সোমবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ৮ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ছাত্রআন্দোলন দমাতে ১০হাজার লোক মাঠে নামান বিটিআরসির আমজাদ

  • ঢাকা ব্যুরো।।
  • প্রকাশের সময় : ১০:৩৭:০২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৫ অগাস্ট ২০২৪
  • ১৪১

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমাতে সারাদেশে ১০ হাজার লোক মাঠে নামানোর অভিযোগ উঠেছে বিটিআরসির বরখাস্ত উপপরিচালক ও পদত্যাগ করা চেয়ারম্যানের একান্ত সচিব মো. আমজাদ হোসেনের বিরুদ্ধে। এই কাজে তাকে মদদ দেন ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন। এই দশ হাজার লোক বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি)

বিভিন্ন লাইসেন্সধারী অপারেটর কোম্পানির কর্মী বলে জানা গেছে। মাঠে না নামলে অপারেটরদের লাইসেন্স বাতিলের ভয় দেখাতেন আমজাদ। এ ছাড়াও আধিপত্য বিস্তার, রাজনৈতিক বিবেচনায় বিভিন্ন লাইসেন্স প্রদান, বিটিআরসির অর্থ লোপাট এবং নথি গায়েবের অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। সম্প্রতি বিটিআরসির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী সভায় আমজাদ হোসেনের বিরুদ্ধে উত্থাপিত এসব অভিযোগ আমলে নেওয়া হয়। অভিযোগ তদন্তে ৫ সদস্যের কমিটিও করেছে সংস্থাটি।

জানা যায়, আমজাদ হোসেন ছিলেন বিটিআরসির প্রশাসন বিভাগের উপপরিচালক। আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সাধারণ কর্মকর্তা কর্মচারীদের হয়রানি করে আসছিলেন তিনি। তার এমন প্রভাবের কারণে বিটিআরসির সর্বশেষ চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. মহিউদ্দিন আহমেদ তার একান্ত সচিব হিসেবে আমজাদ হোসেনকে নিয়োগ দেন। এরপর আমজাদ হোসেন আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। কমিশনে একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেন। বিটিআরসির কর্মকর্তাদের অভিযোগ, মূলত টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করতেই চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আগের কর্মকর্তাকে পরিবর্তন করে আমজাদ হোসেনকে দায়িত্ব দেন।

অভিযোগ রয়েছে, বিটিআরসি চেয়ারম্যানের পৃষ্ঠপোষকতায় সংস্থায় কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ ও অন্যান্য কাজে অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের সরিয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদে নিজের অনুসারীদের পদায়ন করেন আমজাদ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিটিআরসির এক কর্মকর্তা আমাদের সময়কে বলেন, আমজাদ হোসেন ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। দলীয় পরিচয়ে বিটিআরসিতে নিয়োগ পেয়েই ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি করেন।

আমজাদ হোসেনের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগে বলা হয়, আইএসপিএবির পরিচালক এবং ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেনের মদদে দলীয় বিবেচনায় সারাদেশের সাবেক ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগের নেতাদের প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে পাঁচ শতাধিক আইএসপি লাইসেন্স প্রদান করেন আমজাদ হোসেন। এসব প্রতিষ্ঠানের প্রায় দশ হাজার কর্মীকে জোর করে ছাত্রদের বিপক্ষে মাঠে নামান আমজাদ হোসেন। আন্দোলন ঠেকাতে আইএসপি লাইসেন্সধারীদের মাঠে না নামলে লাইসেন্স বাতিলের ভয় দেখান তিনি।

অভিযোগ রয়েছে, সাবেক টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের সময় আমজাদ হোসেনের নামে সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিলের সভার নামে আপ্যায়ন খাতে ভাউচার ছাড়াই ৫৩ লাখ টাকা তছরুপের অভিযোগ ওঠে। পরে ওই সময় সংশ্লিষ্ট নথি গায়েব করে দেন আমজাদ।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ১১ আগস্ট সন্ধ্যায় বিটিআরসির শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর দাবির মুখে বরখাস্ত করা হয় আমজাদ হোসেন এবং ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশন্স (ইঅ্যান্ডও) বিভাগের উপপরিচালক মাহদী আহমেদকে। এরপর ১৩ আগস্টের কমিশন সভায় বিটিআরসির ৫ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বিটিআরসি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিটিআরসি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. আমিনুল হক আমাদের সময়কে বলেন, অভিযোগ তদন্তে ৫ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি করা হয়েছে। তারা ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করবেন। প্রতিবেদন সাপেক্ষে এবং বিটিআরসির গাইডলাইন অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

জনপ্রিয়

এই শীতে গাজরের উপকারিতা

ছাত্রআন্দোলন দমাতে ১০হাজার লোক মাঠে নামান বিটিআরসির আমজাদ

প্রকাশের সময় : ১০:৩৭:০২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৫ অগাস্ট ২০২৪

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমাতে সারাদেশে ১০ হাজার লোক মাঠে নামানোর অভিযোগ উঠেছে বিটিআরসির বরখাস্ত উপপরিচালক ও পদত্যাগ করা চেয়ারম্যানের একান্ত সচিব মো. আমজাদ হোসেনের বিরুদ্ধে। এই কাজে তাকে মদদ দেন ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন। এই দশ হাজার লোক বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি)

বিভিন্ন লাইসেন্সধারী অপারেটর কোম্পানির কর্মী বলে জানা গেছে। মাঠে না নামলে অপারেটরদের লাইসেন্স বাতিলের ভয় দেখাতেন আমজাদ। এ ছাড়াও আধিপত্য বিস্তার, রাজনৈতিক বিবেচনায় বিভিন্ন লাইসেন্স প্রদান, বিটিআরসির অর্থ লোপাট এবং নথি গায়েবের অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। সম্প্রতি বিটিআরসির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী সভায় আমজাদ হোসেনের বিরুদ্ধে উত্থাপিত এসব অভিযোগ আমলে নেওয়া হয়। অভিযোগ তদন্তে ৫ সদস্যের কমিটিও করেছে সংস্থাটি।

জানা যায়, আমজাদ হোসেন ছিলেন বিটিআরসির প্রশাসন বিভাগের উপপরিচালক। আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সাধারণ কর্মকর্তা কর্মচারীদের হয়রানি করে আসছিলেন তিনি। তার এমন প্রভাবের কারণে বিটিআরসির সর্বশেষ চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. মহিউদ্দিন আহমেদ তার একান্ত সচিব হিসেবে আমজাদ হোসেনকে নিয়োগ দেন। এরপর আমজাদ হোসেন আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। কমিশনে একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেন। বিটিআরসির কর্মকর্তাদের অভিযোগ, মূলত টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করতেই চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আগের কর্মকর্তাকে পরিবর্তন করে আমজাদ হোসেনকে দায়িত্ব দেন।

অভিযোগ রয়েছে, বিটিআরসি চেয়ারম্যানের পৃষ্ঠপোষকতায় সংস্থায় কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ ও অন্যান্য কাজে অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের সরিয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদে নিজের অনুসারীদের পদায়ন করেন আমজাদ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিটিআরসির এক কর্মকর্তা আমাদের সময়কে বলেন, আমজাদ হোসেন ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। দলীয় পরিচয়ে বিটিআরসিতে নিয়োগ পেয়েই ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি করেন।

আমজাদ হোসেনের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগে বলা হয়, আইএসপিএবির পরিচালক এবং ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেনের মদদে দলীয় বিবেচনায় সারাদেশের সাবেক ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগের নেতাদের প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে পাঁচ শতাধিক আইএসপি লাইসেন্স প্রদান করেন আমজাদ হোসেন। এসব প্রতিষ্ঠানের প্রায় দশ হাজার কর্মীকে জোর করে ছাত্রদের বিপক্ষে মাঠে নামান আমজাদ হোসেন। আন্দোলন ঠেকাতে আইএসপি লাইসেন্সধারীদের মাঠে না নামলে লাইসেন্স বাতিলের ভয় দেখান তিনি।

অভিযোগ রয়েছে, সাবেক টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের সময় আমজাদ হোসেনের নামে সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিলের সভার নামে আপ্যায়ন খাতে ভাউচার ছাড়াই ৫৩ লাখ টাকা তছরুপের অভিযোগ ওঠে। পরে ওই সময় সংশ্লিষ্ট নথি গায়েব করে দেন আমজাদ।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ১১ আগস্ট সন্ধ্যায় বিটিআরসির শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর দাবির মুখে বরখাস্ত করা হয় আমজাদ হোসেন এবং ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশন্স (ইঅ্যান্ডও) বিভাগের উপপরিচালক মাহদী আহমেদকে। এরপর ১৩ আগস্টের কমিশন সভায় বিটিআরসির ৫ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বিটিআরসি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিটিআরসি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. আমিনুল হক আমাদের সময়কে বলেন, অভিযোগ তদন্তে ৫ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি করা হয়েছে। তারা ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করবেন। প্রতিবেদন সাপেক্ষে এবং বিটিআরসির গাইডলাইন অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।