রবিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ৭ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নেতাকর্মীদের দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে বললেন ইমরান খান

ছবি-সংগৃহীত

আরও ১৭ বছর কারাদণ্ডের রায়ের পর নেতাকর্মীদের দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিরোধী দল তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) কারাবন্দি নেতা ইমরান খান। তিনি বলেন, ন্যায়বিচারের সকল পথ বন্ধ হওয়ায় প্রতিবাদই এখন একমাত্র বিকল্প।

২০২৩ সালের আগস্ট মাস থেকে কারাগারে বন্দি রয়েছেন ইমরান খান। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটির সাজা ঘোষণা হয়েছে। কয়েকটির এখনও বিচার চলছে। গত শনিবার (২০ ডিসেম্বর) ইমরান খান ও তার স্ত্রী বুশরা বিবিকে আরও ১৭ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।

 এছাড়াও উভয়কে ১ কোটি ৬৪ লাখ রুপি জরিমানা করা হয়েছে। অনাদায়ে অতিরিক্ত কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে। রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে তোশাখানা–২ মামলার শুনানি শেষে এই দণ্ড ঘোষণা করেন বিশেষ আদালতের বিশেষ বিচারক শাহরুখ আরজুমান্দ।
 
এই রায়ের প্রতিক্রিয়ায় ইমরান খান এক এক্স বার্তায় বলেছেন, বর্তমানে পাকিস্তান ‘আসিম ল’-এর ওপর চলছে। এখানে কেবল লিখিত রায় পড়া হচ্ছে। গত তিন বছরের ভিত্তিহীন সিদ্ধান্ত এবং বাক্যের মতো তোশাখানা-২-এর রায়ও আমার কাছে নতুন কিছু নয়। বিচারক কোনো প্রমাণ ছাড়াই এবং আইনি প্রয়োজনীয়তা পূরণ না করেই তাড়াহুড়ো করে এই রায় ঘোষণা করেছেন – আমাদের বা আমাদের আইনজীবীদের কথাও শোনা হয়নি।
 
তিনি আরও বলেছেন, ‘আমার স্ত্রী ও আমাকে ক্রমাগত নির্জন কারাগারে রেখে মানসিক নির্যাতন করা হচ্ছে। আমাদের বই, টিভি ও সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ। কারাগারের প্রতিটি বন্দি টিভি দেখতে পারে। কিন্তু আমি ও বুশরা বিবিকে এমনকি টিভি দেখা থেকেও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আমার পরিবারের পাঠানো বই কারা কর্তৃপক্ষ আমাদের কাছে পৌঁছানো হচ্ছে না।
 
তিনি আরও বলেছেন, ‘পাকিস্তানে আইনের শাসনের শেষকৃত্য করা হয়েছে। ২০০৭ সালে যেমন স্বৈরশাসকের পক্ষ নিয়ে বিচার বিভাগের পবিত্রতা লঙ্ঘনকারী পিসিও বিচারকদের কোনো সম্মান নেই এবং যারা স্বৈরশাসকের প্রতিরোধ করেছিলেন তারা জাতির বীর ছিলেন। একইভাবে আজ যারা এই ব্যবস্থার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করছেন তারা আমাদের বীর। যে বিচারকরা তাদের ইঙ্গিতে পুতুলের মতো নাচছেন তারা বিবেকহীন এবং মোশাররফ আমলের পিসিও বিচারকদের সমান।’
 
নেতাকর্মীদের তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলার ডাক দিয়ে ইমরান খান বলেছেন, ‘আইনের শ্রেষ্ঠত্ব এবং সংবিধান পুনরুদ্ধারের সংগ্রামের জন্য আইনজীবীদের সামনের পাদদেশে আসা অনিবার্য। কেবল বিচার ব্যবস্থাই জনগণকে রক্ষা করতে পারে। এটা ছাড়া কোনো অর্থনৈতিক বা নৈতিক উন্নয়ন সম্ভব নয়।’
 
আন্দোলনের জন্য সবাইকে প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি সোহেল আফ্রিদিকে বার্তা পাঠাচ্ছি যে তাকে রাস্তার আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত হতে হবে। সমগ্র জাতিকে তার অধিকারের জন্য জেগে উঠতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘সংগ্রামই ইবাদত এবং পাকিস্তানের প্রকৃত স্বাধীনতার সংগ্রামের জন্য আমি শাহাদাতের জন্য প্রস্তুত।
 
এদিকে রায়ের পর শনিবার খাইবার-পাখতুনখোয়া হাউসে এক সংবাদ সম্মেলন করেন পিটিআই মহাসচিব সালমান আকরাম রাজা। সেখানে দলীয় প্রধানের সংগ্রামের বার্তা তুলে ধরে তিনি বলেন, নেতাকে নির্জন কারাগারে রাখা হচ্ছে। পরিবারের সদস্যদের আদালত কক্ষে যেতে বাধা দেয়া হয়েছে।
 
পিটিআই মহাসচিব আরও বলেন, মঙ্গলবার ও বৃহস্পতিবার কারাগারে ইমরান খানের সঙ্গে সাক্ষাতের নির্ধারিত সময়। কিন্তু আদালতের আদেশ সত্ত্বেও সাক্ষাতের অনুমতি দিচ্ছে না কারা কর্তৃপক্ষ। রাজা জানান, ইমরান খান তার অবস্থান থেকে এক ইঞ্চিও পিছপা হবেন না এবং প্রয়োজনে শহীদ হয়েও জনগণের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে প্রস্তুত।
জনপ্রিয়

বিমান থেকে লাফিয়ে পড়ছেন যাত্রীরা, ঘটনা কী?

নেতাকর্মীদের দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে বললেন ইমরান খান

প্রকাশের সময় : ০৪:৪৮:৫৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৫

আরও ১৭ বছর কারাদণ্ডের রায়ের পর নেতাকর্মীদের দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিরোধী দল তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) কারাবন্দি নেতা ইমরান খান। তিনি বলেন, ন্যায়বিচারের সকল পথ বন্ধ হওয়ায় প্রতিবাদই এখন একমাত্র বিকল্প।

২০২৩ সালের আগস্ট মাস থেকে কারাগারে বন্দি রয়েছেন ইমরান খান। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটির সাজা ঘোষণা হয়েছে। কয়েকটির এখনও বিচার চলছে। গত শনিবার (২০ ডিসেম্বর) ইমরান খান ও তার স্ত্রী বুশরা বিবিকে আরও ১৭ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।

 এছাড়াও উভয়কে ১ কোটি ৬৪ লাখ রুপি জরিমানা করা হয়েছে। অনাদায়ে অতিরিক্ত কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে। রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে তোশাখানা–২ মামলার শুনানি শেষে এই দণ্ড ঘোষণা করেন বিশেষ আদালতের বিশেষ বিচারক শাহরুখ আরজুমান্দ।
 
এই রায়ের প্রতিক্রিয়ায় ইমরান খান এক এক্স বার্তায় বলেছেন, বর্তমানে পাকিস্তান ‘আসিম ল’-এর ওপর চলছে। এখানে কেবল লিখিত রায় পড়া হচ্ছে। গত তিন বছরের ভিত্তিহীন সিদ্ধান্ত এবং বাক্যের মতো তোশাখানা-২-এর রায়ও আমার কাছে নতুন কিছু নয়। বিচারক কোনো প্রমাণ ছাড়াই এবং আইনি প্রয়োজনীয়তা পূরণ না করেই তাড়াহুড়ো করে এই রায় ঘোষণা করেছেন – আমাদের বা আমাদের আইনজীবীদের কথাও শোনা হয়নি।
 
তিনি আরও বলেছেন, ‘আমার স্ত্রী ও আমাকে ক্রমাগত নির্জন কারাগারে রেখে মানসিক নির্যাতন করা হচ্ছে। আমাদের বই, টিভি ও সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ। কারাগারের প্রতিটি বন্দি টিভি দেখতে পারে। কিন্তু আমি ও বুশরা বিবিকে এমনকি টিভি দেখা থেকেও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আমার পরিবারের পাঠানো বই কারা কর্তৃপক্ষ আমাদের কাছে পৌঁছানো হচ্ছে না।
 
তিনি আরও বলেছেন, ‘পাকিস্তানে আইনের শাসনের শেষকৃত্য করা হয়েছে। ২০০৭ সালে যেমন স্বৈরশাসকের পক্ষ নিয়ে বিচার বিভাগের পবিত্রতা লঙ্ঘনকারী পিসিও বিচারকদের কোনো সম্মান নেই এবং যারা স্বৈরশাসকের প্রতিরোধ করেছিলেন তারা জাতির বীর ছিলেন। একইভাবে আজ যারা এই ব্যবস্থার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করছেন তারা আমাদের বীর। যে বিচারকরা তাদের ইঙ্গিতে পুতুলের মতো নাচছেন তারা বিবেকহীন এবং মোশাররফ আমলের পিসিও বিচারকদের সমান।’
 
নেতাকর্মীদের তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলার ডাক দিয়ে ইমরান খান বলেছেন, ‘আইনের শ্রেষ্ঠত্ব এবং সংবিধান পুনরুদ্ধারের সংগ্রামের জন্য আইনজীবীদের সামনের পাদদেশে আসা অনিবার্য। কেবল বিচার ব্যবস্থাই জনগণকে রক্ষা করতে পারে। এটা ছাড়া কোনো অর্থনৈতিক বা নৈতিক উন্নয়ন সম্ভব নয়।’
 
আন্দোলনের জন্য সবাইকে প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি সোহেল আফ্রিদিকে বার্তা পাঠাচ্ছি যে তাকে রাস্তার আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত হতে হবে। সমগ্র জাতিকে তার অধিকারের জন্য জেগে উঠতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘সংগ্রামই ইবাদত এবং পাকিস্তানের প্রকৃত স্বাধীনতার সংগ্রামের জন্য আমি শাহাদাতের জন্য প্রস্তুত।
 
এদিকে রায়ের পর শনিবার খাইবার-পাখতুনখোয়া হাউসে এক সংবাদ সম্মেলন করেন পিটিআই মহাসচিব সালমান আকরাম রাজা। সেখানে দলীয় প্রধানের সংগ্রামের বার্তা তুলে ধরে তিনি বলেন, নেতাকে নির্জন কারাগারে রাখা হচ্ছে। পরিবারের সদস্যদের আদালত কক্ষে যেতে বাধা দেয়া হয়েছে।
 
পিটিআই মহাসচিব আরও বলেন, মঙ্গলবার ও বৃহস্পতিবার কারাগারে ইমরান খানের সঙ্গে সাক্ষাতের নির্ধারিত সময়। কিন্তু আদালতের আদেশ সত্ত্বেও সাক্ষাতের অনুমতি দিচ্ছে না কারা কর্তৃপক্ষ। রাজা জানান, ইমরান খান তার অবস্থান থেকে এক ইঞ্চিও পিছপা হবেন না এবং প্রয়োজনে শহীদ হয়েও জনগণের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে প্রস্তুত।