
যশোর অফিস
যশোরের মণিরামপুর উপজেলায় স্বাস্থ্য, স্যানিটেশন ও আবাসন প্রকল্পের নামে সংঘবদ্ধ প্রতারণা,অর্থ আত্মসাৎ, হুমকি ও সহিংসতার অভিযোগ এনে ন্যায়বিচারের দাবিতে প্রেসক্লাব যশোরে মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করেছে একটি ভুক্তভোগী পরিবার।
শনিবার (২০ ডিসেম্বর) দুপুরে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মণিরামপুর উপজেলার স্বরূপদাহ গ্রামের বাসিন্দা মোসাম্মৎ নাজমা খাতুন। তিনি অভিযোগ করেন,প্রকল্পের নামে সংঘবদ্ধ একটি চক্র তাদের পরিবারের কাছ থেকে বিপুল অর্থ আত্মসাৎ করেছে এবং প্রতিবাদ করায় প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে তাদের গৃহহীন করে রেখেছে।
লিখিত বক্তব্যে নাজমা খাতুন বলেন,তার স্বামী মো. শফিকুজ্জামান যশোর জেলা কৃষি শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক। ২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে অভিযুক্ত মুরাদ হোসেনের সঙ্গে স্বাস্থ্য, স্যানিটেশন ও আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পর্যায়ক্রমে তিনটি চুক্তিপত্র সম্পাদিত হয়। অভিযুক্ত মুরাদ হোসেন নিজেকে ব্র্যাকের স্বাস্থ্য, স্যানিটেশন ও আবাসন প্রকল্পের যশোর জেলা সমন্বয়কারী ও খুলনা বিভাগীয় সুপারভাইজার হিসেবে পরিচয় দেন।
সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, চুক্তি অনুযায়ী প্রতিটি প্রকল্পের নির্ধারিত ফি থাকলেও প্রকল্প কর্মীরা গ্রাহকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা আদায় করছিল। এতে আপত্তি জানালে অভিযুক্তরা প্রকল্পের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে নিয়ে নেয়।
নাজমা খাতুন দাবি করেন, ২০২৫ সালের ২৪ জুলাই বাথরুম, ঘর, সৌরবিদ্যুৎ,সাবমারসিবল ও ডিপ টিউবওয়েলসহ মোট ৮৫৫টি প্রকল্প আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হয়। এরপর প্রকল্পের দায়ভার থেকে তার স্বামী মুক্ত থাকলেও বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করা হয়।
লিখিত বক্তব্যে আরও উল্লেখ করা হয়, প্রথম চুক্তি থেকে ২০২৫ সালের জুলাই পর্যন্ত ইট,বালি, সিমেন্ট, শ্রমিক মজুরি, আসবাবপত্র ও অফিস ভাড়াসহ প্রায় ৪১ লাখ টাকার বেশি অর্থ অভিযুক্তদের হাতে দেওয়া হয়। হিসাব পর্যালোচনায় অতিরিক্ত ৭ থেকে ৮ লাখ টাকার গড়মিল পাওয়া যায় এবং মুরাদ হোসেনের কাছে আনুমানিক ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে। এছাড়া প্রকল্প সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কর্মীর বিরুদ্ধে ৪০ থেকে ৫০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তোলা হয়।
তিনি অভিযোগ করেন,এসব অনিয়মের প্রতিবাদ করায় অভিযুক্তরা তাদের বাড়িতে গিয়ে গালিগালাজ, অস্ত্রের ভয় দেখানো,শারীরিক নির্যাতন ও প্রাণনাশের হুমকি দেয়।এমনকি ২০২৫ সালের ৭ নভেম্বর তার ছেলে শাহরিয়ার নাফিজকে পরিকল্পিতভাবে নির্যাতন করা হয় বলেও দাবি করেন তিনি।
পরিস্থিতি মোকাবিলায় পরিবারটি ২০২৫ সালের ৪ অক্টোবর একটি দৈনিক পত্রিকায় সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে এবং ৪ নভেম্বর মণিরামপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি নং-২১৬) দায়ের করে। পাশাপাশি সেনা ক্যাম্প ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বরাবর একাধিক অভিযোগ দেওয়া হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে আরও অভিযোগ করা হয়, গত ১৫ ডিসেম্বর অভিযুক্ত পক্ষ প্রেসক্লাব যশোরে একটি সংবাদ সম্মেলন করে তাদের সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করেছে। এছাড়া মানব সেবা ট্রেডার্স লিমিটেডের অধীনে পরিচালিত একটি প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা নাসরিন বেগম তিন মাস ধরে কোনো হিসাব না দিয়ে বিপুল অর্থ আত্মসাৎ করেন বলে দাবি করা হয়। সম্প্রতি নাসরিন বেগম সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাওয়ার পর তার স্বামী মো. শফিকুল ইসলাম আত্মগোপনে রয়েছেন বলেও অভিযোগ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলন নাজমা খাতুন ও তার পরিবার সুষ্ঠু তদন্ত,প্রকৃত দোষীদের শনাক্তকরণ এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে গণমাধ্যম ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা কামনা করেন।
যশোর অফিস 






































