
ইসমাইল ইমন, চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:
উচ্চ আদালতের রায় অনুযায়ী আগামি সাত দিনের মধ্যে কর্ণফুলী নদীর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা না হলে জেলা প্রশাসন ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় ঘেরাওয়ের ঘোষণা দিয়েছে পরিবেশবাদী ৭টি সংগঠন ও চট্টগ্রামের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। তাতেও কাজ না হলে কর্ণফুলী নদীর উৎসমুখ অচল করে দেয়ার হুঁশিয়ারিও দেন বক্তারা।
রবিবার (৯ নভেম্বর) সকালে চট্টগ্রামের চেরাগি পাহাড় চত্বরে আয়োজিত মানববন্ধন ও সমাবেশে এই ঘোষণা দেন তারা।
পরিবেশকর্মীরা বলেন, চট্টগ্রাম নগরের ৭০ লক্ষ মানুষের একমাত্র সুপেয় পানির উৎস কর্ণফুলী নদীর দুইপাশ দখল করে গড়ে তোলা স্থাপনা ও বসতি উচ্ছেদ করা এখন সরকারের প্রথম কাজ হওয়া উচিৎ। কারণ কর্ণফুলী নদী বাঁচলে বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য বাঁচবে, ব্যবসা-বাণিজ্য বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে। অর্থনীতির হৃদপিণ্ড এই কর্ণফুলী দখলের প্রতিযোগিতায় থাকা ভূমিদস্যুদের উচ্ছেদে এখন আর আইনী বাঁধা নেই। কাজেই উচ্ছেদ অভিযান নিয়ে কোনো ধরনের গড়িমসি করলেই চট্টগ্রামবাসী জেলা প্রশাসন ও বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিতে বাধ্য হবে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা ডাক্তার মাহফুজুর রহমানের সভাপতিত্বে চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলন, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা), বাংলাদেশ পরিবেশ ফোরাম, সৃষ্টি, কর্ণফুলী নদী সাম্পান মাঝি কল্যাণ সমিতি ফেডারেশন, চট্টগ্রাম ইতিহাস সংস্কৃতি গবেষণা কেন্দ্র ও ভোরের আলো নামের সাতটি সংগঠন এই মানববন্ধনের আয়োজন করে।
চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলনের সিনিয়র সহ-সভাপতি মীর্জা ইসমাইল হুশিয়ারি দিয়ে বলেন, কর্ণফুলীর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা না হলে জেলা প্রশাসন কার্যালয় ঘেরাসহ কর্ণফুলী অচল করে দেয়ার কর্মসূচী প্রদান করা হবে। যারা ক্ষমতার ছায়াতলে থেকে দেশের সম্পদ লুট করছে বা সহযোগিতা করছে তাদের মুখোশ উন্মোচন করা হবে।
মানববন্ধন ও সমাবেশে বক্তারা বলেন, রাজনৈতিক ও প্রশাসনের নির্লিপ্ততায় গত ১৫ বছর ধরে দ্রখল হয়ে চলেছে কর্ণফুলী। ২০১০ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত দখলদারদের পক্ষে হাইকোর্টে মামলা লড়েছেন সরকারের মন্ত্রী স ম রেজাউল করিম। তিনি হেরে গেছেন, ২০১৪ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত দখলদারদের পক্ষের আইনজীবী ছিলেন আরেক মন্ত্রী ফজলে নূল তাপস, তিনিও হেরে গেছেন, এরপর দখলদারদের পক্ষে মামলার দায়িত্ব নেন ঢাকার সাংসদ রহমত উল্লাহর জামাতা সাইয়েদ রাজা। তিনিও হেরে গেছেন। বর্তমানে দখলদারদের পক্ষে মামলা লড়ছেন বার কাউন্সিল সভাপতি মাহাবুব উদ্দিন খোকন, রুহুল কুদ্দুস কাজল ও সুপ্রিম কোর্ট বারের সেক্রেটারী। তারাও ইতোমধ্যে হেরে গেছেন। আদেশ চট্টগ্রামবাসীর পক্ষে এসেছে, নগরবাসীর পক্ষে এসেছে।
বক্তারা বলেন, দখলদারদের পক্ষে রাজনৈতিক ক্ষমতাধর আইনজীবীরা মামলা লড়ার কারনে কর্ণফুলী দখল উচ্ছেদ ২০১০ থেকে ২০২৫ পর্যন্ত ১৫ বছর দীর্ঘতর হয়েছে। দখলদারগণ একই বিষয়ে পর পর পাঁচটি রিট মামলা করেছে। সব কয়টি মামলার রায় দখলদারদের বিপক্ষে গেলেও বর্তমান অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে নির্লিপ্ত চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলন, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা), বাংলাদেশ পরিবেশ ফোরাম নামের তিন সংগঠন গত ২ নভেম্বর এক সপ্তাহের আল্টিমেটাম দিয়ে কর্ণফুলী উচ্ছেদের আবেদন করেছে। কিন্তু আজকে পর্যন্ত জেলা প্রশাসন থেকে উচ্ছেদের কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
বক্তারা বলেন, বর্তমানে কর্ণফুলীর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে কোনো ধরনের আইনী প্রতিবন্ধকতা নাই। অতি দ্রুত কর্ণফুলীর সকল অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে হাইকোর্ট ঘোষিত জীবন্ত সত্ত্বা হিসাবে কর্ণফুলীর প্রবাহধারা স্বাভাবিকভাবে অব্যাহত রাখার ব্যবস্থা করা না হলে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ সিডিএ বিরুদ্ধে রিট পিটিশন নম্বর ৬৩০৬/২০১০ এ প্রদত্ত আদেশ অমান্য করার অভিযোগে আদালত অবমাননা (কনটেম্পট অফ কোর্ট) মামলা দায়ের করা হবে।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন চ্যানেল আই চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান চৌধুরী ফরিদ, চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক আলীউর রহমান, গণ সংহতি আন্দোলনের নেতা ও পরিবেশ সংগঠক মারুফ হাসান রুমি, ভোরের আলো’র প্রতিষ্ঠাতা ও সাংবাদিক মোঃ শফিকুল ইসলাম খান, গ্রিন ফিংগার্স কো ফাউন্ডার আবু সুফিয়ান, বেলা চট্টগ্রাম কার্যালয়ের কর্মকর্তা অ্যাডভোকেট সংকেত দেব, কর্ণফুলী নদী সাম্পান মাঝি কল্যাণ সমিতি ফেডারেশন সভাপতি এস এ পেয়ার আলী, সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক লোকমান দয়াল, বেলার নেটওয়ার্ক মেম্বার রেজাউল করিম রাজা প্রমুখ।
ইসমাইল ইমন, চট্টগ্রাম প্রতিনিধি: 






































