রবিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পায়ে শিকল বাঁধা অবস্থায় এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে আলম

পায়ে শিকল বাঁধা অবস্থায় এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে আলম মিয়া নামের এক এসএসসি পরীক্ষার্থী।

কামরুল হাসান কাজল, ভূরুঙ্গামারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি
কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারীতে পায়ে শিকল বাঁধা অবস্থায় এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে আলম মিয়া (১৬) নামের এক এসএসসি পরীক্ষার্থী। পরীক্ষা শুরুর এক সপ্তাহ আগে এক ঘটনায় সে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলায় এ ব্যবস্থা নিয়েছে তার পরিবার।
উপজেলার ভূরুঙ্গামারী নেহাল উদ্দিন পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে আলম মিয়া। সে তিলাই উচ্চ বিদ্যালয় থেকে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। উপজেলার ৩নং তিলাই ইউনিয়নের পশ্চিমছাট গোপালপুর গ্রামের আব্দুল আলিমের ছেলে।
জানা যায়, কিছু দিন আগেও সে ছিল একজন সুস্থ স্বাভাবিক কিশোর। নিয়মিত স্কুলে যাওয়ার পাশাপাশি বাবার আটোরিকশা চালিয়ে বাবাকে সহযোগিতা করতো আলম।
এসএসসি পরিক্ষার্থী আলম মিয়ার দাদু জসীম উদ্দিন জানান, এসএসসি পরীক্ষা শুরুর এক সপ্তাহ আগে তার বাবা অটোচালক আব্দুল আলিম আটো চালিয়ে দুপুরে খাবারের জন্য বাড়িতে আসেন। পরে নাতি আলম মিয়া ধামের হাট বাজার থেকে যাত্রী নিয়ে ভূরুঙ্গামারী বাসস্ট্যান্ডে যায়।
সেখানে যাত্রী নামিয়ে অন্য যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করার সময় অপরিচিত ৪ ব্যক্তি এসে সোনাহাট স্থলবন্দর যাবার জন্য ৪শ টাকায় ভাড়া চুক্তি করে। পড়ে এই ৪ ব্যক্তি কৌশলে আলম মিয়াকে একটি ছমুচা খেতে দেয়। ছমুচা খাবার একটু পরেই সে স্বাভাবিক আচরণ করতে থাকে।
এ অবস্থা দেখে অন্যান্য অটো চালকরা সাহায্যের জন্য এগিয়ে এলে চক্রটি কৌশলে পালিয়ে যায়। পরে একজন অটো চালক অটোসহ আলমকে বাড়িতে পৌঁছে দেয়। ওই অটোচালকই তাকে এ ঘটনা জানায়।
তবে ধারণা করা হচ্ছে, অটো চোর চক্রের সদস্যরা অটোটি চুরি করার উদ্দেশ্যে ছমুচার মধ্যে অজ্ঞান করার কোনো ক্যামিকেল মিশিয়ে আলমকে খাওয়ায়। কিন্তু ক্যামিকেলের পরিমাণ অতিরিক্ত হওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঘটনার পর থেকে আলম মিয়ার মস্তিষ্কে বিকৃতি দেখা দেয়। মাঝে মাঝে স্মৃতি শক্তি ফিরে পেলেও এবং স্বাভাবিক আচরণ করলেও অধিকাংশ সময় সে পাগলামী করছে।
বাড়ির আসবাবপত্র ভাঙচুর করে এবং বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলে আর বাড়ি ফিরে আসে না। এ কারণেই তার পরিবার তার পায়ে শিকল বেঁধে রেখেছে।
আলম মিয়ার বাবা আব্দুল আলিম বলেন, দিনের বেলা এক পায়ে শিকল বেঁধে রাখা হয়। রাতে হাতে ও পায়ে শিকল বেঁধে বিছানায় শুইয়ে রাখি। এর মধ্যে একবার রংপুরে নিয়েছি। সেই ডাক্তারের পরামর্শে ওষুধ খাচ্ছে। কিন্তু তারপরও পাগলামী কমছে না।
তিনি আরও বলেন, টাকার জন্য উন্নত চিকিৎসা দিতে পারছি না। আমাকে আর ওর মাকে আলম কোনভাবেই সহ্য করতে পারছে না। তাই সবসময় দাদুকেই তার সঙ্গ দিতে হয়।
ওই পরীক্ষা কেন্দ্রের সচিব হারুন উর রশীদ বলেন, ছেলেটি অসুস্থ হবার কারণে তাকে একটি আলাদা কক্ষে পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। খাতায় লিখলেও মাঝে মাঝে চিৎকার করে, অশান্ত হয়ে যায় এবং লিখতে চায় না।
এ বিষয়ে ভুরুঙ্গামারী উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা.এম সায়েম বলেন, ছেলেটির সঙ্গে কথা বলেছি। আমার মনে হয় সে মানসিক সমস্যায় ভুগছে। দীর্ঘ মেয়াদি চিকিৎসায় সে ভালো হতে পারে।
জনপ্রিয়

সিরাজগঞ্জে বিএনপির তিন আসনে বিভক্তি, একক প্রার্থী নিয়ে মাঠে জামায়াত

পায়ে শিকল বাঁধা অবস্থায় এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে আলম

প্রকাশের সময় : ০২:৫৩:৪২ অপরাহ্ন, বুধবার, ৬ মার্চ ২০২৪
কামরুল হাসান কাজল, ভূরুঙ্গামারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি
কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারীতে পায়ে শিকল বাঁধা অবস্থায় এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে আলম মিয়া (১৬) নামের এক এসএসসি পরীক্ষার্থী। পরীক্ষা শুরুর এক সপ্তাহ আগে এক ঘটনায় সে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলায় এ ব্যবস্থা নিয়েছে তার পরিবার।
উপজেলার ভূরুঙ্গামারী নেহাল উদ্দিন পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে আলম মিয়া। সে তিলাই উচ্চ বিদ্যালয় থেকে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। উপজেলার ৩নং তিলাই ইউনিয়নের পশ্চিমছাট গোপালপুর গ্রামের আব্দুল আলিমের ছেলে।
জানা যায়, কিছু দিন আগেও সে ছিল একজন সুস্থ স্বাভাবিক কিশোর। নিয়মিত স্কুলে যাওয়ার পাশাপাশি বাবার আটোরিকশা চালিয়ে বাবাকে সহযোগিতা করতো আলম।
এসএসসি পরিক্ষার্থী আলম মিয়ার দাদু জসীম উদ্দিন জানান, এসএসসি পরীক্ষা শুরুর এক সপ্তাহ আগে তার বাবা অটোচালক আব্দুল আলিম আটো চালিয়ে দুপুরে খাবারের জন্য বাড়িতে আসেন। পরে নাতি আলম মিয়া ধামের হাট বাজার থেকে যাত্রী নিয়ে ভূরুঙ্গামারী বাসস্ট্যান্ডে যায়।
সেখানে যাত্রী নামিয়ে অন্য যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করার সময় অপরিচিত ৪ ব্যক্তি এসে সোনাহাট স্থলবন্দর যাবার জন্য ৪শ টাকায় ভাড়া চুক্তি করে। পড়ে এই ৪ ব্যক্তি কৌশলে আলম মিয়াকে একটি ছমুচা খেতে দেয়। ছমুচা খাবার একটু পরেই সে স্বাভাবিক আচরণ করতে থাকে।
এ অবস্থা দেখে অন্যান্য অটো চালকরা সাহায্যের জন্য এগিয়ে এলে চক্রটি কৌশলে পালিয়ে যায়। পরে একজন অটো চালক অটোসহ আলমকে বাড়িতে পৌঁছে দেয়। ওই অটোচালকই তাকে এ ঘটনা জানায়।
তবে ধারণা করা হচ্ছে, অটো চোর চক্রের সদস্যরা অটোটি চুরি করার উদ্দেশ্যে ছমুচার মধ্যে অজ্ঞান করার কোনো ক্যামিকেল মিশিয়ে আলমকে খাওয়ায়। কিন্তু ক্যামিকেলের পরিমাণ অতিরিক্ত হওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঘটনার পর থেকে আলম মিয়ার মস্তিষ্কে বিকৃতি দেখা দেয়। মাঝে মাঝে স্মৃতি শক্তি ফিরে পেলেও এবং স্বাভাবিক আচরণ করলেও অধিকাংশ সময় সে পাগলামী করছে।
বাড়ির আসবাবপত্র ভাঙচুর করে এবং বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলে আর বাড়ি ফিরে আসে না। এ কারণেই তার পরিবার তার পায়ে শিকল বেঁধে রেখেছে।
আলম মিয়ার বাবা আব্দুল আলিম বলেন, দিনের বেলা এক পায়ে শিকল বেঁধে রাখা হয়। রাতে হাতে ও পায়ে শিকল বেঁধে বিছানায় শুইয়ে রাখি। এর মধ্যে একবার রংপুরে নিয়েছি। সেই ডাক্তারের পরামর্শে ওষুধ খাচ্ছে। কিন্তু তারপরও পাগলামী কমছে না।
তিনি আরও বলেন, টাকার জন্য উন্নত চিকিৎসা দিতে পারছি না। আমাকে আর ওর মাকে আলম কোনভাবেই সহ্য করতে পারছে না। তাই সবসময় দাদুকেই তার সঙ্গ দিতে হয়।
ওই পরীক্ষা কেন্দ্রের সচিব হারুন উর রশীদ বলেন, ছেলেটি অসুস্থ হবার কারণে তাকে একটি আলাদা কক্ষে পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। খাতায় লিখলেও মাঝে মাঝে চিৎকার করে, অশান্ত হয়ে যায় এবং লিখতে চায় না।
এ বিষয়ে ভুরুঙ্গামারী উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা.এম সায়েম বলেন, ছেলেটির সঙ্গে কথা বলেছি। আমার মনে হয় সে মানসিক সমস্যায় ভুগছে। দীর্ঘ মেয়াদি চিকিৎসায় সে ভালো হতে পারে।