
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি:
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সিরাজগঞ্জের ছয়টি সংসদীয় আসনে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রার্থী চূড়ান্তকরণ ও মাঠপর্যায়ের অবস্থান স্পষ্ট হতে শুরু করেছে। এসব আসনের মধ্যে তিনটিতে বিএনপির অভ্যন্তরীণ বিভক্তি প্রকাশ্যে এসেছে। অপরদিকে, জামায়াতে ইসলামী ছয়টি আসনেই একক প্রার্থী দিয়ে সংগঠিতভাবে নির্বাচনি প্রস্তুতি চালাচ্ছে।
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) দুটি আসনে এখনো প্রার্থী চূড়ান্ত করতে পারেনি। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ছয়টি আসনেই প্রার্থী দিয়েছে। পাশাপাশি বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) ও বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) অধিকাংশ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে।
স্থানীয় ভোটার ও তৃণমূল পর্যায়ের রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন অনুযায়ী, সিরাজগঞ্জের সব আসনেই মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা বিএনপি ও জামায়াত মনোনীত প্রার্থীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে পারে। বিশেষ করে সিরাজগঞ্জ-৩, ৪ ও ৫ আসনে বিএনপির ভেতরের বিভক্তি নিরসন না হলে দলটির প্রার্থীরা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারেন বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
সিরাজগঞ্জ-১: রাজনৈতিক শূন্যতায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা
যমুনা নদীবিধৌত কাজিপুর উপজেলা ও সিরাজগঞ্জ সদরের একাংশ নিয়ে গঠিত সিরাজগঞ্জ-১ আসনটি দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের শক্ত অবস্থান হিসেবে পরিচিত। আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ এবং দলীয় নেতৃত্ব অনুপস্থিত থাকায় এই আসনে বিএনপি ও জামায়াত প্রার্থীরা সক্রিয় হয়ে উঠেছেন।
আসনটিতে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৯৪ হাজার ৬৭২ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ১ লাখ ৯৯ হাজার ৫৫৫ জন। অন্যান্য দল থেকেও একাধিক প্রার্থী থাকলেও বিএনপি ও জামায়াতের বাইরে উল্লেখযোগ্য তৎপরতা তুলনামূলকভাবে কম।
সিরাজগঞ্জ-২: গুরুত্বপূর্ণ আসনে বহুমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতা
সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার একাংশ ও কামারখন্দ উপজেলা নিয়ে গঠিত সিরাজগঞ্জ-২ আসনটি জেলার গুরুত্বপূর্ণ আসন হিসেবে বিবেচিত। এখানে মোট ভোটার ৪ লাখ ৪ হাজার ৫০৭ জন, যার মধ্যে নারী ভোটার ২ লাখ ১ হাজার ৭৮৪ জন।
এই আসনে বিএনপি ও জামায়াত ছাড়াও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, সিপিবি, বাসদসহ কয়েকটি দল প্রার্থী দিয়েছে। রাজনৈতিক বাস্তবতায় ভোটারদের সমর্থন পেতে সব দলই মাঠপর্যায়ে প্রচারণা জোরদার করেছে।
সিরাজগঞ্জ-৩: মনোনয়ন ঘিরে বিএনপিতে অস্থিরতা
রায়গঞ্জ ও তাড়াশ উপজেলা নিয়ে গঠিত সিরাজগঞ্জ-৩ আসনে বিএনপির মনোনয়ন ঘোষণার পর দলের একাধিক নেতা প্রকাশ্যে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন এমন কয়েকজন নেতা পৃথকভাবে কর্মসূচি পালন ও মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করায় দলে বিভক্তির চিত্র স্পষ্ট হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে জামায়াতসহ অন্যান্য দলের প্রার্থীরা নিজ নিজ সাংগঠনিক শক্তি কাজে লাগিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন। এনসিপির প্রার্থী এখনো দেশে না ফেরায় দলটির কার্যক্রম সীমিত রয়েছে।
সিরাজগঞ্জ-৪: বিভক্ত অবস্থায় বিএনপি
উল্লাপাড়া উপজেলা নিয়ে গঠিত সিরাজগঞ্জ-৪ আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে দলের একটি অংশ প্রকাশ্যে অবস্থান নিয়েছে। মনোনয়নবঞ্চিত নেতারা পৃথক কর্মসূচি পালন ও মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করায় দলীয় ঐক্য প্রশ্নের মুখে পড়েছে।
এই আসনে জামায়াতের প্রার্থী পূর্ব অভিজ্ঞতা ও সাংগঠনিক তৎপরতার মাধ্যমে প্রচারণা চালাচ্ছেন। পাশাপাশি অন্যান্য দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর উপস্থিতিও রয়েছে।
সিরাজগঞ্জ-৫: দলবদলে জটিল সমীকরণ
বেলকুচি ও চৌহালী উপজেলা নিয়ে গঠিত সিরাজগঞ্জ-৫ আসনে বিএনপির মনোনয়ন ঘোষণার পর সাবেক একাধিক নেতা দল ত্যাগ করে এনসিপিতে যোগ দেন। এতে ভোটের সমীকরণ পরিবর্তনের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
জামায়াত এ আসনে শক্ত সাংগঠনিক অবস্থান নিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছে। এছাড়া ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ আরও কয়েকটি দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর অংশগ্রহণ রয়েছে।
সিরাজগঞ্জ-৬: তুলনামূলকভাবে ঐক্যবদ্ধ বিএনপি
দুগ্ধভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত শাহজাদপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত সিরাজগঞ্জ-৬ আসনে বিএনপির মনোনয়ন ঘোষণার পর দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে তুলনামূলকভাবে ঐক্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এখানে বিএনপি প্রার্থীর পাশাপাশি জামায়াত, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাসদসহ বিভিন্ন দলের প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
সামগ্রিকভাবে সিরাজগঞ্জের ছয়টি আসনেই বহুদলীয় অংশগ্রহণ থাকলেও বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যকার প্রতিযোগিতাই নির্বাচনি মাঠের প্রধান চিত্র হয়ে উঠতে পারে বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের ধারণা।
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: 






































