
আজ শুক্রবার দুপুরে দুবাই এয়ার শো’তে ফ্লাইং প্রদর্শনীর সময় একটি তেজাস যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়। দর্শকদের চোখের সামনেই আল মাকতুম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আকাশে ঘন কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলী ছড়িয়ে পড়ে। এই দুর্ঘটনায় পাইলট নিহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে ভারতীয় বিমান বাহিনী (আইএএফ)। এক বিবৃতিতে আইএএফ বলেছে, ‘আজ দুবাই এয়ার শোতে আকাশপথে কসরত দেখানোর সময় আইএএফ-এর একটি তেজাস বিমান দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। এই দুর্ঘটনায় পাইলট মারাত্মক আহত হন এবং মৃত্যুবরণ করেন। ভারতীয় বিমান বাহিনী এই প্রাণহানিতে গভীর শোক প্রকাশ করছে এবং এই শোকের সময়ে শোকসন্তপ্ত পরিবারের পাশে দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়েছে। দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানের জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হচ্ছে।’
প্রত্যক্ষদর্শী এবং এনডিটিভির পাওয়া ভিডিও অনুযায়ী, হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্স লিমিটেডের (হাল) নির্মিত এই এক আসনের লাইট কমব্যাট এয়ারক্রাফ্ট (এলসিএ) স্থানীয় সময় দুপুর ২:১০ নাগাদ বিধ্বস্ত হয়।
সূত্র অনুযায়ী, পাইলট ‘নেগেটিভ জি-ফোর্স’ মোড় থেকে বিমানটিকে নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। নেগেটিভ জি-ফোর্স হলো এমন একটি শক্তি যা মধ্যাকর্ষণের বিপরীত দিকে অনুভূত হয়। তেজাস নেগেটিভ জি কসরত করতে সক্ষম, যা এর অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য।
ভিডিওতে দেখা গেছে যে যুদ্ধবিমানটি সোজা নিচের দিকে পড়ে যাচ্ছিল (ফ্রি ফল) এবং এটি ভেসে থাকেনি (গ্লাইড করেনি), সম্ভবত নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধারে ব্যর্থতার কারণেই এমনটি ঘটেছে।
দ্বিবার্ষিক দুবাই এয়ার শো চলাকালীন এই দুর্ঘটনা ঘটে, যা বিশ্বের বৃহত্তম বিমান প্রদর্শনীগুলোর মধ্যে অন্যতম। এই সপ্তাহে ইভেন্টটিতে এমিরেটস এবং ফ্লাইদুবাইয়ের বহু বিলিয়ন ডলারের বিমানের অর্ডার সহ বড় বড় ঘোষণা দেখা গেছে।
এই ঘটনাটি দুই বছরেরও কম সময়ের মধ্যে তেজাস বিমানের দ্বিতীয় দুর্ঘটনা। এর আগে, ২০২৪ সালের মার্চ মাসে রাজস্থানের জয়সলমিরে একটি তেজাস যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়েছিল। ২০০১ সালে প্রথম পরীক্ষামূলক উড্ডয়নের পর থেকে ২৩ বছরের ইতিহাসে এটিই ছিল বিমানটির প্রথম দুর্ঘটনা। সেই ঘটনায় পাইলট নিরাপদে ইজেক্ট করতে (বেরিয়ে আসতে) সক্ষম হয়েছিলেন।
তেজাস একটি ৪.৫ প্রজন্মের মাল্টি-রোল (বহুমুখী) যুদ্ধবিমান, যা আকাশ প্রতিরক্ষা মিশন, আক্রমণাত্মক বিমান সহায়তা এবং ক্লোজ-কমব্যাট অপারেশন পরিচালনার জন্য তৈরি করা হয়েছে। এটি তার শ্রেণির সবচেয়ে হালকা এবং ছোট যুদ্ধবিমানগুলোর মধ্যে অন্যতম হিসেবে পরিচিত।
এই জেটের একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এর মার্টিন-বেকার জিরো-জিরো ইজেকশন সিট। এটি এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যাতে পাইলটরা শূন্য উচ্চতা এবং শূন্য গতিতেও—যেমন টেক-অফ, ল্যান্ডিং বা কম উচ্চতায় কসরতের সময়—নিরাপদে বেরিয়ে আসতে পারেন।
এয়ার শো’তে উপস্থিত দর্শকরা রানওয়ের কাছাকাছি থেকে দুর্ঘটনাটি প্রত্যক্ষ করেন। ভিডিওগুলোতে দেখা গেছে, তেজাস একটি প্রদর্শনী রুটিনে উড়ছিল, তারপর হঠাৎ উচ্চতা হারিয়ে দ্রুত নিচে নেমে আসে। কয়েক সেকেন্ড পরেই কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলী উঠতে দেখা যায়, যা দর্শকদের মধ্যে আতঙ্ক এবং হুড়োহুড়ি ফেলে দেয়।
ভারতের পুরনো যুদ্ধবিমানের বহর আধুনিকীকরণ এবং বিদেশি সরবরাহকারীদের ওপর নির্ভরতা কমানোর প্রচেষ্টায় তেজাস কর্মসূচি কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করেছে। প্রথম তেজাস স্কোয়াড্রন, নম্বর ৪৫ ‘ফ্লাইং ড্যাগার্স’, ২০১৬ সালে আইএএফ-এ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল।
গত সেপ্টেম্বরে, ভারত সরকার আরও ৯৭টি তেজাস যুদ্ধবিমানের জন্য হাল এর সঙ্গে একটি বড় নতুন চুক্তি স্বাক্ষর করেছে, যার সরবরাহ ২০২৭ সালে শুরু হবে।
এর আগে ভারত সরকার ২০২১ সালের একটি চুক্তির অধীনে ৮৩টি তেজাস এমকে-১এ বিমান কেনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, যদিও সেই সরবরাহ বিলম্বিত হয়েছে। সূত্র: এনডিটিভি
আন্তর্জাতিক ডেস্ক 






































