
মারুফ বাবু, মোংলা প্রতিনিধিঃ
জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্র বন্দর মোংলা বন্দরের প্লাটিনাম জয়ন্তী উদযাপন করা হয়েছে। আজ এই বন্দরের ৭৫ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী। এ দিবসটি উপলক্ষে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
সোমবার (১ ডিসেম্বর) ৭৫ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী ও তারুণ্যের উৎসব পালন উপলক্ষে দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিটে বন্দরে অবস্থানরত দেশি-বিদেশি সব জাহাজে এক মিনিট বিরতিহীন হুইস্ল বাজানো হয়। দুপুর ১২ টায় বন্দরের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর উপস্থিতিতে বন্দরের সদর দপ্তর হতে বন্দরের জেটি ফটক পর্যন্ত র্যালির আয়োজন করা হয়।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল শাহীন রহমান বেলুন ও কবুতর উড়িয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন। পরে বন্দরের জেটির অভ্যন্তরে ৭৫তম বন্দর প্লাটিনাম জয়ন্তী দিবস উদযাপন করা হয়।
অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন বন্দরের সম্মানিত সদস্য (হারবার ও মেরিন) কমডোর মো. শফিকুল ইসলাম সরকার, সদস্য (অর্থ) ও পরিচালক (প্রশাসন) (অ:দা:) কাজী আবেদ হোসেন (যুগ্মসচিব), সদস্য (প্রকৌশল ও উন্নয়ন) ড. এ. কে. এম. আনিসুর রহমান (যুগ্মসচিব), পরিচালক (বোর্ড) কালাচাঁদ সিংহ (যুগ্মসচিব), ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম, হারবার মাস্টার, কর্নেল মো. ফিরোজ ওয়াহিদ, বিভাগীয় প্রধানগণ, বন্দরের সকল স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং বন্দর ব্যবহারকারীগণ।
অনুষ্ঠানে বন্দরের কৃতিত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ বন্দরে ১৩ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে এবং ঝুঁকিপূর্ণ কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ ৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সম্মাননা দেওয়া হয়। মোংলা বন্দর ব্যবহারকারী হিসেবে সর্বোচ্চ জাহাজ কয়লা, মাশুল প্রদান, সার, সাধারণ পণ্য, গ্যাস, কন্টেইনারবাহী জাহাজ আনয়নকারী, গাড়ির জাহাজ, মালামাল হ্যান্ডলিংসহ ইত্যাদি বিষয়ে বিশেষ অবদান রাখার জন্য বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ২৯ টি প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা দেওয়া হয়। এছাড়া গত বছরের ২ ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত পিআরএল ভোগরত ৫৬ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বিদায় সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
প্রসঙ্গত, ১৯৫০ সালের ২৯ সেপ্টেম্বরের গেজেট নোটিফিকেশন বলে ওই বছরের ১ ডিসেম্বর চালনা পোর্ট নামে এ বন্দর প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ১৯৮৭ সালের পোর্ট অব চালনা অথরিটি অ্যাক্ট অনুসারে প্রথমে চালনা বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং পরবর্তীতে মোংলা পোর্ট অথরিটি নামে প্রতিষ্ঠা লাভ করে।
বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, বিগত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে কার্গো হ্যান্ডলিং এর লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮৮ লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টন। অর্থবছর শেষে বন্দরে ১ কোটি ৪ লাখ ১২ হাজার মেট্রিক টন কার্গো হ্যান্ডলিং এর মধ্য দিয়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হওয়ার পাশাপাশি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৫ লাখ ৩২ হাজার মেট্রিক টন এবং ১৭.২৫ শতাংশ বেশি কার্গো হ্যান্ডলিং করা হয়েছে।
একইভাবে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং-এর লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২০ হাজার টিইইউজ। অর্থবছর শেষে বন্দরে ২১ হাজার ৪৫৬ টিইইউজ কন্টেইনার হ্যান্ডলিং এর মধ্য দিয়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ হাজার ৪৫৬ বেশি এবং ৭.২৮ শতাংশ বেশি কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করা হয়।
২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৩৩ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। অর্থবছর শেষে বন্দরে ৩৪৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা রাজস্ব আয়ের মধ্য দিয়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হওয়ার পাশাপাশি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৯ কোটি ৪৬ লাখ টাকা এবং ২.৮৩ শতাংশ বেশি রাজস্ব আয় করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এছাড়া বন্দরের নিট মুনাফার লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ২০ কোটি ৪৬ লাখ ২০ হাজার টাকা। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বন্দরে ৬২ কোটি ১০ লাখ টাকা নিট মুনাফা অর্জনের মধ্য দিয়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হওয়ার পাশাপাশি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪১ কোটি ৬৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা। যা ২০৩.৪৯ শতাংশ বেশি।
আধুনিক যন্ত্রপাতি সংগ্রহের ফলে প্রতি ঘণ্টায় ২৪টিরও বেশি কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করা সম্ভব হচ্ছে এবং জেটির সম্মুখে নিয়মিত ড্রেজিং এর ফলে নাব্যতা বিরাজমান থাকার কারণে ৫টি জোটতে একই সাথে ৫ টি জাহাজ হ্যান্ডলিং করা সম্ভব হচ্ছে।
বর্তমান অর্থ বছরের প্রথম পাঁচ মাসে জাহাজ এসেছে ৩৫৬ টি, কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ১৩ হাজার ৮৫৪ টিইউজ, গাড়ি আমদানি হয়েছে ৪ হাজার ১৩৯ টি এবং পণ্য আমদানি-রপ্তানি হয়েছে ৪৪ লাখ টন। এছাড়া আধুনিক যন্ত্রপাতি সংগ্রহের ফলে প্রথমবারের মতো প্রতি ঘণ্টায় ২৪ টিরও বেশি কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করা সম্ভব হচ্ছে এবং জেটির সম্মুখে নিয়মিত ড্রেজিং এর ফলে নাব্যতা বিরাজমান থাকার কারণে ৫ টি জেটিতে একই সাথে ০৫ টি জাহাজ হ্যান্ডলিং করা সম্ভব হচ্ছে। বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী প্রতিবেশী দেশে ট্রানজিট পণ্য মোংলা বন্দরের মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানির সুদূরপ্রসারী সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। মোংলা বন্দর ব্যবহার করে স্থল, নৌ এবং রেলপথের মাধ্যমে রাজশাহী, রংপুর ও বরিশাল বিভাগের পণ্য পরিবহনকে সহজতর এবং দ্রুত করবে।
মোংলা বন্দরে ইতোমধ্যে স্থাপিত হয়েছে পোর্ট রিসিপশন ফ্যাসিলিটি (পিআরএফ)। এটি এখন উদ্বোধনের জন্য অপেক্ষমান। এর ফলে এ অঞ্চলে তেলবাহী কোনো জাহাজ বা ট্যাংকার হতে দুর্ঘটনা বশতঃ পানিতে তেল নিঃসরণ হলে তেল অপসারণকারী ভেসেলের মাধ্যমে তা সংগ্রহ করে নদী ও সামুদ্রিক পরিবেশকে দূষণ থেকে রক্ষা করার সক্ষমতা অর্জন করবে মোংলা বন্দর।
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রাণপ্রবাহ এ বন্দরটির কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি বর্তমানে খাদ্যশস্য, সিমেন্ট ক্লিংকার, সার, মোটর গাড়ি, মেশিনারিজ, চাল, গম, কয়লা, তেল, পাথর, ভুট্টা, তেলবীজ, এলপিজি গ্যাস আমদানি এবং সাদামাছ, চিংড়ি, পাট ও পাটজাত দ্রব্য, হিমায়িত খাদ্য, কাঁকড়া, ক্লে, টাইলস, রেশমি কাপড় ও জেনারেল কার্গো রপ্তানির মাধ্যমে দেশের চলমান অর্থনীতিতে বিশেষ ভূমিকা রেখে আসছে।
মোংলা বন্দরকে আধুনিক ও বিশ্বমানের করে গড়ে তোলার জন্য বেশ কিছু প্রকল্প চলমান রয়েছে ও কিছু প্রকল্প ভবিষ্যৎ উন্নয়নের জন্য হাতে নেয়া হয়েছে।
মারুফ বাবু, মোংলা প্রতিনিধিঃ 






































