
বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ২৩৭টি আসনে দলীয় প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছে। সেই তালিকার শীর্ষে আছেন দলটির চেয়ারপাসন খালেদা জিয়ার নাম, যিনি কয়েক বছর ধরেই শারীরিকভাবে অসুস্থ হওয়ায় চিকিৎসাধীন। দলটির ঘোষণা অনুযায়ী, বেগম জিয়া তিনটি আসনে দলীয় প্রার্থী হবেন আর গত কয়েক বছর ধরে দলটির সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বগুড়ার একটি আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
কিন্তু দলটির নির্বাচনী প্রচারে কে নেতৃত্ব দেবেন আর নির্বাচনে জিতলে কে সরকারের প্রধানমন্ত্রী হবেন—তা নিয়ে দলটির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো কিছু জানানো হয়নি।
এর কারণ হলো একদিকে খালেদা জিয়া অসুস্থ, আবার তারেক রহমান কবে দেশে ফিরবেন তা এখনো চূড়ান্ত করতে পারেননি তিনি বা তার দল। যদিও দলটি বলছে, তিনি শিগগিরই দেশে ফিরবেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, খালেদা জিয়াকে তিনটি আসনে প্রার্থী হিসেবে রাখা দলটির একটি ‘নির্বাচনী কৌশল’ এবং তাদের ধারণা, নির্বাচনে জিতলে সরকার গঠনের বিষয়টিতে তারেক রহমানই নেতৃত্ব দেবেন।
আবার কেউ কেউ বলছেন, ‘তারেক রহমান দেশে না ফেরা পর্যন্ত তার ফেরা নিয়ে সংশয় থেকেই যাবে এবং সে কারণেই বিএনপি নেতৃত্বের জায়গায় খালেদা জিয়াকেই রেখেছেন তিনটি আসনে প্রার্থী করার মধ্য দিয়ে।
দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলছেন, ‘আমরা আশা করি, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে নেতৃত্ব দেবেন। নির্বাচনে মাঠে-ময়দানে নেতৃত্ব দেবেন তারেক রহমান। আর বর্তমান বাস্তবতায় তারেক রহমান প্রধানমন্ত্রী হবেন। এটাই আমাদের চিন্তা।’
বিএনপির ঘোষণা অনুযায়ী, খালেদা জিয়া নির্বাচন করবেন ফেনী-১, বগুড়া-৭ এবং দিনাজপুর-৩ আসন থেকে। অন্যদিকে তারেক রহমান বগুড়া-৬ আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নেবেন। বেগম জিয়া নির্বাচনে প্রথম অংশ নিয়েছিলেন ১৯৯১ সালের সংসদ নির্বাচনে, তার জ্যেষ্ঠ ছেলে তারেক রহমান এবারই প্রথম নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. কাজী মারুফুল ইসলাম বলেন, ‘এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বিএনপি এই বার্তাই দিয়েছে যে খালেদা জিয়া এখনো সক্রিয় আছেন এবং তিনিই দলটির শীর্ষ নেতা।’
তিনি বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয় খালেদা জিয়াকে প্রার্থী করে আনাটা হলো দলটির নির্বাচনী কৌশলের অংশ। দলটির অবস্থান বা নির্বাচন নিয়ে যে অনেক প্রশ্ন এখনো আছে, সে বিষয়ে একটা বার্তা গেছে যে নির্বাচন নিয়ে আর কোনো অনিশ্চয়তা নেই। আর খালেদা জিয়ার ভাবমূর্তি কাজে লাগানোর কৌশল তো আছেই।’
তার মতে, ‘তারেক রহমান এখনো দেশে না আসায় তার ফেরা নিয়ে অনিশ্চয়তা বা উদ্বেগ এখনো কাটেনি।
লেখক ও বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমেদও বলছেন, ‘এই অনিশ্চয়তার কারণেই হয়তো তিনটি আসনে নির্বাচনে খালেদা জিয়াকে প্রার্থী করে বিএনপি বোঝাতে চেয়েছে যে তিনিই এখনো দলনেতা।’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচন ও সরকারকে কে নেতৃত্ব দেবেন, বিএনপির হয়ে তা এখনো পরিষ্কার নয়। এমনও হতে পারে যে খালেদা জিয়া দলনেতা হিসেবেই থাকবেন, আর দলটি সরকার গঠন করলে তাতে নেতৃত্ব দেবেন তারেক রহমান।’
তবে বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদের কথায় এটা কিছুটা পরিষ্কার হয়েছে যে তারা নির্বাচনে জিতলে তারেক রহমানকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বেছে নেবেন—এই চিন্তাই দলের মধ্যে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে।
যদিও এ সব কিছুই স্পষ্ট হবে তারেক রহমান দেশে ফিরে আসার পর। তিনি কবে ফিরবেন তা নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তারিখ এখনো তার দল জানাতে পারেনি। সূত্র-বিবিসি বাংলা
বার্তাকণ্ঠ ডেস্ক 

































