সোমবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জীবনের মর্যাদা নিজের হাতে উপার্জনেই

  • ধর্ম ডেস্ক
  • প্রকাশের সময় : ০৩:৫৬:৩৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর ২০২৫
  • ২৭

ছবি: সংগৃহীত

মহান রবের শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি আমরা মানবজাতি। এ কারণেই মানবজাতিকে সৃষ্টি করে তিনি ঘোষণা করেন, ‘আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি সুন্দরতম আকৃতিতে’। (সুরা তীন, আয়াত : ৪) আর এই সুন্দর সৃষ্টিকে তিনি সম্মানিত করবেন না, তা কী করে হয়? দয়াময় আল্লাহ বলেন, ‘আমি বনি আদমকে সম্মানিত করেছি’। (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত : ৭০)

এই সম্মান মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার। আর এই সম্মান মানুষ থেকে অমুখাপেক্ষিতার মধ্যে নিহিত. মুখাপেক্ষিতার মধ্যে নয়। একজন মানুষ কী করে এ ধরনীর বুকে সম্মানের সঙ্গে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে, তার সম্পূর্ণ পথ আমাদের বাতলে দিয়েছে ইসলাম। ইসলাম বলে, দাতার হাত গ্রহীতার হাত থেকে উত্তম। ইসলাম সর্বদা দান করতে উৎসাহিত করেছে আর হাত পাতাকে অপছন্দ করেছে।

 ইসলাম এটা মেনেই নেয়নি, মানুষ তার মতোই আর একজন মানুষের সামনে হাত পেতে নিজেকে ছোটো করবে। এ ব্যাপারে ইসলামের নির্দেশনা দেখুন! হজরত সাহল ইবনে সা’দ রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘মুমিনের মর্যাদা রাত জাগরণে (তাহাজ্জুদে) আর তার সম্মান মানুষ থেকে অমুখাপেক্ষিতার মধ্যে নিহিত।

আরেকটি হাদিসের ভাষ্য আরও চমৎকার। আবু আবদুল্লাহ জুবায়ের ইবনে আউয়াম রাদিআল্লাহু আনহু বলেন, 
রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের মধ্যে কারো রশি হাতে পাহাড়ে যাওয়া এবং কাঠের বোঝা পিঠে করে বয়ে আনা ও তা বিক্রি করা, যার দ্বারা আল্লাহ তার চেহারাকে (অপমান থেকে) বাঁচান, লোকেদের কাছে এসে ভিক্ষা করার চেয়ে উত্তম, চাই তারা তাকে দিক বা না দিক।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৪৭১)
রব আপনাকে দুটো হাত দিয়েছেন তার কাছে চাওয়ার জন্যে। মানুষ সামনে হাত পেতে নিজেকে ছোট করার জন্য না। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ শিক্ষক, প্রিয়তম নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শিক্ষা দেখুন! হজরত সাওবান রাদিআল্লাহু আনহু বলেন, একবার হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কে আমার জন্যে এই মর্মে দায়িত্ব নেবে, মানুষের কাছে কিছু চাইবে না আর আমি তার জন্যে বেহেশতের দায়িত্ব নেবো!?’ বললাম, আমি। তারপর থেকে হজরত সাওবান রাদিআল্লাহু আনহু কারো কাছে কিছু চাইতেন না। (আবু দাউদ, হাদিস : ৫৫৩)
যদি চাইতেই হয়, আল্লাহর কাছেই চাইবো। নবীজি বলেন, ‘যখন তুমি চাইবে আল্লাহর কাছেই চাও। আর যখন তুমি সাহায্য প্রার্থনা করবে, তখন একমাত্র আল্লাহর কাছেই সাহায্য প্রার্থনা করো।’ (তিরমিজি, হাদিস: ২৫১৬)
 
কিন্তু আজ যদি আমাদের সমাজের দিকে তাকাই, তাহলে দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, কি গ্রাম কি শহর, আমাদের সমাজের সবখানেই হাতপাতা একটা সাধারণ বিষয় হয়ে পড়েছে! সক্ষম মানুষও অন্যের উপর ভর করে থাকতে কোনো দ্বিধাই করে না। অনেকে তো বেকারত্বকে নিজের পেশা বানিয়ে নিয়েছে। রুজি-রোজগারের দিকে তারা ফিরে তাকাতেও রাজি না। 
 
যে কারণে আজ তারা সমাজের চোখে বোঝা! অথচ আল্লাহ তাআলার আয়াতের প্রতি লক্ষ্য করুন! দয়াময় আল্লাহ বলেন, ‘অতঃপর নামাজ শেষ হয়ে গেলে তোমরা জমিনে ছড়িয়ে পড়ো এবং আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান করো, আল্লাহকে স্মরণ করো বেশি বেশি যাতে তোমরা সফলকাম হও!’ (সুরা জুমুআ, আয়াত : ১০) উক্ত আয়াতে অনুগ্রহ সন্ধান দ্বারা রুজি-রোজগারকেই বোঝানো হয়েছে।
 
কেউ প্রশ্ন করতে পারেন, তাহলে এখন আমাদের এই অসুস্থ সমাজকে সুস্থ করার সমাধান কী? বলবো, সমাধান সহজ। স্বহস্তে কিছু করা। তা যে কোনো হালাল রুজি হতে পারে। চাই তা যত ছোটোই হোক না কেন।
 
সহস্তে উপার্জন সম্পর্কে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিস শুনুন। তিনি বলেন—‘জগতের কোনো মানুষ কখনোই স্বহস্তে উপার্জিত খাদ্যের চাইতে উত্তম কোনো খাবার খায়নি। (বুখারি, হাদিস : ৫৪৩)
আরেকটি হাদিস শুনুন! রাফে’ বিন খাদীজ রাদিআল্লাহু আনহু বলেন, জিজ্ঞেসা করা হলো, হে আল্লাহর রাসুল! কোন উপার্জন সবচেয়ে পবিত্র? উত্তরে তিনি বললেন, সবচেয়ে পবিত্র উপার্জন হলো যা মানুষের নিজ হাতের কাজ এবং সদ্যুপায়ে ব্যবসার মাধ্যমে করা হয়। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ১৭২৬৫; তবারানি, হাদিস : ৪২৮৫)
আচ্ছা! স্বহস্তে উপার্জনের পুরস্কার কী? দয়াময় আল্লাহর ভালোবাসা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা ঈমানদার পেশাজীবী বান্দাকে পছন্দ করেন।’ (আদদুররুল মনসুর, খণ্ড : ১৪, পৃষ্ঠা ৬১১)
 
স্বহস্তে উপার্জন, এটা আমাদের নবীজির সুন্নত। সিরাতের সোনালি পাতায় তাকালে দেখা যায়। যখন তিনি শিশু দুধ মা হালিমার মেষ চরাতে ছুটে যাচ্ছেন মাঠে। আর যখন কিশোর তখন চাচা আবু তালেবের সঙ্গে ছুটে যান বাণিজ্যের সফরে। আর যখন যুবক তখন তিনি মক্কার খ্যাতিমান সৎ ব্যবসায়ী। 

শুধু আমাদের নবীজি নন, প্রায় নবীর সুন্নত স্বহস্তে উপার্জন। আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, হজরত দাউদ আলাইহিস সাল্লাম নিজ হাতের উপার্জন ছাড়া কোনো খাবার খেতেন না। (বুখারি, হাদিস : ৫৪১) অপর এক বর্ণনায় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘হজরত যাকারিয়া আলাইহিস সালাম একজন কাঠমিস্ত্রি ছিলেন।’ (মুসলিম, হাদিস : ৫৪২) ইবনে আব্বাস রাদিআল্লাহু আনহু বলেছেন, হজরত মুসা আলাইহিস সালাম একজন রাখাল ছিলেন।
 
আমরা সবাই জানি, সাহাবিদের মধ্যে যারা মুহাজির ছিলেন, তাদের পেশা ছিলো ব্যবসা। যারা আনসার ছিলেন, তারা ছিলেন কৃষক। একটি গল্প বলি। হাদিসের গল্প। হিজরতের পর নবীজি আনসারদের মাঝে মুহাজিরদের ভাগ করে দিলেন। তখন আনসার সাহাবী হজরত সাদ ইবনে রাবি রাদিআল্লাহু আনহু মুহাজির সাহাবী হজরত আবদুর রহমান ইবনে আউফ রাদিআল্লাহু আনহুকে বললেন, আমার যত সম্পদ আছে এর অর্ধেক তোমার। আমার দুজন স্ত্রী আছে, আমি একজনকে তালাক দিয়ে দেবো। তুমি তাকে বিয়ে করবে। আবদুর রহমান ইবনে আউফ রাদিআল্লাহু আনহু বললেন, আমার এসবের প্রয়োজন নেই। তুমি আমাকে বাজার দেখিয়ে দাও, আমি ব্যবসা করবো। (বুখারি)
 
আমাদের ভারত উপমহাদেশের মোগল শাসক বাদশাহ নাসির উদ্দীন। তিনি নিজ হাতে টুপি সেলাই করে বাজারে বিক্রি করতেন। আর সেই টাকায় সংসার চালাতেন। আমাদের আরেক শাসক আওরঙ্গজেব। তিনি টুপি সেলাই ও পবিত্র কুরআন শরীফ লিখতেন। (চেপে রাখা ইতিহাস, পৃষ্ঠা: ১০৫; লেখক: গোলাম আহমদ মুর্তজা) এত এত মহান মানুষ যখন নিজ হাতে উপার্জন করতে লজ্জাবোধ করেন নি।যদি আল্লাহ সুস্থ রাখেন। তাহলে আমাদের করতে অসুবিধে কোথায়?
প্রিয় পাঠক! এই দেশ এই সমাজ আমার, আমাদের। অন্য কারো নয়। আমাদের সমাজ আমাদেরকেই গড়তে হবে। তাই আসুন! এক সাথে কাজ করি! হাতে হাত রেখে সমাজ গড়ি। বেকারত্বকে দূরীভূত করি। বিশ্ব দরবারে আমরা গ্রহণে নয়, দানে উন্নত হবো। আল্লাহ আমাদের কবুল করুন, আমিন!  —সময় সংবাদ

লেখক: শিক্ষার্থী, জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম রামপুরা (বনশ্রী মাদরাসা) ঢাকা ১২১৯
জনপ্রিয়

‘মোংলা বন্দরের  শ্রেষ্ঠ কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের পুরস্কার পেল জুলফিকার আলীর প্রতিষ্ঠান’

জীবনের মর্যাদা নিজের হাতে উপার্জনেই

প্রকাশের সময় : ০৩:৫৬:৩৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর ২০২৫

মহান রবের শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি আমরা মানবজাতি। এ কারণেই মানবজাতিকে সৃষ্টি করে তিনি ঘোষণা করেন, ‘আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি সুন্দরতম আকৃতিতে’। (সুরা তীন, আয়াত : ৪) আর এই সুন্দর সৃষ্টিকে তিনি সম্মানিত করবেন না, তা কী করে হয়? দয়াময় আল্লাহ বলেন, ‘আমি বনি আদমকে সম্মানিত করেছি’। (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত : ৭০)

এই সম্মান মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার। আর এই সম্মান মানুষ থেকে অমুখাপেক্ষিতার মধ্যে নিহিত. মুখাপেক্ষিতার মধ্যে নয়। একজন মানুষ কী করে এ ধরনীর বুকে সম্মানের সঙ্গে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে, তার সম্পূর্ণ পথ আমাদের বাতলে দিয়েছে ইসলাম। ইসলাম বলে, দাতার হাত গ্রহীতার হাত থেকে উত্তম। ইসলাম সর্বদা দান করতে উৎসাহিত করেছে আর হাত পাতাকে অপছন্দ করেছে।

 ইসলাম এটা মেনেই নেয়নি, মানুষ তার মতোই আর একজন মানুষের সামনে হাত পেতে নিজেকে ছোটো করবে। এ ব্যাপারে ইসলামের নির্দেশনা দেখুন! হজরত সাহল ইবনে সা’দ রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘মুমিনের মর্যাদা রাত জাগরণে (তাহাজ্জুদে) আর তার সম্মান মানুষ থেকে অমুখাপেক্ষিতার মধ্যে নিহিত।

আরেকটি হাদিসের ভাষ্য আরও চমৎকার। আবু আবদুল্লাহ জুবায়ের ইবনে আউয়াম রাদিআল্লাহু আনহু বলেন, 
রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের মধ্যে কারো রশি হাতে পাহাড়ে যাওয়া এবং কাঠের বোঝা পিঠে করে বয়ে আনা ও তা বিক্রি করা, যার দ্বারা আল্লাহ তার চেহারাকে (অপমান থেকে) বাঁচান, লোকেদের কাছে এসে ভিক্ষা করার চেয়ে উত্তম, চাই তারা তাকে দিক বা না দিক।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৪৭১)
রব আপনাকে দুটো হাত দিয়েছেন তার কাছে চাওয়ার জন্যে। মানুষ সামনে হাত পেতে নিজেকে ছোট করার জন্য না। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ শিক্ষক, প্রিয়তম নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শিক্ষা দেখুন! হজরত সাওবান রাদিআল্লাহু আনহু বলেন, একবার হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কে আমার জন্যে এই মর্মে দায়িত্ব নেবে, মানুষের কাছে কিছু চাইবে না আর আমি তার জন্যে বেহেশতের দায়িত্ব নেবো!?’ বললাম, আমি। তারপর থেকে হজরত সাওবান রাদিআল্লাহু আনহু কারো কাছে কিছু চাইতেন না। (আবু দাউদ, হাদিস : ৫৫৩)
যদি চাইতেই হয়, আল্লাহর কাছেই চাইবো। নবীজি বলেন, ‘যখন তুমি চাইবে আল্লাহর কাছেই চাও। আর যখন তুমি সাহায্য প্রার্থনা করবে, তখন একমাত্র আল্লাহর কাছেই সাহায্য প্রার্থনা করো।’ (তিরমিজি, হাদিস: ২৫১৬)
 
কিন্তু আজ যদি আমাদের সমাজের দিকে তাকাই, তাহলে দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, কি গ্রাম কি শহর, আমাদের সমাজের সবখানেই হাতপাতা একটা সাধারণ বিষয় হয়ে পড়েছে! সক্ষম মানুষও অন্যের উপর ভর করে থাকতে কোনো দ্বিধাই করে না। অনেকে তো বেকারত্বকে নিজের পেশা বানিয়ে নিয়েছে। রুজি-রোজগারের দিকে তারা ফিরে তাকাতেও রাজি না। 
 
যে কারণে আজ তারা সমাজের চোখে বোঝা! অথচ আল্লাহ তাআলার আয়াতের প্রতি লক্ষ্য করুন! দয়াময় আল্লাহ বলেন, ‘অতঃপর নামাজ শেষ হয়ে গেলে তোমরা জমিনে ছড়িয়ে পড়ো এবং আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান করো, আল্লাহকে স্মরণ করো বেশি বেশি যাতে তোমরা সফলকাম হও!’ (সুরা জুমুআ, আয়াত : ১০) উক্ত আয়াতে অনুগ্রহ সন্ধান দ্বারা রুজি-রোজগারকেই বোঝানো হয়েছে।
 
কেউ প্রশ্ন করতে পারেন, তাহলে এখন আমাদের এই অসুস্থ সমাজকে সুস্থ করার সমাধান কী? বলবো, সমাধান সহজ। স্বহস্তে কিছু করা। তা যে কোনো হালাল রুজি হতে পারে। চাই তা যত ছোটোই হোক না কেন।
 
সহস্তে উপার্জন সম্পর্কে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিস শুনুন। তিনি বলেন—‘জগতের কোনো মানুষ কখনোই স্বহস্তে উপার্জিত খাদ্যের চাইতে উত্তম কোনো খাবার খায়নি। (বুখারি, হাদিস : ৫৪৩)
আরেকটি হাদিস শুনুন! রাফে’ বিন খাদীজ রাদিআল্লাহু আনহু বলেন, জিজ্ঞেসা করা হলো, হে আল্লাহর রাসুল! কোন উপার্জন সবচেয়ে পবিত্র? উত্তরে তিনি বললেন, সবচেয়ে পবিত্র উপার্জন হলো যা মানুষের নিজ হাতের কাজ এবং সদ্যুপায়ে ব্যবসার মাধ্যমে করা হয়। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ১৭২৬৫; তবারানি, হাদিস : ৪২৮৫)
আচ্ছা! স্বহস্তে উপার্জনের পুরস্কার কী? দয়াময় আল্লাহর ভালোবাসা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা ঈমানদার পেশাজীবী বান্দাকে পছন্দ করেন।’ (আদদুররুল মনসুর, খণ্ড : ১৪, পৃষ্ঠা ৬১১)
 
স্বহস্তে উপার্জন, এটা আমাদের নবীজির সুন্নত। সিরাতের সোনালি পাতায় তাকালে দেখা যায়। যখন তিনি শিশু দুধ মা হালিমার মেষ চরাতে ছুটে যাচ্ছেন মাঠে। আর যখন কিশোর তখন চাচা আবু তালেবের সঙ্গে ছুটে যান বাণিজ্যের সফরে। আর যখন যুবক তখন তিনি মক্কার খ্যাতিমান সৎ ব্যবসায়ী। 

শুধু আমাদের নবীজি নন, প্রায় নবীর সুন্নত স্বহস্তে উপার্জন। আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, হজরত দাউদ আলাইহিস সাল্লাম নিজ হাতের উপার্জন ছাড়া কোনো খাবার খেতেন না। (বুখারি, হাদিস : ৫৪১) অপর এক বর্ণনায় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘হজরত যাকারিয়া আলাইহিস সালাম একজন কাঠমিস্ত্রি ছিলেন।’ (মুসলিম, হাদিস : ৫৪২) ইবনে আব্বাস রাদিআল্লাহু আনহু বলেছেন, হজরত মুসা আলাইহিস সালাম একজন রাখাল ছিলেন।
 
আমরা সবাই জানি, সাহাবিদের মধ্যে যারা মুহাজির ছিলেন, তাদের পেশা ছিলো ব্যবসা। যারা আনসার ছিলেন, তারা ছিলেন কৃষক। একটি গল্প বলি। হাদিসের গল্প। হিজরতের পর নবীজি আনসারদের মাঝে মুহাজিরদের ভাগ করে দিলেন। তখন আনসার সাহাবী হজরত সাদ ইবনে রাবি রাদিআল্লাহু আনহু মুহাজির সাহাবী হজরত আবদুর রহমান ইবনে আউফ রাদিআল্লাহু আনহুকে বললেন, আমার যত সম্পদ আছে এর অর্ধেক তোমার। আমার দুজন স্ত্রী আছে, আমি একজনকে তালাক দিয়ে দেবো। তুমি তাকে বিয়ে করবে। আবদুর রহমান ইবনে আউফ রাদিআল্লাহু আনহু বললেন, আমার এসবের প্রয়োজন নেই। তুমি আমাকে বাজার দেখিয়ে দাও, আমি ব্যবসা করবো। (বুখারি)
 
আমাদের ভারত উপমহাদেশের মোগল শাসক বাদশাহ নাসির উদ্দীন। তিনি নিজ হাতে টুপি সেলাই করে বাজারে বিক্রি করতেন। আর সেই টাকায় সংসার চালাতেন। আমাদের আরেক শাসক আওরঙ্গজেব। তিনি টুপি সেলাই ও পবিত্র কুরআন শরীফ লিখতেন। (চেপে রাখা ইতিহাস, পৃষ্ঠা: ১০৫; লেখক: গোলাম আহমদ মুর্তজা) এত এত মহান মানুষ যখন নিজ হাতে উপার্জন করতে লজ্জাবোধ করেন নি।যদি আল্লাহ সুস্থ রাখেন। তাহলে আমাদের করতে অসুবিধে কোথায়?
প্রিয় পাঠক! এই দেশ এই সমাজ আমার, আমাদের। অন্য কারো নয়। আমাদের সমাজ আমাদেরকেই গড়তে হবে। তাই আসুন! এক সাথে কাজ করি! হাতে হাত রেখে সমাজ গড়ি। বেকারত্বকে দূরীভূত করি। বিশ্ব দরবারে আমরা গ্রহণে নয়, দানে উন্নত হবো। আল্লাহ আমাদের কবুল করুন, আমিন!  —সময় সংবাদ

লেখক: শিক্ষার্থী, জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম রামপুরা (বনশ্রী মাদরাসা) ঢাকা ১২১৯