
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি:
আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ার পর জেলার প্রতিটি আসনেই দুই দলের প্রার্থীদের সক্রিয় প্রচারণা; বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল একাধিক আসনে প্রভাব ফেলতে পারে।
সিরাজগঞ্জের রাজনীতি দীর্ঘদিন তিন প্রধান দলকে কেন্দ্র করে পরিচালিত হয়েছে। তবে গত বছরের গণ-অভ্যুত্থানের পর আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ায় ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জেলার ছয়টি আসনেই বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। দুই দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা উঠান বৈঠক, মিছিল, পথসভা ও গণসংযোগে ব্যস্ত সময় পার করছেন। গ্রাম ও শহরে পোস্টার ও ব্যানার টাঙানোয় নির্বাচনী পরিবেশ আরও স্পষ্ট হয়েছে।
স্থানীয়দের মতে, এবার বেশির ভাগ আসনেই দুই দলের প্রার্থীদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে ঘনিষ্ঠ। বিশেষ করে উল্লাপাড়া এবং বেলকুচি-চৌহালী আসনে ভোটারদের আগ্রহ বেশি দেখা যাচ্ছে। তবে বিএনপির বিভিন্ন আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী ঘোষণাকে কেন্দ্র করে দলীয় কোন্দলও লক্ষ করা যাচ্ছে।
সিরাজগঞ্জ-১ (কাজীপুর ও সদর আংশিক)
এই আসনে জামায়াতের জেলা আমির মাওলানা শাহিনুর আলম প্রচারণা শুরু করেছেন। বিএনপি এখনো প্রার্থী ঘোষণা করেনি। মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে আছেন রুমানা মোর্শেদ কনকচাঁপা, নাজমুল হাসান তালুকদার রানা এবং সেলিম রেজা। স্থানীয় পর্যবেক্ষণে জানা গেছে, অভ্যন্তরীণ মতপার্থক্য দূর না হলে বিএনপির জন্য এ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা কঠিন হতে পারে।
সিরাজগঞ্জ-২ (সদর ও কামারখন্দ)
এ আসনে জামায়াতের প্রার্থী জেলা সেক্রেটারি মুহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম। বিএনপি সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুকে। দুই দলের শক্তিশালী অবস্থানের কারণে আসনটিতে ঘনিষ্ঠ প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্ভাবনা রয়েছে।
সিরাজগঞ্জ-৩ (রায়গঞ্জ ও তাড়াশ)
বিএনপির জন্য ঐতিহ্যবাহী এই আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী করা হয়েছে জেলা বিএনপির তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক এবং সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ভিপি আয়নুল হককে। এর আগে মনোনয়ন প্রত্যাশা করেছিলেন প্রয়াত বিএনপি নেতা আব্দুল মান্নান তালুকদারের ছেলে রাহিদ মান্নান লেলিন। এতে দলের একটি অংশ নিষ্ক্রিয় রয়েছে।
জামায়াত এখান থেকে মনোনয়ন দিয়েছে কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মোহাম্মদ আব্দুস সামাদকে।
সিরাজগঞ্জ-৪ (উল্লাপাড়া)
এই আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী সাবেক এমপি এম আকবর আলী। অপরদিকে জামায়াতের প্রার্থী মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান। প্রার্থী ঘোষণার পর উপজেলা বিএনপির একটি অংশ মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবিতে কর্মসূচি পালন করেছে, যা দলের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতিকে প্রভাবিত করছে।
সিরাজগঞ্জ-৫ (বেলকুচি ও চৌহালী)
এ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী রাজশাহী বিভাগের সহসাংগঠনিক সম্পাদক আমীরুল ইসলাম খান আলীম। একই আসন থেকে দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী মেজর (অব.) মনজুর কাদের স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এতে বিএনপির ভোটব্যাংকে বিভাজনের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
জামায়াতের প্রার্থী সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আলী আলম। ইসলামী আন্দোলনের মুফতি নুরুন নবী এবং গণঅধিকার পরিষদের সোহরাওয়ার্দী হোসেনও প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন।
সিরাজগঞ্জ-৬ (শাহজাদপুর)
এই আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী ডা. এম এ মুহিত, যিনি সাবেক উপপ্রধানমন্ত্রী ডা. এম এ মতিনের ছেলে। জামায়াতের পক্ষ থেকে প্রার্থী হয়েছেন অধ্যাপক মাওলানা মিজানুর রহমান। পাশাপাশি এনসিপির এস এম সাঈদ মোস্তাফিজ এবং ইসলামী আন্দোলনের মেসবাহ উদ্দিনও নির্বাচনী প্রস্তুতি নিচ্ছেন। স্থানীয় পর্যবেক্ষণে জানা যায়, বিএনপির অভ্যন্তরীণ দুর্বলতা এখানে নির্বাচনী পরিস্থিতিকে প্রভাবিত করতে পারে।
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: 























