মঙ্গলবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ৮ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সৌদিকে এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান দেবে যুক্তরাষ্ট্র

ছবি: সংগৃহীত

সৌদি আরবকে যুক্তরাষ্ট্র নতুন মর্যাদা দিয়েছে। দেশটিকে তারা এখন থেকে ‘ন্যাটো সদস্য নয়, কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্র’- এই মর্যাদায় দেখবে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ ঘোষণা দেন। ওয়াশিংটন ডিসিতে সৌদি প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের সফরেই এই ঘোষণা আসে। সফরটিতে অস্ত্র বিক্রি, বেসামরিক পারমাণবিক সহযোগিতা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও গুরুত্বপূর্ণ খনিজসম্পদ নিয়ে বেশ কয়েকটি চুক্তি হয়েছে দুই দেশের মধ্যে।

মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) রাতে হোয়াইট হাউসে আয়োজিত ব্ল্যাক-টাই ডিনারে ট্রাম্প বলেন, ‘সৌদি আরবকে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘মেজর নন-ন্যাটো’ মিত্র ঘোষণা করছি। এর মধ্য দিয়ে সামরিক সহযোগিতাকে আরও উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছি।’ তিনি জানান, বিষয়টি আগে গোপন রাখতেই তিনি অনুষ্ঠানের মধ্যে ঘোষণা করেছেন।

এই মর্যাদার কারণে সৌদি আরব যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ও অর্থনৈতিক কিছু বিশেষ সুবিধা পাবে। তবে কোনো নিরাপত্তা প্রতিশ্রুতি এর অংশ নয়। ট্রাম্প জানান, যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরব একটি ‘ঐতিহাসিক কৌশলগত প্রতিরক্ষা চুক্তি’তেও স্বাক্ষর করেছে। হোয়াইট হাউসের তথ্যানুসারে, ওই চুক্তি মধ্যপ্রাচ্যে প্রতিরোধ ক্ষমতাকে আরও সুদৃঢ় করবে, মার্কিন প্রতিরক্ষা কোম্পানিগুলোকে সৌদি আরবে কাজ করার সুবিধা দেবে এবং যুক্তরাষ্ট্রের ব্যয় কমাতে সৌদি আরব নতুন তহবিল দেবে।

এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র সৌদি আরবকে ভবিষ্যতে এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান সরবরাহের অনুমতি দিয়েছে। হিসেবে এবারই প্রথম এ ধরনের যুদ্ধবিমান পাচ্ছে সৌদি আরব। সৌদির পক্ষ থেকে ৪৮টি এফ-৩৫ কেনার আগ্রহ প্রকাশ করা হয়েছিল বলে জানা গেছে। একই সঙ্গে ৩০০ মার্কিন ট্যাংক কেনার চুক্তিও হয়েছে।

মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক ভারসাম্য পরিবর্তনের সম্ভাবনা রয়েছে এ পদক্ষেপের ফলে। সে কারণে এটিকে ওয়াশিংটনের বড় ধরনের নীতিগত পরিবর্তন হিসেবে দেখা হচ্ছে। এতদিন পর্যন্ত ইসরায়েলই ছিল ওই অঞ্চলের একমাত্র দেশ, যার কাছে এফ-৩৫ ছিল। আর যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুসারে, ইসরায়েলকে সবসময় ‘মানগত সামরিক শ্রেষ্ঠত্ব’ বজায় রাখতে হবে।

আল-জাজিরার এক প্রশ্নে ট্রাম্প জানান, ইসরায়েল চেয়েছিল সৌদি আরবের কাছে তুলনামূলক কম উন্নত সংস্করণের বিমান যাক। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘ওরা (সৌদি আরব) দারুণ মিত্র। ইসরায়েলও দারুণ মিত্র… আমার মতে দুই দেশেরই শীর্ষ মানের সরঞ্জাম পাওয়া উচিত।’

সফরে খাশোগি হত্যাকাণ্ড প্রশ্ন নিয়েও বিতর্ক তৈরি হয়। ট্রাম্প বলেন, সৌদি প্রিন্স ২০১৮ সালে সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যার বিষয়ে ‘কিছুই জানতেন না’। অথচ ট্রাম্পের এ বক্তব্য ২০২১ সালের মার্কিন গোয়েন্দা বিশ্লেষণের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। সে সময় গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, যুবরাজ অপারেশনটির অনুমোদন দিয়েছিলেন।

হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে এক সাংবাদিক খাশোগি প্রসঙ্গ তুললে ট্রাম্প তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখান। তিনি বলেন, ‘আপনি এমন এক ব্যক্তির কথা বলছেন, যিনি অত্যন্ত বিতর্কিত ছিলেন… পছন্দ করুন বা না করুন, অনেক কিছুই ঘটে থাকে।’ পরে তিনি যোগ করেন, ‘কিন্তু তিনি (সৌদি প্রিন্স) কিছুই জানতেন না। আমাদের অতিথিকে বিব্রত করবেন না।’ প্রসঙ্গত, চার বছরের বেশি সময় পর এটিই সৌদি প্রিন্সের প্রথম যুক্তরাষ্ট্র সফর ছিল।

জনপ্রিয়

মরহুম মোসলেম উদ্দিন মাস্টারের স্মরণে বার্ষিক ওয়াজ ও দোয়া মাহফিল

সৌদিকে এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান দেবে যুক্তরাষ্ট্র

প্রকাশের সময় : ০৩:২৪:১৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ নভেম্বর ২০২৫

সৌদি আরবকে যুক্তরাষ্ট্র নতুন মর্যাদা দিয়েছে। দেশটিকে তারা এখন থেকে ‘ন্যাটো সদস্য নয়, কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্র’- এই মর্যাদায় দেখবে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ ঘোষণা দেন। ওয়াশিংটন ডিসিতে সৌদি প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের সফরেই এই ঘোষণা আসে। সফরটিতে অস্ত্র বিক্রি, বেসামরিক পারমাণবিক সহযোগিতা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও গুরুত্বপূর্ণ খনিজসম্পদ নিয়ে বেশ কয়েকটি চুক্তি হয়েছে দুই দেশের মধ্যে।

মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) রাতে হোয়াইট হাউসে আয়োজিত ব্ল্যাক-টাই ডিনারে ট্রাম্প বলেন, ‘সৌদি আরবকে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘মেজর নন-ন্যাটো’ মিত্র ঘোষণা করছি। এর মধ্য দিয়ে সামরিক সহযোগিতাকে আরও উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছি।’ তিনি জানান, বিষয়টি আগে গোপন রাখতেই তিনি অনুষ্ঠানের মধ্যে ঘোষণা করেছেন।

এই মর্যাদার কারণে সৌদি আরব যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ও অর্থনৈতিক কিছু বিশেষ সুবিধা পাবে। তবে কোনো নিরাপত্তা প্রতিশ্রুতি এর অংশ নয়। ট্রাম্প জানান, যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরব একটি ‘ঐতিহাসিক কৌশলগত প্রতিরক্ষা চুক্তি’তেও স্বাক্ষর করেছে। হোয়াইট হাউসের তথ্যানুসারে, ওই চুক্তি মধ্যপ্রাচ্যে প্রতিরোধ ক্ষমতাকে আরও সুদৃঢ় করবে, মার্কিন প্রতিরক্ষা কোম্পানিগুলোকে সৌদি আরবে কাজ করার সুবিধা দেবে এবং যুক্তরাষ্ট্রের ব্যয় কমাতে সৌদি আরব নতুন তহবিল দেবে।

এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র সৌদি আরবকে ভবিষ্যতে এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান সরবরাহের অনুমতি দিয়েছে। হিসেবে এবারই প্রথম এ ধরনের যুদ্ধবিমান পাচ্ছে সৌদি আরব। সৌদির পক্ষ থেকে ৪৮টি এফ-৩৫ কেনার আগ্রহ প্রকাশ করা হয়েছিল বলে জানা গেছে। একই সঙ্গে ৩০০ মার্কিন ট্যাংক কেনার চুক্তিও হয়েছে।

মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক ভারসাম্য পরিবর্তনের সম্ভাবনা রয়েছে এ পদক্ষেপের ফলে। সে কারণে এটিকে ওয়াশিংটনের বড় ধরনের নীতিগত পরিবর্তন হিসেবে দেখা হচ্ছে। এতদিন পর্যন্ত ইসরায়েলই ছিল ওই অঞ্চলের একমাত্র দেশ, যার কাছে এফ-৩৫ ছিল। আর যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুসারে, ইসরায়েলকে সবসময় ‘মানগত সামরিক শ্রেষ্ঠত্ব’ বজায় রাখতে হবে।

আল-জাজিরার এক প্রশ্নে ট্রাম্প জানান, ইসরায়েল চেয়েছিল সৌদি আরবের কাছে তুলনামূলক কম উন্নত সংস্করণের বিমান যাক। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘ওরা (সৌদি আরব) দারুণ মিত্র। ইসরায়েলও দারুণ মিত্র… আমার মতে দুই দেশেরই শীর্ষ মানের সরঞ্জাম পাওয়া উচিত।’

সফরে খাশোগি হত্যাকাণ্ড প্রশ্ন নিয়েও বিতর্ক তৈরি হয়। ট্রাম্প বলেন, সৌদি প্রিন্স ২০১৮ সালে সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যার বিষয়ে ‘কিছুই জানতেন না’। অথচ ট্রাম্পের এ বক্তব্য ২০২১ সালের মার্কিন গোয়েন্দা বিশ্লেষণের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। সে সময় গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, যুবরাজ অপারেশনটির অনুমোদন দিয়েছিলেন।

হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে এক সাংবাদিক খাশোগি প্রসঙ্গ তুললে ট্রাম্প তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখান। তিনি বলেন, ‘আপনি এমন এক ব্যক্তির কথা বলছেন, যিনি অত্যন্ত বিতর্কিত ছিলেন… পছন্দ করুন বা না করুন, অনেক কিছুই ঘটে থাকে।’ পরে তিনি যোগ করেন, ‘কিন্তু তিনি (সৌদি প্রিন্স) কিছুই জানতেন না। আমাদের অতিথিকে বিব্রত করবেন না।’ প্রসঙ্গত, চার বছরের বেশি সময় পর এটিই সৌদি প্রিন্সের প্রথম যুক্তরাষ্ট্র সফর ছিল।