রবিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শিশুদের মোবাইল আসক্তি কমাবেন যেভাবে

ছবি: সংগৃহীত

একটু চোখ বন্ধ করে ভাবুন- আপনার শৈশবের সবচেয়ে আনন্দঘন মুহূর্তগুলো কী ছিল? হয়তো মনে পড়ছে ছুটির বিকেলে মাঠজুড়ে দৌড়াদৌড়ি, কিংবা ভোরবেলার শিশিরভেজা ঘাসে শিউলি কুড়ানোর ছবি। এই সব স্মৃতি আজকের শহুরে শিশুদের জীবনে দুর্লভ। কারণ, এখনকার শিশুদের অনেকটা সময়ই কাটে মোবাইল, ট্যাব কিংবা টিভির পর্দায়। তবে বকাঝকা করে মোবাইলের আসক্তি কমানো যায় না। বরং দরকার বিকল্প আনন্দের ব্যবস্থা—যে আনন্দে সে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিতে চাইবে। আপনার শিশুর আগ্রহ বুঝে এমন কিছু কাজের সুযোগ করে দিন, যাতে সে আনন্দ পায়। মনে রাখবেন, কখনো কখনো কিছু এলোমেলো হয়ে যেতেই পারে, কিন্তু সেটাই তো সন্তান লালনের প্রকৃত সৌন্দর্য। আর হ্যাঁ, আপনি নিজেও শিশুদের সামনে অপ্রয়োজনে মোবাইল ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন-কারণ তারা দেখেই শেখে।

রং দিয়ে খেলার মজা: রঙের দুনিয়ায় শিশুকে নিমন্ত্রণ জানান। জলরং, তেলরং বা আঙুলের রং-যেটাই হোক, শিশুকে মুক্তভাবে আঁকতে দিন। ইজেলে ছবি আঁকা, দেওয়ালে ক্রিয়েটিভ আঁকিবুঁকি বা মেঝেতে আলপনা আঁকা-সবকিছুই হতে পারে তার সৃজনশীলতার খেলা। রং মিশিয়ে নতুন রঙ তৈরি করাও মজার অভিজ্ঞতা হতে পারে।

কাগজ আর কার্টন দিয়ে সৃষ্টিশীল কাজ: পুরোনো কাগজ বা কার্টন দিয়ে খেলাধুলাও হতে পারে অসাধারণ। শিশুকে কেটে কিংবা ভাঁজ করে ফুল, গাছ, পাখি, চাঁদ-তারা বানাতে দিন। রঙিন কাগজ এনে দিন, সে যেন নিজের মতো করে সৃজন করতে পারে। তার বানানো শিল্পকর্ম ঘরের সাজে ব্যবহার করলেও সে গর্ব অনুভব করবে।

মাটির সঙ্গে মিশে যাওয়া: নার্সারি থেকে আনা মাটি কিংবা প্লে-ডো দিয়ে বিভিন্ন জিনিস তৈরি করতে দিন তাকে। চাইলে বানানো জিনিসে রঙ করতে পারেন একসাথে। এই কাজগুলো শুধু আনন্দই নয়, হাতের নিপুণতাও বাড়াবে।

গল্প আর অভিনয়ের খেলাঘর: শিশুকে গল্প বানাতে উৎসাহ দিন। সে গল্প বলতে পারে, অভিনয় করতে পারে, কিংবা প্রিয় বইয়ের চরিত্রগুলো জীবন্ত করে তুলতে পারে অভিনয়ের মাধ্যমে। চাইলে বিজ্ঞানের ছোট ছোট পরীক্ষা-নিরীক্ষাও চালাতে পারেন একসঙ্গে, যেন শেখার মধ্যে থাকে চমক আর কৌতূহল।

প্রকৃতির সঙ্গে বন্ধুত্ব: শিশুকে নিয়মিত নিয়ে যান পার্ক বা খোলা জায়গায়। পাতা, ফুল কুড়িয়ে তার নিজস্ব কালেকশন তৈরি করতে দিন। পাতার ছাপ নিয়ে মজার আর্টও করতে পারে। জায়গা থাকলে তাকে সঙ্গে নিয়ে কিছু গাছ লাগান। কোনো পোষা প্রাণীর সঙ্গে বন্ধুত্ব করিয়ে দিন-এতে তার যত্নশীলতা ও সহানুভূতির গুণ বিকশিত হবে।

সবশেষে মনে রাখুন, শিশুর চোখের সামনে যা ঘটে, সেটাই তার শেখার সবচেয়ে বড় উৎস। তাই আনন্দময় ও অর্থবহ বিকল্প বিনোদনের ব্যবস্থা করে মোবাইলের জায়গা সহজেই দখল করে নেওয়া যায়-শুধু দরকার ধৈর্য, ভালোবাসা আর কিছু সময়।

জনপ্রিয়

শিল্পা শেঠির আপত্তিকর ছবি-ভিডিও ভাইরাল, নিলেন বড় পদক্ষেপ

শিশুদের মোবাইল আসক্তি কমাবেন যেভাবে

প্রকাশের সময় : ১২:৩৫:২৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫

একটু চোখ বন্ধ করে ভাবুন- আপনার শৈশবের সবচেয়ে আনন্দঘন মুহূর্তগুলো কী ছিল? হয়তো মনে পড়ছে ছুটির বিকেলে মাঠজুড়ে দৌড়াদৌড়ি, কিংবা ভোরবেলার শিশিরভেজা ঘাসে শিউলি কুড়ানোর ছবি। এই সব স্মৃতি আজকের শহুরে শিশুদের জীবনে দুর্লভ। কারণ, এখনকার শিশুদের অনেকটা সময়ই কাটে মোবাইল, ট্যাব কিংবা টিভির পর্দায়। তবে বকাঝকা করে মোবাইলের আসক্তি কমানো যায় না। বরং দরকার বিকল্প আনন্দের ব্যবস্থা—যে আনন্দে সে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিতে চাইবে। আপনার শিশুর আগ্রহ বুঝে এমন কিছু কাজের সুযোগ করে দিন, যাতে সে আনন্দ পায়। মনে রাখবেন, কখনো কখনো কিছু এলোমেলো হয়ে যেতেই পারে, কিন্তু সেটাই তো সন্তান লালনের প্রকৃত সৌন্দর্য। আর হ্যাঁ, আপনি নিজেও শিশুদের সামনে অপ্রয়োজনে মোবাইল ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন-কারণ তারা দেখেই শেখে।

রং দিয়ে খেলার মজা: রঙের দুনিয়ায় শিশুকে নিমন্ত্রণ জানান। জলরং, তেলরং বা আঙুলের রং-যেটাই হোক, শিশুকে মুক্তভাবে আঁকতে দিন। ইজেলে ছবি আঁকা, দেওয়ালে ক্রিয়েটিভ আঁকিবুঁকি বা মেঝেতে আলপনা আঁকা-সবকিছুই হতে পারে তার সৃজনশীলতার খেলা। রং মিশিয়ে নতুন রঙ তৈরি করাও মজার অভিজ্ঞতা হতে পারে।

কাগজ আর কার্টন দিয়ে সৃষ্টিশীল কাজ: পুরোনো কাগজ বা কার্টন দিয়ে খেলাধুলাও হতে পারে অসাধারণ। শিশুকে কেটে কিংবা ভাঁজ করে ফুল, গাছ, পাখি, চাঁদ-তারা বানাতে দিন। রঙিন কাগজ এনে দিন, সে যেন নিজের মতো করে সৃজন করতে পারে। তার বানানো শিল্পকর্ম ঘরের সাজে ব্যবহার করলেও সে গর্ব অনুভব করবে।

মাটির সঙ্গে মিশে যাওয়া: নার্সারি থেকে আনা মাটি কিংবা প্লে-ডো দিয়ে বিভিন্ন জিনিস তৈরি করতে দিন তাকে। চাইলে বানানো জিনিসে রঙ করতে পারেন একসাথে। এই কাজগুলো শুধু আনন্দই নয়, হাতের নিপুণতাও বাড়াবে।

গল্প আর অভিনয়ের খেলাঘর: শিশুকে গল্প বানাতে উৎসাহ দিন। সে গল্প বলতে পারে, অভিনয় করতে পারে, কিংবা প্রিয় বইয়ের চরিত্রগুলো জীবন্ত করে তুলতে পারে অভিনয়ের মাধ্যমে। চাইলে বিজ্ঞানের ছোট ছোট পরীক্ষা-নিরীক্ষাও চালাতে পারেন একসঙ্গে, যেন শেখার মধ্যে থাকে চমক আর কৌতূহল।

প্রকৃতির সঙ্গে বন্ধুত্ব: শিশুকে নিয়মিত নিয়ে যান পার্ক বা খোলা জায়গায়। পাতা, ফুল কুড়িয়ে তার নিজস্ব কালেকশন তৈরি করতে দিন। পাতার ছাপ নিয়ে মজার আর্টও করতে পারে। জায়গা থাকলে তাকে সঙ্গে নিয়ে কিছু গাছ লাগান। কোনো পোষা প্রাণীর সঙ্গে বন্ধুত্ব করিয়ে দিন-এতে তার যত্নশীলতা ও সহানুভূতির গুণ বিকশিত হবে।

সবশেষে মনে রাখুন, শিশুর চোখের সামনে যা ঘটে, সেটাই তার শেখার সবচেয়ে বড় উৎস। তাই আনন্দময় ও অর্থবহ বিকল্প বিনোদনের ব্যবস্থা করে মোবাইলের জায়গা সহজেই দখল করে নেওয়া যায়-শুধু দরকার ধৈর্য, ভালোবাসা আর কিছু সময়।