সোমবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ইবিতে আল্লামা ইকবালের খুদি তত্ত্ব বিষয়ে আন্তর্জাতিক সেমিনার

ইবি প্রতিনিধি

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) আল্লামা ইকবালের খুদি তত্ত্ব বিষয়ে আন্তর্জাতিক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার (১৭ নভেম্বর) সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান মিলনায়তনে আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ এ সেমিনারের আয়োজন করে।

আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আবদুস সালামের সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকিব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ। বিশেষ অতিথি ছিলেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম. এয়াকুব আলী, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম এবং কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. এমতাজ হোসেন।

সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পাকিস্তানের পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের উর্দু ভাষা ও সাহিত্য ইনস্টিটিউটের পরিচালক ও ইকবাল একাডেমি পাকিস্তানের পরিচালক অধ্যাপক ড. বাসিরা আমব্রিন এবং লাহোরের ইউনিভার্সিটি অব এডুকেশনের ইসলামিক ও ওরিয়েন্টাল লার্নিং ডিভিশনের পরিচালক অধ্যাপক ড. ওয়াহিদ উর রহমান খান।

সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সেমিনার বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. তোজাম্মেল হোসেন।এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক ও শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম।

সেমিনারে অধ্যাপক ড. বাসিরা আমব্রিন ‘আল্লামা ইকবাল’স কনসেপ্ট অব সেলফ (খুদি)’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। উপস্থাপিত প্রবন্ধে তিনি বলেন, ইকবালের ‘খুদি’র বার্তা মূলত সেইসব তরুণ প্রজন্মের জন্য যারা মিল্লাতের ভাগ্য পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখে। ইকবাল এমন এক আত্মিক শক্তি বা রূহ যুবকদের মধ্যে সঞ্চার করতে চেয়েছেন, যা ইসলামী সভ্যতার মৌলিক মূল্যবোধকে পুনরুজ্জীবিত করতে পারে। ইকবাল তরুণদেরকে তাঁর দর্শনের কেন্দ্রবিন্দুতে স্থাপন করেছেন। সেই কারণেই তিনি ‘খুদি’র ধারণাকে নতুনভাবে উপস্থাপন করেন যা এর আগে আমাদের সংস্কৃতিতে বিদ্যমান ছিল না।

তিনি বলেন, পূর্বে ‘খুদি’ শব্দটি অহংকার বা আত্মম্ভরিতার অর্থে ব্যবহৃত হতো। কিন্তু ইকবাল এই শব্দটিকে নতুন অর্থে ব্যবহার করেন—স্ব-মূল্যায়ন, আত্ম-পরিচয় ও নিজের সত্তার উপলব্ধির প্রতীক অর্থ বহন করে।

এ ছাড়া অধ্যাপক ড. ওয়াহিদ উর রহমান খান  আল্লামা ইকবাল’স কনসেপ্ট অব শাহীন (দ্য ঈগল) শীর্ষক প্রবন্ধে বলেন, আল্লামা ইকবাল ছিলেন ইসলামের কবি, কোরআনের কবি এবং প্রাচ্যের কবি। তার অনুপ্রেরণা মৃত্যুর পরেও বহমান। আজকের এই আয়োজন তাঁর আত্মাকে আনন্দিত করবে, কারণ বাংলাদেশে তাকে স্মরণ করা হচ্ছে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের এই আয়োজন উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকিব মোহাম্মদ নসরুল্লাহর একটি গুরুত্বপূর্ণ কীর্তি। উর্দু সাহিত্য, ইসলাম ও ইকবালিয়াত চর্চায় এ ধরনের আয়োজন ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।”

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, এখানে ‘তাসাওয়ারে খুদি’ ও ‘খুদি’র ওপর ইকবালের দার্শনিক ব্যাখ্যা নিয়ে গভীর আলোচনা হয়েছে। বক্তারা বিষয়টির নানা দিক অত্যন্ত গুরুত্ব ও গভীরতার সঙ্গে তুলে ধরেছেন এজন্য আমি তাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। সাধারণভাবে আমরা ‘খুদি’ শব্দটিকে অহংকার বা ইগো হিসেবে দেখি। কিন্তু ইকবাল ‘খুদি’ দ্বারা তা বোঝাননি। তিনি এক বিশেষ দার্শনিক অর্থে ‘খুদি’ বলেছেন— যা আত্মপরিচয় ও আত্মোপলব্ধির প্রতীক। নিজের অস্তিত্বকে জানা ও চেনার মধ্য দিয়েই মানুষ তার ভেতরের শক্তি ও সামর্থ্যকে পুরোপুরি প্রকাশ করতে পারে।

তিনি আরও বলেন, যখন মানুষ নিজেকে চেনে, তখন তার ভেতরের সম্ভাবনা জেগে ওঠে। সে নিজের অনুভূতিকে উপলব্ধি করতে পারে এবং জীবনের কাজে সাহস, আত্মবিশ্বাস ও আত্মমর্যাদার প্রকাশ ঘটায়। ইকবালের ‘খুদি’ মূলত সেই আত্মসচেতনতার দর্শন, যা মানুষকে নিজেকে চিনে সমাজ ও জাতির উন্নয়নে নিয়োজিত হতে শেখায়।

জনপ্রিয়

যশোরে স্বর্ণের বারসহ আটক ১

ইবিতে আল্লামা ইকবালের খুদি তত্ত্ব বিষয়ে আন্তর্জাতিক সেমিনার

প্রকাশের সময় : ০৭:২৯:০৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫

ইবি প্রতিনিধি

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) আল্লামা ইকবালের খুদি তত্ত্ব বিষয়ে আন্তর্জাতিক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার (১৭ নভেম্বর) সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান মিলনায়তনে আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ এ সেমিনারের আয়োজন করে।

আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আবদুস সালামের সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকিব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ। বিশেষ অতিথি ছিলেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম. এয়াকুব আলী, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম এবং কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. এমতাজ হোসেন।

সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পাকিস্তানের পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের উর্দু ভাষা ও সাহিত্য ইনস্টিটিউটের পরিচালক ও ইকবাল একাডেমি পাকিস্তানের পরিচালক অধ্যাপক ড. বাসিরা আমব্রিন এবং লাহোরের ইউনিভার্সিটি অব এডুকেশনের ইসলামিক ও ওরিয়েন্টাল লার্নিং ডিভিশনের পরিচালক অধ্যাপক ড. ওয়াহিদ উর রহমান খান।

সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সেমিনার বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. তোজাম্মেল হোসেন।এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক ও শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম।

সেমিনারে অধ্যাপক ড. বাসিরা আমব্রিন ‘আল্লামা ইকবাল’স কনসেপ্ট অব সেলফ (খুদি)’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। উপস্থাপিত প্রবন্ধে তিনি বলেন, ইকবালের ‘খুদি’র বার্তা মূলত সেইসব তরুণ প্রজন্মের জন্য যারা মিল্লাতের ভাগ্য পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখে। ইকবাল এমন এক আত্মিক শক্তি বা রূহ যুবকদের মধ্যে সঞ্চার করতে চেয়েছেন, যা ইসলামী সভ্যতার মৌলিক মূল্যবোধকে পুনরুজ্জীবিত করতে পারে। ইকবাল তরুণদেরকে তাঁর দর্শনের কেন্দ্রবিন্দুতে স্থাপন করেছেন। সেই কারণেই তিনি ‘খুদি’র ধারণাকে নতুনভাবে উপস্থাপন করেন যা এর আগে আমাদের সংস্কৃতিতে বিদ্যমান ছিল না।

তিনি বলেন, পূর্বে ‘খুদি’ শব্দটি অহংকার বা আত্মম্ভরিতার অর্থে ব্যবহৃত হতো। কিন্তু ইকবাল এই শব্দটিকে নতুন অর্থে ব্যবহার করেন—স্ব-মূল্যায়ন, আত্ম-পরিচয় ও নিজের সত্তার উপলব্ধির প্রতীক অর্থ বহন করে।

এ ছাড়া অধ্যাপক ড. ওয়াহিদ উর রহমান খান  আল্লামা ইকবাল’স কনসেপ্ট অব শাহীন (দ্য ঈগল) শীর্ষক প্রবন্ধে বলেন, আল্লামা ইকবাল ছিলেন ইসলামের কবি, কোরআনের কবি এবং প্রাচ্যের কবি। তার অনুপ্রেরণা মৃত্যুর পরেও বহমান। আজকের এই আয়োজন তাঁর আত্মাকে আনন্দিত করবে, কারণ বাংলাদেশে তাকে স্মরণ করা হচ্ছে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের এই আয়োজন উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকিব মোহাম্মদ নসরুল্লাহর একটি গুরুত্বপূর্ণ কীর্তি। উর্দু সাহিত্য, ইসলাম ও ইকবালিয়াত চর্চায় এ ধরনের আয়োজন ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।”

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, এখানে ‘তাসাওয়ারে খুদি’ ও ‘খুদি’র ওপর ইকবালের দার্শনিক ব্যাখ্যা নিয়ে গভীর আলোচনা হয়েছে। বক্তারা বিষয়টির নানা দিক অত্যন্ত গুরুত্ব ও গভীরতার সঙ্গে তুলে ধরেছেন এজন্য আমি তাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। সাধারণভাবে আমরা ‘খুদি’ শব্দটিকে অহংকার বা ইগো হিসেবে দেখি। কিন্তু ইকবাল ‘খুদি’ দ্বারা তা বোঝাননি। তিনি এক বিশেষ দার্শনিক অর্থে ‘খুদি’ বলেছেন— যা আত্মপরিচয় ও আত্মোপলব্ধির প্রতীক। নিজের অস্তিত্বকে জানা ও চেনার মধ্য দিয়েই মানুষ তার ভেতরের শক্তি ও সামর্থ্যকে পুরোপুরি প্রকাশ করতে পারে।

তিনি আরও বলেন, যখন মানুষ নিজেকে চেনে, তখন তার ভেতরের সম্ভাবনা জেগে ওঠে। সে নিজের অনুভূতিকে উপলব্ধি করতে পারে এবং জীবনের কাজে সাহস, আত্মবিশ্বাস ও আত্মমর্যাদার প্রকাশ ঘটায়। ইকবালের ‘খুদি’ মূলত সেই আত্মসচেতনতার দর্শন, যা মানুষকে নিজেকে চিনে সমাজ ও জাতির উন্নয়নে নিয়োজিত হতে শেখায়।