শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ট্রেনে চড়ে সরাসরি পদ্মা সেতু পাড়ি দেয়া যাবে জুনেই

গত ২৫ জুন ঘটা করে উদ্বোধন করা হয় পদ্মা সেতু। পরদিন ২৬ জুন থেকেই এই সেতু বেয়ে দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় সড়কপথে যেতে যান চলাচল উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। সেই ধারাবাহিকতায় পদ্মা সেতুতে গাড়ি চললেও দেশের বৃহত্তম এই সেতু হয়ে রেল যোগাযোগ এখনো বাস্তবায়নের পথে। তবে এই অপেক্ষারও অবসান ঘটতে চলেছে শিগগিরই। কারণ, দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে পদ্মা সেতুতে রেলযোগাযোগ স্থাপন প্রকল্পের কাজ।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আগামী বছরের জুন নাগাদ সেতুটি দিয়ে রেলপথের কাজ শতভাগ সম্পন্ন করা যাবে। ফলে রেলে চড়ে এই সেতুর ওপর দিয়ে সরাসরি ঢাকা থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত যাওয়া যাবে শিগগিরই।

জানা গেছে, পদ্মা সেতুর ওপরের ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার পথ এই প্রকল্পের অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। তবে এরই মধ্যে সেতুর ওপর রেলপথের জাজিরা প্রান্তে ভায়াডাক্ট ও অ্যাপ্রোচ বসানোর কাজ শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে। এরমধ্যে মাওয়া অংশে ৬৬ শতাংশ এবং পদ্মা সেতুর ওপর রেলপথ বসানোর কাজ সম্পন্ন হয়েছে ৩ শতাংশ। যদিও রেলসেতুর নকশায় কিছুটা জটিলতা দেখা দেওয়ায় সাময়িক কাজ বন্ধ ছিল। তবে সেই সমস্যা উত্তরণের পর বর্তমানে পুরোদমে কাজ চলছে।

দক্ষিণবঙ্গে রেল যোগাযোগের অংশ হিসেবে মোট ১৭২ কিলোমিটার রেলপথের কাজকে তিন ভাগে ভাগ করা হচ্ছে। এরমধ্যে প্রথম ভাগ ঢাকার গেন্ডারিয়া থেকে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া পর্যন্ত। এছাড়া মাওয়া থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত অংশ পড়েছে দ্বিতীয় ভাগে। আর শেষভাগে ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত অংশের কাজ সম্পন্ন হবে। এ ক্ষেত্রে মাওয়া থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত দূরত্ব ২৮ কিলোমিটার। রেল প্রকল্পের এই অংশের কাজ ইতোমধ্যেই শতভাগ শেষ হয়েছে। অর্থাৎ এই ২৮ কিলোমিটার রাস্তা এখন রেল চলাচলের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত। তবে ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে যশোর অংশের রেলপথের কাজের অগ্রগতি এখনো কম বলে জানা গেছে।

এসব স্টেশনের মধ্যে মাওয়া থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত পথে স্টেশন নির্মাণকাজের অগ্রগতি হয়েছে ৫৮ শতাংশ। এছাড়া ঢাকা থেকে মাওয়া পর্যন্ত অংশের অগ্রগতি ২২ শতাংশ। আর ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত পথে স্টেশন নির্মাণকাজের অগ্রগতি হয়েছে ১১ শতাংশ।

এ বিষয়ে সম্প্রতি পদ্মা সেতু রেললিংক প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক আফজাল হোসেন গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ থাকলেও আমরা আশা করছি, তার আগেই সব কাজ শেষ করতে সক্ষম হবো। এরমধ্যে আগামী জুন নাগাদ ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত রেলপথের কাজ আমরা শতভাগ সম্পন্ন করতে পারব বলে আশা করছি।

বর্তমানে পদ্মা সেতুর ওপরের অংশ ছাড়ও সেতুর উভয় পাশে পুরোদমে কাজ চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, পদ্মা সেতুর ওপরের অংশের দুই প্রান্তে প্রতিদিন দুটি টিম ৫০ মিটার করে দিনে ১০০ মিটারের নির্মাণকাজ এগিয়ে নিচ্ছেন। যে গতিতে কাজ চলছে আশা করছি, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই আমরা লক্ষ্যে পৌঁছে যাব।

প্রকল্পের অর্থায়ন নিয়েও কোনো সমস্যায় পড়তে হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন আফজাল হোসেন। তিনি বলেন, চীন কিংবা বাংলাদেশ সরকারের অংশে এখন পর্যন্ত অর্থ পেতে আমাদের কোনো সমস্যায় পড়তে হয়নি। তবে নানা কারণে আমরা আশঙ্কা করছি, আগামী বছর সরকারি অংশ থেকে অর্থছাড় পেতে কিছুটা সমস্যায় পড়তে হতে পারে। তবে সে জন্য আগে থেকেই সরকারের কাছে ৩০০ থেকে ৪০০ কোটি টাকা বরাদ্দের বিষয়ে চাহিদাপত্র দিয়ে রাখা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন পদ্মা সেতু রেললিংক প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক আফজাল হোসেন।

এদিকে, রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজনও দ্রুতই পদ্মা সেতু ঘিরে রেল চলাচলে আশার কথা জানিয়েছেন। সম্প্রতি রেলসেবা সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, আগামী বছরের জুনের মধ্যে পদ্মা সেতু দিয়ে রেলপথে ঢাকার সঙ্গে ফরিদপুরের ভাঙ্গা যুক্ত হবে।

দেশের সব জেলাকে রেল সংযোগের আওতায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে জানিয়ে তিনি আরো বলেছেন, সরকারের উদ্যোগে ভবিষ্যতে রেলওয়েতে বিদ্যুৎচালিত ট্রেনও যোগ হবে। এছাড়া সারাদেশের মিটার গেজ রেললাইনকে পর্যায়ক্রমে ব্রডগেজে রূপান্তরের উদ্যোগও নেয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে উদ্যোগ নেয়ার দুই বছর পর (২০১৮) এই প্রকল্পের আওতায় পদ্মা সেতু ও এর দুই প্রান্তে রেললাইন নির্মাণের কাজ শুরু হয়। এর আওতায় ইতোমধ্যেই পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছে সরকারের সেতু বিভাগ। তবে সেতু দিয়ে ট্রেন চলাচল নিশ্চিতের দায়িত্ব রেল কর্তৃপক্ষের। এ লক্ষ্যে ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার দীর্ঘ রেললাইন বসানো এবং স্টেশনসহ অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণে আলাদা প্রকল্প নেয় রেলওয়ে। এছাড়া জিটুজি (সরকারি পর্যায়ে) পদ্ধতিতে বাস্তবায়নাধীন এই প্রকল্পে অর্থায়ন করছে চীন। প্রকল্পে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা।

ট্রেনে চড়ে সরাসরি পদ্মা সেতু পাড়ি দেয়া যাবে জুনেই

প্রকাশের সময় : ১০:৫৮:৫৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ নভেম্বর ২০২২

গত ২৫ জুন ঘটা করে উদ্বোধন করা হয় পদ্মা সেতু। পরদিন ২৬ জুন থেকেই এই সেতু বেয়ে দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় সড়কপথে যেতে যান চলাচল উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। সেই ধারাবাহিকতায় পদ্মা সেতুতে গাড়ি চললেও দেশের বৃহত্তম এই সেতু হয়ে রেল যোগাযোগ এখনো বাস্তবায়নের পথে। তবে এই অপেক্ষারও অবসান ঘটতে চলেছে শিগগিরই। কারণ, দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে পদ্মা সেতুতে রেলযোগাযোগ স্থাপন প্রকল্পের কাজ।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আগামী বছরের জুন নাগাদ সেতুটি দিয়ে রেলপথের কাজ শতভাগ সম্পন্ন করা যাবে। ফলে রেলে চড়ে এই সেতুর ওপর দিয়ে সরাসরি ঢাকা থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত যাওয়া যাবে শিগগিরই।

জানা গেছে, পদ্মা সেতুর ওপরের ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার পথ এই প্রকল্পের অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। তবে এরই মধ্যে সেতুর ওপর রেলপথের জাজিরা প্রান্তে ভায়াডাক্ট ও অ্যাপ্রোচ বসানোর কাজ শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে। এরমধ্যে মাওয়া অংশে ৬৬ শতাংশ এবং পদ্মা সেতুর ওপর রেলপথ বসানোর কাজ সম্পন্ন হয়েছে ৩ শতাংশ। যদিও রেলসেতুর নকশায় কিছুটা জটিলতা দেখা দেওয়ায় সাময়িক কাজ বন্ধ ছিল। তবে সেই সমস্যা উত্তরণের পর বর্তমানে পুরোদমে কাজ চলছে।

দক্ষিণবঙ্গে রেল যোগাযোগের অংশ হিসেবে মোট ১৭২ কিলোমিটার রেলপথের কাজকে তিন ভাগে ভাগ করা হচ্ছে। এরমধ্যে প্রথম ভাগ ঢাকার গেন্ডারিয়া থেকে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া পর্যন্ত। এছাড়া মাওয়া থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত অংশ পড়েছে দ্বিতীয় ভাগে। আর শেষভাগে ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত অংশের কাজ সম্পন্ন হবে। এ ক্ষেত্রে মাওয়া থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত দূরত্ব ২৮ কিলোমিটার। রেল প্রকল্পের এই অংশের কাজ ইতোমধ্যেই শতভাগ শেষ হয়েছে। অর্থাৎ এই ২৮ কিলোমিটার রাস্তা এখন রেল চলাচলের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত। তবে ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে যশোর অংশের রেলপথের কাজের অগ্রগতি এখনো কম বলে জানা গেছে।

এসব স্টেশনের মধ্যে মাওয়া থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত পথে স্টেশন নির্মাণকাজের অগ্রগতি হয়েছে ৫৮ শতাংশ। এছাড়া ঢাকা থেকে মাওয়া পর্যন্ত অংশের অগ্রগতি ২২ শতাংশ। আর ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত পথে স্টেশন নির্মাণকাজের অগ্রগতি হয়েছে ১১ শতাংশ।

এ বিষয়ে সম্প্রতি পদ্মা সেতু রেললিংক প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক আফজাল হোসেন গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ থাকলেও আমরা আশা করছি, তার আগেই সব কাজ শেষ করতে সক্ষম হবো। এরমধ্যে আগামী জুন নাগাদ ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত রেলপথের কাজ আমরা শতভাগ সম্পন্ন করতে পারব বলে আশা করছি।

বর্তমানে পদ্মা সেতুর ওপরের অংশ ছাড়ও সেতুর উভয় পাশে পুরোদমে কাজ চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, পদ্মা সেতুর ওপরের অংশের দুই প্রান্তে প্রতিদিন দুটি টিম ৫০ মিটার করে দিনে ১০০ মিটারের নির্মাণকাজ এগিয়ে নিচ্ছেন। যে গতিতে কাজ চলছে আশা করছি, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই আমরা লক্ষ্যে পৌঁছে যাব।

প্রকল্পের অর্থায়ন নিয়েও কোনো সমস্যায় পড়তে হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন আফজাল হোসেন। তিনি বলেন, চীন কিংবা বাংলাদেশ সরকারের অংশে এখন পর্যন্ত অর্থ পেতে আমাদের কোনো সমস্যায় পড়তে হয়নি। তবে নানা কারণে আমরা আশঙ্কা করছি, আগামী বছর সরকারি অংশ থেকে অর্থছাড় পেতে কিছুটা সমস্যায় পড়তে হতে পারে। তবে সে জন্য আগে থেকেই সরকারের কাছে ৩০০ থেকে ৪০০ কোটি টাকা বরাদ্দের বিষয়ে চাহিদাপত্র দিয়ে রাখা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন পদ্মা সেতু রেললিংক প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক আফজাল হোসেন।

এদিকে, রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজনও দ্রুতই পদ্মা সেতু ঘিরে রেল চলাচলে আশার কথা জানিয়েছেন। সম্প্রতি রেলসেবা সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, আগামী বছরের জুনের মধ্যে পদ্মা সেতু দিয়ে রেলপথে ঢাকার সঙ্গে ফরিদপুরের ভাঙ্গা যুক্ত হবে।

দেশের সব জেলাকে রেল সংযোগের আওতায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে জানিয়ে তিনি আরো বলেছেন, সরকারের উদ্যোগে ভবিষ্যতে রেলওয়েতে বিদ্যুৎচালিত ট্রেনও যোগ হবে। এছাড়া সারাদেশের মিটার গেজ রেললাইনকে পর্যায়ক্রমে ব্রডগেজে রূপান্তরের উদ্যোগও নেয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে উদ্যোগ নেয়ার দুই বছর পর (২০১৮) এই প্রকল্পের আওতায় পদ্মা সেতু ও এর দুই প্রান্তে রেললাইন নির্মাণের কাজ শুরু হয়। এর আওতায় ইতোমধ্যেই পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছে সরকারের সেতু বিভাগ। তবে সেতু দিয়ে ট্রেন চলাচল নিশ্চিতের দায়িত্ব রেল কর্তৃপক্ষের। এ লক্ষ্যে ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার দীর্ঘ রেললাইন বসানো এবং স্টেশনসহ অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণে আলাদা প্রকল্প নেয় রেলওয়ে। এছাড়া জিটুজি (সরকারি পর্যায়ে) পদ্ধতিতে বাস্তবায়নাধীন এই প্রকল্পে অর্থায়ন করছে চীন। প্রকল্পে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা।