শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দেড় ঘণ্টার বৃষ্টিতে রাজধানীর সড়কে থইথই পানি

নুরুজ্জামান লিটন

দেড় থেকে দুই ঘণ্টার টানা বৃষ্টিতে মঙ্গলবার রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ও ফুটপাত তলিয়ে যায়। হাঁটুর ওপর পানি জমে কোথাও কোথাও।

পানির কারণে সড়কের বিভিন্ন স্থানে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, প্রাইভেট কার বিকল হলে সৃষ্টি হয় ভয়াবহ যানজটের। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েন পথচারী ও বিভিন্ন পরিবহনের যাত্রীরা।

এদিকে মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় থাকায় সারা দেশে আরও ২ দিন বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর।

টানা বর্ষণের পর বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে বৃষ্টি থামে। বৃষ্টির পানিতে সুপ্রিমকোর্ট মাজার গেট, কদমফোয়ারা, মৎস্য ভবন, প্রেস ক্লাব, শান্তিনগর, কাকরাইল, ফকিরাপুল, মতিঝিলসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা পানিতে ডুবে যায়। হাইকোর্টের সামনের সড়কে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।

এতে দুর্ভোগে পড়েন পথচারী, ফুটপাতের ব্যবসায়ী ও যানবাহনের আরোহীরা। ফুটপাত তলিয়ে যাওয়ায় অনেককে জুতা খুলে কাপড় গুছিয়ে হাঁটতে দেখা গেছে। আবার অনেককে রাস্তার নোংরা পানি এড়াতে রিকশায় পার হতে দেখা গেছে। দ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় এমন বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে ঢাকাবাসীকে।

হাইকোর্টের সামনে রহমান নামে এক রিকশাচালকের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘গুলিস্তান থেকে নীলক্ষেত যাওয়ার জন্য একজন যাত্রী উঠিয়েছিলাম। সেখানে এত জ্যাম যে, যাত্রী নেমে হেঁটে চলে গেছেন। এখন আমি সামনেও যেতে পারছি না, পেছনেও না।’

দীর্ঘ সময় যানজটের কারণে অনেককে বাস থেকে নেমে হেঁটে গন্তব্যের দিকে রওনা হতে দেখা গেছে। ধানমণ্ডির উদ্দেশে রওনা হওয়া রফিক নামে এক পথচারী বলেন, ‘বাস থেকে নেমে হেঁটে যাচ্ছি। কতক্ষণ আর বাসে বসে থাকা যায়। যাওয়ার তাড়া রয়েছে। তাই উপায় না দেখে হেঁটেই যেতে হচ্ছে।’

মতিঝিল থেকে মিরপুরগামী নিউনেশন পরিবহনের হেলপার সুমন বলেন, ‘ঘণ্টাদেড়েক হলো জ্যামে আটকে আছি। এই জ্যাম যে কখন ছুটবে, এর গ্যারান্টি নেই। জ্যামে অনেকক্ষণ বসে বেশির ভাগ যাত্রী নেমে গেছে। গাড়ি এখন প্রায় খালি। শুধু হাইকোর্ট সড়ক নয়, শাহবাগ থেকে ফার্মগেট এবং এলিফ্যান্ট রোডের দিকে যাওয়ার সড়কেও এ সময় যানবাহনগুলোকে থমকে থাকতে দেখা যায়।

দেড় থেকে দুই ঘণ্টার বেশি সময় টানা বৃষ্টিতে পুরো সচিবালয় পানিতে তলিয়ে যায়। কোথাও কোথাও পানি জমেছে হাঁটুরও ওপরে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বিকাল ৩টার দিকে সচিবালয় ঘুরে দেখা গেছে, পুরো সচিবালয় পানিতে থইথই। পা ফেলার মতো শুকনো স্থান অবশিষ্ট নেই। নিচে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় ভবনগুলোর মধ্যে সংযোগ সেতুতে ভিড় জমে যায়।

যতটা পারা যায় পানি এড়িয়ে সেতু দিয়েই মানুষ চলাচল করে। সচিবালয়ে ৩, ৪, ৫, ৬ ও ৭ নম্বর ভবনে কর্মরতদের অনেককে পানি মাড়িয়েই চলাচল করতে দেখা গেছে। ৩ ও ৫ নম্বর ভবনের মাঝামাঝি স্থানে হাঁটুসম পানি জমে যায়।

৪ নম্বর ও ক্লিনিক ভবনের পেছনে পানি জমে সবচেয়ে বেশি। জলাবদ্ধতার কারণে ক্লিনিকের পেছনের ড্রেনে পড়ে আহত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের কর্মচারী মো. আল-আমিন ৪ নম্বর ভবনের নিচে ওএমএসের আটা কিনে হাঁটুসমান পানি মাড়িয়ে ফিরছিলেন। তিনি বলেন, ‘আটা কেনা দরকার, নিরুপায় হয়ে পানি দিয়েই এলাম। একটু বৃষ্টিতে সচিবালয়ে এ অবস্থা মেনে নেয়া যায় না।’

বৃষ্টিতে মতিঝিলের ব্যাংকপাড়ায়ও জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরতরা। বৃষ্টিতে রাস্তা ও ফুটপাত তলিয়ে যাওয়ায় অফিস থেকে বের হওয়াই অনেকের পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়ে। অনেক স্থানে সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজট। দিলকুশা, পল্টন, দৈনিক বাংলা, কমলাপুর ও আশপাশের এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

মতিঝিলে জলাবদ্ধতায় আটকে থাকা সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান বলেন, অফিসের ভেতরে ছিলাম। বের হয়ে দেখি সব রাস্তা খালে পরিণত হয়েছে। ফুটপাতও পানির নিচে। অথচ জরুরি কাজে ৫টার মধ্যে মোহাম্মদপুর যেতে হবে।

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সারা বছর খোঁড়াখুঁড়ি চলে, পাইপ বসানো হয়; কিন্তু কোনো লাভ হয় না। প্রয়োজনের তুলনায় ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় পানি সরে না। ফলে একটু বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।

 

আপনার মন্তব্য লিখুন

লেখকের সম্পর্কে

Shahriar Hossain

দেড় ঘণ্টার বৃষ্টিতে রাজধানীর সড়কে থইথই পানি

প্রকাশের সময় : ০৭:২৪:৪৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২ অক্টোবর ২০১৯

নুরুজ্জামান লিটন

দেড় থেকে দুই ঘণ্টার টানা বৃষ্টিতে মঙ্গলবার রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ও ফুটপাত তলিয়ে যায়। হাঁটুর ওপর পানি জমে কোথাও কোথাও।

পানির কারণে সড়কের বিভিন্ন স্থানে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, প্রাইভেট কার বিকল হলে সৃষ্টি হয় ভয়াবহ যানজটের। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েন পথচারী ও বিভিন্ন পরিবহনের যাত্রীরা।

এদিকে মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় থাকায় সারা দেশে আরও ২ দিন বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর।

টানা বর্ষণের পর বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে বৃষ্টি থামে। বৃষ্টির পানিতে সুপ্রিমকোর্ট মাজার গেট, কদমফোয়ারা, মৎস্য ভবন, প্রেস ক্লাব, শান্তিনগর, কাকরাইল, ফকিরাপুল, মতিঝিলসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা পানিতে ডুবে যায়। হাইকোর্টের সামনের সড়কে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।

এতে দুর্ভোগে পড়েন পথচারী, ফুটপাতের ব্যবসায়ী ও যানবাহনের আরোহীরা। ফুটপাত তলিয়ে যাওয়ায় অনেককে জুতা খুলে কাপড় গুছিয়ে হাঁটতে দেখা গেছে। আবার অনেককে রাস্তার নোংরা পানি এড়াতে রিকশায় পার হতে দেখা গেছে। দ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় এমন বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে ঢাকাবাসীকে।

হাইকোর্টের সামনে রহমান নামে এক রিকশাচালকের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘গুলিস্তান থেকে নীলক্ষেত যাওয়ার জন্য একজন যাত্রী উঠিয়েছিলাম। সেখানে এত জ্যাম যে, যাত্রী নেমে হেঁটে চলে গেছেন। এখন আমি সামনেও যেতে পারছি না, পেছনেও না।’

দীর্ঘ সময় যানজটের কারণে অনেককে বাস থেকে নেমে হেঁটে গন্তব্যের দিকে রওনা হতে দেখা গেছে। ধানমণ্ডির উদ্দেশে রওনা হওয়া রফিক নামে এক পথচারী বলেন, ‘বাস থেকে নেমে হেঁটে যাচ্ছি। কতক্ষণ আর বাসে বসে থাকা যায়। যাওয়ার তাড়া রয়েছে। তাই উপায় না দেখে হেঁটেই যেতে হচ্ছে।’

মতিঝিল থেকে মিরপুরগামী নিউনেশন পরিবহনের হেলপার সুমন বলেন, ‘ঘণ্টাদেড়েক হলো জ্যামে আটকে আছি। এই জ্যাম যে কখন ছুটবে, এর গ্যারান্টি নেই। জ্যামে অনেকক্ষণ বসে বেশির ভাগ যাত্রী নেমে গেছে। গাড়ি এখন প্রায় খালি। শুধু হাইকোর্ট সড়ক নয়, শাহবাগ থেকে ফার্মগেট এবং এলিফ্যান্ট রোডের দিকে যাওয়ার সড়কেও এ সময় যানবাহনগুলোকে থমকে থাকতে দেখা যায়।

দেড় থেকে দুই ঘণ্টার বেশি সময় টানা বৃষ্টিতে পুরো সচিবালয় পানিতে তলিয়ে যায়। কোথাও কোথাও পানি জমেছে হাঁটুরও ওপরে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বিকাল ৩টার দিকে সচিবালয় ঘুরে দেখা গেছে, পুরো সচিবালয় পানিতে থইথই। পা ফেলার মতো শুকনো স্থান অবশিষ্ট নেই। নিচে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় ভবনগুলোর মধ্যে সংযোগ সেতুতে ভিড় জমে যায়।

যতটা পারা যায় পানি এড়িয়ে সেতু দিয়েই মানুষ চলাচল করে। সচিবালয়ে ৩, ৪, ৫, ৬ ও ৭ নম্বর ভবনে কর্মরতদের অনেককে পানি মাড়িয়েই চলাচল করতে দেখা গেছে। ৩ ও ৫ নম্বর ভবনের মাঝামাঝি স্থানে হাঁটুসম পানি জমে যায়।

৪ নম্বর ও ক্লিনিক ভবনের পেছনে পানি জমে সবচেয়ে বেশি। জলাবদ্ধতার কারণে ক্লিনিকের পেছনের ড্রেনে পড়ে আহত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের কর্মচারী মো. আল-আমিন ৪ নম্বর ভবনের নিচে ওএমএসের আটা কিনে হাঁটুসমান পানি মাড়িয়ে ফিরছিলেন। তিনি বলেন, ‘আটা কেনা দরকার, নিরুপায় হয়ে পানি দিয়েই এলাম। একটু বৃষ্টিতে সচিবালয়ে এ অবস্থা মেনে নেয়া যায় না।’

বৃষ্টিতে মতিঝিলের ব্যাংকপাড়ায়ও জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরতরা। বৃষ্টিতে রাস্তা ও ফুটপাত তলিয়ে যাওয়ায় অফিস থেকে বের হওয়াই অনেকের পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়ে। অনেক স্থানে সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজট। দিলকুশা, পল্টন, দৈনিক বাংলা, কমলাপুর ও আশপাশের এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

মতিঝিলে জলাবদ্ধতায় আটকে থাকা সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান বলেন, অফিসের ভেতরে ছিলাম। বের হয়ে দেখি সব রাস্তা খালে পরিণত হয়েছে। ফুটপাতও পানির নিচে। অথচ জরুরি কাজে ৫টার মধ্যে মোহাম্মদপুর যেতে হবে।

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সারা বছর খোঁড়াখুঁড়ি চলে, পাইপ বসানো হয়; কিন্তু কোনো লাভ হয় না। প্রয়োজনের তুলনায় ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় পানি সরে না। ফলে একটু বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।