
ইমা এলিস, নিউ ইয়র্ক:
সাইবার অপরাধীদের ব্যবহৃত যুক্তরাষ্ট্রের মন্টানা অঙ্গরাজ্যের ভুয়া ড্রাইভিং লাইসেন্সসহ বিভিন্ন পরিচয়পত্র বিক্রির অনলাইন মার্কেটপ্লেস পরিচালনার অভিযোগে এক বাংলাদেশির ব্যক্তির বিরুদ্ধে মন্টানা ডিস্ট্রিক্টে বৃহস্পতিবার উন্মুক্ত হওয়া নয়টি অভিযোগের একটি ফেডারেল অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটর্নি কার্ট আলমে এ তথ্য জানিয়েছেন। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র সরকার বিশ্বজুড়ে ভুয়া পরিচয়পত্র বিক্রিতে ব্যবহৃত ওই মার্কেটপ্লেসগুলোর তিনটি ডোমেইনও জব্দ করার ঘোষণা দিয়েছে।
বাংলাদেশের ঢাকা নিবাসী ২৯ বছর বয়সী জাহিদ হাসানের বিরুদ্ধে ছয়টি ভুয়া পরিচয়পত্র হস্তান্তরের অভিযোগ, দুটি ভুয়া পাসপোর্ট ব্যবহারের অভিযোগ এবং একটি সোশ্যাল সিকিউরিটি জালিয়াতির অভিযোগ আনা হয়েছে। অভিযোগপত্রের ১ থেকে ৮ নম্বর ধারায় উল্লিখিত ভুয়া পরিচয়পত্র হস্তান্তর বা ভুয়া পাসপোর্ট ব্যবহারের প্রতিটি অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হলে তার সর্বোচ্চ ১৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে। ৯ নম্বর ধারায় উল্লিখিত সোশ্যাল সিকিউরিটি জালিয়াতির অভিযোগে সর্বোচ্চ শাস্তি ৫ বছর কারাদণ্ড। প্রতিটি অভিযোগে সর্বোচ্চ ২ লাখ ৫০ হাজার ডলার জরিমানা এবং তিন বছর পর্যন্ত তত্ত্বাবধানে মুক্তির (সুপারভাইজড রিলিজ) বিধান রয়েছে।
অভিযোগপত্র অনুযায়ী, অন্তত ২০২১ সাল থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত জাহিদ হাসান বাংলাদেশভিত্তিক একাধিক অনলাইন ব্যবসা পরিচালনা করতেন, যার নাম ছিল ‘টেকট্রিক (TechTreek)’ এবং ‘ইগিফটকার্ডস্টোরবিডি (EGiftCardStoreBD)’। এসব ওয়েবসাইটের মাধ্যমে তিনি ইলেকট্রনিকভাবে ভুয়া সরকারি পরিচয়পত্র ও অন্যান্য নথির ডিজিটাল টেমপ্লেট বিক্রি ও হস্তান্তর করতেন যার মধ্যে ছিল যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্ট, যুক্তরাষ্ট্রের সোশ্যাল সিকিউরিটি কার্ড এবং মন্টানা অঙ্গরাজ্যের ড্রাইভারের লাইসেন্স। এসব ভুয়া পরিচয়পত্র সাধারণত ব্যাংক, অনলাইন পেমেন্ট প্রসেসর, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং ডিজিটাল মুদ্রা প্ল্যাটফর্মে প্রতারণামূলক অনলাইন অ্যাকাউন্ট তৈরিতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
এই অনলাইন মার্কেটপ্লেসগুলোর ক্রেতারা বিটকয়েনের মতো ভার্চুয়াল মুদ্রা ব্যবহার করে কেনাকাটা করতে পারতেন। অভিযোগ অনুযায়ী, একজন ক্রেতা প্রায় ১২ ডলারের সমমূল্যে একটি যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্টের টেমপ্লেট, ৯ দশমিক ৩৭ ডলারে একটি যুক্তরাষ্ট্রের সোশ্যাল সিকিউরিটি কার্ডের টেমপ্লেট এবং ১৪ দশমিক ০৫ ডলারে একটি মন্টানা ড্রাইভারের লাইসেন্সের টেমপ্লেট কিনতে পারতেন। চার বছরের কার্যক্রমে টেকট্রিকের মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে ১,৪০০-এর বেশি গ্রাহকের কাছ থেকে বিক্রির মাধ্যমে জাহিদ হাসান ২৯ লাখ ডলারেরও বেশি অর্থ গ্রহণ করেছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
২০২৫ সালের ১৩ মে মন্টানার বোজম্যান শহরের এক ব্যক্তির কাছ থেকে টেকট্রিক ও ইগিফটকার্ডস্টোরবিডির মাধ্যমে জাহিদ হাসান বিটকয়েন পেমেন্ট গ্রহণ করেন এবং এরপর ওই ব্যক্তির কাছে যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্ট, যুক্তরাষ্ট্রের সোশ্যাল সিকিউরিটি কার্ড ও মন্টানা ড্রাইভারের লাইসেন্সের ভুয়া টেমপ্লেট হস্তান্তর করেন বা করার চেষ্টা করেন।
তদন্তের অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র সরকার জাহিদ হাসান পরিচালিত ভুয়া নথিপত্রের ব্যবসার কাজে ব্যবহৃত তিনটি ডোমেইন জব্দ করেছে। সেগুলো হলো:
www.techtreek.com, www.egiftcardstorebd.com, www.idtempl.com বর্তমানে এসব ওয়েবসাইটে প্রবেশ করলে একটি বার্তা প্রদর্শিত হচ্ছে।
এই মামলাটি পরিচালনা করছেন সহকারী যুক্তরাষ্ট্র অ্যাটর্নি বেঞ্জামিন হারগ্রোভ। এফবিআইয়ের বিলিংস ডিভিশন ও সল্ট লেক সিটি সাইবার টাস্কফোর্স, এফবিআইয়ের আন্তর্জাতিক কার্যক্রম বিভাগ এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের সমন্বয়ে তদন্তটি পরিচালিত হয়েছে।
উল্লেখ্য, অভিযোগপত্রগুলো কেবল অভিযোগমাত্র। যুক্তিসঙ্গত সন্দেহের ঊর্ধ্বে দোষ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত অভিযুক্ত ব্যক্তিকে নির্দোষ বলে গণ্য করা হবে।
উল্লেখ্য, অভিযোগপত্রগুলো কেবল অভিযোগমাত্র। যুক্তিসঙ্গত সন্দেহের ঊর্ধ্বে দোষ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত অভিযুক্ত ব্যক্তিকে নির্দোষ বলে গণ্য করা হবে।
ইমা এলিস, নিউ ইয়র্ক: 







































