রবিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১০ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

উদ্বোধনের আগেই গচ্ছা যেতে বসেছে ৩২ কোটি টাকার সেতু 

তিমির বনিক, মৌলভীবাজার প্রতিনিধি:
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার পৃথ্বমপাশার সঙ্গে হাজীপুর ও শরীফপুর ইউনিয়নের যোগাযোগ স্থাপনের লক্ষে মনু নদে নির্মাণ করা হয় ২৩২ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতুটি। তবে এতে ব্যয় হয় ৩২ কোটি টাকা। ২০২১ সালের জুনে নির্মাণকাজ সম্পন্ন হলেও সংযোগ সড়ক না থাকায় চালু হয়নি এই সেতুটি। অবৈধভাবে বালি উত্তোলনের কারণে এরই মধ্যে ঝুঁকিতে পড়েছে সেতুর অবকাঠামোটি। সরে গেছে পিলারের নিচের মাটি। এভাবে চলতে থাকলে উদ্বোধনের আগেই সেতুটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সমূহ আশঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জমি অধিগ্রহণ জটিলতার কারণে চার বছরেও সংযোগ সড়ক নির্মাণ হয়নি। এ কারণে স্থানীয় লোকজন সেতুর সুফল ভোগ করতে পাচ্ছে না। সেতুসংলগ্ন স্থানে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন বন্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছে জেলা প্রশাসন।
এ প্রসঙ্গে মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট তানভীর হোসেন প্রতিবেদককে বলেন, ‘‌বালি উত্তোলন বন্ধে বিভিন্ন সময় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। এর মধ্যে অনেককেই জেল-জরিমানা করা হয়েছে। বালি তোলার কারণে কোনো স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা থাকলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, উপজেলার পৃথিমপাশা ইউনিয়নের রাজাপুর এলাকায় খেয়াঘাট দিয়ে ঝুকি নিয়ে পারাপার হতে হয়। জনভোগান্তি দূর করতে মনু নদের ওপর সেতু নির্মাণের দাবি ছিল তাদের। হাজীপুর ও শরীফপুর ইউনিয়নের মানুষ খেয়াঘাট দিয়ে প্রতিদিন নৌকায় নদ পার হয়ে পৃথিমপাশাসহ উপজেলা সদরে বিভিন্ন কাজে আসা-যাওয়া করতেন। এভাবে যাতায়াত করতে গিয়ে তাদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছিল। এলাকাবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সওজ বিভাগ কুলাউড়া উপজেলার রাজাপুর এলাকায় মনু নদের ওপর সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। সেতুর কাজ সম্পন্ন হয়েছে চার বছর আগে। সংযোগ সড়ক নির্মাণ না হওয়ায় ভোগান্তি আগের যেই সেই রয়েই গেছে। কিছু মানুষ সেতুর নিচ থেকে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন করছে। এ কারণে সরে গেছে সেতুর পিলারের নিচের মাটি।
মৌলভীবাজার সওজ বিভাগ সূত্রের বরাতে জানা গেছে, ২০১৮ সালে ২৩২ মিটার দৈর্ঘ্যে পিসি গার্ডার সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়। নামকরণ করা হয় রাজাপুর সেতু। নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয় ২০২১ সালের জুন মাসে। তবে জমি অধিগ্রহণ জটিলতায় এমন অজুহাতে চার বছরেও সংযোগ সড়ক নির্মাণ হয়নি। সংযোগ সড়কের কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় সেতু নির্মাণ করে ও কাজে লাগছে না ৩২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেতুটি।
নদপারের বাসিন্দারা জানান, সেতুর কাজ শেষ হওয়ায় নতুন করে আশার আলো দেখছিলেন তারা। তবে সংযোগ সড়ক নির্মাণ না হওয়ায় হতাশায় আশার আলো আঁধার হয়ে ডুবতে বসেছে। জনভোগান্তি রয়ে গেছে। সংযোগ সড়ক নির্মাণ ও অবৈধভাবে বালি উত্তোলন বন্ধে তারা মানববন্ধন করেছেন। জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপিও দিয়েছেন।
সড়ক নির্মাণ ও অবৈধভাবে বালি উত্তোলন বন্ধে আন্দোলনকারীদের একজন ফয়জুল হক। তিনি বলেন, ‘‌সেতুটি চালুর আগেই বালি উত্তোলনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। দুটি পিলারের নিচে থেকে যে পরিমাণ মাটি সরে গেছে, অচিরেই ব্যবস্থা না নিলে ক্ষতিগ্রস্তে ব্যয়কৃত অর্থ গুলো গচ্ছা যাবে সরকারের। চার বছর ধরে সেতুটি ঠাঁয় দাঁড়িয়ে রয়েছে। সংযোগ সড়ক না থাকায় ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে আছে।’
পৃথিমপাশা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ বলেন, ‘‌সেতুটি নির্মাণ করায় আমরা খুব খুশি হয়েছিলাম। নির্মাণ হলেও সেটি এখন ব্যবহার করা যাচ্ছে না। সেতুটি কুলাউড়া উপজেলার তিনটি ইউনিয়নকে যুক্ত করেছে। কয়েক হাজার মানুষ এটি ব্যবহার করে। চালু হলে মানুষের যাতায়াত ব্যবস্থা ও গ্রামীণ অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে সেতুটি।’
সওজ সূত্রের বরাতে জানায়, জন্মভূমি, ওয়াহিদুজ্জামান ও নির্মিত নামে সিলেটের যৌথ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সেতুটির নির্মাণকাজ করে। সেতুটি ব্যবহারের জন্য দুই পাশে সাড়ে সাত কি:মি: সংযোগ সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। প্রায় ৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে জামিল ও ইকবাল নামের সিলেটের আরেকটি যৌথ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটি পায়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ২০২০ সালে কাজ শুরুর জন্য কার্যাদেশ দেয়া হয়। তবে ভূমি অধিগ্রহণের জন্য তিন দফা কাজের মেয়াদকাল বাড়িয়ে নেয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে মৌলভীবাজার সওজ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী কায়সার হামিদ প্রতিবেদককে বলেন, ‘‌সংযোগ সড়কের জন্য ৪৬ একর জমি অধিগ্রহণ করতে হয়েছে। তাছাড়া সংযোগ সড়কে ২০টি কালভার্ট নির্মাণ করতে হয়েছে। তৃতীয় দফায় প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ হবে। আর বালি উত্তোলন বন্ধের জন্য আমরা জেলা প্রশাসনকে লিখিত ও মৌখিকভাবে বলেছি। এ ব্যাপারে তারা ব্যবস্থা নেবে। নতুবা সেতুটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থেকে যাবে।’

উদ্বোধনের আগেই গচ্ছা যেতে বসেছে ৩২ কোটি টাকার সেতু 

প্রকাশের সময় : ১০:১১:৫২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
তিমির বনিক, মৌলভীবাজার প্রতিনিধি:
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার পৃথ্বমপাশার সঙ্গে হাজীপুর ও শরীফপুর ইউনিয়নের যোগাযোগ স্থাপনের লক্ষে মনু নদে নির্মাণ করা হয় ২৩২ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতুটি। তবে এতে ব্যয় হয় ৩২ কোটি টাকা। ২০২১ সালের জুনে নির্মাণকাজ সম্পন্ন হলেও সংযোগ সড়ক না থাকায় চালু হয়নি এই সেতুটি। অবৈধভাবে বালি উত্তোলনের কারণে এরই মধ্যে ঝুঁকিতে পড়েছে সেতুর অবকাঠামোটি। সরে গেছে পিলারের নিচের মাটি। এভাবে চলতে থাকলে উদ্বোধনের আগেই সেতুটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সমূহ আশঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জমি অধিগ্রহণ জটিলতার কারণে চার বছরেও সংযোগ সড়ক নির্মাণ হয়নি। এ কারণে স্থানীয় লোকজন সেতুর সুফল ভোগ করতে পাচ্ছে না। সেতুসংলগ্ন স্থানে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন বন্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছে জেলা প্রশাসন।
এ প্রসঙ্গে মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট তানভীর হোসেন প্রতিবেদককে বলেন, ‘‌বালি উত্তোলন বন্ধে বিভিন্ন সময় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। এর মধ্যে অনেককেই জেল-জরিমানা করা হয়েছে। বালি তোলার কারণে কোনো স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা থাকলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, উপজেলার পৃথিমপাশা ইউনিয়নের রাজাপুর এলাকায় খেয়াঘাট দিয়ে ঝুকি নিয়ে পারাপার হতে হয়। জনভোগান্তি দূর করতে মনু নদের ওপর সেতু নির্মাণের দাবি ছিল তাদের। হাজীপুর ও শরীফপুর ইউনিয়নের মানুষ খেয়াঘাট দিয়ে প্রতিদিন নৌকায় নদ পার হয়ে পৃথিমপাশাসহ উপজেলা সদরে বিভিন্ন কাজে আসা-যাওয়া করতেন। এভাবে যাতায়াত করতে গিয়ে তাদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছিল। এলাকাবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সওজ বিভাগ কুলাউড়া উপজেলার রাজাপুর এলাকায় মনু নদের ওপর সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। সেতুর কাজ সম্পন্ন হয়েছে চার বছর আগে। সংযোগ সড়ক নির্মাণ না হওয়ায় ভোগান্তি আগের যেই সেই রয়েই গেছে। কিছু মানুষ সেতুর নিচ থেকে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন করছে। এ কারণে সরে গেছে সেতুর পিলারের নিচের মাটি।
মৌলভীবাজার সওজ বিভাগ সূত্রের বরাতে জানা গেছে, ২০১৮ সালে ২৩২ মিটার দৈর্ঘ্যে পিসি গার্ডার সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়। নামকরণ করা হয় রাজাপুর সেতু। নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয় ২০২১ সালের জুন মাসে। তবে জমি অধিগ্রহণ জটিলতায় এমন অজুহাতে চার বছরেও সংযোগ সড়ক নির্মাণ হয়নি। সংযোগ সড়কের কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় সেতু নির্মাণ করে ও কাজে লাগছে না ৩২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেতুটি।
নদপারের বাসিন্দারা জানান, সেতুর কাজ শেষ হওয়ায় নতুন করে আশার আলো দেখছিলেন তারা। তবে সংযোগ সড়ক নির্মাণ না হওয়ায় হতাশায় আশার আলো আঁধার হয়ে ডুবতে বসেছে। জনভোগান্তি রয়ে গেছে। সংযোগ সড়ক নির্মাণ ও অবৈধভাবে বালি উত্তোলন বন্ধে তারা মানববন্ধন করেছেন। জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপিও দিয়েছেন।
সড়ক নির্মাণ ও অবৈধভাবে বালি উত্তোলন বন্ধে আন্দোলনকারীদের একজন ফয়জুল হক। তিনি বলেন, ‘‌সেতুটি চালুর আগেই বালি উত্তোলনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। দুটি পিলারের নিচে থেকে যে পরিমাণ মাটি সরে গেছে, অচিরেই ব্যবস্থা না নিলে ক্ষতিগ্রস্তে ব্যয়কৃত অর্থ গুলো গচ্ছা যাবে সরকারের। চার বছর ধরে সেতুটি ঠাঁয় দাঁড়িয়ে রয়েছে। সংযোগ সড়ক না থাকায় ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে আছে।’
পৃথিমপাশা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ বলেন, ‘‌সেতুটি নির্মাণ করায় আমরা খুব খুশি হয়েছিলাম। নির্মাণ হলেও সেটি এখন ব্যবহার করা যাচ্ছে না। সেতুটি কুলাউড়া উপজেলার তিনটি ইউনিয়নকে যুক্ত করেছে। কয়েক হাজার মানুষ এটি ব্যবহার করে। চালু হলে মানুষের যাতায়াত ব্যবস্থা ও গ্রামীণ অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে সেতুটি।’
সওজ সূত্রের বরাতে জানায়, জন্মভূমি, ওয়াহিদুজ্জামান ও নির্মিত নামে সিলেটের যৌথ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সেতুটির নির্মাণকাজ করে। সেতুটি ব্যবহারের জন্য দুই পাশে সাড়ে সাত কি:মি: সংযোগ সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। প্রায় ৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে জামিল ও ইকবাল নামের সিলেটের আরেকটি যৌথ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটি পায়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ২০২০ সালে কাজ শুরুর জন্য কার্যাদেশ দেয়া হয়। তবে ভূমি অধিগ্রহণের জন্য তিন দফা কাজের মেয়াদকাল বাড়িয়ে নেয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে মৌলভীবাজার সওজ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী কায়সার হামিদ প্রতিবেদককে বলেন, ‘‌সংযোগ সড়কের জন্য ৪৬ একর জমি অধিগ্রহণ করতে হয়েছে। তাছাড়া সংযোগ সড়কে ২০টি কালভার্ট নির্মাণ করতে হয়েছে। তৃতীয় দফায় প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ হবে। আর বালি উত্তোলন বন্ধের জন্য আমরা জেলা প্রশাসনকে লিখিত ও মৌখিকভাবে বলেছি। এ ব্যাপারে তারা ব্যবস্থা নেবে। নতুবা সেতুটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থেকে যাবে।’