ফি ৩৪৫ টাকা

সুন্দরবনের আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজমে ভ্রমণপিপাসুর মত বিভক্ত

প্রকাশের সময় : ০১:০৬:৫৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ নভেম্বর ২০২৫
শেখ নাজমুল, শরণখোলা (বাগেরহাট):
নভেম্বরে সুন্দরবনে খুলছে নতুন দুয়ার—আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার। দর্শনার্থীদের জন্য এটি সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের নতুন পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে উন্মুক্ত করা হবে। বন বিভাগের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। তবে একই বনের বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রের প্রবেশ ফি পার্থক্যের কারণে পর্যটক ও ট্যুরিজম ব্যবসায়ীদের মধ্যে কিছুটা দ্বিধা ও হতাশা দেখা দিয়েছে।
পূর্ব সুন্দরবনের নিসর্গঘেরা অভয়ারণ্যে গড়ে ওঠা এই কেন্দ্রটি সবুজ ম্যানগ্রোভ বনের বুক চিরে, নদীর নোনাজলে ভেসে এবং প্রকৃতির নীরব সৌন্দর্যে ঘেরা। শরণখোলা রেঞ্জ অফিস থেকে ট্রলারযোগে মাত্র ৪০ মিনিটে পৌঁছানো যায়, যাত্রাপথে চোখে পড়ে সবুজ বন, ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে যাওয়া পাখি, কচুরিপানায় ঢাকা জলাশয় এবং সুন্দরী-গেওয়া গাছের সারি।
বন বিভাগ জানিয়েছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টারের অবকাঠামো নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এখানে তৈরি করা হয়েছে ছয়তলা সমতুল্য ওয়াচ টাওয়ার, যেখান থেকে সুন্দরবনের বিস্তৃত সবুজাভ দৃশ্য দেখা যায়। রয়েছে দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ ফুট ট্রেইল (ওয়াকওয়ে), মিষ্টি পানির পুকুর, হরিণ রাখার সেড, জেটি, বিশ্রামাগার এবং পর্যটকদের নিরাপত্তায় বনরক্ষী ও স্থানীয় গাইডের সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধান।
ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে আলীবান্দা বরিশাল বিভাগের সাত জেলার মানুষের জন্য সহজগম্য সুন্দরবন স্পট হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। কম সময় ও ঝুঁকিতে সুন্দরবনের সৌন্দর্য উপভোগ করা সম্ভব। ফলে স্থানীয় পর্যটকরা ইতিমধ্যেই আগ্রহ দেখাচ্ছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা শাহিন বলেন, “আলীবান্দা চালু হলে স্থানীয় অর্থনীতি ও কর্মসংস্থানে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এটি স্থানীয় গাইড, নৌযানচালক, হোটেল ব্যবসায়ী ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করবে। এছাড়া পরিবেশবান্ধব পর্যটনের মাধ্যমে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে।”
তবে প্রবেশ ফি নিয়ে অসন্তোষ আছে। আলীবান্দায় ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৪৫ টাকা, যেখানে করমজলসহ অন্যান্য সুন্দরবন পর্যটন পয়েন্টে ফি মাত্র ৪৬ টাকা। শরণখোলা ট্যুরিজম অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক রাসেল বয়াতী বলেন, “অনেকে আলীবান্দায় যেতে আগ্রহী, কিন্তু ফি বেশি হওয়ায় নিরুৎসাহিত হচ্ছেন।”
পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) রেজাউল করিম চৌধুরী জানান, “আলীবান্দা এখন প্রায় প্রস্তুত। নভেম্বরেই এখানে হরিণ আনা হবে এবং আনুষ্ঠানিকভাবে পর্যটকদের জন্য খোলা হবে। যেহেতু এটি ২০১৭ সালে ঘোষিত অভয়ারণ্য এলাকার অংশ, তাই সাধারণ বনাঞ্চলের তুলনায় কিছু বিধিনিষেধ ও প্রবেশ ফি বেশি রাখা হয়েছে। তবে পর্যটকদের দাবির বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।”