মঙ্গলবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কদম ফুলে শিশুর চোখে-মুখে আনন্দের ঝিলিক

মতলব (চাঁদপুর) প্রতিনিধিঃ

বর্ষা এলেই কদম ফুলের সৌন্দর্য আর শিশুদের দুরন্তপনা যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। কদম ফুলের মন মাতানো সুবাস আর শিশুদের উচ্ছ্বলতা গ্রামের দৃশ্যকে আরও মনোরম করে তোলে। কচি হাতে কদম ফুল নিয়ে ছোটাছুটি, খেলাধুলা- বর্ষাকালের এক অপরূপ চিত্র এ যেন আবহমান বাংলার বর্ষা বরণের প্রাকৃতিক আয়োজন।  তেমনি এক দৃম্য চেখে পড়লো চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ছেংগারচর পৌর এলাকার আদুরভিটি গ্রামে। ছোট্ট একটি কদম গাছ থেকে কদম ফুল পেরে খুশিতে বাড়ি ফিরছে দুই শিশু স্বাধীন বাড়ৈ ও সিদ্ধার্থ বাড়ৈ। একসঙ্গে এত কদম পেয়ে এসময় তাদের চোখে মুখে আনন্দের ঝিলিক ফুটে উঠে। কদমের ঘ্রাণ আর আষাঢ়ে বর্ষায় শিশু দু’জনের মাঝে উচ্ছ্বাস দেখা যায়। তাদের এ বাধভাঙ্গা উচ্ছ্বাস দেখে ছুটে আসের আরো কয়েকজন শিশু। মেতে উঠেন কদম ফুলের উৎসবে।

শুক্রবার (২৭ জুন-২০২৫) সকালে উপজেলার ছেংগারচর পৌর এলাকার আদুরভিটি গ্রামে থেকে ছবি তোলার সময় সে চিত্র ফুটে উঠে।

বৃষ্টির দিনে কদম ফুল ফোটে, যা শিশুদের কাছে খুব প্রিয়। কদম ফুল হাতে নিয়ে তারা ছোটাছুটি করে, লুকোচুরি খেলে এবং প্রকৃৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করে। কচি কচি হাতে কদম ফুল নিয়ে তাদের এই খেলাধুলা গ্রামের দৃশ্যকে আরও প্রাণবন্ত করে তোলে। কদম ফুলের সুবাস আর শিশুদের হাসিতে ভরে ওঠে চারপাশ।

শুরু হয়েছে বর্ষাকাল। বর্ষার প্রতীক হয়ে যেন চাঁদপুরের মতলব উত্তরের প্রকৃতিতে আগমন ঘটে কদম ফুলের। প্রকৃৃতিও সাজে কদম ফুলের সৌন্দর্যে। উপজেলার চারদিকে কদম ফুলের সমারোহ। সড়কের ধারে কদমগাছে পাতার সঙ্গে ফুটে আছে হলদে রঙের কদম ফুল। সেই সঙ্গে শিশু, কিশোর ও কিশোরীরা মেতে ওঠে আনন্দে। বাসাবাড়ির কাছে সহজে মেলে এই কদম ফুল।

বর্ষার আগমনী বার্তা নিয়ে আসে কদম ফুল, যা শিশুদের কাছে আনন্দের প্র্রতীক। কদম ফুল যেন তাদের খেলার একটি অংশ, যা তাদের শৈশবের স্মৃতিতে চিরকাল রয়ে যায়। কচি কচি পায়ে কদম ফুল কুড়িয়ে বেড়ানো, হাসি-আনন্দে মেতে ওঠা- এ যেন প্রকৃৃতির সাথে শিশুদের এক মিলনমেলা।

ষড়ঋতুর বাংলাদেশে বাঙালির প্রিয় ঋতু যেন বর্ষা। আর বর্ষার আগমন ঘটে যেন কদম ফুল ফোটার মধ্যে দিয়ে। তাই কদম ফুলকে বলা হয় বর্ষার দূত।

প্রকৃতিতে এখন চলছে বর্ষাকাল। আর বর্ষা নামলেই চাঁদপুরের মতলবের প্রকৃতিতে নতুন প্রাণ ফিরে আসে। সেই প্রাণের অন্যতম বাহক হলো কদম ফুল। এ যেন আবহমান বাংলার বর্ষা বরণের প্রাকৃতিক আয়োজন।
ষড়ঋতুর মধ্যে বর্ষাকাল যেন সেরা ঋতু আবহমান বাংলার। আর এই বর্ষাকে স্বাগত জানাতে বর্ষার আগমনী বার্তা নিয়ে মতলব উত্তরের প্রকৃৃতিতে ফুটেছে মন ভোলানো সৌন্দর্য নিয়ে বর্ষাদূত কদম ফুল। চিরচেনা মিষ্টি একটা গন্ধে মেতে উঠেছে গ্রামীণ সবুজ শ্যামল প্রকৃতি। কদম ফুলের সতেজ নির্মল সৌন্দর্য আর মোহনীয় ঘ্রাণ প্রকৃৃতিপ্রেমীসহ সকলের মনে সৃষ্টি করেছে ভিন্ন এক সম্মোহনী অনুভূতি। ফোটা এ ফুলের নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগ করেছেন সবাই। এ ফুলের নয়নাভিরাম সৌন্দর্যে বিমোহিত হচ্ছেন ফুলপ্রেমীসহ সব বয়সী মানুষ। বিশেষ করে উঠতি বয়সী কিশোরী ও তরুণীদের খোপায় শোভা পাচ্ছে এ ফুল।
সারা বছর এর দেখা না মিললেও বর্ষায় যেন অনিবার্য এই কদম ফুল। বহু বিখ্যাত কবিতা ও গান রয়েছে বর্ষাকাল আর কদম ফুল নিয়ে। প্রিয় ঋতু বর্ষার আগমনে তাই কদম ফুল যেন অনিবার্য অনুষঙ্গ।

চাঁদপুরের মতলব উত্তরের আদুরভিটি,ঠাকুরচর,পালালোকদী, ছেংগারচর বাজার, ঘনিয়ারপাড়,ঝিনাইয়া,কেশাইরকান্দি  সহ বিভিন্ন এলাকায় কদম ফুল ফুটতে দেখা গেছে। মতলব উত্তরের পথে-প্রান্তরে কদম গাছগুলো ভরে উঠতে শুরু করেছে ফুলে ফুলে।

বাংলা কবিতা ও গানেও সমভাবে সমাদৃত হয়েছে বর্ষাকাল ও কদম। বর্ষার সঙ্গে কদম ফুলের যেন এক নিবিড় সম্পর্ক প্রাকৃতিকভাবেই আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে। তাইতো পল্লীকবি জসিম উদ্দিন লিখেছিলেন, ‘প্রাণ সখিরে…ঐ শোন কদম্বতলে বংশী বাজায় কে।’ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছিলেন, বাদল-দিনের প্রথম কদম ফুল করেছ দান, আমি দিতে এসেছি শ্রাবণের গান।

জানা গেছে, মূলত বর্ষা ঋতুতেই প্রকৃতি রাঙিয়ে ফোটে বর্ষাদূত কদম ফুল। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের ছোঁয়া পড়েছে ষড়ঋতুর এই দেশের প্রকৃৃতিতেও। কদম ফুল সাধারণত আষাঢ় মাসে দেখা যাওয়ার কথা থাকলেও প্রকৃৃতিতে জৈষ্ঠ্য মাসেই শোভা পাচ্ছে কদম ফুল। এই গাছের উচ্চতা ৪০ থেকে ৫০ ফুট পর্যন্ত হতে পারে।

এই গাছের পাতা লম্বা, চকচকে উজ্জ্বল সবুজ। শীতকালে এই গাছের পাতা ঝরে গেলেও বসন্ত এলেই এই গাছে পাতা নতুন পাতা গজাতে শুরু করে। কদম ফুল গোলাকার। ফুলটিকে একটি ফুল মনে হলেও আসলে এটি অসংখ্য ফুলের একটি গুচ্ছ। এর ভেতরে মাংসল পুষ্পাধার রয়েছে, যাতে হলুদ রংয়ের ফানেলের মতো নরম সাদা পাপড়িগুলো আটকে থাকে। কদম গাছের ফল বাদুড় ও কাঠবিড়ালির প্রিয় খাদ্য। এরাই ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় এই গাছের বংশবিস্তারে সাহায্য করে থাকে।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সড়কের পাশে, মেঠোপথের ধারে, বসতবাড়ির আশেপাশে, পুকুর ও দীঘির পাড়ের কদম গাছ ছেয়ে আছে মিষ্টি গন্ধেভরা তুলতুলে কদম ফুলে। এসব ফুলের মন ভোলানো সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হচ্ছেন শিশুরাসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। শিশুরা এসব ফুল তাদের খেলার অনুষঙ্গ হিসেবেও ব্যবহার করছে। কিশোরীদের চুলের খোপা ও বেনিতেও শোভা পাচ্ছে বর্ষাদূত কদম ফুল। উঠতি বয়েসী কিশোর কিশোরীদের হাতেও শোভা পাচ্ছে এই ফুল। প্রতিটি সড়ক দিয়ে যেতে যেতে কদম ফুলের গন্ধ ও সৌন্দর্য উপভোগ করছেন সবাই। কদম ফুলের গন্ধে যেনো গ্রামবাংলার চিরচেনা গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। চকচকে উজ্জ্বল সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে ফোটে থাকা কদম ফুলের সৌন্দর্যে প্রকৃৃতিতে এক নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে।

ছেংগারচর সরকারি ডিগ্রি কলেজের অর্নার্ষ বর্ষের শিক্ষার্থী নুশরাত আক্তার বলেন, রূপ, রঙ ও গন্ধে দৃষ্টিনন্দন ফুল কদম। এই ফুল অন্যান্য ফুলের মতো নয়, এটি সম্পূর্ণ একটি ভিন্নধর্মী ফুল। এই ফুলের হলুদ ও সাদা পাপড়ি আর ভেতরের গোলাকার বলের মতো অংশটি নিয়েই ফুলটির সৌন্দর্য ফুটে উঠে। এ ফুলের সৌন্দর্য অন্য ফুলের তুলনায় সম্পূর্ণ আলাদা। প্রতি বছরই বর্ষা এলে কদম ফুলের প্রেমে পড়তে একরকম বাধ্যই হতে হয়।

উপজেলার ৯নং দক্ষিণ ব্যাসদী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মোসাম্মৎ জেসমিন আক্তার বলেন, মূলত বর্ষাকালে প্রকৃৃতিতে কদম ফুল ফোটে। কদম ফুটতে দেখলেই মনে প্রাণে বর্ষাকাল ভেসে ওঠে। ছোট বেলায় এই কদম ফুল নিয়ে অনেক খেলাধুলা করেছি। এই ফুলের সাথে গ্রামবাংলার এক নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এখন অসময়েও কদম ফুল ফুটতে দেখা যায়। এই উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় কদম ফুল ফুটেছে। এ ফুলের মধ্যে যেন বাঙালি বাঙালি আছে। সড়কে যাতায়াতের সময় হঠাৎ হঠাৎ এ ফুলের গন্ধ ভেসে আসে। যা খুবই ভালো লাগে এবং বিমোহীত করে।

জনপ্রিয়

যশোরে খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় জেলা ছাত্রদলের দোয়া মাহফিল

কদম ফুলে শিশুর চোখে-মুখে আনন্দের ঝিলিক

প্রকাশের সময় : ১০:৩৯:২২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫

মতলব (চাঁদপুর) প্রতিনিধিঃ

বর্ষা এলেই কদম ফুলের সৌন্দর্য আর শিশুদের দুরন্তপনা যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। কদম ফুলের মন মাতানো সুবাস আর শিশুদের উচ্ছ্বলতা গ্রামের দৃশ্যকে আরও মনোরম করে তোলে। কচি হাতে কদম ফুল নিয়ে ছোটাছুটি, খেলাধুলা- বর্ষাকালের এক অপরূপ চিত্র এ যেন আবহমান বাংলার বর্ষা বরণের প্রাকৃতিক আয়োজন।  তেমনি এক দৃম্য চেখে পড়লো চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ছেংগারচর পৌর এলাকার আদুরভিটি গ্রামে। ছোট্ট একটি কদম গাছ থেকে কদম ফুল পেরে খুশিতে বাড়ি ফিরছে দুই শিশু স্বাধীন বাড়ৈ ও সিদ্ধার্থ বাড়ৈ। একসঙ্গে এত কদম পেয়ে এসময় তাদের চোখে মুখে আনন্দের ঝিলিক ফুটে উঠে। কদমের ঘ্রাণ আর আষাঢ়ে বর্ষায় শিশু দু’জনের মাঝে উচ্ছ্বাস দেখা যায়। তাদের এ বাধভাঙ্গা উচ্ছ্বাস দেখে ছুটে আসের আরো কয়েকজন শিশু। মেতে উঠেন কদম ফুলের উৎসবে।

শুক্রবার (২৭ জুন-২০২৫) সকালে উপজেলার ছেংগারচর পৌর এলাকার আদুরভিটি গ্রামে থেকে ছবি তোলার সময় সে চিত্র ফুটে উঠে।

বৃষ্টির দিনে কদম ফুল ফোটে, যা শিশুদের কাছে খুব প্রিয়। কদম ফুল হাতে নিয়ে তারা ছোটাছুটি করে, লুকোচুরি খেলে এবং প্রকৃৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করে। কচি কচি হাতে কদম ফুল নিয়ে তাদের এই খেলাধুলা গ্রামের দৃশ্যকে আরও প্রাণবন্ত করে তোলে। কদম ফুলের সুবাস আর শিশুদের হাসিতে ভরে ওঠে চারপাশ।

শুরু হয়েছে বর্ষাকাল। বর্ষার প্রতীক হয়ে যেন চাঁদপুরের মতলব উত্তরের প্রকৃতিতে আগমন ঘটে কদম ফুলের। প্রকৃৃতিও সাজে কদম ফুলের সৌন্দর্যে। উপজেলার চারদিকে কদম ফুলের সমারোহ। সড়কের ধারে কদমগাছে পাতার সঙ্গে ফুটে আছে হলদে রঙের কদম ফুল। সেই সঙ্গে শিশু, কিশোর ও কিশোরীরা মেতে ওঠে আনন্দে। বাসাবাড়ির কাছে সহজে মেলে এই কদম ফুল।

বর্ষার আগমনী বার্তা নিয়ে আসে কদম ফুল, যা শিশুদের কাছে আনন্দের প্র্রতীক। কদম ফুল যেন তাদের খেলার একটি অংশ, যা তাদের শৈশবের স্মৃতিতে চিরকাল রয়ে যায়। কচি কচি পায়ে কদম ফুল কুড়িয়ে বেড়ানো, হাসি-আনন্দে মেতে ওঠা- এ যেন প্রকৃৃতির সাথে শিশুদের এক মিলনমেলা।

ষড়ঋতুর বাংলাদেশে বাঙালির প্রিয় ঋতু যেন বর্ষা। আর বর্ষার আগমন ঘটে যেন কদম ফুল ফোটার মধ্যে দিয়ে। তাই কদম ফুলকে বলা হয় বর্ষার দূত।

প্রকৃতিতে এখন চলছে বর্ষাকাল। আর বর্ষা নামলেই চাঁদপুরের মতলবের প্রকৃতিতে নতুন প্রাণ ফিরে আসে। সেই প্রাণের অন্যতম বাহক হলো কদম ফুল। এ যেন আবহমান বাংলার বর্ষা বরণের প্রাকৃতিক আয়োজন।
ষড়ঋতুর মধ্যে বর্ষাকাল যেন সেরা ঋতু আবহমান বাংলার। আর এই বর্ষাকে স্বাগত জানাতে বর্ষার আগমনী বার্তা নিয়ে মতলব উত্তরের প্রকৃৃতিতে ফুটেছে মন ভোলানো সৌন্দর্য নিয়ে বর্ষাদূত কদম ফুল। চিরচেনা মিষ্টি একটা গন্ধে মেতে উঠেছে গ্রামীণ সবুজ শ্যামল প্রকৃতি। কদম ফুলের সতেজ নির্মল সৌন্দর্য আর মোহনীয় ঘ্রাণ প্রকৃৃতিপ্রেমীসহ সকলের মনে সৃষ্টি করেছে ভিন্ন এক সম্মোহনী অনুভূতি। ফোটা এ ফুলের নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগ করেছেন সবাই। এ ফুলের নয়নাভিরাম সৌন্দর্যে বিমোহিত হচ্ছেন ফুলপ্রেমীসহ সব বয়সী মানুষ। বিশেষ করে উঠতি বয়সী কিশোরী ও তরুণীদের খোপায় শোভা পাচ্ছে এ ফুল।
সারা বছর এর দেখা না মিললেও বর্ষায় যেন অনিবার্য এই কদম ফুল। বহু বিখ্যাত কবিতা ও গান রয়েছে বর্ষাকাল আর কদম ফুল নিয়ে। প্রিয় ঋতু বর্ষার আগমনে তাই কদম ফুল যেন অনিবার্য অনুষঙ্গ।

চাঁদপুরের মতলব উত্তরের আদুরভিটি,ঠাকুরচর,পালালোকদী, ছেংগারচর বাজার, ঘনিয়ারপাড়,ঝিনাইয়া,কেশাইরকান্দি  সহ বিভিন্ন এলাকায় কদম ফুল ফুটতে দেখা গেছে। মতলব উত্তরের পথে-প্রান্তরে কদম গাছগুলো ভরে উঠতে শুরু করেছে ফুলে ফুলে।

বাংলা কবিতা ও গানেও সমভাবে সমাদৃত হয়েছে বর্ষাকাল ও কদম। বর্ষার সঙ্গে কদম ফুলের যেন এক নিবিড় সম্পর্ক প্রাকৃতিকভাবেই আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে। তাইতো পল্লীকবি জসিম উদ্দিন লিখেছিলেন, ‘প্রাণ সখিরে…ঐ শোন কদম্বতলে বংশী বাজায় কে।’ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছিলেন, বাদল-দিনের প্রথম কদম ফুল করেছ দান, আমি দিতে এসেছি শ্রাবণের গান।

জানা গেছে, মূলত বর্ষা ঋতুতেই প্রকৃতি রাঙিয়ে ফোটে বর্ষাদূত কদম ফুল। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের ছোঁয়া পড়েছে ষড়ঋতুর এই দেশের প্রকৃৃতিতেও। কদম ফুল সাধারণত আষাঢ় মাসে দেখা যাওয়ার কথা থাকলেও প্রকৃৃতিতে জৈষ্ঠ্য মাসেই শোভা পাচ্ছে কদম ফুল। এই গাছের উচ্চতা ৪০ থেকে ৫০ ফুট পর্যন্ত হতে পারে।

এই গাছের পাতা লম্বা, চকচকে উজ্জ্বল সবুজ। শীতকালে এই গাছের পাতা ঝরে গেলেও বসন্ত এলেই এই গাছে পাতা নতুন পাতা গজাতে শুরু করে। কদম ফুল গোলাকার। ফুলটিকে একটি ফুল মনে হলেও আসলে এটি অসংখ্য ফুলের একটি গুচ্ছ। এর ভেতরে মাংসল পুষ্পাধার রয়েছে, যাতে হলুদ রংয়ের ফানেলের মতো নরম সাদা পাপড়িগুলো আটকে থাকে। কদম গাছের ফল বাদুড় ও কাঠবিড়ালির প্রিয় খাদ্য। এরাই ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় এই গাছের বংশবিস্তারে সাহায্য করে থাকে।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সড়কের পাশে, মেঠোপথের ধারে, বসতবাড়ির আশেপাশে, পুকুর ও দীঘির পাড়ের কদম গাছ ছেয়ে আছে মিষ্টি গন্ধেভরা তুলতুলে কদম ফুলে। এসব ফুলের মন ভোলানো সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হচ্ছেন শিশুরাসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। শিশুরা এসব ফুল তাদের খেলার অনুষঙ্গ হিসেবেও ব্যবহার করছে। কিশোরীদের চুলের খোপা ও বেনিতেও শোভা পাচ্ছে বর্ষাদূত কদম ফুল। উঠতি বয়েসী কিশোর কিশোরীদের হাতেও শোভা পাচ্ছে এই ফুল। প্রতিটি সড়ক দিয়ে যেতে যেতে কদম ফুলের গন্ধ ও সৌন্দর্য উপভোগ করছেন সবাই। কদম ফুলের গন্ধে যেনো গ্রামবাংলার চিরচেনা গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। চকচকে উজ্জ্বল সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে ফোটে থাকা কদম ফুলের সৌন্দর্যে প্রকৃৃতিতে এক নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে।

ছেংগারচর সরকারি ডিগ্রি কলেজের অর্নার্ষ বর্ষের শিক্ষার্থী নুশরাত আক্তার বলেন, রূপ, রঙ ও গন্ধে দৃষ্টিনন্দন ফুল কদম। এই ফুল অন্যান্য ফুলের মতো নয়, এটি সম্পূর্ণ একটি ভিন্নধর্মী ফুল। এই ফুলের হলুদ ও সাদা পাপড়ি আর ভেতরের গোলাকার বলের মতো অংশটি নিয়েই ফুলটির সৌন্দর্য ফুটে উঠে। এ ফুলের সৌন্দর্য অন্য ফুলের তুলনায় সম্পূর্ণ আলাদা। প্রতি বছরই বর্ষা এলে কদম ফুলের প্রেমে পড়তে একরকম বাধ্যই হতে হয়।

উপজেলার ৯নং দক্ষিণ ব্যাসদী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মোসাম্মৎ জেসমিন আক্তার বলেন, মূলত বর্ষাকালে প্রকৃৃতিতে কদম ফুল ফোটে। কদম ফুটতে দেখলেই মনে প্রাণে বর্ষাকাল ভেসে ওঠে। ছোট বেলায় এই কদম ফুল নিয়ে অনেক খেলাধুলা করেছি। এই ফুলের সাথে গ্রামবাংলার এক নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এখন অসময়েও কদম ফুল ফুটতে দেখা যায়। এই উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় কদম ফুল ফুটেছে। এ ফুলের মধ্যে যেন বাঙালি বাঙালি আছে। সড়কে যাতায়াতের সময় হঠাৎ হঠাৎ এ ফুলের গন্ধ ভেসে আসে। যা খুবই ভালো লাগে এবং বিমোহীত করে।