সোমবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

চট্টগ্রামকে ক্লিন, গ্রীন, হেলদি ও সেইফ সিটিতে পরিণত করব: মেয়র ডা. শাহাদাত

চট্টগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:
চট্টগ্রাম নগরীকে ক্লিন, গ্রীন, হেলদি ও সেইফ সিটিতে রূপান্তরে গৃহিত কার্যক্রমের অগ্রগতি তুলে ধরে পরবর্তী পরিকল্পনা তুলে ধরেছেন সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন।
বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) দুপুরে কাজীর দেউড়ির ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে (আইসিসি) মেয়র শাহাদাত হোসেনের দায়িত্ব গ্রহণের এক বছর পূর্তির অনুষ্ঠানে এ পরিকল্পনা তুলে ধরেন মেয়র ।
এসময় নগরীর যোগাযোগ ব্যবস্থা নিয়ে মেয়র বলেন, আমি দায়িত্ব গ্রহণের পর ১৭ বছর ধরে বেদখলে থাকা ভূমি উদ্ধার করে আগ্রাবাদের সড়ক করে দিয়েছি। আমি নগরীতে প্রায় ৫০ টা বড় বড় রাস্তা নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছি যে রাস্তাগুলো হলে এই শহরের চেহারা পরিবর্তন হয়ে যাবে ইনশাল্লাহ। এ বছর এই ৫০টি বড় বড় রাস্তা আমি আপনাদের উপহার দিব।
নাগরিক সেবাকে সহজ করতে প্রযুক্তির সাহায্য নেয়া হচ্ছে জানিয়ে মেয়র বলেন, ১০টি সেবা নিয়ে ‘আমাদের চট্টগ্রাম’ নামের একটি অ্যাপস লঞ্চ করব আগামী ডিসেম্বরে। অ্যাপটিতে ময়লা পরিষ্কার, নালা পরিষ্কার, রাস্তা সংস্কার, আলোকায়ন, মশা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা সংক্রান্ত যেকোনো অভিযোগ ছবি তুলে এই অ্যাপে আপনারা জমা দিতে পারবেন।
নগরীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সাফল্য এসেছে জানিয়ে মেয়র বলেন, চট্টগ্রামে প্রতিদিন ৩০০০ থেকে ৩১০০ মেট্রিক টন ময়লা উৎপাদিত হয়। এর মধ্যে ২২০০ মেট্রিক টন আমরা কালেকশন করছি বাকি ৮০০ থেকে ৯০০ মেট্রিক টন আমরা কালেকশন করতে পারছি না। কি কারণে পারছিনা এটা হয়তোবা আপনাদের মনের মধ্যে প্রশ্ন আসে। এই ৯০০ মেট্রিক টন ময়লা দেখবেন কেউ বাসা থেকে জানালা দিয়ে ময়লাটা ফেলে দিচ্ছেন। কেউ ডাস্টবিনে ময়লাটা না দিয়ে চলন্ত গাড়ি থেকে ময়লাগুলো ফেলে দিছেন। এ ময়লাগুলো কোথায় যাচ্ছে? সরাসরি নালাতে যাচ্ছে। নালা থেকে খালে, খাল থেকে পরে কর্ণফুলি নদী, হালদা নদী দূষিত হয়ে যাচ্ছে। এ প্রেক্ষাপটে আমি ডোর টু ডোর প্রকল্পটি চালু করেছি। তবে এ ব্যাপারে আমি জানি, আপনাদের এখন আর্থিকভাবে কিছু সমস্যা হচ্ছে। কিছু জায়গায় আমি অভিযোগ পেয়েছি যে সিটি কর্পোরেশনের নির্ধারিত হারের চেয়ে বেশি টাকা নেয়া হচ্ছে। এ ধরনের ঘটনা ঘটলে আপনারা সরাসরি লিখিত অভিযোগ জানাবেন। আমরা সেই প্রতিষ্ঠানের কার্যাদেশ বাতিল করে অন্য প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দিব।
 “আমি সুখবর দিতে চাই, বাংলাদেশে সর্বপ্রথম চট্টগ্রামে আমরা আবর্জনা থেকে বায়োগ্যাস উৎপাদনে কোরিয়ান একটা কোম্পানির সাথে ফেজিবিলিটি স্টাডি শুরু করে দিয়েছি হালিশহরে। হয়তোবা দুই মাস তিন মাস পরে বাসা থেকে ময়লা সংগ্রহ কার্যক্রম বিনামূল্যে ইনশাল্লাহ আমরা করে দেব। একটা পয়সাও আপনাদের আর দিতে হবে না। এটা আমি আপনাদের কথা দিচ্ছি। এক-দেড় বছর পরে গিয়ে আমরা যখন ইনকাম করব উল্টা ময়লা নেওয়ার জন্য আপনাদেরকে আমরা টাকা দিব প্রতি বাসায়। একটু ধৈর্য ধরতে হবে শহরটাকে ক্লিন রাখার জন্য এবং আমার প্রতি বিশ্বাস রাখতে হবে। আমি আপনাদেরই মানুষ। আমি আপনাদের কাছ থেকে উঠে এসেছি। আমি জানি আপনাদের কি সমস্যা। কিন্তু এই শহরটাকে ক্লিন রাখতে হলে ময়লা কমপ্লিটটি আমাদেরকে কালেকশন করতে হবে। না হয় এই ময়লা আলমেটলি নালায় ভরে গিয়ে জলাবদ্ধতা হচ্ছে। খালগুলো ভরে গিয়ে কর্ণফুলী ও হালদা নদী দূষণ হচ্ছে।”
মেয়র আরো বলেন, বর্জ্য সংগ্রহ না করতে পারলে আমাদের হাজার হাজার কোটি টাকা এই দেশের যে সম্পদ সেটা নষ্ট হয়ে যাবে। শুধুমাত্র এইজন্য ডোর টু ডোর প্রকল্প আমরা সফল করতে চাই। শতভাগ ময়লা আমরা যাতে নিতে পারি। আপনারা শুনে খুশি হবেন যেখানে ২২০০ মেট্রিক টন ময়লা আমরা কালেকশন করতাম এই ডোর টু ডোর প্রজেক্টের কারণে এই মাসে আগের তুলনায় ৫০০ মেট্রিক টন বেশি বর্জ্য কালেকশন করতে পেরেছি। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন করতে না পারলে জলাবদ্ধতা সমস্যার কোনদিনই সমাধান হবেনা। আমাদের বর্জ্য থেকে গ্রিন এনার্জি উৎপাদন করব।
জলাবদ্ধতার বিষয়ে মেয়র বলেন, সবাইকে নিয়েই আমরা সমন্বিত প্রচেষ্টার মধ্যে চট্টগ্রামবাসীর গত ৩০ বছরের যে জলাবদ্ধতার সমস্যা সেটা আমি অর্ধেকে নামিয়ে এনেছি। একসময় মুরাদপুর, বহদ্দারহাট বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক জলাবদ্ধতা হতো। এখন আর সেটা হয় না। এখন পানির মধ্যে মানুষ আর বাস করে না। এখন মানুষ নিশ্চিন্তে আছে। এবার দেখেছেন জলবায়ুগত পরিবর্তনের কারণে এবার প্রায় সাড়ে ৫ মাস আমরা বর্ষাকাল অতিক্রান্ত করেছি। এখনো পানি হচ্ছে কিন্তু জলাবদ্ধতা নাই।
কিশোর গ্যাং এর ভয়াবহতার বিষয়ে মেয়র বলেন, জনপ্রিয় একজন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব পলাশের সংগঠনের সাথে যৌথভাবে চসিক নগরীতে ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার চালু করবে এবং নাগরিক সচেতনতা নিয়ে কাজ করবে। কিশোর গ্যাং একটা বড় চ্যালেঞ্জ। এ বিষয়ে যদি সমাধান না করতে পারি তাহলে যে যুব সমাজ কিশোর সমাজকে নিয়ে আমরা একটা নতুন চট্টগ্রাম, নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখছি সেটা আসলে মুখ থুবড়ে পড়বে। উনাদের একটা টিম কাজ করবে যেটা প্রত্যেকটা স্কুলে যাবে, প্রত্যেকটা ইন্সটিটিউশনে যাবে, প্রত্যেকটা কলেজে যাবে, এমনকি যারা স্কুলে যায়না তাদের কাছেও যাবে। তাদের সাথে তারা কথা বলবে। তাদের মেন্টাল হেলথ কীভাবে ডেভেলপ করা যায়, তারা যাতে সংঘর্ষের পথ থেকে, মাদকের পথ থেকে একটি সুস্থ ধারায় ফিরে আসতে পারে এ বিষয়ে তারা কাউন্সেলিং করবে।
হেলদি সিটি পরিকল্পনা নিয়ে মেয়র বলেন, ব্রেস্ট ক্যান্সার নিয়ে সচেতনতা তৈরিতে চট্টগ্রামে আমরা জোন করেছি। লিভার ক্যান্সারের জন্য সচেতনতা তৈরিতে আমরা কাজ করেছি। টাইফয়েডের ভ্যাকসিন দিচ্ছি শিশুদের। আমাদের যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো আছে সেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে আমাদের যে অবকাঠামোর অভাব ছিল সেগুলো আমরা করে দিচ্ছি। আমাদের প্রাইমারি হেলথ কেয়ার সেন্টারগুলোতে আধুনিক মেডিকেল ইকুইপমেন্ট সরবরাহ করা হচ্ছে। মেমন-২ হসপিটালে কিডনি রোগীদের জন্য ডায়ালাইসিস মেশিন স্থাপন করে স্বল্প মূল্যে, একদম কম মূল্যে সেবা দেয়া হবে। বাংলাদেশে সর্বপ্রথম স্কুল হেলথ কার্ড কার্যক্রম চালু করেছি আমরা।
রাজস্ব আহরণ সম্পর্কে মেয়র বলেন, অতীতে যেসব নাগরিকের রাজস্ব অধিক হারে নির্ধারণ করা হয়েছিল সেগুলো আমি রিভিউ বোর্ড করে যাচাই করে সঠিক পরিমাণে করে দিচ্ছি। তবে, কমার্শিয়াল হোল্ডিং ট্যাক্স যাতে কেউ ফাঁকি দিতে না পারে সে ব্যাপারে আমি কঠোর অবস্থান নিয়েছি। এজন্য একটি ডিজিটাল প্লাটফর্মও চালু করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করার মাধ্যমে হতদরিদ্র পরিবারের সন্তানদের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের অধিকার আমি নিশ্চিত করব।
অনুষ্ঠানে এআই হেলথ কেয়ার সিস্টেমের উদ্বোধন করেন মেয়র যেটি ব্যবহার করে নাগরিকদের স্বাস্থ্যগত বিভিন্ন ডাটা সংরক্ষণ ও আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স ব্যবহার করে বিশ্লেষণ করে রোগ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে। মেয়র অনুষ্ঠানে সরাসরি নাগরিকদের বিভিন্ন অভিযোগ ও পরামর্শ গ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে মেয়রের এক বছরের কার্যক্রমের ওপর তথ্যচিত্র প্রদর্শন ও উন্নয়ন প্রতিবেদনের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
বিশেষ অতিথি ডিআইজি মো. আহসান হাবীব পলাশ বলেন, সারাদেশের মানুষ নিশ্বাস নিতে চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম বেড়াতে আসেন। তাই পুরো চট্টগ্রামকে নিশ্বাসের জায়গায় পরিণত করতে হবে। চট্টগ্রাম শহরে ভালো কোনো পার্ক নেই। ঢাকার রমনা পার্কের মতো পার্ক, বোটানিক্যাল গার্ডেন ও অ্যাকুয়ারিয়াম দেখতে চাই।
সিএমপি কমিশনার হাসিব আজিজ বলেন, আমাদের জেলা পুলিশ লাইনে কোমর পানি হয়ে যেত, প্যারেড করা যেত না। জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধান হয়েছে। জলাবদ্ধতার মূল কারণ ছিল পানি নিষ্কাশনের পথে লোকজন দোকান গড়ে তুলেছিল। এখন যেভাবে কাজ হচ্ছে সেভাবে সামনের দিনে সবাই মিলে বাসযোগ্য শহর হিসেবে চট্টগ্রামকে দেশবাসীর কাছে তুলে ধরতে পারব।
সিডিএ চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. নুরুল করিম বলেন, মেয়র ডা. শাহাদাত বিনয়ী ও সৎ মানুষ। আপসহীন রাজনীতিক। জলাবদ্ধতা নিরসনে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছে। জলাবদ্ধতা নিরসনে চসিক ও সিডিএ একত্রে কাজ করছে। মেয়রের নেতৃত্বে নতুন চট্টগ্রাম গড়ে তুলতে পারব আমরা।
অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) মোহাম্মদ নূরুল্লাহ নূরী প্লাস্টিক ও পচনশীল বর্জ্য ফেলার জন্য নগরে লাল ও সবুজ রঙের বিন দেওয়ার জন্য মেয়রের প্রতি অনুরোধ জানান। তিনি নগরবাসীকে প্লাস্টিক ও পলিথিন ব্যবহারে সচেতন হওয়ার আহবান জানান।
চসিক সচিব মো. আশরাফুল আমিনের সভাপতিত্বে আয়োজনে অংশ নেন চট্টগ্রাম পুলিশ কমিশনার হাসিব আজিজ, ডিআইজি আহসান হাবীব পলাশ, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. নুরুল করিম, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার এবং জেলা পরিষদের প্রশাসক মোহাম্মদ নুরুল্লাহ নূরী, চট্টগ্রাম ওয়াসার এমডি মনোয়ারা বেগম, সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, জামায়াতে ইসলামীর চট্টগ্রাম মহানগরের সাবেক আমীর আলহাজ্ব শাহজাহান চৌধুরী, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক আহবায়ক আবু সুফিয়ান, মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব নাজিমুর রহমান, মহানগর জামায়াতে ইসলামীর আমীর নজরুল ইসলাম, মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি মোশাররফ হোসেন দিপ্তী, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সদস্য সচিব ও দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার আবাসিক সম্পাদক জাহিদুল করিম কচি, চট্টগ্রাম জেলা এ্যাবের সভাপতি প্রকৌশলী সেলিম মো. জানে আলম, মহানগর জামায়াতে ইসলামীর এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারী মোহাম্মদ উল্লাহ, সাংগঠনিক সম্পাদক শামসুজ্জামান হেলালী, মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি শামসুল হক হায়দারী, সাধারণ সম্পাদক সালেহ নোমান প্রমুখ।
জনপ্রিয়

চৌগাছার ইজিবাইক–প্রাইভেটকার মুখোমুখি সংঘর্ষ, শিক্ষার্থীসহ আহত ৭

চট্টগ্রামকে ক্লিন, গ্রীন, হেলদি ও সেইফ সিটিতে পরিণত করব: মেয়র ডা. শাহাদাত

প্রকাশের সময় : ০৯:২১:৩৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ নভেম্বর ২০২৫
চট্টগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:
চট্টগ্রাম নগরীকে ক্লিন, গ্রীন, হেলদি ও সেইফ সিটিতে রূপান্তরে গৃহিত কার্যক্রমের অগ্রগতি তুলে ধরে পরবর্তী পরিকল্পনা তুলে ধরেছেন সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন।
বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) দুপুরে কাজীর দেউড়ির ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে (আইসিসি) মেয়র শাহাদাত হোসেনের দায়িত্ব গ্রহণের এক বছর পূর্তির অনুষ্ঠানে এ পরিকল্পনা তুলে ধরেন মেয়র ।
এসময় নগরীর যোগাযোগ ব্যবস্থা নিয়ে মেয়র বলেন, আমি দায়িত্ব গ্রহণের পর ১৭ বছর ধরে বেদখলে থাকা ভূমি উদ্ধার করে আগ্রাবাদের সড়ক করে দিয়েছি। আমি নগরীতে প্রায় ৫০ টা বড় বড় রাস্তা নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছি যে রাস্তাগুলো হলে এই শহরের চেহারা পরিবর্তন হয়ে যাবে ইনশাল্লাহ। এ বছর এই ৫০টি বড় বড় রাস্তা আমি আপনাদের উপহার দিব।
নাগরিক সেবাকে সহজ করতে প্রযুক্তির সাহায্য নেয়া হচ্ছে জানিয়ে মেয়র বলেন, ১০টি সেবা নিয়ে ‘আমাদের চট্টগ্রাম’ নামের একটি অ্যাপস লঞ্চ করব আগামী ডিসেম্বরে। অ্যাপটিতে ময়লা পরিষ্কার, নালা পরিষ্কার, রাস্তা সংস্কার, আলোকায়ন, মশা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা সংক্রান্ত যেকোনো অভিযোগ ছবি তুলে এই অ্যাপে আপনারা জমা দিতে পারবেন।
নগরীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সাফল্য এসেছে জানিয়ে মেয়র বলেন, চট্টগ্রামে প্রতিদিন ৩০০০ থেকে ৩১০০ মেট্রিক টন ময়লা উৎপাদিত হয়। এর মধ্যে ২২০০ মেট্রিক টন আমরা কালেকশন করছি বাকি ৮০০ থেকে ৯০০ মেট্রিক টন আমরা কালেকশন করতে পারছি না। কি কারণে পারছিনা এটা হয়তোবা আপনাদের মনের মধ্যে প্রশ্ন আসে। এই ৯০০ মেট্রিক টন ময়লা দেখবেন কেউ বাসা থেকে জানালা দিয়ে ময়লাটা ফেলে দিচ্ছেন। কেউ ডাস্টবিনে ময়লাটা না দিয়ে চলন্ত গাড়ি থেকে ময়লাগুলো ফেলে দিছেন। এ ময়লাগুলো কোথায় যাচ্ছে? সরাসরি নালাতে যাচ্ছে। নালা থেকে খালে, খাল থেকে পরে কর্ণফুলি নদী, হালদা নদী দূষিত হয়ে যাচ্ছে। এ প্রেক্ষাপটে আমি ডোর টু ডোর প্রকল্পটি চালু করেছি। তবে এ ব্যাপারে আমি জানি, আপনাদের এখন আর্থিকভাবে কিছু সমস্যা হচ্ছে। কিছু জায়গায় আমি অভিযোগ পেয়েছি যে সিটি কর্পোরেশনের নির্ধারিত হারের চেয়ে বেশি টাকা নেয়া হচ্ছে। এ ধরনের ঘটনা ঘটলে আপনারা সরাসরি লিখিত অভিযোগ জানাবেন। আমরা সেই প্রতিষ্ঠানের কার্যাদেশ বাতিল করে অন্য প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দিব।
 “আমি সুখবর দিতে চাই, বাংলাদেশে সর্বপ্রথম চট্টগ্রামে আমরা আবর্জনা থেকে বায়োগ্যাস উৎপাদনে কোরিয়ান একটা কোম্পানির সাথে ফেজিবিলিটি স্টাডি শুরু করে দিয়েছি হালিশহরে। হয়তোবা দুই মাস তিন মাস পরে বাসা থেকে ময়লা সংগ্রহ কার্যক্রম বিনামূল্যে ইনশাল্লাহ আমরা করে দেব। একটা পয়সাও আপনাদের আর দিতে হবে না। এটা আমি আপনাদের কথা দিচ্ছি। এক-দেড় বছর পরে গিয়ে আমরা যখন ইনকাম করব উল্টা ময়লা নেওয়ার জন্য আপনাদেরকে আমরা টাকা দিব প্রতি বাসায়। একটু ধৈর্য ধরতে হবে শহরটাকে ক্লিন রাখার জন্য এবং আমার প্রতি বিশ্বাস রাখতে হবে। আমি আপনাদেরই মানুষ। আমি আপনাদের কাছ থেকে উঠে এসেছি। আমি জানি আপনাদের কি সমস্যা। কিন্তু এই শহরটাকে ক্লিন রাখতে হলে ময়লা কমপ্লিটটি আমাদেরকে কালেকশন করতে হবে। না হয় এই ময়লা আলমেটলি নালায় ভরে গিয়ে জলাবদ্ধতা হচ্ছে। খালগুলো ভরে গিয়ে কর্ণফুলী ও হালদা নদী দূষণ হচ্ছে।”
মেয়র আরো বলেন, বর্জ্য সংগ্রহ না করতে পারলে আমাদের হাজার হাজার কোটি টাকা এই দেশের যে সম্পদ সেটা নষ্ট হয়ে যাবে। শুধুমাত্র এইজন্য ডোর টু ডোর প্রকল্প আমরা সফল করতে চাই। শতভাগ ময়লা আমরা যাতে নিতে পারি। আপনারা শুনে খুশি হবেন যেখানে ২২০০ মেট্রিক টন ময়লা আমরা কালেকশন করতাম এই ডোর টু ডোর প্রজেক্টের কারণে এই মাসে আগের তুলনায় ৫০০ মেট্রিক টন বেশি বর্জ্য কালেকশন করতে পেরেছি। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন করতে না পারলে জলাবদ্ধতা সমস্যার কোনদিনই সমাধান হবেনা। আমাদের বর্জ্য থেকে গ্রিন এনার্জি উৎপাদন করব।
জলাবদ্ধতার বিষয়ে মেয়র বলেন, সবাইকে নিয়েই আমরা সমন্বিত প্রচেষ্টার মধ্যে চট্টগ্রামবাসীর গত ৩০ বছরের যে জলাবদ্ধতার সমস্যা সেটা আমি অর্ধেকে নামিয়ে এনেছি। একসময় মুরাদপুর, বহদ্দারহাট বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক জলাবদ্ধতা হতো। এখন আর সেটা হয় না। এখন পানির মধ্যে মানুষ আর বাস করে না। এখন মানুষ নিশ্চিন্তে আছে। এবার দেখেছেন জলবায়ুগত পরিবর্তনের কারণে এবার প্রায় সাড়ে ৫ মাস আমরা বর্ষাকাল অতিক্রান্ত করেছি। এখনো পানি হচ্ছে কিন্তু জলাবদ্ধতা নাই।
কিশোর গ্যাং এর ভয়াবহতার বিষয়ে মেয়র বলেন, জনপ্রিয় একজন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব পলাশের সংগঠনের সাথে যৌথভাবে চসিক নগরীতে ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার চালু করবে এবং নাগরিক সচেতনতা নিয়ে কাজ করবে। কিশোর গ্যাং একটা বড় চ্যালেঞ্জ। এ বিষয়ে যদি সমাধান না করতে পারি তাহলে যে যুব সমাজ কিশোর সমাজকে নিয়ে আমরা একটা নতুন চট্টগ্রাম, নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখছি সেটা আসলে মুখ থুবড়ে পড়বে। উনাদের একটা টিম কাজ করবে যেটা প্রত্যেকটা স্কুলে যাবে, প্রত্যেকটা ইন্সটিটিউশনে যাবে, প্রত্যেকটা কলেজে যাবে, এমনকি যারা স্কুলে যায়না তাদের কাছেও যাবে। তাদের সাথে তারা কথা বলবে। তাদের মেন্টাল হেলথ কীভাবে ডেভেলপ করা যায়, তারা যাতে সংঘর্ষের পথ থেকে, মাদকের পথ থেকে একটি সুস্থ ধারায় ফিরে আসতে পারে এ বিষয়ে তারা কাউন্সেলিং করবে।
হেলদি সিটি পরিকল্পনা নিয়ে মেয়র বলেন, ব্রেস্ট ক্যান্সার নিয়ে সচেতনতা তৈরিতে চট্টগ্রামে আমরা জোন করেছি। লিভার ক্যান্সারের জন্য সচেতনতা তৈরিতে আমরা কাজ করেছি। টাইফয়েডের ভ্যাকসিন দিচ্ছি শিশুদের। আমাদের যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো আছে সেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে আমাদের যে অবকাঠামোর অভাব ছিল সেগুলো আমরা করে দিচ্ছি। আমাদের প্রাইমারি হেলথ কেয়ার সেন্টারগুলোতে আধুনিক মেডিকেল ইকুইপমেন্ট সরবরাহ করা হচ্ছে। মেমন-২ হসপিটালে কিডনি রোগীদের জন্য ডায়ালাইসিস মেশিন স্থাপন করে স্বল্প মূল্যে, একদম কম মূল্যে সেবা দেয়া হবে। বাংলাদেশে সর্বপ্রথম স্কুল হেলথ কার্ড কার্যক্রম চালু করেছি আমরা।
রাজস্ব আহরণ সম্পর্কে মেয়র বলেন, অতীতে যেসব নাগরিকের রাজস্ব অধিক হারে নির্ধারণ করা হয়েছিল সেগুলো আমি রিভিউ বোর্ড করে যাচাই করে সঠিক পরিমাণে করে দিচ্ছি। তবে, কমার্শিয়াল হোল্ডিং ট্যাক্স যাতে কেউ ফাঁকি দিতে না পারে সে ব্যাপারে আমি কঠোর অবস্থান নিয়েছি। এজন্য একটি ডিজিটাল প্লাটফর্মও চালু করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করার মাধ্যমে হতদরিদ্র পরিবারের সন্তানদের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের অধিকার আমি নিশ্চিত করব।
অনুষ্ঠানে এআই হেলথ কেয়ার সিস্টেমের উদ্বোধন করেন মেয়র যেটি ব্যবহার করে নাগরিকদের স্বাস্থ্যগত বিভিন্ন ডাটা সংরক্ষণ ও আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স ব্যবহার করে বিশ্লেষণ করে রোগ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে। মেয়র অনুষ্ঠানে সরাসরি নাগরিকদের বিভিন্ন অভিযোগ ও পরামর্শ গ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে মেয়রের এক বছরের কার্যক্রমের ওপর তথ্যচিত্র প্রদর্শন ও উন্নয়ন প্রতিবেদনের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
বিশেষ অতিথি ডিআইজি মো. আহসান হাবীব পলাশ বলেন, সারাদেশের মানুষ নিশ্বাস নিতে চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম বেড়াতে আসেন। তাই পুরো চট্টগ্রামকে নিশ্বাসের জায়গায় পরিণত করতে হবে। চট্টগ্রাম শহরে ভালো কোনো পার্ক নেই। ঢাকার রমনা পার্কের মতো পার্ক, বোটানিক্যাল গার্ডেন ও অ্যাকুয়ারিয়াম দেখতে চাই।
সিএমপি কমিশনার হাসিব আজিজ বলেন, আমাদের জেলা পুলিশ লাইনে কোমর পানি হয়ে যেত, প্যারেড করা যেত না। জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধান হয়েছে। জলাবদ্ধতার মূল কারণ ছিল পানি নিষ্কাশনের পথে লোকজন দোকান গড়ে তুলেছিল। এখন যেভাবে কাজ হচ্ছে সেভাবে সামনের দিনে সবাই মিলে বাসযোগ্য শহর হিসেবে চট্টগ্রামকে দেশবাসীর কাছে তুলে ধরতে পারব।
সিডিএ চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. নুরুল করিম বলেন, মেয়র ডা. শাহাদাত বিনয়ী ও সৎ মানুষ। আপসহীন রাজনীতিক। জলাবদ্ধতা নিরসনে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছে। জলাবদ্ধতা নিরসনে চসিক ও সিডিএ একত্রে কাজ করছে। মেয়রের নেতৃত্বে নতুন চট্টগ্রাম গড়ে তুলতে পারব আমরা।
অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) মোহাম্মদ নূরুল্লাহ নূরী প্লাস্টিক ও পচনশীল বর্জ্য ফেলার জন্য নগরে লাল ও সবুজ রঙের বিন দেওয়ার জন্য মেয়রের প্রতি অনুরোধ জানান। তিনি নগরবাসীকে প্লাস্টিক ও পলিথিন ব্যবহারে সচেতন হওয়ার আহবান জানান।
চসিক সচিব মো. আশরাফুল আমিনের সভাপতিত্বে আয়োজনে অংশ নেন চট্টগ্রাম পুলিশ কমিশনার হাসিব আজিজ, ডিআইজি আহসান হাবীব পলাশ, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. নুরুল করিম, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার এবং জেলা পরিষদের প্রশাসক মোহাম্মদ নুরুল্লাহ নূরী, চট্টগ্রাম ওয়াসার এমডি মনোয়ারা বেগম, সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, জামায়াতে ইসলামীর চট্টগ্রাম মহানগরের সাবেক আমীর আলহাজ্ব শাহজাহান চৌধুরী, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক আহবায়ক আবু সুফিয়ান, মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব নাজিমুর রহমান, মহানগর জামায়াতে ইসলামীর আমীর নজরুল ইসলাম, মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি মোশাররফ হোসেন দিপ্তী, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সদস্য সচিব ও দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার আবাসিক সম্পাদক জাহিদুল করিম কচি, চট্টগ্রাম জেলা এ্যাবের সভাপতি প্রকৌশলী সেলিম মো. জানে আলম, মহানগর জামায়াতে ইসলামীর এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারী মোহাম্মদ উল্লাহ, সাংগঠনিক সম্পাদক শামসুজ্জামান হেলালী, মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি শামসুল হক হায়দারী, সাধারণ সম্পাদক সালেহ নোমান প্রমুখ।