রবিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জীব-জন্তুর প্রতি দয়া করার বিষয়ে ইসলামের নির্দেশনা

  • ধর্ম ডেস্ক
  • প্রকাশের সময় : ১১:২১:২৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২৫
  • ১৩

ছবি-সংগৃহীত

যে কোনো পশু পাখি বা প্রাণীকে কষ্ট দেওয়া। ঠিকমতো খাবার ও পানীয় না দেওয়া। কিংবা তাদের সঙ্গে নিকৃষ্ট আচরণ করা, নিঃসন্দেহে অমানবিক ও নিষ্ঠুর আচরণ। যা কখনো কোনো সুস্থ মানুষের জন্য শোভা পায় না।

মস্তিষ্ক বিকৃত ও অমানবিক, নিষ্ঠুর প্রকৃতির লোকই পারে পশু পাখির সঙ্গে এমন অমানবিক আচরণ করতে। আমাদের সমাজে কুকুর বিড়াল পালন করা। কিংবা কোনো পাখি বা প্রাণী পোষা।

 নিয়মিত এদেরকে পোষা প্রাণী হিসাবে খাঁচায় বা ঘরে উন্মুক্ত রাখা এখন অনেকটাই সহজলভ্য এবং রীতিতে পরিণত হয়ে যাচ্ছে দিন দিন। এমনকি এগুলোকে এখন পশু পাখির প্রতি আমাদের এক ধরনের প্রেম ভালোবাসাও বলা যেতে পারে। হোক তা আবেগ তাড়িত হয়ে বা শুধু শখের বশে।
 
অনেকেই আবার এমনও আছেন, যারা অসহায় কোনো কুকুর বা বিড়ালছানাকে আশ্রয় দিয়ে তার জীবন বাঁচাতে সাহায্য করেছেন। দেখা গেল পরবর্তীতে সেটি আর তার সাহায্যকারী মালিককে ছেড়ে যাচ্ছে না। আর এভাবেই একটি পশু বা পাখির প্রতি মানুষের অন্তরে ভালোবাসা তৈরি হয়। দয়া ও মায়া জন্মায়।
 
সহি মুসলিমের বর্ণনায় এমন একটি ঘটনার বিবরণ এসেছে যে, একজন নারী একবার একটি কুকুরছানাকে পানি পান করিয়ে, তাকে প্রাণে বাঁচতে সাহায্য করেছেন। (এ ছাড়া তার জীবনে তেমন কোনো ভালো কাজও ছিল না।) আল্লাহ তায়ালা এই  জীবের প্রতি দয়া ও অনুগ্রহকে কেন্দ্র করে ঐ মহিলাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। 
 
ফলে সে জান্নাতি হয়েছেন।  আবার আরেক বর্ণনায় এসেছে, একজন ইবাদতকারী একটি বিড়ালকে বন্দী করে খাবার ও পানীয় না দেওয়ার ফলে সেটি মারা যায়। ফলে তার ঠিকানা হয়েছে জাহান্নাম। এজন্য এমন কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। যা পরিস্কার কোনো প্রাণীকে কষ্ট দেওয়ার অন্তর্ভুক্ত।
 
অতএব কোনো কুকুর বিড়াল বা পশু পাখিকে সাহায্য করা যে পুণ্যের কাজ; এ বিষয়টি স্পষ্ট বুঝে আসে উপুর্যুক্ত হাদিস থেকে। আর এটি আমাদের মানবিক দায়িত্বও বটে। 
 
যেমনটি হাদিসে এসেছে, সাহাবি হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রা. থেকে বর্ণিত – তিনি বলেন, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ তায়ালার সৃষ্টির প্রতি দয়া অনুগ্রহ প্রদর্শনকারীদের ওপরও দয়াময় আল্লাহ তায়ালাও দয়া, অনুগ্রহ করেন। তোমরা জমিনের অধিবাসীদের প্রতি দয়া করো। আল্লাহ তায়ালাও তোমাদের প্রতি দয়া করবেন। (সুনানে আবু দাউদ ও সুনানে তিরমিজি)
 
উপর্যুক্ত এ হাদিসের ব্যাখ্যায় মুহাদ্দিসগণ লিখেছেন- জমিনে বসবাসকারী বিভিন্ন পশু পাখি ও জীবজন্তুর প্রতি দয়া অনুগ্রহ করা। এমনকি মুসলিম অমুসলিম নির্বিশেষে সকল মানুষের প্রতিও দয়া, অনুগ্রহ ও অনুকম্পা প্রদর্শন করা উচিত। জমিনের অধিবাসী বলে মূলত এ কথাই বোঝানো হয়েছে হাদিসে।
 
হাদিসে আরও বর্ণিত হয়েছে যে, একবার সাহাবিগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! জীব-জন্তুর প্রতি দয়াপ্রদর্শনেও কি আমাদের জন্য পুণ্য আছে? তিনি বললেন, প্রত্যেক জীব, প্রাণবিশিষ্ট জীবের (প্রতি দয়া প্রদর্শনেও) সওয়াব তথা পুণ্য রয়েছে। (সহি বুখারি)
 
নবীজি আরও বলেন, দুর্ভাগা ছাড়া অন্য কারো (অন্তর) থেকে দয়া-মায়া, ছিনিয়ে নেওয়া হয় না। (মুসনাদে আহমদ ও সুনানে আবু দাউদ)
 
জীবের প্রতি নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দয়া মায়া কেমন ছিল? তা বুঝে আসে সুনানে আবু দাউদের নিম্নোক্ত বর্ণনাটি থেকে। সাহাবি হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন, একদা আমরা আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে এক সফরে ছিলাম। তিনি নিজ প্রয়োজনে (আমাদের থেকে আড়ালে) গেলে আমরা একটি হুম্মারাহ (এক ধরনের লাল রঙের চড়ুই ) পাখি দেখলাম। 
 
তার সাথে ছিল তার দুটি ছানা। আমরা সেই ছানা দুটিকে ধরে ফেললাম। পাখিটি আমাদের মাথার উপরে  উড়তে লাগল। ইতেমধ্যে নবীজি এসে তা দেখে বললেন, ‘কে ওকে ওর ছানা নিয়ে কষ্ট দিয়েছে? ওর ছানা ওকে ফিরিয়ে দাও।’ আবার একদা তিনি দেখলেন, পিঁপড়ার গর্তসমূহকে আমরা পুড়িয়ে ফেলছি। তিনি তা দেখে বললেন, কে এই পিঁপড়াগুলোকে পুড়িয়ে ফেলেছে? আমরা বললাম, আমরাই। তিনি বললেন, আগুনের মালিক (আল্লাহ) ছাড়া আগুন দ্বারা শাস্তি দেওয়া আর অন্য কারো জন্য সঙ্গত নয়।
 
উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে এটি স্পষ্ট বুঝে আসে যে, ইসলাম আমাদেরকে অবলা অসহায় জীবজন্তু, পশু ও পাখিদের প্রতি সদয় আচরণ করার নির্দেশ প্রদান করে। পশু পাখিদের প্রতি দয়া অনুগ্রহ করতে বলে৷ তাদেরকে কষ্ট দিতে নিষেধ করে। হ্যাঁ, কষ্টদায়ক ক্ষতিকর জীবজন্তু ও পশু পাখিদের ব্যাপারে কঠোর হওয়া ; তাড়িয়ে দেওয়া, এমনকি ক্ষেত্রবিশেষ হত্যা করারও অনুমতি আছে। তবে তাও যেন হয় ইনসাফের সঙ্গে। কষ্ট দিয়ে নয়! আর এসব প্রাণীর দ্বারা নিশ্চিত ক্ষতির আশংকা হলে, তবেই হত্যা করা বৈধ হতে পারে।
 
এজন্য বিনা কারণে অহেতুক কোনো প্রাণী ও পাখিকে কষ্ট দেওয়া বা হত্যা করা কখনো উচিত হবে না। বরং এমনটি নিঃসন্দেহে নির্দয় ও নিষ্ঠুর আচরণ। যা থেকে বিরত থাকতে হবে। পশু পাখিদের প্রতিও হতে হবে সদয় ও সহনশীল! —সময় সংবাদ
 
লেখক: খতিব, ভবানীপুর মাইজপাড়া হক্কানি জামে,মসজিদ গাজীপুর 
জনপ্রিয়

ঢাকায় দূতাবাস খুলবে আজারবাইজান

জীব-জন্তুর প্রতি দয়া করার বিষয়ে ইসলামের নির্দেশনা

প্রকাশের সময় : ১১:২১:২৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২৫

যে কোনো পশু পাখি বা প্রাণীকে কষ্ট দেওয়া। ঠিকমতো খাবার ও পানীয় না দেওয়া। কিংবা তাদের সঙ্গে নিকৃষ্ট আচরণ করা, নিঃসন্দেহে অমানবিক ও নিষ্ঠুর আচরণ। যা কখনো কোনো সুস্থ মানুষের জন্য শোভা পায় না।

মস্তিষ্ক বিকৃত ও অমানবিক, নিষ্ঠুর প্রকৃতির লোকই পারে পশু পাখির সঙ্গে এমন অমানবিক আচরণ করতে। আমাদের সমাজে কুকুর বিড়াল পালন করা। কিংবা কোনো পাখি বা প্রাণী পোষা।

 নিয়মিত এদেরকে পোষা প্রাণী হিসাবে খাঁচায় বা ঘরে উন্মুক্ত রাখা এখন অনেকটাই সহজলভ্য এবং রীতিতে পরিণত হয়ে যাচ্ছে দিন দিন। এমনকি এগুলোকে এখন পশু পাখির প্রতি আমাদের এক ধরনের প্রেম ভালোবাসাও বলা যেতে পারে। হোক তা আবেগ তাড়িত হয়ে বা শুধু শখের বশে।
 
অনেকেই আবার এমনও আছেন, যারা অসহায় কোনো কুকুর বা বিড়ালছানাকে আশ্রয় দিয়ে তার জীবন বাঁচাতে সাহায্য করেছেন। দেখা গেল পরবর্তীতে সেটি আর তার সাহায্যকারী মালিককে ছেড়ে যাচ্ছে না। আর এভাবেই একটি পশু বা পাখির প্রতি মানুষের অন্তরে ভালোবাসা তৈরি হয়। দয়া ও মায়া জন্মায়।
 
সহি মুসলিমের বর্ণনায় এমন একটি ঘটনার বিবরণ এসেছে যে, একজন নারী একবার একটি কুকুরছানাকে পানি পান করিয়ে, তাকে প্রাণে বাঁচতে সাহায্য করেছেন। (এ ছাড়া তার জীবনে তেমন কোনো ভালো কাজও ছিল না।) আল্লাহ তায়ালা এই  জীবের প্রতি দয়া ও অনুগ্রহকে কেন্দ্র করে ঐ মহিলাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। 
 
ফলে সে জান্নাতি হয়েছেন।  আবার আরেক বর্ণনায় এসেছে, একজন ইবাদতকারী একটি বিড়ালকে বন্দী করে খাবার ও পানীয় না দেওয়ার ফলে সেটি মারা যায়। ফলে তার ঠিকানা হয়েছে জাহান্নাম। এজন্য এমন কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। যা পরিস্কার কোনো প্রাণীকে কষ্ট দেওয়ার অন্তর্ভুক্ত।
 
অতএব কোনো কুকুর বিড়াল বা পশু পাখিকে সাহায্য করা যে পুণ্যের কাজ; এ বিষয়টি স্পষ্ট বুঝে আসে উপুর্যুক্ত হাদিস থেকে। আর এটি আমাদের মানবিক দায়িত্বও বটে। 
 
যেমনটি হাদিসে এসেছে, সাহাবি হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রা. থেকে বর্ণিত – তিনি বলেন, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ তায়ালার সৃষ্টির প্রতি দয়া অনুগ্রহ প্রদর্শনকারীদের ওপরও দয়াময় আল্লাহ তায়ালাও দয়া, অনুগ্রহ করেন। তোমরা জমিনের অধিবাসীদের প্রতি দয়া করো। আল্লাহ তায়ালাও তোমাদের প্রতি দয়া করবেন। (সুনানে আবু দাউদ ও সুনানে তিরমিজি)
 
উপর্যুক্ত এ হাদিসের ব্যাখ্যায় মুহাদ্দিসগণ লিখেছেন- জমিনে বসবাসকারী বিভিন্ন পশু পাখি ও জীবজন্তুর প্রতি দয়া অনুগ্রহ করা। এমনকি মুসলিম অমুসলিম নির্বিশেষে সকল মানুষের প্রতিও দয়া, অনুগ্রহ ও অনুকম্পা প্রদর্শন করা উচিত। জমিনের অধিবাসী বলে মূলত এ কথাই বোঝানো হয়েছে হাদিসে।
 
হাদিসে আরও বর্ণিত হয়েছে যে, একবার সাহাবিগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! জীব-জন্তুর প্রতি দয়াপ্রদর্শনেও কি আমাদের জন্য পুণ্য আছে? তিনি বললেন, প্রত্যেক জীব, প্রাণবিশিষ্ট জীবের (প্রতি দয়া প্রদর্শনেও) সওয়াব তথা পুণ্য রয়েছে। (সহি বুখারি)
 
নবীজি আরও বলেন, দুর্ভাগা ছাড়া অন্য কারো (অন্তর) থেকে দয়া-মায়া, ছিনিয়ে নেওয়া হয় না। (মুসনাদে আহমদ ও সুনানে আবু দাউদ)
 
জীবের প্রতি নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দয়া মায়া কেমন ছিল? তা বুঝে আসে সুনানে আবু দাউদের নিম্নোক্ত বর্ণনাটি থেকে। সাহাবি হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন, একদা আমরা আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে এক সফরে ছিলাম। তিনি নিজ প্রয়োজনে (আমাদের থেকে আড়ালে) গেলে আমরা একটি হুম্মারাহ (এক ধরনের লাল রঙের চড়ুই ) পাখি দেখলাম। 
 
তার সাথে ছিল তার দুটি ছানা। আমরা সেই ছানা দুটিকে ধরে ফেললাম। পাখিটি আমাদের মাথার উপরে  উড়তে লাগল। ইতেমধ্যে নবীজি এসে তা দেখে বললেন, ‘কে ওকে ওর ছানা নিয়ে কষ্ট দিয়েছে? ওর ছানা ওকে ফিরিয়ে দাও।’ আবার একদা তিনি দেখলেন, পিঁপড়ার গর্তসমূহকে আমরা পুড়িয়ে ফেলছি। তিনি তা দেখে বললেন, কে এই পিঁপড়াগুলোকে পুড়িয়ে ফেলেছে? আমরা বললাম, আমরাই। তিনি বললেন, আগুনের মালিক (আল্লাহ) ছাড়া আগুন দ্বারা শাস্তি দেওয়া আর অন্য কারো জন্য সঙ্গত নয়।
 
উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে এটি স্পষ্ট বুঝে আসে যে, ইসলাম আমাদেরকে অবলা অসহায় জীবজন্তু, পশু ও পাখিদের প্রতি সদয় আচরণ করার নির্দেশ প্রদান করে। পশু পাখিদের প্রতি দয়া অনুগ্রহ করতে বলে৷ তাদেরকে কষ্ট দিতে নিষেধ করে। হ্যাঁ, কষ্টদায়ক ক্ষতিকর জীবজন্তু ও পশু পাখিদের ব্যাপারে কঠোর হওয়া ; তাড়িয়ে দেওয়া, এমনকি ক্ষেত্রবিশেষ হত্যা করারও অনুমতি আছে। তবে তাও যেন হয় ইনসাফের সঙ্গে। কষ্ট দিয়ে নয়! আর এসব প্রাণীর দ্বারা নিশ্চিত ক্ষতির আশংকা হলে, তবেই হত্যা করা বৈধ হতে পারে।
 
এজন্য বিনা কারণে অহেতুক কোনো প্রাণী ও পাখিকে কষ্ট দেওয়া বা হত্যা করা কখনো উচিত হবে না। বরং এমনটি নিঃসন্দেহে নির্দয় ও নিষ্ঠুর আচরণ। যা থেকে বিরত থাকতে হবে। পশু পাখিদের প্রতিও হতে হবে সদয় ও সহনশীল! —সময় সংবাদ
 
লেখক: খতিব, ভবানীপুর মাইজপাড়া হক্কানি জামে,মসজিদ গাজীপুর