
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি
সিরাজগঞ্জ রায়গঞ্জ উপজেলার ফুলজোড় ডিগ্রি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ছালমা খাতুন ২০২০ সালের শুরু থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। তবে কলেজের অভ্যন্তরীণ নথিতে ২০২১ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে তার ‘যোগদান’ ‘ছুটি শেষ’ ‘কাজে ফেরা’ ইত্যাদি উল্লেখ করে আবেদনপত্র সংরক্ষণ করা হয়েছে। হাজিরা খাতায়ও বেশ কয়েক মাস তাকে উপস্থিত দেখানো হয়েছে, যদিও ওই সময় তিনি দেশে ছিলেন না।
সম্প্রতি কলেজের অধ্যক্ষ সাহেদ আলীর বিরুদ্ধে জমা হওয়া অভিযোগের ভিত্তিতে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি এসব তথ্য নিশ্চিত করে। কমিটি ছালমা খাতুনের নামে থাকা বিভিন্ন আবেদনপত্রের স্বাক্ষর ও লেখার ধরণ পর্যালোচনা করে দেখতে পায়—২০২৪ সালের ৬ অক্টোবর এবং ১ ডিসেম্বর তারিখের যোগদানের আবেদনপত্র তার নিজস্ব স্বাক্ষর নয় এবং নথির লেখার ধরনও ভিন্ন। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেতন চালু রাখা এবং দীর্ঘ অনুপস্থিতি গোপন করতেই এসব নথি তৈরি করা হয়েছে।
তদন্তে জানা যায়, ছুটি অনুমোদনের ক্ষেত্রেও বিধি লঙ্ঘন হয়েছে। ১৯৫৯ সালের শিক্ষা ছুটি বিধি অনুযায়ী টানা দীর্ঘ মেয়াদি ছুটি ভোগের সুযোগ নেই। তবে কলেজের নথি অনুযায়ী ২০২৪ সালে ৯ মাস এবং ২০২৫ সালে ৬ মাস—মোট ১৫ মাস ছুটি অনুমোদন করা হয়েছে। এই দীর্ঘ অনুপস্থিতির বিষয়টি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরে প্রেরণ করার নিয়ম থাকলেও তা করা হয়নি।
ছালমা খাতুনের ব্যাংক হিসাব বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বিদেশে থাকা অবস্থাতেও চেকের মাধ্যমে নিয়মিত বেতন উত্তোলন হয়েছে। চার বছরের সময়সীমায় চার লাখ টাকার বেশি অর্থ চেকের মাধ্যমে তোলা হয়েছে। কলেজ সংশ্লিষ্ট নথিপত্র বিশ্লেষণ করে তদন্ত কমিটি উল্লেখ করেছে—বেতন বিল তৈরি ও উত্তোলনের প্রক্রিয়ায় অধ্যক্ষ সাহেদ আলী, পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি আবদুল লতিফ সরকার, হিসাবরক্ষক সাইফুল ইসলাম এবং অফিস সহকারী সাইফুল ইসলাম সম্পৃক্ত ছিলেন।
তদন্ত প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, তদন্তকারীদের অনুরোধ সত্ত্বেও ছালমা খাতুনের পাসপোর্টের অনুলিপি সরবরাহ করেননি অধ্যক্ষ সাহেদ আলী। ছুটি অনুমোদন, হাজিরা সার্টিফিকেশন ও এমপিও সংক্রান্ত নথি প্রেরণ—এসব ক্ষেত্রেই তার ভূমিকা অস্পষ্ট ও অনিয়মপূর্ণ।
তদন্ত কমিটি সুপারিশ করেছে—অধ্যক্ষ সাহেদ আলী ও পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি আবদুল লতিফ সরকারের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ, বেতন হিসাব ও চেক লেনদেনের বিশেষ আর্থিক তদন্ত এবং কলেজের হাজিরা খাতা, ছুটি রেজিস্টার ও এমপিও বিল–সংক্রান্ত সব নথির পুনঃতদন্ত।
অধ্যক্ষ সাহেদ আলীর বিরুদ্ধে আগে থেকেই দুটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এসব মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হওয়ার পর তিনি পলাতক। কলেজ সংশ্লিষ্টদের তথ্য অনুযায়ী, পলাতক থাকলেও তিনি মাঝে মধ্যে কলেজে গিয়ে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেছেন।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা অনুযায়ী ডিগ্রি কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি হতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি প্রয়োজন। তবে ফুলজোড় ডিগ্রি কলেজের সভাপতি আবদুল লতিফ সরকার স্নাতকোত্তর ডিগ্রি ছাড়াই দায়িত্ব পালন করছিলেন। বিষয়টি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নজরে এলে তাকে অপসারণ করে নতুন প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। পরবর্তীতে তিনি হাইকোর্টে রিট করলে ডিসিকে সভাপতি নিয়োগের কার্যকারিতা স্থগিত হয়।
তদন্তে আরও উঠে এসেছে—সভাপতি ও অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে কলেজের আর্থিক লেনদেন, নিয়োগ প্রক্রিয়া এবং ভবন ও দোকানঘর ব্যবস্থাপনায় ২ থেকে ৩ কোটি টাকার অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে কলেজের সামগ্রিক প্রশাসনিক কাঠামো পুনর্বিবেচনার প্রয়োজনীয়তার কথাও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি 






























