রবিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ৬ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

স্থায়ীভাবে জলাবদ্ধতামুক্ত হচ্ছে কাতালগঞ্জ এলাকা: চসিক মেয়র

ইসমাইল ইমন, চট্টগ্রাম 
চট্টগ্রাম নগরীর দীর্ঘদিনের জলাবদ্ধতা সমস্যার স্থায়ী সমাধানে কাতালগঞ্জসহ আশপাশের বিস্তীর্ণ এলাকা শিগগিরই জলাবদ্ধতামুক্ত হতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন।
শনিবার কাতালগঞ্জ এলাকায় হিজড়া খাল সংস্কার কার্যক্রম পরিদর্শনকালে তিনি এলাকাবাসীর উদ্দেশে বলেন, “ এবছর বর্ষায় নগরীতে জলাবদ্ধতা অনেক কমে আসলেও কাতালগঞ্জে পানি উঠেছিল। সেসময় আমি নিজে পানিতে নেমে নালা পরিষ্কার করেছি, জলাবদ্ধতার কারণ অনুসন্ধান করেছি। পরিষ্কার করার পরও যখন পানি উঠেছে—তখনই বুঝেছি, টেম্পোরারি সমাধান নয়, পারমানেন্ট সলিউশন দরকার।
“স্থায়ী সমাধান হিসেবে সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং ব্রিগেড ৩৬টি খাল খননের প্রকল্পের অংশ হিসেবে হিজড়া খালটি খনন, সম্প্রসারণ ও সংস্কার করছে। হিজড়া খালটি গোল পাহাড়–মেহেদীবাগ এলাকা থেকে শুরু হয়ে কাতালগঞ্জ, পাঁচলাইশ, দামপাড়া, পশ্চিম ও পূর্ব বাকলিয়া, চকবাজার, কাপাসগোলা হয়ে ফুলতলী–চাক্তাই খালে গিয়ে মিলিত হয়েছে। এই পুরো জোনে অসংখ্য আবাসিক এলাকা, হাসপাতাল, ক্লাব ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রয়েছে। খালটি দীর্ঘদিন ধরে দখল ও অপরিকল্পিত স্থাপনার কারণে সংকুচিত হয়ে পড়ায় বর্ষা মৌসুম ছাড়াও স্বাভাবিক সময়ে এখানে পানি জমে থাকত। গত ১২ মাস ধরে জলাবদ্ধতা নিরসনে যে সমন্বিত কর্মযজ্ঞ চলছে , তারই অংশ হিসেবে হিজড়া খালের এই সংস্কার কাজ চলছে। খালটি খনন করতে গিয়ে কিছু জায়গায় বাধ দিতে হচ্ছে। যার কারণে কাতালগঞ্জসহ কিছু এলকায় হঠাত পানি উঠে মানুষ কষ্ট পাচ্ছে। আগামী ফেব্রুয়ারি–মার্চ পর্যন্ত সর্বোচ্চ দুই থেকে তিন মাস কিছুটা কষ্ট হবে। কিন্তু এই সময়টা আমরা যদি সহনশীল হই, তাহলে আজীবনের জন্য এই এলাকা জলাবদ্ধতার হাত থেকে মুক্তি পাবে। সাময়িক ভোগান্তি হলেও এর ফল হবে স্থায়ী। কাতালগঞ্জের স্থায়ীভাবে জলবদ্ধতা মুক্ত হবে।”
তিনি বলেন, “হিজড়া খালের প্রকৃত প্রস্থ প্রায় ৩০ ফুট। কিন্তু দখলের কারণে অনেক জায়গায় তা ১২–১৫ ফুটে নেমে এসেছে। আরএস, পিএস ও বিএস ম্যাপ অনুযায়ী খালকে তার মূল প্রস্থে ফিরিয়ে আনতেই এই সংস্কার। এজন্য কিছু স্থাপনা আংশিকভাবে অপসারণ করতে হবে। এটি কারো বিরুদ্ধে নয়; বৃহত্তর জনস্বার্থে প্রয়োজনীয় একটি পদক্ষেপ।”
মেয়র স্পষ্ট করে বলেন, ডকুমেন্টের বাইরে গিয়ে কোনো রাষ্ট্রীয় সংস্থা এক ইঞ্চি জমিও নেবে না। যেটুকু খালের জায়গা ম্যাপে আছে, শুধু সেটুকুই নেওয়া হবে। প্রয়োজন হলে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিষয়েও আমরা প্রস্তুত। কিন্তু খালের জায়গা দখল করে রাখা যাবে না—এটি জনগণের অধিকার।”
মেয়র আরও জানান, হিজড়া খাল ও জামালখান খাল—এই দুটি খাল চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জামালখান খাল সংস্কার কাজও একযোগে চলছে এবং তা জানুয়ারির মধ্যেই শেষ হওয়ার আশা করা হচ্ছে।
পরিদর্শনকালে মশার প্রকোপ প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, মশক নিধন কার্যক্রম জোরদারভাবে চলবে। কোনো এলাকায় মশার ওষুধ ছিটানো না হলে ওয়ার্ড সচিব বা সুপারভাইজারের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। দায়িত্বে অবহেলা করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তিনি আরও বলেন, নগরকে ক্লিন, গ্রিন, হেলদি ও সেফ সিটিতে রূপান্তরের লক্ষ্যে ১,৬০০ কিলোমিটার ড্রেন উন্নয়ন, আধুনিক এসটিএস (সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন), দখলমুক্ত ফুটপাত এবং পুনর্বাসনমূলক অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
এসময় উপস্থিত ছিলেন চসিকের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন ইখতিয়ার উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী প্রকৌশলী আহম্মদ মঈনুদ্দিন, বিএনপি নেতা মো. কামরুল ইসলাম প্রমুখ। পরিদর্শনের পর মেয়র মশক নিধন কার্যক্রমে অংশ নেন।
জনপ্রিয়

কুষ্টিয়ায় হেযবুত তওহীদের আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

স্থায়ীভাবে জলাবদ্ধতামুক্ত হচ্ছে কাতালগঞ্জ এলাকা: চসিক মেয়র

প্রকাশের সময় : ০৬:১৯:২৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৫
ইসমাইল ইমন, চট্টগ্রাম 
চট্টগ্রাম নগরীর দীর্ঘদিনের জলাবদ্ধতা সমস্যার স্থায়ী সমাধানে কাতালগঞ্জসহ আশপাশের বিস্তীর্ণ এলাকা শিগগিরই জলাবদ্ধতামুক্ত হতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন।
শনিবার কাতালগঞ্জ এলাকায় হিজড়া খাল সংস্কার কার্যক্রম পরিদর্শনকালে তিনি এলাকাবাসীর উদ্দেশে বলেন, “ এবছর বর্ষায় নগরীতে জলাবদ্ধতা অনেক কমে আসলেও কাতালগঞ্জে পানি উঠেছিল। সেসময় আমি নিজে পানিতে নেমে নালা পরিষ্কার করেছি, জলাবদ্ধতার কারণ অনুসন্ধান করেছি। পরিষ্কার করার পরও যখন পানি উঠেছে—তখনই বুঝেছি, টেম্পোরারি সমাধান নয়, পারমানেন্ট সলিউশন দরকার।
“স্থায়ী সমাধান হিসেবে সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং ব্রিগেড ৩৬টি খাল খননের প্রকল্পের অংশ হিসেবে হিজড়া খালটি খনন, সম্প্রসারণ ও সংস্কার করছে। হিজড়া খালটি গোল পাহাড়–মেহেদীবাগ এলাকা থেকে শুরু হয়ে কাতালগঞ্জ, পাঁচলাইশ, দামপাড়া, পশ্চিম ও পূর্ব বাকলিয়া, চকবাজার, কাপাসগোলা হয়ে ফুলতলী–চাক্তাই খালে গিয়ে মিলিত হয়েছে। এই পুরো জোনে অসংখ্য আবাসিক এলাকা, হাসপাতাল, ক্লাব ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রয়েছে। খালটি দীর্ঘদিন ধরে দখল ও অপরিকল্পিত স্থাপনার কারণে সংকুচিত হয়ে পড়ায় বর্ষা মৌসুম ছাড়াও স্বাভাবিক সময়ে এখানে পানি জমে থাকত। গত ১২ মাস ধরে জলাবদ্ধতা নিরসনে যে সমন্বিত কর্মযজ্ঞ চলছে , তারই অংশ হিসেবে হিজড়া খালের এই সংস্কার কাজ চলছে। খালটি খনন করতে গিয়ে কিছু জায়গায় বাধ দিতে হচ্ছে। যার কারণে কাতালগঞ্জসহ কিছু এলকায় হঠাত পানি উঠে মানুষ কষ্ট পাচ্ছে। আগামী ফেব্রুয়ারি–মার্চ পর্যন্ত সর্বোচ্চ দুই থেকে তিন মাস কিছুটা কষ্ট হবে। কিন্তু এই সময়টা আমরা যদি সহনশীল হই, তাহলে আজীবনের জন্য এই এলাকা জলাবদ্ধতার হাত থেকে মুক্তি পাবে। সাময়িক ভোগান্তি হলেও এর ফল হবে স্থায়ী। কাতালগঞ্জের স্থায়ীভাবে জলবদ্ধতা মুক্ত হবে।”
তিনি বলেন, “হিজড়া খালের প্রকৃত প্রস্থ প্রায় ৩০ ফুট। কিন্তু দখলের কারণে অনেক জায়গায় তা ১২–১৫ ফুটে নেমে এসেছে। আরএস, পিএস ও বিএস ম্যাপ অনুযায়ী খালকে তার মূল প্রস্থে ফিরিয়ে আনতেই এই সংস্কার। এজন্য কিছু স্থাপনা আংশিকভাবে অপসারণ করতে হবে। এটি কারো বিরুদ্ধে নয়; বৃহত্তর জনস্বার্থে প্রয়োজনীয় একটি পদক্ষেপ।”
মেয়র স্পষ্ট করে বলেন, ডকুমেন্টের বাইরে গিয়ে কোনো রাষ্ট্রীয় সংস্থা এক ইঞ্চি জমিও নেবে না। যেটুকু খালের জায়গা ম্যাপে আছে, শুধু সেটুকুই নেওয়া হবে। প্রয়োজন হলে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিষয়েও আমরা প্রস্তুত। কিন্তু খালের জায়গা দখল করে রাখা যাবে না—এটি জনগণের অধিকার।”
মেয়র আরও জানান, হিজড়া খাল ও জামালখান খাল—এই দুটি খাল চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জামালখান খাল সংস্কার কাজও একযোগে চলছে এবং তা জানুয়ারির মধ্যেই শেষ হওয়ার আশা করা হচ্ছে।
পরিদর্শনকালে মশার প্রকোপ প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, মশক নিধন কার্যক্রম জোরদারভাবে চলবে। কোনো এলাকায় মশার ওষুধ ছিটানো না হলে ওয়ার্ড সচিব বা সুপারভাইজারের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। দায়িত্বে অবহেলা করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তিনি আরও বলেন, নগরকে ক্লিন, গ্রিন, হেলদি ও সেফ সিটিতে রূপান্তরের লক্ষ্যে ১,৬০০ কিলোমিটার ড্রেন উন্নয়ন, আধুনিক এসটিএস (সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন), দখলমুক্ত ফুটপাত এবং পুনর্বাসনমূলক অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
এসময় উপস্থিত ছিলেন চসিকের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন ইখতিয়ার উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী প্রকৌশলী আহম্মদ মঈনুদ্দিন, বিএনপি নেতা মো. কামরুল ইসলাম প্রমুখ। পরিদর্শনের পর মেয়র মশক নিধন কার্যক্রমে অংশ নেন।